নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

\'এম এল গনি\' cut & paste করে Google-এ search করলে আমার সম্পর্কে জানা যাবে। https://www.facebook.com/moh.l.gani

এমএলজি

এমএলজি › বিস্তারিত পোস্টঃ

জিকিরের শব্দ শুনে ছেলেটা ভয় পেতো =

১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২০ রাত ২:১৬

জিকিরের শব্দ শুনে ছেলেটা ভয় পেতো =

বছর সাতেক আগের কথা। আমাদের বড় ছেলে সাঈদ তখন এগার বা বারো।

মাগরেবের নামাজ পড়ে বাচ্চাদের মায়ের নেতৃত্বে আমরা সবাই কিছুক্ষন জিকির করতাম। ঠিকভাবে করলে জিকির এবাদতের মতোই সওয়াবের কাজ।

এক সন্ধ্যায় জিকিরের পর সাঈদ বেঁকে বসলো। মানে, ও আর জিকির করতে চায় না। ওর মা একটু জোরাজুরি করলে ও রীতিমতো কান্নাকাটি করে বলতে শুরু করলো, আমি আর জিকির করতে চাইনা মা, আমার ভয় করে।

ছেলের ভয়ার্ত চেহারা দেখে আমার স্ত্রীকে বললাম, ঠিক আছে, ওকে ছেড়ে দাও, বড়ো হলে নিজে জেনেবুঝে করবে; এখন জোর করা ঠিক হবে না। একটু সময় দাও, জিকির-কালামের জন্য তো ওর সারাজীবনই পড়ে আছে।

সেই থেকে আর ওকে জিকিরে ডাকিনা। চাতছেলে আয়মানের বয়স তখন চার। ওকে নিয়েই চলে আমাদের পারিবারিক সান্ধ্য জিকির।
আমার স্ত্রী আবার খুব পরহেজগার, মাওলানা বংশের মানুষ। ওর পূর্বপুরুষদের অনেকেই নামিদামি আউলিয়া দরবেশ যা নিয়ে সে তো বটেই, আমি নিজেও যথেষ্ট গর্ব করি। তাছাড়া ওর চাচা-জেঠাদের মাঝেও আছে অনেক আলেম যাঁরা কোলে কাঁধে করে তাকে মানুষ করেছে। চকরিয়ার বিখ্যাত আওলিয়া মরহুম চাঁদগাজী শিকদার সাহেবের নাম দক্ষিণ চট্টগ্রামের কে না শুনেছে? আমার স্ত্রীর পরিবার তাঁরই বংশধর। আলহামদুলিল্লাহ!

ওদিকে, চট্টগ্রামের রাউজানে বাঁচা বাবার দরগাহের নাম রাউজানবাসীরা অবশ্যই শুনেছেন। এলাকার নামিদামি রাজনৈতিক নেতা হতে ধর্মপ্রাণ নারীপুরুষেরা বিভিন্ন মানসে বাবার দরগাহে নিয়মিত হাজিরা দেন। আমার প্রাইমারি স্কুল জীবনের এক সহপাঠী এই দরগাহে কিছুদিন হিসাব রক্ষকের দায়িত্ব পেয়েছিলো। বেতনধারী চাকুরী ওটা। মাত্র দুবছরের মতো চাকুরী করেই সে নাকি ওখান থেকে প্রায় তিরিশ লক্ষ টাকা সরিয়ে ফেলতে সক্ষম হয়েছিল। অবশ্য চাকুরীটা তার বেশিদিন টেকেনি। কথাটা এজন্য বললাম, বাঁচা বাবার দরগাহ শরীফে মানুষ কি পরিমান দান দক্ষিনা করেন আমার বন্ধুর ঘটনা থেকে তার কিছুটা ইঙ্গিত পাবেন।

মানুষের সমস্যার তো আর অন্ত নেই। নানা কারণে মানুষ বাবার দরবারে যায়: কারো সন্তান হয়না, কারো সন্তান হয় তবে ছেলে হয় না, কারো শুধু ছেলে হয় মেয়ে হয় না, কারো সন্তান ভূমিষ্ঠ হয়েই মারা যায়, কারো বিদেশ যেতে যেতে অবশেষে যাওয়া হয় না, কারো চাকুরীতে গোলমাল বা প্রমোশন হয় না, কারো ব্যবসায় পুনঃপুনঃ লস, কেউ প্রেমে বারবার ব্যর্থ বা যাকে চায় তাকে পায় না, কারো সংসারে অশান্তি, আবার কারো ভবিষ্যতে নির্বাচনের চিন্তা। এভাবে ইহজগতে কি আর সমস্যার শেষ আছে? বাবার দরবারে গিয়ে নিশ্চয়ই মানুষ উপকার পায়। না হলে ওখানে বছরে কয়েক কোটি টাকা আয় হয় কিভাবে?

