নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
পোকো'র চলে যাওয়া =
এডমন্টন শহরে আমাদের পাশের বাসার কুকুরটির নাম পোকো। বর্তমান বাসায় আমরা সাতবছর ধরে আছি। তার মানে, পোকোকেও দেখছি সাত বছর। এই সাত বছরে পোকোর তেমন পরিবর্তন দেখিনি।
প্রতিবেশী ভদ্রমহিলার নাম বনি ব্ল্যাসিক। ইউক্রেন হতে অনেক বছর আগে তাঁর বাবা-মা কানাডায় এসেছিলেন। বনির জন্ম এখানেই। এ শহরের সিটি অফিসের একাউন্টস সেকশনের হেড হিসেবে অবসরে গেছেন বছর দুয়েক হলো। সে হিসেবে বয়স সত্তরের কাছাকাছি। তাঁর স্বামী মারা গেছেন প্রায় বারো বছর। ক্যান্সারে প্রাণ হারিয়েছেন ভদ্রলোক। ছিলেন ইঞ্জিনিয়ার। মারা যাবার বছর চারেক আগে পোকোকে মাত্র কয়েক সপ্তাহের বেবী হিসেবে তিনি কিনেছিলেন। সে কারণে পোকো'র মাঝে প্রয়াত স্বামীর স্মৃতিও খুঁজে ফেরেন বনি।
রোজ সকাল আর বিকেলে পোকোকে নিয়ে বনি হাঁটতে বের হন। ঘন্টাখানেক ঘোরাফেরা করে বাসায় ফেরেন। বনির হাতে থাকে কয়েকটি প্লাস্টিক ব্যাগ। মাঝেমাঝে কোমরেও গুঁজিয়ে রাখেন। রাস্তার ধারে কোনো কারণে পোকো বাথরুম সারলে প্লাস্টিক ব্যাগে ভরে নেন বনি। তারপর কাছাকাছি কোথাও ডাস্টবিন দেখলে তাতে ছুঁড়ে ফেলেন। এটাই এ দেশের নিয়ম।
পোকোর গলায় ছোট একটি বেল্টের সাথে রশি বাঁধা থাকে। রাশির অপরপ্রান্ত থাকে বনির কোমরের বেল্টে গোঁজা। নিত্যদিন এ দৃশ্য দেখে দেখে আমরা বেশ অভ্যস্ত হয়ে পড়েছি। বনির এক ছেলে, দু'মেয়ে। তারা সবাই এডাল্ট হয়ে যে যার মতো আলাদা থাকে। কালেভদ্রে মায়ের সাথে দেখা করে আবার চলে যায়। পোকো-ই এখন বনির সবসময়ের সাথী; পরিবারেরই অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ।
কাল বিকেলে দেখলাম বনি পোকোকে কাঁধে করে কোথায় যেন নিয়ে যাচ্ছেন। ডান হাতে পোকো, আর বাম হাতে টিস্যু পেপারে চোখ মুছছেন। পোকোর চোখ দুটো আধখোলা, ভেজা; নির্দিষ্ট করে কোনো কিছুর দিকে তাকাচ্ছে বলেও মনে হলো না। গ্রামগঞ্জে বাউল সাধকরা যেমন একতারা হাতে গান গাইতে গাইতে লক্ষ্যহীনভাবে একদৃষ্টে তাকিয়ে থাকেন, অনেকটা সে ভঙ্গিতেই পোকোর চোখজোড়া। পৃথিবীতে যা দেখার সে যেন দেখে ফেলেছে, যা জানার জেনে ফেলেছে।
বনি যাচ্ছিলেন বাসার বাইরে, আর, আমি আমাদের বাসায় ঢুকছিলাম। ড্রাইভওয়েতে চোখাচোখি হতেই জানতে চাইলাম পোকো অসুস্থ কিনা। হ্যাঁ সূচক জবাব দিয়ে বনি জানালেন, পোকোর বয়স এখন ষোলো চলছে। এই জাতের কুকুর সচরাচর চৌদ্দ-পনেরো বছর বাঁচে। গতরাতে পোকোর খুব সম্ভবতঃ স্ট্রোক করেছে। সে দাঁড়াতে পারছে না। তাই, ভেটের (পশু চিকিৎসক) কাছে নিয়ে যাচ্ছেন ওকে।
জানতে চাইলাম, ভেট কি পোকোকে সুস্থ করে তুলতে পারবেন?
- না, ওর বয়স হয়ে গেছে, কিছুটা সুস্থ হলেও কষ্ট পেয়ে ধুঁকেধুঁকে মারা যাবে।
তাহলে এখন উপায়?
- উপায় কিছু নেই। ভেটের কাছে রেখে আসবো। তারাই তার শান্তিপূর্ণ মরণ নিশ্চিত করে বডি ডিসপোজ করবে। কথাটা বলতেই তিনি আরেকবার চোখ মুছলেন। তাঁকে নতুন প্রশ্ন করে আর কষ্ট দিলাম না।
পোকোকে আর দেখবো না ভেবে আমার বুকটাও ভারী হয়ে গেলো। এর আগে কোন কুকুরের মৃত্যু নিয়ে এতটা গভীর করে ভেবেছি মনে পড়ে না। দরজার কাছে উদ্ভ্রান্তের মতো দাঁড়িয়ে বনির কাঁধে চড়া পোকোর চলে যাওয়া দেখছি।
আমার ঠিক সামনেই আমাদের বাসার যে আপেল গাছ, তার পাতাগুলোর বেশির ভাগই বিবর্ণ হয়ে ঝরে পড়েছে মাটিতে। ঘাসের সবুজ রঙও বিলীন হয়েছে ঝরে পড়া পাতায়। পোকোরা আমার কেউ না; তারপরও, পত্রহীন আপেল গাছের ডালপালার ফাঁক দিয়ে যতটা পারি দেখার চেষ্টা করি পোকোর শেষযাত্রা। [email protected]
১২ ই অক্টোবর, ২০২০ ভোর ৬:০০
এমএলজি বলেছেন: ভীষণ।
২| ১০ ই অক্টোবর, ২০২০ দুপুর ১২:১৫
রাজীব নুর বলেছেন: বয়স হলে গেলে সবারই কষ্ট। পোকো'র জন্য মায়া লাগছে।
১২ ই অক্টোবর, ২০২০ ভোর ৬:০০
এমএলজি বলেছেন: ধন্যবাদ।
৩| ১০ ই অক্টোবর, ২০২০ রাত ৮:২৩
সৈয়দ মোজাদ্দাদ আল হাসানাত বলেছেন: একদিন আমাদেরকেও কেও না কেও ডিসপোজ করতে নিয়ে যাবে ।
১২ ই অক্টোবর, ২০২০ ভোর ৫:৫৯
এমএলজি বলেছেন: ঠিক বলেছেন। ধন্যবাদ।
©somewhere in net ltd.
১| ১০ ই অক্টোবর, ২০২০ ভোর ৫:৪৫
চাঁদগাজী বলেছেন:
লেখাটি পছন্দ হয়েছে; কষ্টকর ঘটনা