নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
'মেয়েটা তো কানাডিয়ান হয়ে গেছে!'
দেশি এক ভদ্রলোকের সাথে নতুন পরিচয় হলো। থাকেন আমাদের এডমন্টন শহরেই। কানাডা এসেছেন সাত বছর। কথায় কথায় সন্তানের প্রসঙ্গ চলে এলো। বড়োটি কন্যা। বয়স বিশ। ছোট দুটি ছেলে আছে; স্কুলে যায়।
মেয়েটি কি করে জানতে চাইলে উনি বললেন, 'মেয়েটা তো কানাডিয়ান হয়ে গেছে।'
পিআর স্টেটাস নিয়ে কানাডায় টানা তিন বছর থাকলে সিটিজেন বা, নাগরিক হতে আবেদন করা যায়। আবেদন অনুমোদন পেলেই আপনি কানাডার সিটিজেন, বা সংক্ষেপে কানাডিয়ান হয়ে গেলেন। সে চিন্তা থেকেই বললাম, 'কেবল আপনার মেয়ে কেন, এদ্দিনে তো আপনাদের পরিবারের সবাইই কানাডিয়ান হয়ে যাবার কথা। সাত বছর তো মেলা সময়!'
আমার কথা শুনে ভদ্রলোক উত্তর দিলেন, 'না না আমি তা বোঝাচ্ছি না, বলতে চাইছি, কানাডিয়ান হোয়াইটদের সাথে মিশে গেছে।'
আমি বললাম, 'ও হয়তো কম বয়সে এসেছে বলে একটু বেশি মিশেছে, আমরাও তো মিশে যাচ্ছি ধীরে ধীরে, নাকি?'
- ভাই, আপনাকে বুঝাতে পারছি না আসলে; মেয়ে হোয়াইটদের মতো চলাফেরা করে। ক্লাস টেন পর্যন্ত পড়ে আর স্কুলে যায়নি। ফ্রেন্ড (সম্ভবতঃ বয়ফ্রেন্ড বুঝাতে চাইছেন) নিয়ে রাতবিরাতে ঘুরে, এই আর কি! আমার কপালটা আসলে ভালো না। ...
আমি বললাম: 'কিছু মনে করবেন না ভাই, হোয়াইটরা কি ক্লাস টেন'এর পর স্কুল ছেড়ে দেয়? এ তথ্য আপনাকে দিলো কে? আসলে হোয়াইট, ব্ল্যাক বা ব্রাউন বলে কথা নয়, আপনার মেয়ে পড়ালেখায় মনোযোগী বাচ্চাদের সাথে না মিশে অন্যদের সাথে দল পাকিয়েছে বলেই আমার ধারণা। বাংলাদেশে কি হোয়াইট আছে? ওখানেও কি অনেক ছেলেমেয়ের এ অবস্থা হচ্ছে না?'
- ঠিক বলেছেন ভাই, ঠিক বলেছেন। আমরা স্বামী-স্ত্রী রাতে-দিনে দুটো করে চাকুরী করেছি, মেয়েকে সময় দিতে পারিনি। - -
বাস্তবতা হলো, কানাডার কালচারের সাথে বাংলাদেশের অনেক তফাৎ। বাংলাদেশের মতো এখানে রাখঢাক-ঘুরঘুর নেই, এরা সোজাসাপ্টা কথা বলা মানুষ, এখানে সবই খোলামেলা। এখানে গার্লফ্রেন্ড আছে তো আছে, নাই তো নাই। বয়ফ্রেন্ড-গার্লফ্রেন্ড রাস্তায় প্রকাশ্যে চুমু খায়, হাত ধরে বা কোমরে হালকা পেঁচিয়ে হাঁটে, অবস্থা এমনই। ফলে, গোপনে গার্লফ্রেন্ডের সাথে মেলামেশার জন্য কাউকে বাংলাদেশের মতো পরিচয় গোপন করে হোটেল বুকিং, বা যুবলীগনেত্রী পাপিয়ার ডেরায় যেতে হয় না।
বাংলাদেশের মতো রক্ষণশীল দেশ হতে এমন পরিবেশে হঠাৎ এসে অনেক বয়স্ক মানুষও খেঁই হারিয়ে ফেলে, বারো-তেরো বছরের বালিকা সে কোন ছার্। এ কারণেই অনেক সময় নিজের করণীয় স্থির করতে না পেরে এ বয়সের অনেক ছেলেমেয়ে স্রোতের সাথে গা ভাসিয়ে দেয়াই ভালো মনে করে। এ সময়টায় দরকার বাবা-মা'র গাইডেন্স বা তত্বাবধান। কিন্তু, কজন বাবা-মা'ই বা এসব এতটা স্পষ্ট বুঝেন, বা বুঝলেও বাচ্চাদের পেছনে ওভাবে সময় দিতে পারেন? এ বিবেচনায় ভদ্রলোকের কন্যাকে দোষ দেয়ার অবকাশ দেখি না।
