নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আপনি কি বাস্তবেই ‘কমন ল' সম্পর্কে আছেন?
এম এল গনি, কানাডা থেকে, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
ঢাকা থেকে আমাকে এক ভদ্রলোক ইমেইল করলেন তার বড় ছেলের কানাডায় পড়াশোনা নিয়ে সহায়তা চেয়ে। উনি জানতেন আমাদের কোম্পানি, 'এমএলজি কানাডা ইমিগ্রেশন' কানাডায় লেখাপড়া নিয়েও সহায়তা দিয়ে থাকে।
ছেলেটি একটা নামি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছে। কয়েক বন্ধু বিদেশে পড়তে চলে যাওয়ায় তারও কানাডায় পড়ার আগ্রহ জেগেছে। ভদ্রলোকের সাথে কিছুক্ষণ কথা বলে আমি তাকে বললাম ছেলে যেন সরাসরি আমাকে ইমেইল করে তার আগ্রহের কথা জানায়।
দুইদিন পর সেই ছেলের ইমেইল পেলাম। ইমেইলের উত্তর দিতে গিয়ে তাকে প্রাথমিক তথ্য দেওয়ার জন্য একটা ফরম যুক্ত করে পাঠালাম। কানাডায় স্টাডি বা অভিবাসন বিষয়ে সহায়তা দিতে প্রথমেই আমরা ক্লাইয়েন্টের কিছু বেসিক তথ্য জেনে নেই। এটি একটি সাধারণ পদক্ষেপ।
ফরমের এক জায়গায় ‘বৈবাহিক অবস্থা’ জানতে চাওয়া হয়েছে। উত্তরে সে লিখেছে, ‘কমন ল’। তার মানে, ছেলেটা বোঝাতে চেয়েছে ‘কমন ল’ রিলেশনশিপ। বাংলাদেশে যেহেতু আমার জীবনের অর্ধেকটা কেটেছে তাই আমি বাংলাদেশের কালচারাল কনটেক্সট বা, পটভূমি ভালোই বুঝি। তাই, তার দেওয়া তথ্য যাচাই না করে গ্রহণযোগ্য বলে মেনে নিতে পারলাম না। ঠিক করলাম ছেলেটির সাথে কথা বলে দেখি আসলে ‘কমন ল’ রিলেশনশিপ সম্পর্কে সে ঠিকভাবে জানে কিনা।
মাত্র একুশ বছর তার বয়স, তাও আবার বাংলাদেশের মতো রক্ষণশীল পরিবেশ! এ অবস্থায় সে ‘কমন ল’ রিলেশনশিপে কারও সাথে বসবাস করছে তা ভাবতেই অবাক লাগলো। এ লেখার প্রয়োজনে ওই ছেলের নাম দিলাম মামুন, আমার এক দুষ্টু বন্ধুর নাম।
মামুনকে ইমেইল দিয়ে আমাকে দ্রুত ফোন দিতে বললাম। পরদিনই সে আমাকে ফোন দিলো। খুব ভদ্রভাবে ‘আংকেল’ সম্বোধন করে সালামও দিল। কথা সংক্ষেপ করতে সরাসরি মূল পয়েন্টে চলে গেলাম।
: আচ্ছা মামুন, তুমি যে ‘কমন ল’ সম্পর্ক লিখেছ, ব্যাপারটা একটু খুলে বলবে?
মামুন (আমতা আমতা করে): আংকেল, এটা একটা পার্সোনাল সম্পর্ক আর কি!
: তা আমি জানি, কোন মেয়ের সাথে তোমার সম্পর্ক, এইতো?
: জি আংকেল, জি আংকেল, ঠিক বলেছেন।
: আচ্ছা বলতো, সম্পর্কটা ঠিক কোন পর্যায়ের? মানে, তোমরা একে অন্যের কতটা ঘনিষ্ঠ, বা তোমাদের মধ্যে কিছু হয়েছে কিনা?
: আমরা খুব ক্লোজ আংকেল, খুবই ক্লোজ। আমরা খুব কমিটেড, একে অন্যকে ছাড়া বাঁচবো না তেমন অবস্থা। আমার জন্য অনেক ভালো ভালো বিয়ের প্রস্তাব ও ফিরিয়ে দিয়েছে। আমেরিকার গ্রিনকার্ড পাওয়া পাত্র পর্যন্ত রিফিউজ করেছে। আমি ওকে ছাড়া বাঁচবো না। আমাদের সম্পর্ক এতো ডিপ।
: এবার একটু ডাইরেক্ট অ্যাকশনে গেলাম; কারণ, আমার তো সম্পর্কটা আসলে কী বুঝতে হবে। বললাম, তোমরা কি সেক্স করেছো?
: জি আংকেল, বেশ কয়েকবার। আব্বুকে আবার এসব …
: আরে না কি বলো মামুন, তুমি-আমি ছাড়া পৃথিবীর তৃতীয় কেউ আমরা কী আলাপ করছি জানবে না, তোমার আব্বু তো পরের কথা। তুমি আমাকে নিঃসংকোচে বলতে পারো।
ওকে খানিক স্বাভাবিক করে আবার প্রশ্ন করলাম, “তোমরা কি কোথাও স্বামী-স্ত্রীর মতো একসাথে বসবাস করো?”
: না আংকেল না, আমরা যার যার বাসায় থাকি। আমার এক ফ্রেন্ডের বাসায় ওর বাবা-মা বিদেশ গেলে মাঝে মাঝে মিলিত হই; এটুকুই।
যা বোঝার বুঝে নিলাম। মামুনকে বললাম, তোমাদের দুজনের সম্পর্ক কিন্তু ‘কমন ল' সম্পর্ক নয়। ‘কমন ল’ অন্য বিষয়। একটা সম্পর্ককে ‘কমন ল’ বলতে হলে অনেকগুলো শর্ত পালন করতে হয়। যাক, তোমার ওসব এখন না জানলেও চলবে।
কেবল এ কাহিনীর মামুন বলে কথা নয়, আরও কয়েকটি ক্ষেত্রে কিছু বাংলাদেশি ক্লাইয়েন্টকে 'কমন ল' রিলেশনশিপ বিষয়ে ভ্রান্ত ধারণা পোষণ করতে দেখে এ লেখার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করলাম। কারন, আপনারা কোন বিদেশী ইমিগ্রেশন কনসালটেন্ট বা আরসিআইসি, যাঁর বাংলাদেশের সংস্কৃতি সম্পর্কে ভালো ধারণা নেই, তাঁর সাথে যোগাযোগ করে ইমিগ্রেশন পরামর্শ চাইতে গিয়ে যদি ভুলে ‘কমন ল’ রিলেশনে আছেন বলে উল্লেখ করেন তাহলে তিনি কিন্তু আপনাকে ভুল বোঝার সমূহ সম্ভাবনা থাকে। মনে রাখবেন, চোরাগোপ্তা প্রেমিক প্রেমিকার অনিয়মিত মিলন বয়ফ্রেন্ড-গার্লফ্রেন্ড সম্পর্ক হতে পারে, কিন্তু ‘কমন ল’ রিলেশনশিপ নয়।
একজন নারী ও পুরুষের সম্পর্ক তখনই ‘কমন ল’ রিলেশন হিসেবে গণ্য হবে যখন:
- তারা দুজনই প্রাপ্তবয়স্ক এবং পরষ্পরের সাথে কমপক্ষে এক বছরের জন্য স্বামী-স্ত্রীর মতো সম্পর্ক বজায় রাখেন;
- এক বাসায় অন্তত এক বছরের জন্য একটানা থাকেন (লিভ-টুগেদার);
- বিভিন্ন ব্যক্তিগত ও আর্থিক বিষয়ে স্বামী-স্ত্রীর মতো একে অন্যের উপর নির্ভর করেন; ইত্যাদি।
