নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
তুমি জীবন খুঁজো সুখের নীড়ে, আমি জীবন খুঁজি দুঃখের ভীরে।,,, রহমান লতিফ,,,,
সোনালী স্বপ্নের অপমৃত্যু
(গল্প)-------------------রহমান লতিফ
পর্ব ১
**********
মৌলভী জমিরউদ্দিন একজন সাদাসিদে নিপাঠ ভদ্রলোক।সমাজে উনার খুব ভালো অবস্থান।মৌলভীবাজার জেলার অন্তগর্ত কমলগঞ্জ উপজেলার অনতিদূরেই অবস্থিত সাহেবের বাজারের পাশে সোনাতলা আদর্শ গ্রামে। গ্রামেটির সবচেয়ে সুন্দর রুপ যা ঘুমন্ত রাতে কিরণ দেয় তা হলো গাঁয়ের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে মনু নদীর ছোট শাখা।যার তীর ঘেষে মিনিট দুয়েক দুরত্বে চারপাশে কলাগাছের বেড়া,টিনের ছাউনির হাফ পাকা একটি বাড়ি।এই বাড়ির মালিক হলেন মৌলভী জমির সাহেব।
মধ্যবিত্ত মৌলভী সাহেবের দুই ছেলে।বড় ছেলের রাহাত আর ছোট ছেলে রাজন। দু'জনেই ইসলামী শিক্ষার পাশাপাশি আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত হচ্ছে।
ইসলামী মূল্যবোধ ও আধুনিক প্রগতিশীল শিক্ষার আলোকে গড়ে ওঠা মৌলভী সাহেবের দু ছেলে যেন মানিকজোর।
দেখতে যেমন সুদর্শন তেমনি শান্ত শিষ্ট।
মৌলভী সাহেব তাদের বাড়ীর পাশের ইশবপুর জামেয়া ইসলামিয়ায় শিক্ষকতা করেন এবং মাঝেমধ্যে বিভিন্ন ইসলামীর ওয়াজ মাহফিলে বক্তা হিসাবে অংশগ্রহণ করে যা টাকা পয়সা পান তা দিয়ে বেশ ভালোভাবে জীবিকা নির্বাহ করতে সক্ষম।
মৌলভী সাহেব তেমন কোন লোভ লালসা নেই। লোভ না থাকাতেই তার জীবন সহজ,সরল,সাদামাটা টিক তার চরিত্রের মতো।
পারিবারিকভাবে মৌলভী সাহেব খুব সুখের সাথে দিনাতিপাত করছিলেন যেখানে ছেলে দুটো কে মানুষ করাই তার মূল লক্ষ্য,ছেলেরা যেন শিক্ষার আলো পেয়ে নিজেদের আলোকিত করে কীর্তি ছড়ায়, তাই নিজের সাধ্যমতো তিনি সবকিছু করে যাচ্ছেন।
এরই মধ্যে বড় ছেলে রাহাত উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় পাশ করে সিলেট শাহজালাল বিশ্ব বিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগে পড়তে শুরু করে।
ছেলে পদার্থ বিজ্ঞানী হবে,শিক্ষকতা করবে!
বিজ্ঞানের সাথে ইসলাম সম্পর্কে গবেষণা করবে আরো কত স্বপ্ন মৌলভী সাহেবে মনের মনিকোঠায় বুনন করতে থাকেন মনে প্রাণে।
এই জগত সংসারের চিরায়ত নিয়ম অনুযায়ী পিতার যতদুর চোখ যায় ততদূর স্বপ্নের পাখা মেলে,স্বপ্নেরা সযত্নে হৃদয়ে অঙ্কুরিত হয় সন্তানের ভবিষ্যত নিয়ে মৌলভী সাহেবও তার ব্যাতিক্রম নয়,সন্তানদের নিয়ে তার অনেক আশা রাজ্যসম বাসনা বুকে নিশিদিন পুষতে থাকেন।
সাল ২০০৯, বড়ছেলে রাহাত সবেমাত্র প্রথম সেমিষ্টার পরীক্ষা দেবে এমন সময় ইংল্যান্ডে স্টুডেন্ট ভিসা পদ্ধতি সহজ হওয়াতে সে ইংল্যান্ডের একটা নামকরা এসেক্স বিশ্ববিদ্যালয়ে দরখাস্ত করে এবং স্কলারশীপ অর্জন করতে সক্ষম হয়।
পরবর্তীতে নিকটস্থ ব্রিটিশ হাইকমিশনে আনুষঙ্গিক কাগজপত্র জমা দেওয়ার একমাসের মাথায় তার ভিসার আবেদন মঞ্জুর হয় ।
রাহাত সাড়ে তিন বছরের ভিসা পায় যেখান র্টাম টাইমে বিশ ঘন্টা আর ভেকেশনে ফুল টাইম কাজের অনুমতি আছে।
জীবনের এই প্রথম মৌলভী সাহেব নিজের কাছে নিজেকে লোভ ভাবতে লাগলেন। ছেলে লন্ডন যাওয়ায় লোভ।ছেলে লন্ডন পড়তে যাবে,ভালো বিশ্ব বিদ্যালয়ে পড়বে,বিদেশী ডিগ্রি লাভ করে খ্যাতি অর্জন করবে ভেবে মৌলভী সাহেবের মনের অজান্তেই সুখের কান্না চলে আসে।
অবশেষে রাহাতের লন্ডনের উদ্দেশ্য রওয়ানা দেওয়ার দিন এলো,একে একে সবার নিকট ------------
আত্মীয়, স্বজন ও বন্ধু বান্ধবদের কাছ থেকে বিদায় নিলো,
মায়ের কাছ থেকে বিদায় নেয়া তার জন্য সুখকর ছিলো না!
মায়ের মলিন আর কান্না জড়ানো মুখাবয়ব তার কাছে মনে হলো পৃথিবীর সবচেয়ে কষ্টকর একটা বিষয়।
বাড়ী থেকে এয়ারপোর্টে যাবার সময় তার সাথে শুধু বাবা ও ছোট ভাই রাহাতের সঙ্গী হলেন।
বিকাল ছয় ঘটিকার সময় তার ফ্লাইট, আর এক ঘন্টা আগে তাকে ইমিগ্রেশন চেকের জন্যে চলে যেতে হবে,
ছোট ভাইকে বুকে জড়িয়ে রাহাত বলতে থাকলো বাবা মায়ের খেয়াল করো,
মনযোগ দিয়ে লেখাপড়া করো--
এবার বাবাকে জড়িয়ে ধরলো রাহাত,মনে হলো এক পরম প্রাপ্তি এক টুকরো নিশ্চিত ভরসাস্থল।
এর আগেও সে বাবর সাথে কোলাকুলি করেছে, কত জড়িয়ে ধরেছে কিন্ত আজকে তার অন্য রকম অনুভূতি মনে হলো,
এ যেন স্রষ্টার প্রতিশ্রুতির এক হেভেনলি সুঘ্রাণে তার হৃদয়জুড়ে শুভতার সুভাস ছড়ালো।
রাহাত বাবাকে শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়ে কংক্রিটের মতো শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।
এবার বাবা ছেলে চোখে চোখে তাকিয়ে একে অপরকে নতুনভাবে দেখলো।
অশ্রুসজল নয়নে বারিধারা নিয়ে প্রথম বারের মতো দুটি চোখ অপর দুটি চোঁখোর সাথে কথা বললো।
-----------এই কথা যেন শেষ হতে চায় না! শেষ হবার নয়!
ছোট ভাই রাহাতের পিছনে হাত দিয়ে বললো বড়ভাই দেরী হয়ে যাচ্ছে- মাইকে ঘোষনা আসছে বোডিং করার জন্যে , রাহাত এবার সত্যি বিদায় নেলো -নব স্বপ্নের পানে। জন্মভূমি,জন্ম দাতা সব সব ছেড়ে প্রবাসে।
মৌলভী সাহেব যে লোভে মনের আয়নায় নিজেকে সুখী দেখছিলেন সহসাই এই সুখ অচিনপুরে তলিয় শোকের সাগরে ভাসিয়ে গেলো।
আদরের ছেলে তার কাছ থেকে চলে গেলো।মনে হলো ছেলে আজ যাচ্ছে চলে বহুদূর! পেরিয়ে সাত সমুদ্রর! বাবার কাছে থেকে অচিনপুর।
পর্ব ২
**********
রাহাত এসেক্স বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে এসে প্রথম তিন মাস ভালোই কাটছিলো সাথে ছিলো পার্ট টাইম কাজ লকোল সুপারশপে।
এরিমধ্যে টিউশন ফির টাকা--
নিজের খরচের টাকা,---
দেশে পরিবারকে সাহায্য করা সবকিছু তার উপর চাপ তৈরি করে ফলে,-
সে সিদ্ধান্ত নেয় ইউনিভার্সিটি ছেড়ে প্রাইভেট কলেজে ভর্তি হবে।
কারণ সে অতি সহজেই বুঝে গেলো এখানে শিক্ষা নিয়ে ভালোই ব্যানিজ্য চলেছে,
যেখানে ইউনিভার্সিটি টিউশন ফি বছরে নয় হাজার পাউন্ড সেখানে কলেজ ফি আড়াই হাজার পাউন্ড আর কলেজ পড়ার চাপ কম ফলে সে কাজ ও বেশী করতে পারবে।
এমতাবস্থায় সে ইউনিভার্সিটির পাঠ চুকিয়ে একটি নাম সর্বস ভিসা কলেজে ভর্তি হয়, যেখানে এক বছরের জন্য এক হাজার পাউন্ডের মধ্যে টিউশন ফির খরচ হিসাবে ফায়সালা করলো।
যেহেতু কলেজে তেমন একটা যাওয়ার প্রয়োজন নেই তাই রাহাত ফুল টাইম এবং ওভার টাইম কাজ করে বেশ টাকা পয়সা সঞ্চয় করতে লাগলো এবং দেশে বাবাকে টাকা পয়সা দিয়ে সাহায্য করতে লাগলো।
এভাবেই তার জীবনের মূল্যবান সাড়ে তিনটি বৎসর কেটে গেল কেমন করে রাহাত বুঝে উঠতে পারলো না, যখন ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে এলো সে হিসাব মিলাতে লাগলো গত তিন বছর এই প্রবাস জীবনে আসলে কি করলাম?
