নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
পড়াশোনা নেই তো কি হয়েছে? =
আমার এক মুরুব্বির কথা বলি আজ। সত্য ঘটনা; অন্য মুরুব্বিদের মুখে শুনেছি।
খুব ছোট বেলায় তিনি তাঁর বাবার সাথে হেঁটেহেঁটে শহর এলাকায় কাপড় বিক্রি করতেন। বাবা কিভাবে কোথা হতে কাপড় কিনে এনে লাভে বেচতেন, কাপড়ের কোয়ালিটি কিভাবে পরখ করতেন, ক্রেতার সাথে কিভাবে কথা বলতেন, ইত্যাদি গভীর আগ্রহভরে শিখে ধীরে ধীরে কাপড়ের ব্যবসা রপ্ত করে একসময় কাপড়ের ব্যবসায় বাবাকেও ছাড়িয়ে যান তিনি। পড়ালেখা কেবল উচ্চমাধ্যমিক। তাও আবার টেনেটুনে পাশ। কারণ, তাঁর মন পড়ে থাকতো কাপড়ের ব্যবসায়।
আশির দশকে যখন বাংলাদেশে গার্মেন্টস শিল্পের বিস্তার লাভ হতে থাকে তখন সে সুযোগটা তিনিও নিয়েছিলেন। এক গার্মেন্টসে মাত্র দেড়হাজার টাকা বেতনে চাকুরী শুরু করে কালের আবর্তে তিনি কয়েকটা গার্মেন্টস ফ্যাক্টরির মালিক হয়েছেন কেবল বছর বিশেকেই। বিএ, এমএ পাশ লোকজনসহ হাজার হাজার নারীপুরুষ কাজ করতেন তাঁর প্রতিষ্ঠানে। বর্তমানে তিনি অবশ্য মালয়েশিয়ায় স্থায়ী বাসিন্দা হয়েছেন।
যৌবনে মুরুব্বি বেশ সৌখিন স্বভাবের মানুষ ছিলেন। বিয়ে করেছেন এক বড়ো ব্যাংকারের সহোদরাকে। এতে তাঁর ব্যবসার সুবিধাও হয়েছিল বেশ। তাঁর স্ত্রী ছিলেন নজরকাড়া সুন্দরী। এই মুরুব্বি যখন স্ত্রীকে নিয়ে গ্রামের বাড়ি যেতেন তখন তাঁর স্ত্রীকে দেখতে এলাকায় ভিড় জমে যেত। দামি চকচকে গাড়িতে চড়ে ম্যাডাম গ্রামে যেতেন। তাঁর গাড়িকে ফলো করতো আরো দুটি গাড়ি। একটিতে প্রাইভেট সিকিউরিটির লোকজন, অপরটিতে একদল নারী বিউটিশিয়ান। রীতিমতো রাজকীয় কারবার!
ম্যাডামের হাতের কাছেই থাকতেন নারী বিউটিশিয়ানরা। তাঁর গলা-বুক জড়িয়ে অজস্র মণিমুক্তো। যেন সাক্ষাৎ প্রিন্সেস। মাথার উপর ডায়মন্ডখচিত একটা পাতলা ওড়না পড়তেন। ওড়নাটি ছিল অন্ততঃ হাত পাঁচেক লম্বা। তাঁর দুপাশে দুই তরুণী ওড়নাটির দুপ্রান্ত হাতে ধরে তাঁর পেছনে হাঁটতেন। দুই বিউটিশিয়ান খানিক পরপর ম্যাডামের মুখ গলা মুছে রিফ্রেশ করে দিতেন। এমনই সৌখিন চলাফেরা ছিল এ পরিবারের।
এতো ইনিয়ে বিনিয়ে মুরুব্বির গল্প করার উদ্দেশ্য, তিনি কোন অবস্থান হতে নিজের চেষ্টায় নিজেকে কোথায় নিয়ে গেছেন তার খানিক ধারণা দেয়া। মোটকথা, মাথায় ঘিলু থাকলে এবং পরিশ্রমী হলে কম পড়াশোনায়ও জীবনে প্রতিষ্ঠা লাভ করা যায়।