মোটকথা, সম্পর্কটি হতে হবে বিবাহিত জীবনের অনুরূপ। স্বামী-স্ত্রী যেমন জরুরি প্রয়োজন, যেমন, চাকরি বা ব্যবসা, পরিবারের জরুরি প্রয়োজন, নিকটাত্মীয়ের অসুস্থতা বা মৃত্যু, এমনসব কারণে সাময়িক বিচ্ছিন্ন থাকেন, কমন ল' রিলেশনশিপের ক্ষেত্রেও তা প্রযোজ্য। তবে, যত দ্রুতসম্ভব অন্য কোন প্রয়োজন থাকলে তা চুকিয়ে আবারো তাদের এক ঘরে এসে থাকতে হবে। বিচ্ছিন্নতা হতে হবে সাময়িক বা অস্থায়ী ও সংক্ষিপ্ত। আলাদা থাকার বিষয় যত দীর্ঘায়িত হবে ‘কমন ল' সম্পর্ক প্রমাণ ততো কঠিন হয়ে পড়বে।
কিভাবে প্রমাণ করবেন আপনারা এক বাসা বা এক ঠিকানায় বসবাস করেছেন কিনা? এ বিষয়টি প্রমাণের জন্য আপনার বাসার (ভাড়ায় থাকলে) ভাড়ার যৌথ চুক্তিনামা, বিভিন্ন রকমের ইউটিলিটি, যেমন, পানি, বিদ্যুৎ, গ্যাস, ইত্যাদির যৌথ বিল, যৌথ ইন্স্যুরেন্স পলিসি, ইত্যাদি হতে পারে। আবার আর্থিকভাবে আপনারা পরষ্পর নির্ভরশীল কিনা তা বুঝা যেতে পারে আপনাদের যৌথ ব্যাংক অ্যাকাউন্ট, সঞ্চয়, ঋণ, ক্রেডিট কার্ড ইত্যাদি হতে।
তারমানে, সম্পর্কের গভীরতা অনেক ব্যাপক। অধিকন্তু, কোন বিবাহিত পুরুষ বা নারী পরষ্পর কমপক্ষে এক বছরের বেশি সময়ের জন্য বিচ্ছিন্ন না থাকলে তারা অন্য কারো সাথে ‘কমন ল’ রিলেশনশিপ শুরু করতে পারেন না। একই সময়ে একাধিক পার্টনারের সাথেও ‘কমন ল’ রিলেশনশিপে যাওয়া যায় না।
বাংলাদেশের সমাজ ব্যবস্থায় ‘কমন ল’ রিলেশনশিপে বসবাস করা অনেকটাই অসম্ভব। কাজেই কেউ একজন কেবল মুখে ঘোষণা করলেই হবে না যে তিনি বা তারা ‘কমন ল’ রিলেশনশিপে আছেন।
বাস্তবে এ রিলেশনশিপের সবকটি শর্ত মেনে চলা ততো সহজ নয়। তা ছাড়া প্রশ্ন জাগতে পারে, বিবাহিত জীবনযাপন না করে কেনই বা আপনারা ‘কমন ল’ রিলেশনশিপ বেছে নিলেন? স্বাভাবিক অবস্থায় তো এমনটি হবার কথা নয়।
সত্যি বলতে কী, ‘কমন ল’ সম্পর্কের বিষয় বিবেচনায় আসতে পারে যদি সামাজিক বা অন্য বাঁধার কারণে কোন যুগলের বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া অসম্ভব হয়ে পরে সে-ধরনের ক্ষেত্রে। যেমন ধরুন, সেইম সেক্স রিলেশনশিপ, যা বাংলাদেশসহ অনেক দেশে বৈধ নয়। এ ধরনের অবস্থায় কোনও পুরুষ চাইলেই অন্য কোনও পুরুষকে বিয়ে করে সংসার পাততে পারে না।