সেই বাঁচা বাবা আর কেউ নন, আমারই সাক্ষাৎ পিতামহ, সনাতন ধর্মের বন্ধুরা যাকে বলে ঠাকুরদাদা। এবার বুঝুন আমার শেকড় কোথায়। ঘনিষ্ঠদের যাঁরা আমাকে এই পরিচয়ে জানেন, তাঁদের অনেকেই আমাকে কানাডা ছেড়ে রাউজানে চলে যেতে বলেন। তাঁদের ভাষ্যে কোটিকোটি টাকার ওই আয় নাকি আমাদের পরিবারেরই প্রাপ্য।

আমাদের দুজনের ধর্মীয় ব্যাকগ্রাউন্ড নিয়ে খানিক বলতে হলো এ লেখার মর্ম বুঝাতে। তারপরও ধর্মজ্ঞানে আমার স্ত্রী আমার চেয়ে অনেক এগিয়ে। এর একটি কারণ হলো, ওরা স্কুল পর্যায়ে ইসলামিয়াত পড়েছিল। কলেজিয়েটে ধর্মের বিকল্প সাবজেক্ট থাকায় আমার আর ইসলামিয়াত পড়া হয়ে উঠেনি। নিজের চেষ্টা বা ওয়াজ মাহফিল শুনে যতটা ধর্ম শেখা যায় সেটুকুই জ্ঞান আমার। তবে, আমার ধর্মজ্ঞানের অনেকটুকুই পূরণ করেছেন আমার স্ত্রী। সন্ধ্যায় পরিবারের সবাই মিলে খানিক জিকির না করলে ও আমার সাথে রীতিমতো রাগ করে।

যাক, স্ত্রী বন্দনা না করে এবার মূল কথায় ফিরে যাই। অবস্থার আরেকদফা অবনতি ঘটেছে। আমাদের ছেলে সাঈদ একদিন আমাদেরকেও জিকির করা বন্ধ করতে বললো। মাই গড! এ কেমন কথা। সে জিকির করতে চায়নি বলে আমরা তাকে মাফ করে দিয়েছি। কারন, এটা তার ধর্মীয় স্বাধীনতা। আমাদের যাঁরা ধার্মিক তাঁরা ধর্মের ভালো দিকগুলো অন্যদের বুঝাতে পারি; সে অধিকার আমাদের রয়েছে। কিন্তু, একইভাবে, যাঁকে বুঝানো হচ্ছে তারও তো আমাদের সাথে একমত হওয়া বা, না হওয়ার অধিকার আছে। ভুল কিছু বলেছি কী?

ছেলেটা নিজে জিকির না করলে না করুক, কিন্তু আমাদের জিকিরে বাধা দিচ্ছে কেন? এ তো সরাসরি ব্যক্তিস্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ। না, এ মেনে নেয়া যায় না। আমার স্ত্রীর সাথে গোপনে বিষয়টা আলাপ করলাম। একপক্ষীয় চিন্তাভাবনা বাদ দিয়ে ঘটনার গভীরে যাবার চেষ্টা করলাম। আমাদের চিন্তা হলো নিজেকে আস্তিক বা নাস্তিক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার মতো বয়স তো আজও তার হয়নি। তারপরও সে জিকিরের কথা শুনলেই এভাবে আপত্তি তোলে কেন? নিশ্চয়ই এখানে এমন কিছু আছে যা আমরা ঠিক ধরতে পারছি না।

অবশেষে এক বিকেলে ছেলেকে নিয়ে আমরা দুজন বসলাম। একথা সেকথার ফাঁকে জানতে চাইলাম জিকিরে তার ভয়টা কিসে? তাঁকে অভয় দিয়ে বললাম, আমাদের খুলে বললে তাকে আমরা তার কোন ভুল বুঝাবুঝি থাকলে শুধরে দিতে পারবো। অভয় পেয়ে সে বলতে শুরু করলো এক মজার কাহিনী যার সারসংক্ষেপ শুনুন এবার।

আমরা দেশে বেড়াতে গেলে আমাদের এক সুহৃদ দোয়া চাইতে তাঁকে চট্টগ্রাম শহরের এক নামি মাজারে নিয়ে গিয়েছিলেন। সেখানে সে প্রায় শ'খানেক পঙ্গু মানুষকে (অনেকেই হয়তো ফেইক) আল্লাহু আল্লাহু রব তুলে কন্ঠ মিলিয়ে জিকির করতে দেখেছে। ওর ধারণা ওভাবে জিকির করলে আমরাও হয়তো একসময় ওদের মতো বিকলাঙ্গ বা পঙ্গু হয়ে যাবো। তাই, জিকিরের শব্দ শুনলেই ও ভয়ে আতঁকে উঠে।
জিকিরের শব্দ শুনে ছেলেটা ভয় পেতো

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২০ রাত ৩:০৩

নুরুলইসলা০৬০৪ বলেছেন: এটা কোন তরিকা।এক তরিকার লোকেরা বলে ওরা শয়তানের এবাদত করে,আবার অন্য তরিকার লোকেরা বলে ওরা ইবলিসের এবাদত করে।ওহাবিরা সকল তরিকার লোকদের বলে, ওরা নিজেরাই শয়তান।সুন্নিরা বলে ওহাবিরা জাহান্নামী,ওহাবিরা বলে সুন্নিরা জাহান্নামী।এইতো মুসলমানদের অবস্থা।আপনারা কোন তরিকার?

২| ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২০ রাত ৩:১৩

নুরুলইসলা০৬০৪ বলেছেন: বাচ্চা হবার জন্য পৃথীবির সবথেকে বড় পীর সায়েদা বাদীর হুজুর।কারন হুজুরের স্ত্রীর বাঁচ্চ হয়।বাচ্চা না হবার সমস্যা তার নেই।অতয়েব যে মহিলার স্বামীর কারনে বাচ্চা হয় না হুজুরের কাছে গেলে তার বাচ্চা হবেই।

৩| ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২০ ভোর ৬:১৮

ঋণাত্মক শূণ্য বলেছেন: তোমরা প্রতিপালককে মনে মনে সবিনয় ও সশংকচিত্তে অনুচ্চস্বরে প্রত্যুষে ও সন্ধ্যায় স্মরণ করবে এবং তুমি উদাসীন হবে না। [সূরা আরাফ ২০৫]

৪| ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২০ ভোর ৬:৫০

অধীতি বলেছেন: জিকির এক ধরণের ধ্যান।ব্যাক্তি নিজ ইচ্ছায় করলে আত্মতৃপ্তি লাভ করে এবং আল্লাহর নৈকট্য লাভ করে। বাংলাদেশের মাজার কেন্দ্রিক ব্যবসাটা বন্ধ করতে হবে তবে যারা এ টাকায় এতিমখানা চালায় তারা ভালো মানুষ। আমরা আলাদা করে ভাবতে পারিনা মাজার ভালো কিন্তু যারা নিয়ন্ত্রণ করছে তারা জঘন্য। আমরা জঘন্যদের কিছু বলি না,মাজারের দোষ দেই।মৃতদের দোষ দিলে প্রতিশোধের ভয় থাকেনা। বাচ্চা বসয়ে এই বিষয়গুলো প্রভাব ফেলে,এবং ভালো চিন্তা করতে শেখায়।বাবা-মা হিসেবে গল্পের দু'জনেই আদর্শিক।

৫| ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২০ দুপুর ১:৩০

রানার ব্লগ বলেছেন: জিকির অনেকটা আত্মা কে সমার্পন করা সৃষ্টকর্তার প্রতি। জিকির হওয়া উচিৎ নিরবে, নিভৃতিতে, কিন্তু সেই জিকির যখন ভয়ানোক ভাবে তিব্রে চিৎকারের সাথে হয় তা আসলেই ভিতিকর, সেই সাথে যদি লংহর্ন মাইক ব্যাবহার করা হয় সেটা পিড়া দায়ক।

৬| ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২০ দুপুর ১:৪৯

নেওয়াজ আলি বলেছেন: ফেনীর সোনাগাজীতে এক ফুল হুজুর আছে ৭০/৮০ বছর বয়স উনার মুরিদ ১৯ বছরে যুবতী ভয় পেতো তাই হুজুর বিয়ে করে ফেলছেন :D

৭| ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২০ বিকাল ৪:০৫

রাজীব নুর বলেছেন: জিকিরের মধ্যে একটা 'টান' আছে। মোহ আছে। ছন্দ আছে।

৮| ২৭ শে ডিসেম্বর, ২০২০ দুপুর ১২:২৬

কামরুননাহার কলি বলেছেন: আল্লাহকে নির্জনে ডাকা ভালো। মাজারে যেয়ে নয়। কারণ মাজার হলো ভন্ড পীরদের আস্তানা। আর টাকা ইনমাকের ধান্দা।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.