বর্তমানে তিনি সপরিবারে মালয়েশিয়া থাকেন। এক ঘনিষ্ঠের মুখে শুনেছি, মালয়েশিয়ায় তিনি যে আলিশান বাড়িতে থাকেন তাঁর দাম দেশি টাকায় পঞ্চান্ন কোটি। খবর সঠিক হয়ে থাকলে এ তো বিশাল অর্জন। [মালয়েশিয়ায় এতো দামি কোন বাড়ি আদৌ না থাকলে মালয়েশিয়া প্রবাসী বন্ধু/ভক্তরা দয়া করে আমাকে মাফ করবেন।]
প্রায় তিন কোটি টাকা চাঁদা দিয়ে এ মুরুব্বি সিআইপি'ও হয়েছিলেন। সে সুবাদে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হবার সুযোগও পেয়েছিলেন তিনি। এক কথায় তাঁর জীবনে কোনকিছুরই কমতি ছিল না, বা নেই। অথচ পড়ালেখা কেবল টেনেটুনে ইন্টারমিডিয়েট! - - -
আমার আরেক ঘনিষ্ঠের কাহিনী শুনুন। তিনি বর্তমানে ঢাকা শহরে দুইটি গার্মেন্টসের মালিক। আলিশান ফ্ল্যাটও কিনেছেন কয়েকটি। পড়াশোনায় প্রাতিষ্ঠানিক ডিগ্রি না থাকায় তিনি নামের আগে বিএ , এমএ, না লিখে লিখেন 'আলহাজ্ব' এবং 'লায়ন', এ দুটো বিশেষণ। পড়াশোনা কেবল চতুর্থ শ্রেণী।
এই সুহৃদের অধীনে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রিধারীও চাকুরী করেন। তাঁর সাথে আমার মাঝেমাঝে কথা হয়। সেদিন আক্ষেপ করে তিনি বললেন, 'ইংরেজিটা জানলে আমি ব্যবসায় আরো অনেক আগাতে পারতাম।'
কথাটা শুনে তাঁর কাছে জানতে চাইলাম, 'আপনি ব্যবসাবাণিজ্য কিভাবে সামলান, বা বিদেশিদের সাথে কিভাবে কথা বলেন?'
অন্যের সহযোগিতা নিয়েই তাঁর কাজ চলে বলে জানালেন। তবে, এতে নাকি ব্যবসার গোপনীয়তা নষ্ট হয়।
কথাটা অমূলক নয়। একারণেই তিনি নাকি বাসায় প্রাইভেট টিউটর রেখে ইংরেজি শেখার চেষ্টা করছেন। বয়স তাঁর খুব বেশি নয়। ইংরেজিটা শিখে ফেললে একদিন তিনিও হয়তো ব্যবসা বাণিজ্য সম্প্রসারণ করে আরো অনেক বড়ো ব্যবসায়ী হবেন, দেশের বাইরেও সহায়-সম্পদ গড়বেন। দেখুন, এই সুহৃদের পড়াশোনা কেবল চতুর্থ শ্রেণী!
বলেছি তো, মাথায় ঘিলু থাকলে এবং পরিশ্রমী হলে নামমাত্র পড়াশোনায়ও জীবনে অনেকদূর আগানো যায়। তাই, নানা কারণে যাঁদের কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের গালভরা ডিগ্রি নেয়া হয়ে উঠেনি তাঁদের ভেঙে পড়ার কিছু নেই। মাথা ঠান্ডা রেখে চেষ্টা চালিয়ে যান। স্কাই ইজ ইউর লিমিট!
ML Gani, Canada
©somewhere in net ltd.
১| ১১ ই মার্চ, ২০২১ রাত ১:২০
রাজীব নুর বলেছেন: লেখাপড়া শিখে আসলেই ভুল করেছি।
ভারতে নাকি শিক্ষিতরা বেকার বসে আছে। আর অক্ষর জ্ঞানহীন লোকেরা কাজ করে খাচ্ছে।