সে হিসাবের পাতা মিলাতে গিয়ে দেখলো---
গত তিন বছরে তার,
-------------বেশ কিছু টাকা পয়সা জমানো হলো---
------------দেশে বাবকে সাহায্য করা হলো--
-----------কিছু জমিজমা কেনা হলো---
--------ছোট্ট ভাইকে কলেজ পড়ার টাকা পয়সা দেয়া হলো -
কিন্ত্ ----নিজের জন্য কিছুই হলো না---
---------না হলো একটা ডিগ্রি নেয়া--
--------না হলো ভালোভাবে বেঁচে থাকা--
--------না হলো সাধ ও সাধ্যের নূন্যতম চাহিদা পূরণ।
রাহাত খুব বিষাদগ্রস্হ ও বেদনাতুর হয়ে কতক্ষণ নীরবে অশ্রু ফেললো। যাক যা হবার তো হয়েছে অন্তত বাবাকে তো সুখী রাখতে পেরিছি,এটাই সান্তনা।
এবার রাহাতের ভিসা বাড়াতে হবে যার জন্যে তার দরকার প্রায় হাজার তিনেক টাকা,যা তার কাছে মজুদ আছে,নতুন কলেজে ভর্তি হবে এমন সময় দেশ থেকে ফোন আসলো রাহাতের বাবার পায়ের গোড়ালিতো গুটি জাতিয় একটি ফোড়ন হওয়াতে তিনি ডাক্তারে যান এবং ইনভেস্টিগেশনে দেখা যায় তার শরীরের ডায়বেটিস খুব বেশি। চিকিৎসার জন্য তিনি সিলেট মেডিকেল কলেজে ভর্তি হয়েছেন।
বাবর এই অবস্থা শুনে যা টাকা ছিল সাথে সাথে তা দেশে প্রেরণ করে দেয়। নিজের কলেজ ভর্তি থেকে বাবার হাসপাতালের ভর্তির খরচ দেয়া তার কাছে জরুরী মনে হলো তবুও সুখের বিষয় যে রাহাতের পুনরায় ভিসার আবেদন ও টাকার জন্য তাকে তেমন বেগ পেতে হয়নি। তার রুমমেট ও মেসের অন্যান্য বন্ধুরা মিলে তা দিয়ে দিলো।রাহাত বিধাতাকে ধন্যবাদ দিলো ভাবলো আসলেই ছোটবেলায় বাবার কাছ থেকে যা শিখেছিল তার প্রমাণ আজ পোলো।
বাবা বলতেন---
পিতামাতাকে সাহায্য করলো আল্লাহ নিজ থেকে সাহায্যের হাত বাড়ান ও কঠিন কাজ পানির মতো সহজ করে দেন।
ঠিক মনে মনে যখন এসব ভাবছিলো ঠিক তখনই দেশ থেকে খবর এলো বাবার বাম পা হাঁটু অবধি কেটে ফেলতে হবে।
রাহাত এই খবর শুনার পর পাহাড় ধসের সমান মাথায় বোঝা নিয়ে বিরহে কাথর হয়ে কাঁদতে লাগলো।
নিয়তির উপর তো কারো হাত নেই, তাই কষ্টগুলো বুকের মধ্যে চাপা দিয়ে রাখলো।
প্রায় দু মাস পর রাহাতের আবারো সাতাশ মাসের ভিসা মঞ্জুর হলো।
ভিসাতো হলো কিন্ত সমস্যা শুরু হলো নতুন করে,
এবার তার কাজের অনুমতি নেই।
দু হাজার এগারো সালের ইংল্যান্ডের ইমিগ্রেশন নীতি অনুযায়ী কোন কলেজ থেকে পুনরায় ভিসার আবেদন করলে কাজের অনুমোদন নেই যা কেবলমাত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা পেয়ে থাকবে।
এটা অবশ্যই মানতে হবে যে বৃটিশ সরকার ভিসা কলেজর অনিয়ম ও তাঁর অপব্যবহার বুঝতে পেরে এই কঠিন নিয়ম প্রবর্তন করে।
যার ফলে অনেক কলেজ বন্ধ হয়ে পড়ে ও নতুন পদ্ধতিতে খাপ খেয়ে চলতে অনেকে হিমশিম খেতে খেতে সরে পড়ে।
রাহাতের যেহেতু ভিসার শর্তানুযায়ী কাজের কোন অনুমতি নেই তাই যেখানে নগদ টাকা দেয় এবং কোন ঝামেলায় পড়তে না হয় সেই রকম একটা কাজ ও কাজের পরিবেশ খুঁজতে লাগলে।
বৃটেনে কাজের বৈধ অনুমতি না থাকলে কোন কোম্পানি তাকে কাজে নিবে না বা কাজের দরখাস্ত করা যাবে না,
এখন একমাত্র উপায় হলো এশিয়ান গোসারির দোকান,কাপড়ের দোকান কিন্ত তাতে যা টাকা পাওয়া যাবে তা দিয়ে রুম ভাড়া,খাবারের যোগান দিয়ে তার জন্য বাঁচা কষ্টের হয়ে যাবে।
এক্ষেএে সহজ হলো ইন্ডিয়ান রেষ্টুরেন্ট যেখানে থাকা খাওয়ার সুবিধা পাওয়া যাবে কিন্ত আসার পর সে কখনো রেষ্টুরেন্টে কাজ করে নাই কারণ সে বন্ধুদের কাজ থেকে অনেক খারাপ দিক শুনেছে ইন্ডিয়ান রেষ্টুরেন্টের ব্যাপারে।
সেখানে মানুষকে কোন মূল্য দেওয়া হয় না,
ঘন্টার পর ঘন্টা কাজ করার পর এক কি দুই পাউন্ড করে ঘন্টায় মজুরী দেয়া হয়।
মালিকের জ্বালাতন আরো কত বাজে কথা।
কিন্তু কি আর করা যায় এই মুহূর্তে? এখন আর পছন্দের কোন মূল্য নেই।বেঁচে থাকাটা যেখানে বড় সেখানে পছন্দ আর সাধ আহ্লাদ মিথ্যা।
পর্ব ৩
**********
লন্ডনে আসার পর থেকেই রাহাত ইষ্ট লন্ডনের বাংগালী অধ্যুষিত স্টেপনী গ্রীন এলাকায় স্টুডেন্ট ম্যাচে রুম শেয়ার করে বসবাস করে।
এখন যেহেতু কাজের অনুমতি নেই তাই --------------------------
-----------যে সমস্ত জায়গায় থাকার ব্যবস্থা আছে সেখানে তাকে চলে যেতে হবে।
-----------তার মনে হয় আর এখানে থাকা হবে না।
------------সে জানতে ও বুঝতে পারলো লন্ডনের আশেপাশের কোন রেষ্টুরেন্টে থাকার জায়গা নেই,কারণ তারা সহজেই জনবল পেয়ে
যায়।
ব্রিটিশ বাংগালীরা সরকারের কাছ থেকে বিভিন্ন বেনিফিট নেয়।যারা সরকারের সাথে মিথ্যা কথা বলে যে, আমরা কাজে নেই সে সমস্ত লোক কম টাকায় 'ক্যাশ ইন হ্যানড' কাজ করে।এরফলে অন্য যারা দক্ষ লোক বা যাদের কাজের অনুমতি নেই তাদেরকে রেস্টুরেন্টের মালিকরা নিয়োগ দেয় না এবং থাকার কোন সুবিধা নেই।
রাহাতকে তার বন্ধু সোহাগ একটি বাংগালী জব সেন্টারে নিয়ে গেলো। যাদের কাজ হলো বিশ পাউন্ডে ইংল্যান্ডের বিভিন্ন স্হানে ছড়িয়ে থাকা বাংগালী রেষ্টুরেন্টে কাজের লোক দেয়। তার রেস্টুরেন্ট ফোন করে বা কতৃপক্ষ অনেক সময় নিজে ফোন করে লোকজনের প্রয়োজনীয়তা ও নিয়োগের শর্ত জানায়।
জব সেন্টারের মাধ্যমে চেমসফোর্ডে একটি বাংগালী রেষ্টুরেন্টে তার কাজ হয়ে এবং সে লুকিয়ে কাজ করতে লাগলো। যেখানে আগে প্রতি সপ্তাহে চল্লিশ হাজার টাকা রোজগার করতে পারতে সেখানে বাংগালী রেষ্টুরেন্টে সপ্তাহে পনের হাজার টাকা কোনভাবে রোজগার করতে পারে। বাংগালী রেষ্টুরেন্টের মালিকেরা যাদের কাজের অনুমতি নেই তাদেরকে কম বেতন ও কম সুযোগ সুবিধা দেন যা সে বুঝতে পারলো কিন্ত মুখ ফুটে কিছু বলতে পারলো না।
তার উপর মধ্যে আবার ইমিগ্রেশনের কড়াকড়িতে বুকের মাঝে ভয় কখন জানি আবার ধরপাকড় করে তা মনের ভেতর ঘুর্ণিপাক করে বিষন্নতার ছায়া ফেলে, এসব ভাবলে তার নিজের প্রতি ঘৃণা হয়।
এই গহীন তপোবনে তার বাস যেখানে আলোর উৎস দেখা হয় না আর এর সবিই ভাগ্য বলে মেনে নিলো।
এদিক বাবর অবস্থা খুব খারাপ, প্রতিদিন ইনসুলিনের উপর ভরসা করে তার জীবন চলছে তার চিকিৎসার ও ঔষধের জন্য রাহাতকে টাকা পয়সা যেমন করে হোক পাঠাতে হয়। সেই এখন পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম লোক তাই যেমন করে হোক যে পরিবেশ হোক তাকে মানিয়ে চলতে হবে। এমনই করে প্রায় দশ মাস চলে গোলো, সময় কত দ্রুত যাই সে আজও বুঝতে পারলো না,সময় যেন লাগাম ছাড়া ঘোড়া ছুটছে তো ছুটছে।
শনিবারে ইংল্যান্ডে সাধারণত ছুটির দিন আর রেষ্টুরেন্টে যেন উৎসবের দিন,সকাল থেকে চলে সাজ সাজ রব , সামনে পিছনে সবাই যার যার মতো করে শুধু কাজ আর কাজ বিকাল বেলার জন্যে কঠিন যুদ্ধের কামান, গোলাবারুদ মজুত করে। বিকেল কোন কারণে যদি একটি কাষ্টমার অসুখী হয় তাহলে সবাই অস্থির হয়ে ওঠে।
ঠিক এমনি এক শনিবারে রাত আনুমানিক আট ঘটিকার সময়,বৃটিশ ইমিগ্রেশন কর্মকর্তাদের ইউনিট এলো রাহাতের কাজের জায়গায় এসে সবাইকে একে একে ভিসার ও কাজের অনুমতি ইত্যাদি যাচাই করতে লাগলো।
ইমিগ্রেশন সার্ভিসের লোকজন সামনের দরজা দিয়ে প্রবেশ করতেছিলো ঠিক সে সময় রাহাত রেষ্টুরেন্টের মদের বারের সামনে ছিলো এবং তারা তার এই রেষ্টুরেন্টে কাজের সম্পৃক্ততা আঁচ করতে পেলো।
রাহাতের আরেক সহকর্মীকে পুলিশ ভেনে উঠাতে দেখে রাহাত ঘাবড়ে গেলো তার মনে হলো-
তাকে এইভাবে তুলে নিয়ে দেশে পাঠিয়ে দিবে? বাবর চেহারা চোখের সামনে ভেসে এলো! ভাবলো আমার পঙ্গু বাবাকে তাহলে কে দেখাশোনা করবে?
কিভাবে চিকিৎসার টাকা জোগাড় হবে?
তার এই কান্না জড়িত মুখ দেখে ইমিগ্রেশন অফিসারদের বুঝতে দেরী হলো না তার অবস্থা। তাকে জিগ্যেসাবাদ শেষে ভেনে করে তুলে নিয়ে গেলো।
গাড়ির ভেনে উঠার সাথে সাথে রাহাত মৃদু স্বরে ডাকতে লাগলো ---বাবা! বাবা! বাবা!
---এবার আমার কি হবে?
--আমি কি তোমার চিকিৎসা করাতে পারবো না?
---দেশে ফিরে গেলে কি কোন কাজ পাবো?
রাহাত ভাবলো আসলে তো আমার লেখাপড়ার যোগ্যতা উচ্চ মাধ্যমিক যদিও আমি প্রথম বছরের জন্যে বিশ্ব বিদ্যালয়ে উপস্থিতি দিয়েছিলাম তথাপি আমি বড়জোর একটা এম. এল এস, একটা কেরানী,পিয়নের চাকরি পেতে পারি।
--তাতে কি পরিবার চলবে?
-এমন হলে সমাজের লোকজন বাবাকে কতই না তিরস্কার করবে!
-যদি লন্ডনের স্বপ্ন না দেখতো তাহলে লেখাপড়া শেষ করে নিদেনপক্ষে একটা শিক্ষকতার চাকরি তো পেতাম। না হলে হয়তো টিউশনি করে জীবনটা চলে যেত।
এখন কি হবে? উপায় কি এই বিপদ থেকে বাঁচার?
সে আর বেশি কিছু ভাবতে পারলো না। মাথা ধরে আসছে। সে শুধু মৃর্ছা যাওয়ার আবস্থায় পতিত হলো।
রাহাতকে নিকটস্থ পুলিশ স্টেশনে একটা রুমে নিয়ে গিলো যাকে পুলিশ রিমান্ডের রুম বলা হয়।
এক বিশাল বড় চার দেয়াল যার চারপাশে আবদ্ধ,ছোট একটা টয়লেটে রুমের ভিতর দেয়াল ঘেষে, রাহাতের মনে হলো এটা বুঝি নরকের কোন এক অশুভ ছায়া।
এখানে থাকলে সে মারা যাবার সম্ভাবনা খুব প্রকট।
এভাবে কি কোন মানুষ বাঁচতে পারে?
কিছুক্ষণ পর তার রুমে এসে একজন কড়া নাড়ালো, পুলিশ অফিসার! হ্যাঁ তাই তো!
অফিসার বললো ---
তোমাকে এবার ইন্টারভিউ দিতে হবে।
তুমি চাইলে ফ্রি উকিল নিতে পারবে আর না চাইলে না।
-- কি সুন্দর আইনি ব্যবস্থা -- রাহাত ভাবলো
-- এখানে অপরাধী কেও আইনি সুযোগ সুবিধা নেওয়ায় অধিকার দেয়া হয় সুবিচারের নিমিত্তে।
----আসলেই দেশটা কতটা সভ্য!
-রাহাত অফিসারকে জানালো--
সে লিগ্যাল এইড নিতে চায় -
এমতাবস্থায় তার জন্য ফ্রি উকিলের জন্যে ইমিগ্রেশন পুলিশ যোগাযোগ করলো।
অফিসার বললো---
এক ঘন্টার মত লাগবে সলিসিটর আসতে।
এই এক ঘন্টা এখানে এই রুমে থাকো!
এই খানে খাবারের সুবিধা আছে সে কি খাবে তা বলপ দিলে হবে।
কোন কিছু প্রয়োজন হলে এখানে কলিং বেল দিও।
অফিসার আরো বললো---
ইন্টারভিউ শেষ হলে তোমাকে এখান থেকে ইমিগ্রেশন ডিটেনশন সেন্টারে নিয়ে যাওয়া হবে।
যেখানে তুমি ভালো রোম পাবে।
এই কষ্টের মাঝেও রাহাত বিদ্রুপের হাসি হাসলো।
ভালো রুম--- আগে তো বাঁচি--
এই দীর্ঘ প্রক্রিয়ার ভেতরেই কয়েক ঘন্টা চলে গেলো। রাত এক ঘটিকার দিকে রুমে একজন এসে বললো তাকে ভোর ছয় টার দিকে ডিটেনশন সেন্টারে নিয়ে যাওয়া হবে। সেখান থেকে নিদির্ষ্ট পেপার কাজ ছেড়ে তাকে দেশে পাঠানো হবে। সে চাইলে সেখান থেকে আপিল করতে পারবে।
রাহাতের মোবাইল ফোন, মানিব্যাগ, হাতঘড়ি সহ যাবতীয় জিনিস থানায় জমা রাখা সে চাইলেও কারো সাথে যোগাযোগ করতে পারবে না।
আবশ্য পুলিশ জানিয়েছে ডিটেনশন সেন্টারে যাওয়ার পর তাকে ফোন ফেরত দেয়া হবে,
যদি তা স্মার্টফোন না হয় আর স্মার্টফোন হলে তাহলে তা তাদের অধীনে থাকবে।
আত্মার টান নাকি সবচেয়ে বড় টান!
হৃদয়ে জানে হৃদয়ের ব্যাথা আর দুটি হৃদয় যদি একই অন্তরাত্মা হয় তাহলে এক হৃদয়ের শোক অন্য হৃদয় অনুভব করতে পারে হোক সে যতই দুরে শত নটিক্যাল মাইল সুদুরে ।
রাহাতের এই অবস্থা তার বাবার হৃদয়ে আঁচ করতে পেরে তার সাথে কথা বলার জন্য অসহায়ের মতো ছটফট করতে লাগলেন,
কিন্তু মোবাইল বন্ধ থাকার দরুন দেশে থেকেও লন্ডন থেকে কেউ রাহাতের ফোনে যোগাযোগ করতে পারে নাই,
রাহাতের বন্ধু সোহাগ কম করে হলেও একশত কল পেয়েছে দেশ থেকে, রাহাতের বাবা, আত্মীয় স্বজন বন্ধু সবাই রাহাতের কথা জানতে চায়, কার বাবা শুধু একটিবার ছেলের কথা শুনতে চায়।
জানতে চায়!
তার বুকের মানিক কোথায় আছে?
কেমন আছে? ওর কেন বিপদ কি না?
রাহাতের বন্ধু সোহাগ ও যখন কোন সদুত্তর দিতে পারলো না, শুধু বললো, সকালে রাহাতের কাজের রেস্টুরেন্টে খোঁজ খবর নিতে।
--কোথায় কাজে আছে সে কাল খবর নিয়ে জানাবে।
--এখন অনেক রাত,জব সেন্টার বন্ধ যেখান থেকে সে কাজে গেছে তারা নিশ্চয়ই জানে মালিকের নাম ও ঠিকানা।
--কাল নাম্বার ও ঠিকানা যোগার করে রাহাতের সাথে দেখা করতে যাবে।
ছেলে মেয়ের চিন্তা পিতা মাতার জন্যে সবচেয়ে বড়। সন্তানের সুখেই তাদের সুখআর সন্তানের দুঃখেই তাদের জীবনযাত্রা চরম পর্যায়ে চলে যায়।
শত চেষ্টায় যখন কেউ ছেলের সাথে যোগাযোগ করতে অক্ষম আর সময় যাবার সাথে সাথে--
রাহাতের কোন খবর না পেয়ে মৌলভী সাহেব কে দুশ্চিন্তা চরমভাবে পেয়ে বসে।
যার ভয়াবহ ফলশ্রুতিতে ডায়বেটিসের মাত্রা নিয়ন্ত্রণের বাহিরে চলে যায়। আর তার কুফল হিসাবে মৌলভী সাহেবকে চিরস্থায়ীভাবে জীবনের একমাত্র নিয়ন্ত্রণকারীর কাছে চিরদিনের জন্য নিয়ে যায়।
পর্ব ৪
**********
জব সেন্টারের মাধ্যমে রাহাত যে রেস্টুরেন্ট কাজে গিয়েছিল,সোহাগ খুব সকালে সেখানে গিয়ে হাজির হয়।
সেখান থেকে ঠিকান ও ফোন নাম্বার নিয়ে রেস্টুরেন্ট ফোন দিলে কিন্ত কেউ কোন উত্তর দিলো না।
এদিক আবারো রাহাতদের ঘর থেকে ফোন এলো। রাজন ফোন করে
---হেলো Hello !!! শুধু হেলো Hello বলে
-- কাঁদতে শরু করলো আর বললো
---------সোহাগ ভাই বাবা আর নেই।
-- আমার বড় ভাই কোথায়?
---কোন খোঁজ খবর কি পেলেন।
আমি এখন তার কাজের যায়গায় যাচ্ছি
খবর জানাবেন বলে রাজন ফোনটা রেখে দিলো।
সোহাগ কোন দিকে না তাকিয়ে চেমসফোর্ডের উদ্দেশ্য রওয়ানা দিলো।
সেখানে গিয়ে মালিকে ফয়সাল সাবের কাছ থেকে সব শুনতে পেলো।
সোহাগ জানালো তার বাবার অসুখের কথা আর রাহাতই তাদের একমাত্র উপার্জনক্ষম লোক।
রাহাতের কিছু হলে পরিবারটা অস্বাভাবিক কষ্ট ভোগ করবে।
দেশের সব খবর শুনে ফয়সাল সাহেবে খুব মর্মাহত হলেন। এবং সোহাগকে বললেন আজ থেকে আমি ওদের বড় ভাই। তুমি কোন চিন্তা করো না ওর দেশের নাম্বার আমাকে দেও।
আমি দেশে ওর মা ও ভাইয়ের সাথে কথা বলবো।
এদিকে ভোর ছয়'টায় একটি অন্য রকম ভেনে উঠানো হলো। সে দেখালো গাড়িতে ভিডিও ধারণক্ষমতা সম্পন ডিভাইস লাগানো।
সকাল সাড়ে সাতটার দিকে রাহাতকে Gatwick এয়ারপোর্টের পাশে টিনসলি হাউজ ইমিগ্রেশন রিমুভাল সেন্টারে নিয়ে যাওয়া হলো।
সকাল বেলা লিগ্যাল এইডের মাধ্যমে রাহাত আপিল করে। যার যুক্তি হলো,
-দেশে ফেরত গেলে তার সমস্যা হবে,
-দেশের রাজনৈতিক অবস্থা ভালো নেই।
তাই সে ইংল্যান্ডে শরনার্থী হিসেবে থাকতে চায়।
তার আপিলের রায় আসতে কমপক্ষে ছয় থেকে এক বছর লাগবে তাই তাকে জামিনের জন্যে আবেদন করতে হবে।
যার জন্যে কমপক্ষে একজন লোক যার বৈধ কাগজপত্র আছে ও যে ভরনপোষণের দায়ভার নিতে পারবে সেই পারবে জামিনদার হতে। রাহাত ভাবলো আর মনে হয় লন্ডন থাকা হলো না।
এখন জামিনের জন্যে সে কোথায় লোক পাবে? আর কে নিবে তার রিস্ক?
আজই ডিটেনশন সেন্টারে তার প্রথম রাত,সে রাতের আকাশ থেকে একটা তাঁরার খসে পড়া দেখতে পেলো আর
--- তার কেন যেন তখন শুধু বাবার কথাই মনে হচ্ছে,
------বাবাকে দেখতে খুব ইচ্ছে করছে
এই চার দেয়ালের জীবনে সে বুঝে নিলো বাবা যেন একটা বিশাল আসমান,একটা বিশাল ছাদ।
বাবা যেন এক পারম পাওয়া, হৃদয়ের ধন।
আকাশের তাঁরা দেখে সে বাবাকে দেখে।
অঝোরে অশ্রু ঝরনার মতো তার দু গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়তে লাগলো।
-- এই বিষাদের কান্না কেউ দেখার নেই!
শুনার নেই!
-যদিও আশেপাশে কত লোকের বাস।
রাহাতের সাথে তার রুমে আরেকটি ছেলে সেও সরনার্থী, যদিও লোকটা ইংরেজি কিছুই বুঝে না কিন্ত চালাকিতে পোক্ত।
বিকেল বেলা রাহাত লোকটিকে জিগ্যেস করেছিলো
আপনার দেশ কোথায়?
লোকটি বললো-- কোন দেশ নেই (No country)
রাহাত পরে বুঝলো সরনার্থীদের তো কোন দেশ নেই!
রাহাত শেষে জানতো পারলো এখানকার সবচেয়ে পুরানো বন্দি হলো এই লোক যে গত এক বছর ধরে এখানে আছে।
কারণ শুনে সে বিচলিত হলো --
--------------এই লোকটির কোন দেশ নেই!নাম নেই! চিন্তা নেই!ভাবনা নেই!!
-----------বর্তমান ও আগামী বলে কিছু নেই!
----------এমন ও মানুষ এ অদ্ভুত পৃথিবীতে হয়?
-----------জীবন কতই না বিচিত্র!
এই লোকটার মতো যদি জীবন হতো তাহলে তো অন্তত শান্তিতে ঘুমানো যেত!
ভিয়েতনাম সরকার বলে দিছে ও তাদের দেশের লোক না যদিও তার মাতৃভাষাটা ভিয়েতনামের বলে মনে হয়! তথাপি ভিয়েতনামের সে না তারা সাফ জানিয়ে দিয়েছে।
এমতাবস্থায় বিগত এক বছর থেকে সে ডিটেনশন সেন্টারে মনে হবে যেন বাড়ি ঘর নিয়ে আছে।
কি সুখে লোকটি ঘুমাচ্ছে কিন্ত রাহাতের--
--- পোড়া চোখে ঘুম নেই, মনে শান্তি তো সই কবে থেকে মরে গেছে!!
-কিন্ত! কেনই বা আজ এমন হচ্ছে?
কিভাবে যে দুঃস্বপ্নের একটি রাত তার কাটলো। -সে কিছুই বুঝতে পারলো না।
এই মৃত্যুপুরী থেকে সে কিভাবে বের হবে আর বের হয়ে যাবেই বা কোথায়।
সকালে তার রেস্টুরেন্টের মালিক ফয়সাল আরেফিন ডিটেনশন সেন্টারের সাথে ফোনে যোগাযোগ করেন।
রাহাতের সাথে কথা বলে তার সলিসিটর ডিটেইলস নিলেন এবং তাকে কোন চিন্তা না করতে বললেন। কিন্ত চিত্তে তাহার চিন্তার পাহাড় কাউকেই বলতে পারতেছে না।
ফয়সাল সাহেবের কথায় অন্ধকারের সরু পথে একটু আলোর রেখা দেখতে পেলো। উনাকে আজ প্রায় এক বছর থেকে দেখছে। বড় ভালো লোক। ফয়সাল সাহেবের বয়স যখন বারো, সেই ছোটবেলায় চাচার সাথে এদেশে আসা, বিলেতে আছেন মনে হয় চল্লিশ বছর থেকে তবে আশচর্যজনক হলো দেশের প্রতি, দেশের মানুষের প্রতি এই লোকটার ভালোবাসা রাহাতকে অবাক করে। সব সময় নজরুল,রবীন্দ্র সঙ্গীত শুনেন। মনে হয় যেন তার হৃদয় একখানি বাংলার মানচিত্র।
বাবার কথা ছেড়ে ফয়সাল সাহেবের কথা ভাবতে লাগো যদি মনের ভার একটু কমে। মনটাকে অন্য দিকে নিয়ন্ত্রণের ব্যর্থ চেষ্টা, কিছুতেই বাবার কথা তার মন থেকে সরাতে পারতেছে না।
বাবার জন্য কান্না আর বন্দী জীবন কি শেষ হবে তার যা একা একা , বন্ধ পরিবেশে। বিদগ্ধ হৃদয়ে।
আনমনে আকাশ পানে চেয়ে ভাবতেছে।
পর্ব ৫
**********
এদেশে প্রতিটি ডিটেনশন সেন্টারে একজন করে ইমিগ্রেশন কর্মকর্তা থাকেন যিনি সবাইকে তাদের এ্যাপলিকেশনের আপডেট, ও খুঁটিনাটি তথ্য দিয়ে থাকে।
তিন দিন পর রাহাত ডাক পেলো।
বিকাল চার ঘঠিকার সময় ডিটেনশব সেন্টারের
রুম নাম্বার- ৩১৩ ইমিগ্রেশন অফিসে তাকে যোগাযোগ করতে বলা হলো। যথাসময়ে রাহাত ৩১৩ নাম্বার রুমে গেলো। রুমের বারান্দায় সিকিউরিটি গার্ড রাহাতকে সার্চ করে ভিতরে প্রবেশ করতে দিলো।
সে ভিতরে গিয়ে আরেক গার্ড পেলো যে তাকে বারান্দায় বসতে বললো।
-রাহাত ভাবলো কত সিরিয়াল আর কত অপেক্ষা জীবনে ভোগ করতে হবে --
--মনে হয় যাবার টিকিট ধরিয়ে দেবে।
গার্ড জানালো তার যখন সিরিয়াল আসবে তখন তাকে ভিতরে নিয়ে যাবে।
ওকে - আই ইউল ওয়েট দেয়ার - রাহাত জানালো।
প্রায় মিনিট দশেক পরে একজন সাদা লোক রাহাতকে ভিতরে প্রবেশ করতে বললো।
লোকটা খুবই অমায়িক মানুষ,সুন্দর করে কথা বলে।
অফিসার বললো -- হাউ আর হউ
ভালো আছি কিভাবে বলি ---তবুও বললো আই এম ফাইন স্যার।
রাহাত ভাবলো - বিদায় দেবার সময় সুন্দর করে কথা বলতেছে।
এমনটা সবাই করে।কারো দুঃখে দুঃখিত না হয়ে হাসে। হায়রে কপাল। হায়রে স্বপ্ন। চেয়েছিলাম কি বর হলো কি।
জীবনের কতগুলো সোনালী দিন চলে গেলো কিছুই করা হলো না।
এমন ভাবনার মধ্যে লোকটি একটা কাগজ দিয়ে বলে এখানে দস্তখত দেন।
তার মনে হলো ফয়সাল সাহেব ফোনপ তাকে বলেছেন তাকে না জানিয়ে কোন সাইন না করতে।
আই এম সরি,মাই ব্রাদার এন্ড সলিসিটর সেইড নট টু সাইন এনিথিং। সো আই কান্ট সাইন।
অফিসার যা বললো তা রাহাতের বিশ্বাস হলো না।
ক্যান আই রিড ইট প্লিজ?
ইয়েস- ইউ ক্যান রিড দ্যান সাইন ইট।
সে কাগজটি নিয়ে যা দেখলো তাতে চোখ দিয়ে বন্ধ হওয়া অশ্রু আবার জড়ো হলো যেন এখনি বাধ নামবে।
সে বললো, থানক্স স্যার।
সাম পিপল আর ওয়পটং ফর ইউ ইন দ্যা রিসিপশন।
ইউ ক্যান টেইক ইউর ব্যাগ ফরম দ্যা রুম এন্ড গো ইউথ দেম। হেভ এ গুড লাক।
আসলেই কিছু লোক যা বলে তা তাদের ভিতর থেকে বলে এই লোকটা তার প্রমাণ। কত ভালোবাসা নিয়ে কথা বললো।
রাহত আর দেরী না করে দৌড়ে রুমে গিয়ে ব্যাগ ঘুচিয়ে ফেললো। ভিয়েতনামের লোকটাকে যাই বলে করমর্দন করে সোজা রিসিপশনে চলে এলো।
এখানে এসে সে ফয়সাল সাহেবে ও বন্ধু সোহাগকে তার জন্য অপেক্ষা করতে দেখেলো।তাদের দিকে তাকিয়ে কৃতজ্ঞতা বোধ করলো। রাহাত বুঝতে পারলো ফয়সালের সাহেব তার জামিন হওয়ায় মনে হয় মুক্তি পেলো। ফয়সাল সাহেব তাকে বুকে জড়িয়ে নিয়ে আদর করবে বলতে লাগলেন,
---চিন্তা করো না রাহাত আল্লাহ আছেন।
-- সমস্যা জীবনে আসতে পারে তাই বলে মন খারাপ করো না।
-- চলো গাড়িতে উঠো।
-- আর আমরাতো সবসময় একে অন্যের সাহায্যে আছি।
--দেশের সবাই তোমার জন্য চিন্তায় আছে আমি আর সোহাগ দুজনেই কথা বলছি।
--অনেক ধন্যবাদ ভাই, এই বলে রাহাত নিজের ফোনটা অন করলো। সাথে সাথে অনেক নোটিফিকেশন এসে গেছে। অনেক টেক্সট ম্যাসেজ ছোট ভাই রাজনের ফোন থেকে এসেছে।
প্রথমটা খুলে দু অক্ষর পড়াতে শুরু করলে ফোনটা বন্ধ হয়ে গেলো।ফনে চার্জ নেই।
কি লিখলো রাজন। কাকে বললো? রাহাতকে এভাবে বলার-ই- কি হলো?
ভাইযা আমাদের মাথার উপর ছায়া ---- কি বুঝাতে চাইলো? রাহাত চিন্তায় পড়ে গেলো।
সবাই মনে হয় খুব কষ্ট পেয়েছে!
রাহাত সোহাকে বললো-----
-মা বাবা নিশ্চয়ই অনেক কষ্ট পেয়েছেন!
-বাবকে কি বলেছেন আমার এ অবস্থা?
-সোহাগ বললো না রে!!
ফয়সাল সাহেব আবারো বলতে থাকলেন।
- আগে ঘরে যাই খাওয়া দাওয়া করে দেশপ ফোন করো। আমি বলেছি তুমি পেঠের পীড়া নিয়ে হাসপাতাল আছো।
রাহাত বললো কারো কাছে কি দেশে কথা বলার ক্রেডিট আছে?
একজন আরেকজন মুখের দিকে তাকাল। কেউ কিছু বললো না।
প্রায় দেড় ঘন্টা ড্রাইভ শেষ,রাহাত কে সোজা বাসায় নিয়ে এলেন ফয়সাল সাহেব, সাথে সোহাগও এলো।
রাহাত বাথরুমে ফ্রশ হওয়ার জন্য গেলো। এই ফাঁকে ফয়সাল ও সোহাগ অলাপ করতে লাগলেন কিভাবে রাহাত কে তার বাবার কথা বলা যায়।তারা আগে ভাবছিলেন ঘরে আসার পর বলা যাবে কিন্ত কিভাবে? ছেলেটার এমনিতেই অনেক ঝড় গেছে। কষ্ট পেলে যদি কিছু করে বসে? দেশে ফোন করে তার মায়ের সাথে আগে কথা বলুক। দেখা যাক কি হয়।
ফয়সাল সাহেবের সহধর্মিণী খাবার দাবারের আয়োজন করে তাদেরকে খেতে বললেন। রাহাত খেতে চায় না সে দেশে আগে ফোন করে নিতপ চায়। নিজের মোবাইলটা চার্জে দিয়ে সে অপেক্ষা করতে লাগলো।
ফয়সাল সাহেব বললেন আগে খেতে এসো। আমার ঘরের ফোন লাইন ফ্রি যতক্ষণ ইচ্ছা কথা বলো। কোন অসুবিধা নেই। আমিও কথা বলবো তোমার সাথে। সবকিছু মিলিয়ে রাহাতের কপন জানি সন্দেহ হতে লাগলো।দেশে কি কোন সমস্যা হলো।সবাই তার সাথে এমন ব্যবহার কেন করছে?
রাহাত খেতে গেলো কিন্ত কিছুই খেতে পারলো না। যাক কথা রাখা তকো হলো। না খেলে ফয়সাল সাহেব যদি কিছু মনে করেন।
এবার রাহাত দেশে ফোন দিলো।রাজন ফোনে হ্যালো বলার সাথে সাথে কেঁদে দিলো।
দু'ভাই শুধু কাঁদছে।সোহাগ এসে পিঠে হাত দিয়ে বললো কথা বল।কান্না কেন করতেছো। মায়ের সাথে কথা বল। দু'ভাইয়ের কান্না দেখে সোহাগ ফোন নিয়ে বললো ফোনটা চাচীকে দে তো রাজন।
---চাচীর সাথে কথা বলবো।
-- রাজন কোন কথা বলতেছে না। শুধু কাঁদছে।
-- সোহাগ কিছুটা বিরক্ত হয়ে বললো
-- রাজন' "ফোনটা চাচীকে দে"
এবার রাজন যা বললো--
তা শুনে সোহাগ নিজকে ঠিক রাখতে পারলো না।
কি বলছ রাজন!!
---চাচীও চলে গেলেন চাচর কাছে।
হু হু করে সোহাগ কাঁদতে কাঁদতে বলতে লাগলো এত তাড়াহুড়ো করে দু'জন মানুষ চলে গেলেন পৃথিবী ছেড়ে।
ও আল্লাহ এ কেমন বিচার.......?
রাহাত,,আরো কিছু শুনার আগে লুকিয়ে পড়লো মেঝেতে।
সবাই কাঁদছে। ফয়সাল সাহেব,উনার বউ,সোহাগ কেউ রাহাতের রক্তের সম্পর্কের না কিন্তু তারাও সম ব্যাথায় ব্যাথিত।
সকালেও রাহাতের মায়ের সাথে কথা হলো এমন কি হলো যে দু ঘন্টার মধ্যে মারা গেলেন। এই ভেবে ফয়সাল সাহেব রাজনকে ফোন দিলেন। অপরিচিত কেউ ফোনটা ধরে কথা বলতে লাগলো।
কিভাবে কি হলো? একথা তিনি জানতে চাইলে
অপর প্রান্ত থেকে বলা হলো --
----মাত্র আধা ঘন্টা আগে,
রাহাতের আম্মা জোহরের নামাজ পড়াকালীন জায়নামাজে সিজদারত অবস্থায় মারা গেছেন।
খবরটা শুনার পর ফয়সাল সাহেব নিজেকে অপরাধী ভাবলেন
---যদি রাহাতকে ফোনটা দিয়ে দিতাম তাহলে অন্তত মায়ের সাথে শেষ কথা বলতে পারতো।
-- তার মা হয়তো ছেলের কন্ট শুনলে বেঁচে যেতেন।
এসব ভেবে তিনিও ব্যাকুল হয়ে গেলেন।একটা ছোট শিশুর মতো রাহাতের সাথে জড়িয়ে কান্না করতে লাগলেন।
কি দিয়ে তাকে সান্তনা দিবেন। ভাষা যেখানে স্তব্ধ,বাক যেখানে রুদ্ধ,সেখানে নীরবতাই হলো সবচেয়ে বড় সহায়ক।
পর্ব ৬
**********
প্রায় এক সপ্তাহ পর রাহাতের কিছুটা হিতাহিতজ্ঞান ফিরে এলো।সব হারিয়ে ক্লান্ত,পরিশ্রান্ত রাহাত জীবন থেকে মুক্তি পেলো না। সে প্তি রাতে আকাশের তারা দেখে আর মা বাবার মুখ দেখে আকাশের তারাদের মেলাতে
হায় স্বপ্ন! হায় প্রবাস জীবন!হায় সুখ।
এসব লোভ না হল আজ বাবা মাকে তো কবর দেয়া হতো।তাদেরকে শেষ বিদায়ের ক্ষনটাতে দেখতে পেতাম। এসব ভাবনা চিন্তার মাঝে আবার অন্য চিন্তা আসে।এভাবে কার বাসায় দিনের পর দিন থাকতে পারবে। না এভাবে হয় না। আর এখানে এভাবে অবৈধ কাজ করলে আবার ধরা পড়লে তো সোজা বাংলাদেশ।
রাতে ফয়সাল সাহেব বাসায় এলে তারা উভয়েই একসাথে খেতে বসলেন।
এবার রাহাত বললো ভাই, এইভাবে তো এদেশে থাকা সম্ভব না, কাজ করা সম্ভব না । আবার দেশে ছোট ভাই একা।আমি সিদ্ধান্ত নিয়ে নিছি দেশে চলে যাবো। অনেক কিছু তো করলেন আমার জন্যে এবার আমাকে একটা টিকেটের ব্যবস্থা করে দেন।আমি দেশে চলে যাবো।
ফয়সাল সাহেব বললেন,
-- তুমি কি আবোলতাবোল বলো?
--- দেশে গিয়ে কি করবে?
---আমিতো তোমার ভাই আছি---
আমার অন্য রেষ্টুরেন্টে তুমি কাজ করবে।
- যেহেতু এসাইলাম কেইস করেছো তাই এ মুহুর্তে দেশে যাওয়া ঠিক হবে না।
- দেখছো তো দেশের অবস্থা?
রানা প্লাজায় কিভাবে মানুষ মারা গেলে?
গার্মেন্টসে কাজ করতে পারবে না -
- আর দেখি ওয়ার্ক পারমিটের কোন সমাধান করতে পারি কি না।
রাহাত ভাবলো আসলেই তো তাই, দেশে গিয়ে কি বা করার আছে।
রাহাত পরের সপ্তাহ থেকে ফয়সাল সাহেবপর অন্য রেস্টুরেন্ট,যেটা ইষ্ট লন্ডনের কাছে রমফোর্ডে অবস্থিত সেখানে ইউনিফর্ম ছাড়া কাজ করতে লাগলো। কেউ আসলে যাতে বুঝতে পারপ সে কাজে নেই শুধু সাহায্য করতে আসছে।
ভয় নিয়ে কি কাজ করা যায় তাই রাহাতের মাথায় শুধু ঘুরপাক খাচ্ছে। কি করবে।স্থায়ী সমাধান কি।
এমনভাবে চলছে, ফয়সাল সাহেব একদম ভাইয়ের মতো দায়িত্বশীল ব্যাবহার করেন।
তিনি তাকে সবসময় আস্থাশীল থাকতে বলেন।
একটা কিছু করে দিবো। তুমি কোন চিন্তা করো না। লোকটা না হলে কও যে হতো।
প্রায় দু মাস হতে চললে তার কেইসর কোন রিজাল্ট আসে না। ফয়সাল সাহেব ও তার স্ত্রী মনি বেগম, রাহাতকে ডেকে নিয়ে বললেন,মনি বেগমের এক ফুফু স্পেন থেকে ছয় মাস আগে লন্ডনে স্থায়ীভাবে এসেছেন।,যেভাবে ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে বাংলাভাষী অনেক মানুষ লন্ডন এসেছেন,ছেলেমেয়েদের বিয়ে,পড়াশোনা ও ভালো চাকরির আশায়।
মনি বেগমের ফুফুর নাম রুপিয়া বেগম। উনার দু' ছেলে দু' মেয়ে। সবচেয়ে বড় মেয়ে সুরভী যার বয়স তেইশ বছর। যার সাথে রাহাতের বিয়ের কথা হচ্ছে ।
-মনি বেগম রাহাতকে আরো বলতে থাকলেন ---
তার ফুফুত একটা বোন বিয়ের উপযুক্ত।
-তিনি তার ব্যাপারে ওদের বলেছেন।
রাহাত ভাবলো যাক এবার মনে হয় একটা স্থায়ী ব্যবস্থা হয়ে যাবে।
--আপনার যা ভালো মনে করেন।
- আমার কোন আপত্তি নেই।
-- আপনারাই তো আমার গার্ডিয়ান।
রাহাত কথা শেষ করার পর ফয়সাল সাহেবের স্ত্রী মনি বেগম বললেন আগামী রোববারে বিকালে 'তারা বাসায় আসবেন'
'দু ভাই বাসায় থেকো'
- রাহাত বললো- ঠিক আছে ভাবি।
রোববার বিকাল পাঁচটার দিকে মেহমানরা এলেন। রাহাতের সাথে সবার কথা হলো। একা একটি রুমে সুরভীর সাথে প্রায় এক ঘন্টা আলাপ হলে।
রাহাত অনুমান করলো''
--সুরভী খুবই লাজুক মেয়ে।
একটু খাটো ও প্লাস সাইজ।দেখতে তেমন একটা সুন্দরী না কিন্ত সহজ সরল ও লাজুক প্রকৃতির মেয়ে। মনে হয় যেন পৃথিবীর জটিলতা এখনো তাকে পায় নি।
""একজন আদর্শ স্ত্রীর যা থাকা দরকার তা তার কাছে আছে""।
--সুন্দর দিয়ে কি হবে? যদি ভেতর কুৎসিত হয়।
যা হোক দেখতে সুদর্শন রাহাতকে সকলের পছন্দ হলো।
মনি বেগম জানিয়ে দিলেন---
রাহাত যদি রাজী থাকে তবে আগামী মাসে বিয়ে।
সম্পূর্ন ঘরোয়া পরিবেশ,মুসলিম সংস্কৃতির আদলে ইসলামী শরিয়া অনুযায়ী রাহাত ও সুরভীর বিয়ে হলো।
সুরভির সাথে রাহাতের বিয়ের একসপ্তাহ আগে রাহাত এক বেডরুমের একটি ফ্লাট ভাড়া নেয়। সবকিছু প্লান অনুযায়ী নব দম্পতি তাদের নতুন জীবন শুরু করে।
রাহাত বিকাল পাঁচটা থেকে রাত একটা পর্যন্ত কাজ করে। শুধু একবেলা কাজ করে রাতে এসে ঘুমিয়ে যায়। সুরভী সকাল থেকে বিকাল অব্দি একটি ডেজার্ট শপে কাজ করে। রাহাত জানতে চায় নি এসব। এত লম্বা সময় কি কাজ করে।
- এভাবেই পানসে ও প্রাণহীন সংসার চলছে।
যতটুকু পারা যায় সহ্য করে চলা ভালো। যতদিন গড়াতে যায় সুরভী বেখেয়ালি হতে থাকে। তার পরিবর্তন রাহাতকে আহত করে।কেমন জানি আনমনা,কোন আগ্রহ নেই। কোন প্রাণ নেই। বিষাদভরা সংসার।
রাহাত নিজের সবটুকু সাজানো কামনা বাসনা সাধ,আহ্লাদ দিয়ে নব বধুকে খুশি রাখতে চায় কিন্ত কিসের যেন একটা ঘাটতি পরিলক্ষিত হয়।
এমন কেন হয়? বিয়ের সাধটুকু পেলাম না।স্ত্রীর ভালোবাসায় অধরা থেকে গেলো।
রাত একটায় কাজ শেষ করে রাতে দুই টার দিকে রাহাত ঘরে এসে ঘুমিয়ে যায়। সুরভীও রাত করে ঘরে ফেরে সেই বিয়ের প্রথম থেকে।সুরভীকে জিগ্যেস করলে
সে কখনো বলে কাজে। কখনে বলে বান্ধবীদের সাথে।
সমস্যাটা কি রাহাতের দিক থেকে!
যাক মেনে নেয়া, মানিয়ে নেওয়াই সংসার।
জীবনে কিছুই পেলাম না!
- তুমি এত রাতে বাইরে থাকা আমার পছন্দ না।-আমি চাই তুমি সকালে কাজ করো। বিকাল থেকে রাত ঘরে থাকো।
-মেয়েদের রাতে বাইরে থাকা মানায় না।
- এটা কি বাংলাদেশ নাকি?
- কি মানায় না মানায় আমি ভালো করে জানি।
আমার পারসোনাল বিষয়ে কথা না বললে খুশি হবো।
-আজব ব্যাপার!!
স্বামী কথা বললে পারসোনাল হয়ে যায়।
এটা ইউরোপ! সবাই সবার নিজস্বতা রেখে চলে।
--আশাকরি বুঝতে পারছো।
এরপর থেকে রাহাত আর কখনো সুরভীকে সকাল সকাল ঘরঘরে আসতে বলে না। কিছুটা ভয়। কিছুটা শংকা।কিন্ত আশংকা অব্যাক্ত থেকে যায় মন মোহনায়।
বিয়ের প্রায় সাত মাস হতে চললো,রাহাত আপডেটড এ্যাপলিকেশন দিলো। ফ্যামেলি মেম্বার অব ই.ইউ সিটিজেন। এখনো কোন রিজাল্ট আসে নাই। আসলে কাজ টা বদলানো যেতো।
স্ত্রীকে যতটা সহজ,সরলা ভাবছিলো তার সিকি পরিমাণ পেলো না। অনেক গভীর জলের মাছ।সন্দেহ দানা বেঁধে চললো।
--কি করে এত রাত বাইরে?
--কেথায় আড্ডা দেয়?
বয়ফ্রেন্ডর আছে নাকি?
দুর এসব কি ভাবছি!
এসব থাকলে তার সাথে থাকতো নাকি?
এসব আজেবাজে চিন্তা করে কি লাভ?
এক শনিবারে প্রচুর কাজ করে,রাহাত রাত দু টার দিকে বাসায় ফিরলো।দেখলো তার স্ত্রী এখনো বাসায় ফিরে নাই। খুব টেনশন হলো।ফোন দিলে ফোন বন্ধ। শুশুরবাড়ি এত রাতে ফোন দিয়ে ওরা জানালো সে আজ যায় নাই। চিন্তায় পড়ে গেলো রাহাত। তার স্ত্রী সাধারণত তার আসার আগে ঘরে চলে আসে।
-কখনো এগারোটা বা বারোটা বাজে।
--আজ এত দেরী করছে কেন?
কিছু হলো নাকি?
- ফোন বন্ধ কেন?
এাব চিন্তা করে রাহাত বেডে শুয়ে পড়লো।
রাত প্রায় চারটার দিকে সুরভী ঘরে ঢুকে কাপড় চোপড় খুলে সরাসরি বেডে চলে আসলো।
-রাহাত তখনো ঘুমায় নাই। সে ঘুমের ভান করে রইলো।
সুরভী বেডে এসে রাহাতের পেঠে হাত দিয়ে জড়িয়ে ঘুমিয়ে পড়লো।
রাহাত হাত সরালো না।
যদিও রাগে তার মাথায় বৃষ্টি বাদল দোলা দিচ্ছে।
রাহাত "স্ত্রীর দিকে তাকালো"
কি সুবোধ বালিকার মতো শ্বাস ছেড়ে ঘুমাচ্ছে।
কোমল হাতটা দিয়ে রাহাতের নাভিমূলে ধরা।
"ঘুমিয়ে থাক"
"ডিস্টার্ব কীা ঠিক হবে না"
এই ভেবে সুরভীর ফোনটা বালিশের কাছ থেকে নিলে।।
কম্বলের নিচে মাথা গুজে সুরভীর ফোনটা দেখতে লাগলো।
আজি-ই- প্রথম এই কাজ করলো।
হায় হায়!!! এটা কি দেখেছি!!!এসব কি সত্যি!!
এখনো তো রাত হয়! ভোর আসে! বিশ্বাস আছে!
যে মানুষটা তাকে জড়িয়ে আছে সে একটু আগে এসব করে এসেছে!
একটা ন দুটি নয়ছয় টা ছেলের সাথে তার রগরগে মেলামেশা। এর ম মধ্যে নিগ্রো একটা আছে। যার সাথে একটু আগে নষ্টামি জরে এসেছে। কি ভাব করে নিগ্রো ছেলেটাকে ঠোঁটে চুমো দিলে।
যত দেখে ততই অবাক!! ততই হতভম্ব! আসলে কহ হতভাগ্য আমি!!
একটু আগে যে হাতটা তার কাছে কোমল লাগছিলো এখন তা মনে হলো নাগিনীর মতো গ্রাস করে আছে তাকে।
সবগুলো ভিডিও, ফটো রাহাত তার ফনে ট্রান্সফার করে ফোনটা আবার সুরভীর বালিশের নিচে রেখে দিলো।
সুরভীর হাতটা তার শরীর থেকে সরালো।নিজের বালিশটা সরাতে গিয়ে দেখলো ওটা নিজের অজান্তেই ভিজে গেছে।
শেষ পর্ব
**********
মা বাবা মারা যাওয়ার নিদারুন কষ্ট। এক প্রলয়নাচন তার সবকিছু ওলটপালট করে দিয়েছে,যা একটু ভুলতে বসেছিলো এই কষ্টের দাহন আরো তীব্র!আরো ভয়ানক। দুঃখ জ্বালা শুধু বাড়ছেই। কোন মুক্তি নেই। আরোগ্য হবার কোন উপায় নেই। তার সাথে কেন এসব হচ্ছে?
পরাজিত সৈনিকের মতে নিজেকে মনে হলো।
রাহাত সকাল হবার অপেক্ষা করছে।
খুব ভোরে ফজরের নামাজ সেরে একগ্লাস পানি পান করলো।
তখনও সুরভী গভীর ঘুম মগ্ন । রাহাত সুরভীর উদ্দেশ্য একটা চিরকুট লেখলো।
সুরভী,
#আমি হয়তো তোমার যোগ্য ছিলাম না। এত অপ্রয়োজনীয় আমাকে কেন তোমার নরকে নিয়ে এলে। জীবনে তোমার এত কিছুর উপর লোভ ছিলে, বহুগামীতার অভ্যাস ছিলো তবে কেন আমার জীবনে জড়ালে। কখন কাউকে এসব জানতে দিবো না সবগুলো এভিডিয়েন্স আমার ফোন ট্রান্সফার করলাম কাউকে জানাবো না আমি তোমরা কাছ থেকে চিরকালের জন্যে চলে গেলাম।
-- ভালো থেকো।
---------------হতভাগ্য --রাহাত
লেখাটা শেষ করার পর রাহাতের অচেনা এক ভয় কাজ করলো।এই মেয়ে যদি আবার পুলিশে রিপোর্ট করে দেয়।মোবাইল ফোন,ল্যাপটপ চুরির দায়ে তাই একটা ফুটনোট দিয়ে দিলে।
" মায়ের হাতের নকশী কাঁথাটা নিলাম আর সব কিছু রেখে গেলাম "
বুকে শেল নিয়ে হাঁঠতে লাগলো রাহাত পায়ের নিচে মাটির অস্তিত্ব খুজে পেলো না। ততক্ষণে সূর্য উঠে আবারো মিলিয়ে গেছে। এই আবছা অন্ধকারের মতো জীবন আলো আঁধারীর মতো মনে হলো। হিমশীতল ঠান্ডায় শরীর জমে আসছে রাহাতের, হাত পা নাড়াচাড়া করতে পারছে না।সে ভুলেই গেলো নিজের জেকেট আনতে তাই মায়ের দেয়া কাঁথাটা গায়ে জড়িয়ে বাসে চড়লো। কে কি ভাবলো তাতে তার ভুক্ষেপ নেই। কাঁথার উষ্ণতায় মায়ের এক নিবিড় ভালোবাসার স্পর্শ তার বুকের মধ্যেই উথাল হয়ে ওঠে। শিকড়ের পোড়া মাটির পাগল করা সুঘ্রান নিতে নিতে সোজা চলে গেলো সোহাগের বাসায়।
এরি মধ্যে সুরভীর ইংলিশ বাংলা মিশ্রিত টেক্সট পেলো।সে যা লেখেছে তা অবর্ণনীয়। ভয়ে আতঙ্কে সে জীবন থেকে পালানোর পথ খুজতে লাগলো।
"এই চরম বেয়াদবীর জন্যে তাকে অনেক বিপদ পোহাতে হবে।এমন শাস্তি দেবে যে কেউ তোকে উদ্ধার করতে পারবে না এবং তার দেহাবশেষ খুঁজে পাবে না।ইউ জাষ্ট গেট আউট ফরম দিস কান্টি। ইউ ছোটলোক ডোন্ট নো এবাউট ফ্রেন্ডশীপ।ডোন্ট টেল এনি ওয়ান আদারওয়াজ আই ইউল ফ**-*ইউ।
এমন টেক্সট পেয়ে বুমেরাং হয়ে গেলো।সোহাগ ঘুমিয়েছিলো তাকে দেখে লাফ দিয়ে বিছানা থেকে উঠে জড়িয়ে ধরে।
সোহাগ কিছু বলার আগেই বুঝতে পারলো যে কিছু একাটা ঘটেছে।
----চা নাস্তা খা!
---না দোস্ত আমি মরে যাবে
আরে পাগল এমন করছিস কেন?
---তাজ্জব অবস্থা কি বলিস!!!
সে এগুলো করতে পারলো।
আপাতত কাউকে কিছু বলিস না আমার এখানে থাক। দেখি কি হয়।
রাহাত হেলেন দিয়ে নাক আর মুখ দিয়ে দীর্ঘ শ্বাস নিয়ে অবচেতনভাবে শুয়ে পড়লো।
সহজেই অনুমান করা যায় অনেক দখল গেছে তার উপর দিয়ে।
কখনো যে বিকাল হলো তা রাহাত বুঝতেই পারলো না।টানা ঘুমে শরীরের থিতু ভাব কিছুটা কমেছে।
ফয়সাল ভাইকে ফোন করে বলে দিলো-
আজ কাজে যাবে না শরীরটা ভীষন খারাপ লাগছে।
ফয়সাল সাহেব বললেন বিশ্রাম নেও।
সন্ধ্যা সাতটা বেজে বিশ মিনিট ঠিক তখনই রাহাত স্নিগ্ধ সুরভীর বিশালতা অনুভব করতে লাগলো।ফয়সাল সাহেব ফোন করে বলেছেন, যেখানে থাকে না কেন!
সাবধানে থাকে! আর ফোন বন্ধ রাখে।
পুলিশ উনার দুটি রেষ্টুরেন্টে রেইড করেছে এবং তাকে খুজছে।
-শনির গ্রাস যেন বাড়ছেই।
সোহাগ বললো' দোস্ত ফোনটা আমাকে দে।
সোহাগ রাহাতপর ফোনটা বন্ধ করলো।
কি হচ্ছে এসব। সোহাগ কে টেক্সট মেসেজটা দেখানোর পর সে বললো---
এখন আর বুঝতে বাকি নেই।
উদগ্রীব হয়ে দু বন্ধু ভাবতেই লাগলো এমন সময় সোহাগের ফোন বেজে ওঠে। এবার ফোন এলো মনি বেগমের কাছ থেকে।খুবই রাগান্বিত অবস্থায় তিনি বললেন রাহাত কে ফোন টা দেও।
এসব কি হচ্ছে রাহাত আমকে খুলে বলো?
---পুলিশকে আমি চ্যালেঞ্জ করেছি,
---এ হতে পারে না। ইটস নট পসিবল।
---আমার সারা বাসা পুলিশ বই, ম্যাগাজিন এসব আছে কি না তা তন্নতন্ন করে খুঁজলো।
---কি আজেবাজে কথা পুলিশ বলছে ---
--রেষ্টুরেন্টে তারা একই কাজ করেছে।
--কে পুলিশ কে এসব ভুল তথ্য দিলো?
একটানা মনি বেগম কথাগুলো বলেই যাচ্ছিলেন।
রাহাত বললো কি কথা পুলিশকে বলেছে?
তিনি বললেন এখন বলা যাবে না আর তোমার আমাদের বাসায় আসা উচিৎ হবে না রাতে আমি ও তোমার ভাই তোমার সাথে দেখা করে সব কথা বলবো।
রাত একটার দিকে ফয়সাল সাহেব ও উনার স্ত্রী গাড়ী করে এসে রাহাত ও সোহাগের সাথে কথা বলা শুরু করলেন।তাদের চেহারা ও মুখে ভয় ও টেনশনের ছাপ।
পুলিশ মিথ্যা তথ্য পেয়ে তোমাকে সব জায়গায় খুঁজছে--- বললেন মনি বেগম।
"কি হয়েছে খুলে বলো"
--পুলিশকে সব বলতে হবে।
তুমি যা না তা তারা বলতে পারে না।
"রাহাত বললো কি বলেছে পুলিশ"?
ও মাই গড!! কি বিষাক্ত চাকচিক্য সাপ।
কার সাথে দীর্ঘ আট মাস সংসার করলাম।নিজে না খেয়ে তারজন্য সবকিছু করলাম।
সব ঘটনা থরথরে কেঁপে রাহাত তাদের খুলে বললো।
ফয়সাল সাহেব বললেন -
সবকিছু পুলিশকে বলে আমি সমাধান করবো।
ব্রিটিশ পুলিশ এতো বোকা না। মিথ্যা তথ্য যে দিয়েছ তার সমস্যা হবে।তোমার না--
আমাকে মেরে ফলবে। নিগ্রো ছেলেটাকে দিয়ে।পুলিশ বাঁচাতে পারবে না।
তাহলে তুমি কি আই, এস,এর সদস্য হয়ে পুলিশের লিষ্টে থাকবে।
না তাতো আবশ্যই না।
ঠিক আছে এবার ঘুমাতে যাও।সকালে আবার আসবো। কাউকে কিছু বলো না।সাবধানে থেকো বলে তারা দুজনে চলে গেলেন।
রাতে রাহাত ভাবলো দেশে গেলেও সমস্যা, লন্ডন থাকলেও সমস্যা। তাহলে উপায় কি?
নিঃশব্দে সবকিছু চুরমার হতে লাগলো।
এ এক ভীষন যুদ্ধ,
--টিকে থাকা আর অস্তিত্বের লড়াই।
--মিথ্যার বিরুদ্ধে সত্যের লড়াই।
--সবলের বিরুদ্ধে দূর্বলের লড়াই।
রাহাতের মনে হলো, সুরভীর পরিবার স্পেনর নাগরিকত্ব বাদ দিয়ে শুধু বাংলাদেশ ও ব্রিটিশ নাগরিকত্ব নিয়েছেন। যেখানে শর্ত অনুযায়ী দু'য়ের অধিক দেশের নাগরিকত্ব নেয়া যায় না।
রাহাত সকালে কাউকে না জানিয়ে নিকটস্থ পুলিশ স্টেশনে গিয়ে সব কাগজপত্র ও ভিডিও দিলো। সাথে টেক্সট মেসেজ ও ফোন নাম্বার দিয়ে এলো। রাহাতের পৃর্বকার ইমিগ্রেশন অবস্থান ও বর্তমান অবস্থা তারা বুঝতে পেরে তাকে
"সরি"বলে বিদায় দিলো।
আর কোন থ্রেট পেলে সাথে সাথে আমাদের রিপোর্ট করো।
রাহাত ফয়সাল সাহেবের বাসাশ গিয়ে হাজির হলো। তাকপ দেখে তিনি অবাক।
সবকিছু ঠিক আছে রাহাত।
সে পুলিশ অভিযোগ ও নতি উনাকে দেখালো।
উনি খুশি হলেন।
বললেন যাক বা্চা গেলো। মনি বেগম বললেন সুরভী ও তার পরিবারের সাথে তাকে ড্রিল করতে দেয়ার জন্য।
রাহাত বললো কাউকে কিছু বলবেন না। তাতে আপনাদের শত্রু বাড়বে।
আমিই দেখবো "ব্যাপারটা!
বাবা বলতেন,অন্ধকার ট্যানেলের পরেই আলো,দুঃসময়ে নৈতিকতা ও সাহসিকতা নিয়ে চলতে হয়।
আজ রাতে আমি স্পেন চলে যাবো।এখানে আমার এক বন্ধু আছে সে ছয় মসে লিগ্যাল হয়ে গেছে।আর এদেশ থাকবো না।
গোধুলির আলোয় রাঙা সময়টা মলিন হয়ে গেলো।যে কষ্টের তাড়নায় রাহাত এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা হয়তো সঠিক, বিষয়টা আমরা ও বৃটিশ পুলিশ যতটা তুচ্ছ ভেবেছে আসলে ততটা তুচ্ছ না। তার মতের গুরুত্ব দেয়া উচিৎ।
সন্ধ্যা নামার সাথে সাথে রাহাত শুরু করলো আরেকটি নব-স্বপ্নের সোপানে শত বিস্ময় ছড়ানো ভুবনে।
-------------------------------------------------(সমাপ্ত)--------------------------------------------------
১৩ ই নভেম্বর, ২০১৮ রাত ১:১৪
ল বলেছেন: ছোট কেটে দিলাম
২| ১৩ ই নভেম্বর, ২০১৮ রাত ১:২৪
কাওসার চৌধুরী বলেছেন:
দু'টি পর্ব পড়লাম। বাকিগুলোও সময় নিয়ে পড়বো প্রিয় রহমান লতিফ ভাই।
১৩ ই নভেম্বর, ২০১৮ রাত ১:২৭
ল বলেছেন: শখের লেখা ---বড় ভাই
৩| ১৩ ই নভেম্বর, ২০১৮ সকাল ৯:২৮
হাবিব বলেছেন: কিছুটা পড়লাম..........
১৩ ই নভেম্বর, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:৩৮
ল বলেছেন: আন্তরিক ধন্যবাদ
৪| ১৩ ই নভেম্বর, ২০১৮ দুপুর ১:০০
মাহমুদুর রহমান বলেছেন: এই জগত সংসারের চিরায়ত নিয়ম অনুযায়ী পিতার যতদুর চোখ যায় ততদূর স্বপ্নের পাখা মেলে,স্বপ্নেরা সযত্নে হৃদয়ে অঙ্কুরিত হয় সন্তানের ভবিষ্যত নিয়ে
পুরো লেখার মধ্যে এই কথাটা আমার মন ছুঁয়ে গেল লতিফ ভাই।এ কথাটা আমার খুব খুব খুবই পছন্দ হয়েছে।
১৩ ই নভেম্বর, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:৩৯
ল বলেছেন: খুব খুব খুশি হলাম বন্ধু
৫| ১৩ ই নভেম্বর, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:৪৫
নজসু বলেছেন:
সারা লেখায় একটা বাক্য আমার খুব পছন্দ হয়েছে।
সুন্দর দিয়ে কি হবে? যদি ভিতরে কুৎসিত হয়।
ধন্যবাদ লতিফ ভাই।
১৩ ই নভেম্বর, ২০১৮ রাত ৯:৫৮
ল বলেছেন: প্রুফ রিডার নজসু হয়ে এসো একবার
৬| ১৩ ই নভেম্বর, ২০১৮ রাত ১০:৪১
রাজীব নুর বলেছেন: বিশাল পোষ্ট।
অনেক সময় লাগলো পড়তে।
১৩ ই নভেম্বর, ২০১৮ রাত ১১:২৫
ল বলেছেন: কেমন লাগলো ?
৭| ১৪ ই নভেম্বর, ২০১৮ সকাল ৯:১২
নীলপরি বলেছেন: সুন্দর লিখেছেন ।
আমার তো অলসতার কারণে গল্প লেখাই হয়ে ওঠে না ।
শুভকামনা
১৫ ই নভেম্বর, ২০১৮ রাত ১২:৫৭
ল বলেছেন: এতদিন কোথায় ছিলে আজ সুখের বৃষ্টি ধারা, বিন্দু বিন্দুতে এই মনে ছড়িয়ে দিলে
৮| ১৪ ই নভেম্বর, ২০১৮ দুপুর ১:১২
নজসু বলেছেন:
ভাই, ইনশায়াল্লাহ পরের পোষ্টে কথা হবে।
এই গল্পটা আমি একবার দীর্ঘ সময় নিয়ে পাঠ করেছি।
১৫ ই নভেম্বর, ২০১৮ রাত ১:০০
ল বলেছেন: ইনশাআল্লাহ
৯| ১৪ ই নভেম্বর, ২০১৮ রাত ১০:৫৪
ফারিহা হোসেন প্রভা বলেছেন: ভালো লেগেছে। অনেক পরিশ্রম করেছেন। শুভ কামনা রইলো।
১৫ ই নভেম্বর, ২০১৮ রাত ১:০১
ল বলেছেন: বেশ উৎসাহিত হলাম
১০| ১৬ ই নভেম্বর, ২০১৮ সকাল ৭:৫৬
পদাতিক চৌধুরি বলেছেন: শুভ সকাল প্রিয় লতিফভাই,
এটা কি আত্মজীবনী ? পড়ে তো এরকমই মনে হলো। প্রথম ও তৃতীয় পর্ব পড়লাম । খুব বড় গল্প । যেটুকু পড়েছি ভীষণ ভালো লেগেছে।
তৃতীয় পর্বের শেষে এসে ইমিগ্রেশন ডিটেনশন সেন্টার আপাতত রাহাত এর ঠিকানা । বাড়িতে বাবা খুব দুশ্চিন্তায় আছেন । কোন ভাবে যোগাযোগ করতে পারছেন না । প্রবল দুশ্চিন্তায় ও দীর্ঘ ডায়াবেটিসে ভুগে উনিও পরে পৃথিবী থেকে বিদায় নেবেন।
আমিও আসছি পরে সময় করে চতুর্থ বা পরের পর্বগুলোতে চোখ রাখব।
তবে আপনাকে আমার একটা পরামর্শ, এত বড় গল্প যদি কয়েকটি পর্বাকারে দিতেন তাহলে পাঠকের পক্ষে সুখপাঠ্য হত, পাঠক সংখ্যাও বৃদ্ধি পেত। আর আপনার যে দীর্ঘ পরিশ্রম সেটাও কিছুটা ফললাভ করতে পারত । এত সুন্দর গল্প অথচ বড় হওয়ায় পাঠক সংখ্যাটা অনেকটা কম গেছে বলে আমার বিশ্বাস । এটা ঠিক পোস্ট এর প্রতি সুবিচার হলো না। আপনাকে এ বিষয়গুলো ভাবতে হবে পাশাপাশি একটু ছোট হলে আপনি এডিট করে অনেক ভুল-ত্রুটি নিজেই সংশোধন করতে পারতেন, যে কারণে পোস্টে প্রচুর টাইপো থেকে গেছে। প্রথম দিকে ভাষাও বেশ শ্রুতিমধুর হয়নি। গল্পের মান উন্নতিতে আপনাকে সব দিকে একটু ভাবতে হবে।
তবে কবি হিসাবে আপনি একটা কৌলিন্য আদায় করেছেন। ব্যক্তিগত ভাবে আমি আপনার কবিতার ফ্যান। গল্পেও আপনি এভাবে লেখা চালিয়ে যান। আশা করি খুব শীঘ্রই আপনি একটা বিশেষ মর্যাদায় পৌঁছে যাবেন, এটা আমার দৃঢ় বিশ্বাস।
অফুরান শুভকামনা ও ভালোবাসার প্রিয় লতিফভাইকে ।
১৬ ই নভেম্বর, ২০১৮ রাত ১১:৩৭
ল বলেছেন: প্রিয় ভাই,
আপনাদের গঠনমূলক মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। আশাকরি ভালো আছে। আসলে হুমায়ুন আহমেদ বলেছেন গল্প নাকি জীবন থেকে নেয়া। আমার গল্পের ধারনা এই রকম কোন এক বন্ধুর কাছ থেকে।
গল্প টা একসাথে দেওয়ার উদ্দশ্য তাহলে আপনাকে বলি এই গল্পটা একজন নাট্যরুপ দিতে চায় তার জন্য ভার্চুয়াল ডাইরীরটা ব্যবহার করা। জানি অনেক টাইপোো আছে আপনি জানালে অবাক হবেন বার বছর একটানা ইংরেজি শিখতে শিখতে প্রায় মুর্খ হতে চলেছিলাম।
আর পুরনো ডাইরীরতে প্রায় ২০০ শর মতো লেখা আছে এর মধ্যে ৫০ টা গল্প হয়তো পাবলিকেশন করতে পারি।
আপনি সাহস দিয়ে যান সবসময় তাই আপনাকেও আমার হৃদয়পুর থেকে শুভ কামনা।
১১| ১৮ ই নভেম্বর, ২০১৮ রাত ৯:৩২
আরোগ্য বলেছেন: বড় ভাই বিরতিতে আপনার গল্পটা শেষ করেছি। আজ অনলাইনে এসে মন্তব্য করছি।
আপনার গল্পগুলো পড়তে আমার ভালোই লাগছে যদিও একটু সময় নিয়ে পড়ছি।
,অন্ধকার ট্যানেলের পরেই
আলো,দুঃসময়ে নৈতিকতা ও সাহসিকতা নিয়ে চলতে
হয়। পুরো গল্পের এই কথাটা খুব ভাল লাগলো।
আগামী গল্পের অপেক্ষায় রইলাম। শুভ কামনা করছি।
১৯ শে নভেম্বর, ২০১৮ রাত ১২:৩২
ল বলেছেন: প্রিয় ভাই আমার, আমার সহোদর,
আজকে তোমার কথাই ভাবছিলাম মনে মনে।
ভাইটার আসল নামটা জানা হলো না, জানা হলো না ফোন নাম্বার বা ই মেইল সেই যে বিরতি নিয়ে গেলো প্রতিশ্রুতিশীল লেখক।
কবে আবার আসবে।
ভালো লাগায় আপ্লুত।
©somewhere in net ltd.
১| ১৩ ই নভেম্বর, ২০১৮ রাত ১২:৪৮
মাহমুদুর রহমান বলেছেন: বিরাট গল্প অথচ নাম দিলেন ছোট গল্প।পরে পড়ে নেব।