ফলে, তারা হয়তো রুমমেট হিসেবে বসবাস করে লোকচক্ষুর আড়ালে স্বামী-স্ত্রীর জীবনযাপন করে গেল মাসের পর মাস, বা বছরের পর বছর। এটি কেবল একটি উদাহরণ, এমন দৃষ্টান্ত অসংখ্য হতে পারে।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ‘কমন ল’ রিলেশনশিপের আলাদা কোনও অর্থ নেই। কিন্তু, কানাডায় এটি একটি স্বীকৃত বিষয় বা সম্পর্ক। ‘সিভিল ল’ এবং ‘কমন ল’- দুইটিরই প্রয়োগ আছে কানাডায়। এ কারণেই একজন বিবাহিত ব্যক্তি যেমন তার স্বামী বা স্ত্রীকে অন্যদেশ হতে কানাডায় স্পন্সর করে আনতে পারেন, একইভাবে, ‘কমন ল’ রিলেশনশিপে থাকা যুগলও একে অন্যকে প্রয়োজনে কানাডায় স্পন্সর করে আনার উদ্যোগ নিতে পারেন।
কানাডার রেজিস্টার্ড ইমিগ্রেশন কনসালটেন্ট বা আরসিআইসি হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে ‘কমন ল’ রিলেশনশিপ নিয়ে অনেক বাংলাদেশির ভুল ধারণা দেখে ইচ্ছে হলো বিষয়টা একটু খোলাসা করি। কেবল সে উদ্দেশ্যেই এ লেখা।
যাক, এ পর্ব আর দীর্ঘ না করি। কানাডায় পড়াশোনা, স্পন্সরশিপ বা অভিবাসন বিষয়ে কোনও বিশেষ প্রশ্ন থাকলে আমাকে নিচের ইমেইল ঠিকানায় জানাতে পারেন। পরের কোনও লেখায় আপনার আগ্রহের প্রতিফলন ঘটানোর প্রয়াস থাকবে।
এছাড়া, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম-এ নিয়মিত চোখ রাখুন কানাডা অভিবাসন নিয়ে আমার সিরিজ লেখা পড়তে। ভবিষ্যতে আপনাদের সাথে আরো অনেক মূল্যবান তথ্য সহভাগের আগ্রহ নিয়ে আজ এখানেই শেষ করি।
লেখক: কানাডীয় ইমিগ্রেশন কনসালটেন্ট, আরসিআইসি।
ইমেইল: [email protected]
২| ০৮ ই নভেম্বর, ২০২০ রাত ১:৪৭
জাহিদুল ইসলাম ২৭ বলেছেন: ২১ বছর বয়স।পাকনামির আদর্শ সময়।এ সময় নিজেকে বড় প্রমানের একটা আপ্রান চেষ্টা থাকে অনেকের--একপ্রকার ইম্যাচুরিটি বলতে পারেন।শব্দটা নতুন শিখেছে;তবে পুরাপুরি শিখে নাই।
৩| ০৮ ই নভেম্বর, ২০২০ রাত ২:৪৯
রাজীব নুর বলেছেন: দাম্পত্য পৃথিবীর সবচেয়ে বড়ো হিপোক্রেসি।
৪| ০৮ ই নভেম্বর, ২০২০ সকাল ৭:০৮
মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন:
গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় । খুবই ভালো লাগলো।
এতোটা বিস্তারিত আমার জানা ছিল না।
পোস্টে এ+।
©somewhere in net ltd.
১| ০৮ ই নভেম্বর, ২০২০ রাত ১২:৪১
স্বপ্নের শঙ্খচিল বলেছেন: আমি আমার ছেলেকে পাঠাতে চাই,
সে এখন আইটির কাজে ফ্রী লান্চ হিসাবে বাংলাদেশে কাজ করে
উপার্জন করছে ।
.................................................................................
কোন ক্যাটাগরী তার জন্য প্রযোজ্য হবে ???