দেশী ভাইকে এবার আমার কন্যার কাহিনী শুনালাম।
আলবার্টা বিশ্ববিদ্যালয়ে কন্যার মেডিক্যালের পড়াশোনা (এমডি) শুরুর আগেআগে ওরিয়েন্টেশন অনুষ্ঠানে পেরেন্ট হিসেবে নিমন্ত্রণ পেয়েছিলাম আমরা দুজন। সেদিন মেডিক্যালে ওই ব্যাচে চান্স পাওয়া সবাইকে পরিচয় করিয়ে দিয়ে সাদা কোট (গাওন) পরিয়ে দেয়া হচ্ছিলো। একারণে ওই অনুষ্ঠানকে 'হোয়াইট-কোট সেরিমনি'ও বলা হয়ে থাকে।
ছাত্রছাত্রীর সংখ্যাটা ঠিক মনে নেই; খুব সম্ভব একশ বিশজন। এদের অন্ততঃ একশজনই শ্বেতকায়, মানে, সাদা। বাকিরা চাইনিজ, ব্রাউন বা ব্ল্যাক অরিজিন। কতটা সিরিয়াস বা যোগ্য হলে কানাডায় মেডিক্যালে ভর্তি হওয়া যায় তা কমবেশি সবাই জানেন। আর, সেখানেই সিংহভাগ সাদা। তারমানে, কানাডিয়ান হওয়ার অর্থ কিন্তু বখে যাওয়া শ্বেতাঙ্গদের সাথে ঘনিষ্ঠ মেলামেশা নয়, লেখাপড়ায় সিরিয়াস শ্বেতাঙ্গও আছে বিস্তর।
তারপর ভদ্রলোকের কাছে জানতে চাইলাম তাঁর মেয়েটি এখন কি করে?
জানালেন, মেয়েটি চারপাঁচ বছর নষ্ট করে এখন আবার পড়াশোনা শুরু করতে চাইছে।
তাঁকে আশ্বস্থ করে বললাম, 'দেখেন ভাই, কানাডায় এটা কমন ঘটনা। দুচার বছর তো তেমন কিছুই না, অনেকে দশ পনেরো বছর পরেও স্কুলে ফিরে যায় এবং ভালোও করে। আপনার মেয়েকে একদিন আমাদের বাসায় নিয়ে আসুন, ওর সাথে আপনার ভাবীকে সাথে নিয়ে কথা বলবো। সে এখানে টিচার। প্রয়োজনে আমার ডাক্তার কন্যার সাথেও মেয়েকে পরিচয় করিয়ে দেব। ওর সামনে পুরো ভবিষ্যতই পরে আছে। স্কুলে ফিরে গেলে ঠিকই ভালো করবে।'
আমার কথা শুনে তাঁর চেহারায় এতদিন জমে থাকা মেঘ দ্রুতই কেটে যাচ্ছে মনে হলো।
[email protected]
২| ৩০ শে অক্টোবর, ২০২০ সকাল ৮:২০
মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন:
সুন্দর পোস্ট।
৩| ৩০ শে অক্টোবর, ২০২০ সকাল ৯:৩৫
সোহানী বলেছেন: বাস্তবতার গল্প।
৪| ৩০ শে অক্টোবর, ২০২০ রাত ৯:৩৪
মা.হাসান বলেছেন: মেয়ে কানাডিয়ান হয়ে গেছে এটা যদি দোষের হয়, কানাডিয়ান হয়ে যাওয়া সম্পর্কে যদি ওনার নেগেটিভ ধারণা থাকে তাহলে ইমিগ্রেশন নিয়ে কানাডায় কেনো গেলেন বুঝলাম না। যা হোক, মেয়ে পুনরায় লেখাপড়া শুরু করতে চেয়েছে এটা ভালো কথা। বাবা-মার আশা পুরন হোক। সদুপদেশ দেয়ায় আপনাকে ধন্যবাদ।
©somewhere in net ltd.
১| ৩০ শে অক্টোবর, ২০২০ রাত ৩:২১
রাজীব নুর বলেছেন: বাংলাদেশ থেকে হাজার হাজার লোক কানাডা যাওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছে।