নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
তুমি জীবন খুঁজো সুখের নীড়ে, আমি জীবন খুঁজি দুঃখের ভীরে।,,, রহমান লতিফ,,,,
কামালের কালো দিনগুলো -- (ছোট গল্প)
পর্ব(১)
----------------
সুনামগঞ্জের হাওর বাওরের কুল ঘেষে প্রাকৃতিক মনোরম ও মুগ্ধতায় চোখ জুড়ানো গ্রামীন দৃশ্য, নয়নাভিরাম মাঠ,ঘাট আর মৌ মৌ সুভাস ছড়ানো সবুজের সাজে একটি গ্রাম যার নাম সৈয়দপুর, আর এই গ্রামে জন্ম ও বেড়ে ওঠে সহজ, সরল একটি ছেলে নাম কামাল।
আত্মীয় স্বজন বন্ধু সবাই লন্ডন থাকে আর সবার মতো কামালের মা -বাবার বদ্ধমূল ধারণা ছেলে লন্ডন চলে যাবে তাই লেখাপড়া পাঠশালা স্কুলের গন্ডি অবধি সীমাবদ্ধ থাকে কারণ তো একটাই কামাল তো আর লন্ডন চলে আসবে সে যে ভাবে হোক তো আর লেখাপড়া করে কি লাভ?
কামালের বয়স যখন ১২ তখন থেকেই সিগারেটের প্রতিটি সুখটানের সাথে সুঘ্রান নিতে থাকে লন্ডনের, সবচেয়ে বড় হলো লন্ডন আসা আর জীবনের সবি মামুলিক।
বন্ধুদের সাথে আড্ডা আর হৈচৈ করেই তার জীবন,যেখানে নেই কোন চিন্তা নেই না পাওয়ার বেদনা শুধু আছে সপ্ন আর দশজন প্রতিবেশীর মতো লন্ডনী হওয়া।
তাঁদের ব্যাতিক্রম ছিলেন শুধু লন্ডন প্রবাসী মন্তাজ চাচা উনি দেশে ফোন করলেই বলতেন ভাতিজা-ভাতিজীরা যেন লেখাপড়া করে উনি যতই বুঝাতে চাইতেন লেখাপড়ার গুরুত্ব ততই বেশী উনি পরিবারের পর হতে লাগলেন।
যখন কামাল লেখাপড়ার পাঠচুকিয়ে ফেলে তখন উনি বললেন অন্তত সেলাইয়ের কাজ বা গাড়ি চালানো যাতে সে শিখে কিন্ত কে শুনে কার কথা সবাই বলে পারলে লন্ডন নেওয়ার ব্যাবস্থা করো আর এসব আজে বাজে শিখে কি লাভ হবে?
যেখানে কর্মজীবি মানুষ চোখে ছবি দেখে কাজের মাধ্যমে নিজের ও পরিবারের উন্নতি সে যে পরিবেশেই থাকুক আর মা বাবা স্বপন দেখে ছেলে লেখা পড়া করে নিজের পায়ে দাঁড়াবে একটা ভাল চাকুরী করবে মা বাবার সম্মান বাড়াবে সেখানে কামালের পরিবারের লোকজনের চিবায় শুধু লন্ডনের সুখ পাউন্ডের হোলিখেলা মনে হয় লন্ডন থেকে পাওয়া যায়।
কামালে তার অন্যান্য সহপাঠীরা যখন জিগ্যেস করি কি করছো আজকাল তার শুধু একটাই উওর লন্ডনের প্রসেসিং এ আছি। কিন্ত অতি দুঃখজনক হলেও সত্য প্রসেসিং এর বাংলা তার জানা নেই।
কামলের দৈনিক রুটিন হলো ঘুম থেকে দুপুর ১টা বা ২ টায় ঘুম থেকে উঠা কখনো যদি এর মধ্যে প্রাকৃতিক সারা দেওয়ার প্রয়োজন হয় তবে কোন রকম চোখ বন্ধ করে ঘরের ভেতর টয়লেটে গিয়ে তা সেরে আসে সে যাই হোক কোন অবস্থাতেই ঘুমের ব্যাঘাত ঘটানো যাবে না।
ঘুম থেকে রাজা বাদশার মতো উঠে কোন কোন দিন গোসল সেরে আর কোন কোন দিন না গোসল করে খেয়েদেয়ে পাশের বাজারে আড্ডা দিয়ে আবার বিকালে এসে খেয়ে দেয়ে রঙিন কাপড় পড়ে কখনো খেলা দেখায়, কখন গরুর মাইরের প্রতিযোগিতা কখনো সিনেমা আর কখনো সিলেট গিয়ে বন্ধু দের সাথে ফুর্তি ফুর্তি আমোদ এভাবেই তার দিন রাত কেটে যায় আর কখন যে বয়স ১২ থেকে চব্বিশ হয়ে গেল তার হিসাব নেই আর রেখেই বা কি হবে একদিন তো লন্ডন যাওয়া হবে।
এই এক যুগ কামালের একমাত্র জব ছিল একটাই "লন্ডনের প্রসেসিং এ আছি" এরি মধ্যে কত চেষ্টা কখনো চাচাতো কখনো মামাতো, খালাতো লন্ডনী বোন কে বিয়ের চেষ্টা সে যাই হোক চাচাতো বোন যেখানে কুইন মেরী বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিভাগের ছাএী সেখানে পাঠশালা পাশ কামাল বিয়ে করতে চায় চাচাতো বোনকে সে নিজের যোগ্যতা বাচ বিচার ছাড়াই। কামালদের পরিবারের একটাই কথা নিজেদের মধ্যে বিয়ে দিলে সুখী হওয়া যায় আর অন্তত নিজের একজন তো লন্ডন যাবে তাতে নিজেরই লাভ হবে। কিন্ত বিধিবাম দেখতে খর্বকৃতি আর তামাটে চেহারার কামাল কে কোন নিকট আত্মীয় স্বজনের মা বাবা বা চাচাতো মামাতো,খালাতো, ফুফাতো বোনদের কারো পছন্দ না হওয়াতে আর লন্ডনী কণ্যা বিয়ে করা হয় না কিন্ত কামালের পরিবার আশা ছাড়ার লোক নয় যেমন করে হোক ছেলের লন্ডন হবেই।
পর্ব ( ২)
------------------
সাল ২০০৬ ফাল্গুনের হাওয়া এসে লাগলো কামালের জীবনে, সুবাতাস যেন বইলো কামাল পরিবারের সবার মন গহীনে, সুখের ডালপালা পত্র পল্লব শ্যামল রুপ নিলো, পাওয়া গেলো শত সাধনার আর স্বপনের সাঁকো অবশেষে এলো সেই মাহেন্দ্রক্ষণ,
ইংল্যান্ডের সরকারের নতুন শর্তে ইমিগ্র্যান্টদের লোক নেওয়ার সুযোগ এলো, যাকে বলে ওয়াকিং হলিডে মেকার, যেখানে এক বৎসরের ভিসা নিয়ে কম দক্ষ লোক আসতে পারবে। আর এই সুবাদেই কামালদের নিকট আত্মীয়ের রেষ্টুরেন্টে ৫ জন লোক নেওয়ার ভিসার জন্য পারমিশন পাওয়াতে কামলদের খরচ বাবাত মাএ সাত লাখ টাকা সাবস্তু হলো যার পাঁচ লাখ মন্তাজ চাচা একাই দিতে রাজি হলেন।
যাই হোক নিদির্ষ্ট পেপার ওয়ার্ক শেষে কামালের ভিসা হলো এক বৎসরের জন্যে আর মা বাবার কাছ থেকে আদরের ধন বিদায় নিয়ে যাএা শুরু হলো সাধের লন্ডনের উদ্দেশ্যে নব সম্ভাবনার ছায়াপথে।
২৭ শে সেপ্টেম্বর ২০০৬, ইংল্যান্ডের হির্থো এয়ারপোর্টে এসে নামলে প্রায় এক ডজন আত্মীয় কামালে কে অর্ভ্যথনা জানালো সে খুব ফুরফুরা মেজাজে লন্ডনের বাতাসে ভেসে আসা ঠান্ডা হিম শীতল হাওয়ায় নিজেকে তৈরি করে নিলো অতি সহজেই।
তার কাছে বৈরী আবহাওয়া মনে হলো না কারণ আত্মীয় স্বজনের পুলকিত প্রীতিপূর্ণ সম্ভাষণ পেয়ে নিমিষেই ভুলে গেল দেশের চিরচেনা একান্ত প্রিয়জনদের আর প্রিয় পরিবেশকে ।
লন্ডনে এসে সে মন্তাজ চাচার ঘরে উঠলো, চাচা চাচী ও কাজীনদের সাথে শনি রবি দু দিন প্রচুর খুশি করলো, শনিবারে কাজীনদের সাথে হোয়াইটচাপল গিয়ে বাংগালী রেষ্টুরেন্টে খাবার ও রবিবারে নানডুসে খাবার খেয়ে খুব মজা পেলো, আর মনে মনে বিধাতাকে ধন্যবাদ দিলো তাকে লন্ডন নিয়ে আসার জন্য। তার কাছে এক রঙিন স্বপময় পৃথিবী দেখা হলো মনে হলো এখানে কোন দুঃখী মানুষ নেই, নেই কোন ব্যাথা বেদনা, শুধু সুখ আর সুখ।
সোমবার কাজীনরা খুব ভোরে যার যার কাজে চলে গেলো আর কামাল একা বাসায় বড় বিরক্ত বোধ করতে লাগলো কিন্ত মন্তাজ চাচা তা বুঝতে পেরে কামালের হাতে ৫০ পাউন্ড দিয়ে বললেন যা বাইরে গিয়ে আড্ডা দিয়ে আয় আমি বাসের জন্য কার্ড করে দিবো যা দিযে পুরা সপ্তাহ আসা যাওয়া করতে পারবে নিদিষ্ট জোন এর মধ্যে।
এই বলে মন্তাজ চাচা বিনয়ের শুরু বলতে লাগলেন, আর একটা কথা বাবা যেহেতু লন্ডন চলে আসছো এখানে ইংরেজি ভাষা জানার গুরুত্ব অনেক বেশী যদি ভাষার দক্ষতা না থাকে তাহলে কাজ, চলাফেরা করতে খুব অসুবিধা পোহাতে হবে তাই কষ্ট করে অন্তত প্রথম তিন মাস এখানে থেকে পাশের হেকনি কলেজ থেকে স্পোকেন ইংলিশ টা কিছুটা হলে এখনই একটু শিখে নাও,কাজে জড়িয়ে গেলে আর শেখা হবে না তখন শুধু রোজগারের চিন্তা মাথায় কাজ করবে আর যেহেতু লন্ডন চলে আসছো সারা জীবন কাজ করতে পারবে কিন্ত পড়তে পারবে না। তুমি যাই বলো কাল তুমাকে কলেজে নিয়ে গিয়ে ভর্তি করে আসবো।
পরদিন কামাল চাচার সাথে অনিচ্ছাকৃতভাবে হেকনী কলেজে গিয়ে বেসিক ইংলিশ কোর্সে ভর্তি হয়ে আসে এবং নিয়মিত ক্লাস করতে থাকে। এভাবে তিন সপ্তাহ যাওয়ার পর দেশে থেকে তার মা বাবা বলতে থাকেন লন্ডনে কি পড়তে গেছ নাকি কাজ করতে গেছো মন্তাজ চাচার সাথে কথায় কথায় না বেড়ে কাজকাম করে দেশে টাকা পাঠানোর ব্যবস্থা করো। একরকম তার মনের উপর জোর করে যেখানে ইংলিশ শিখতে যেতে হয় সেখানে পরিবারের লোকজনের কাথা শুনে কামাল সিদ্ধান্ত নেয় যেমন করে হোক চাচার কাছ থেকে পালাতে হবে। এখানে চাচার কাছে থাকলে লাভ না হয়ে বরং ক্ষতি হবে তাই তাকে আগে থেকেই নিজের রাস্তা বের করতে হবে।
পর্ব(৩)
-----------------
কামালের এবার পালানোর পালা, মন্তাজ চাচার হাত থেকে পালাতে হবে কিন্তু কিভাবে এই ভেবে নিজে নিজের মনের সাথে মৌন যুদ্ধ শুরু হতে লাগলো, সে মনে মনে ভাবতে লাগলো যতই হোক চাচা সজ্জন লোক, ওদের আদর করেন, টাকা পয়সা যখন যা লাগে নিজের সাধ্যমতো সাহায্যের হাত প্রথম যিনি বাড়িয়ে দেন তিনিই মন্তাজ চাচা, খুব ছোটবেলা থেকেই চাচাকে সম্মান করে আসছে এখন উনার কাছ থেকে পালানোর জন্য ওকে অনেক বেগ পেতে হচ্ছে কারণ কিছু না শুধু বিবেকের লজ্জা আর যদি চাচা কষ্ট পেয়ে যান কিন্ত কি আর করারা আছে ওকে রোজগারের উদ্দেশ্য এখনি নেমে পড়তে হবে ভাষা শিকড় এখানে গৌণ।
কামালের মাথায় একটাই চিন্তা কিভাবে পালাবে, দুপুরে খাবার খেতে চাচার সাথে দেখা হলে চাচ জিগ্যেস করলেন মুখটা এত মলিন কেন,ওর কি কোন কিছু লাগবে কিছু খেতে কিনা মন চাচ্ছে? আরো কত কি চাচা বললেন পরম আদরে বাবার মতো কোমলতার সাথে, চাচর মুখের দিকে থাকিয়ে সে শুধু মনে মনে বলল আমাকে পালাতে হবে আপনার কাছ থেকে এটাই হবে আমার পরম মুক্তি।
কামাল বেডে শুয়ে শুয়ে বুকের ভেতর চাপা দিয়ে থাকা অজস্র ব্যাথা আর সুখ স্মৃতি নিয়ে আনমনে ভাবতে থাকলো কিভাবে স্কুল পালাতো সুবিধাজনকভাবপ সুকৌশলে ও সুনিপুনভাবপ,কিভাবে সকালে মসজিদ থেকে নানা বায়না ধরে পালাতো, কিভাবে বন্ধুদের সাথে থেকে খেলার সময় কিংবা খুব বিপদের সময় কত নিপুণ ভাবে পালাতে পারতো! মনে ভেসে আসলো এইতো সেদিন ওদের থানায় যখন রাজনৈতিক মিছিলে যখন মখলুছ মিয়াকে ওরা বন্ধুরা মিলে পিঠাতে পিঠাতে গাড়ি তে পেট্রল মারার অপরাধে আইন নিজের হাতে তুলে নিয়েছিল আর যখন পুলিশ এসে তার সহপাঠী ও রাজনৈতিক কর্মীদের ভেনে করে তুলে নিয়ে যাচ্ছিলো তখন সে সকলের চোখ ফাঁকি দিয়ে বাজারের পাশ দিয়ে ঘেরা খালের কিনার দিয়ে ভো দৌড়ে বাড়ি চলে এসেছিলো কই পুলিশ তো দেখতে পারে নাই, কি সহজ ছিলো পুলিশের কাছ থেকে পালানো কিন্ত মন্তাজ চাচর হাত থেকে পালাতে এত কিসের সংকোচ না আর পেরে উঠতে পারছে না। তার কাছে অসহ্য মনে হলো এই খামখেয়ালিপনা সামান্য একটি বিষয় কত বড় হয়ে উঠে জীবনে এই প্রথম সে মনেপ্রাণে উপলব্ধি করতে লাগলো। সে এক দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে দিয়ে সে ফুঁপিয়ে ফু্ু্ঁপিয়ে অঝোরে কাঁদতে লাগালো,মায়ের মুখটা বারবার চোখের সামনে ভেসে আসলো যার ফলে তার কান্নার বেগ বাড়তেই লাগলো আর তখন ভাবতে লাগলো বিদেশের মাঠিতে ছোট্ট একটা সিদ্ধান্ত নিতে কত আহাজারি করতে হয়, বাস্তব আর কল্পনার মধ্যে ভাবনার বিস্তর ফাঁরাক যা জীবনকে মুহূর্তের মধ্যে ফাঁকা করে দেয় এসব অবান্তর ভাবতে ভাবতে শুধু কাঁদতেই চললো আর কে জানতো এই বুঝি শুরু হলো তার কান্নার নব অধ্যায়ের সুচনা।
কামাল লক্ষ্য করলো দেয়াল ঘড়িটার ঠিক ঠিক শব্দের মধ্যে তার বুকের বাম পাশের দিকটায় ঠিক ঠিক শব্দের মিল, মনে মনে দীর্ঘক্ষণ এসব ভাবতে ভাবতে ফোনটা হাতে নিয়ে কল দিল তাদের নিকট আত্মীয় বাবার খান কে যার রেস্টুরেন্ট ওয়াকিং হলিডে মেকার ভিসায় আসছে।
হেলো -- ওপাশ থেকে শব্দ ভেসে আসলো,
কামাল- আসসালামু আলাইকুম
বাবার খান- কেমন আছো? দেশ থেকে আসার আজ একমাস আর এর আগে একবার আমাদের কথা হয়েছে আসার পর আজ আবার অনেক দিন পর কথা হলো, তো বলো কেমন আছো?
কামাল- আমি ভালো আছি, কাল থেকে কাজে আসতে চাই?
বাবার খান- মন্তাজ চাচা বলছিলেন তুমি নাকি তিন মাস পরে কাজে জয়েন্ট করবে এখন নাকি ইংলিশ শিখতে চাও।
কামাল- ভাই আপনি কি কাজে নিবেন নাকি অন্য জায়গায় কাজ দেখবো?
বাবার খান- তোমার জন্য আমাদের রেষ্টুরেন্টের দরজা সবসময়েই খোলা, যখন মন চায় চলে আসো, আমাকে একটা ফোন করো ট্রেন ষ্টেশন এসে আৃি গিয়ে নিয়ে আসবো।
কামাল- কাল বিকালে আসতেছি ভাই
বাবার খান- ধন্যবাদ, কাল দেখা হবে, মন্তাজ চাচাকে আমার সালাম দিও।
কামাল- ওকে ভাই, দেখা হবে।
এই ছোট্ট কথোপকথন শেষে কামাল দেখলো ঘড়ির কাটা রাত ১১ঃ৩০ সে আস্তে আস্তে করে বেগ ঘুচাতে লাগলো এবং মনে মনে ভাবলো কাল যখন চাচা ঘরে থাকবে না ঠিক তখনই পালাবে।
যেমন প্লান তেমনি কাজ, বেলা ১১ টার দিকে ঘুম থেকে উঠে নাস্তা খেতে খেতে দেখলো চাচা ঘরে নেই মনে হয় বাজার করতে গেছেন,
নাশতা খেয়ে সোজা রুমে গিয়ে ব্যাগ নিয়ে এসে চাচাজী কে বললো আমি কাজে চলে যাচ্ছি কারণ কাজে না গেলে আমার ভিসার জন্য ক্ষতি হবে, চাচী বললেন দুপুরে খেয়ে যাও আর তোমার চাচা আসুক কিভাবে যেতে হয় তা বলে দিবেন, কামাল কোন কথা না শুনে চাচাজীকে সালাম দিয়ে বের হয়ে গেলো কাজের যায়গার উদ্দেশ্য।
চাচী তার যাওয়ার পথে চেয়ে থাকলেন আর মনে মনে বলতে লাগলেন সারা জীবন তোদের চাচা এভাবেই তোদের মাথায় তুলে রাখেন আর এটাই তার প্রাপ্য সম্মান।
পর্ব ৪)
--------------
ঘর থেকে বের হয়ে সে আবারো ফোন করলো বাবার ভাই কে,উনি বলে দিলেন লন্ডন ব্রিজ ষ্টেশন এসে এক ট্রেনে করে ব্রাইটন (Brighton) এসে উনাকে ফোন দেওয়ার জন্য।
কামাল বাসে করে লন্ডন ব্রিজ গেলো সেখান হতে যেভাবে বাবর খান বলেছিল সেভাবেই টিকিট কেটে ট্রেনে করে রওয়ানা দিল কাজের উদ্দেশ্য, যেটা হলো তার জীবনের প্রথম কোন কাজে যোগদান। ট্রেনে উঠে প্রথমে শুনলো মাইকে ঘোষণা আসছে ইংরেজীতে ( দিস ট্রেন ইজ টু ব্রাইটন কলিং এট ঞয়ডন, ট্যান ব্রিজ.... এন্ড ব্রাইটন) যার শেষ একটা শব্দ বুঝেলো শুধু ব্রাইটন। এই একটা শব্দ বুঝতে পেরে ভাবলো সঠিক ট্রেন চড়েছে। এই একটা শব্দের সাথে ঠাস করে তার মনে দমকা হাওয়া লাগলো আর বলতে লাগলো চাচার সাথে এসব করা ঠিক হলো না, চাচা তো ভালোর জন্যে বলেছিলেন ইংলিশ শিখতে কারণ তো এই মাএ বুঝে ফেললো কিন্ত উপায় নাই বিদেশ এসেছে টাকা কামাই করতে,লেখাপড়া করতে নয় আর যেতে যেতে জানালা দিয়ে বাহিরের বিশাল যবের সোনালী মাঠ, মনোরম পশমী ভেরার পাল আর ঘোড়ার পালা দেখতে দেখতে মহানায়কের মতো দম্ভ নিয়ে বিড়বিড় করে বললো,তার ডায়েরিতে পরাজয়ের কোন পাতা নেয়, যা চেয়েছে তাই করেছি,তাই পেরেছি তার সিদ্ধান্তে সে সদা অবিচল এটাই স্বাভাবিক তার জন্য। লন্ডন আসতে চেয়েছিল কেউ আটকাতে পারে নাই যেমন করে হোক এসেছে।
দীর্ঘ এক ঘন্টা জার্নির মাঝে সবটুকু সময় শুধু চাচাকে নিয়েই ভাবলো, কাজটা সে ঠিক করে নাই এখন কি পৌঁছে চাচাকে ফোন করবে না কি তাই আবার তাকে চিন্তায় ফেলে দিলো আর ফোন করে কিই বা বলবে, যাক গে, আর কাউকে ফোন করবো না একান্ত প্রয়োজন ছাড়া এই ভেবে নিজেকে তৈরি করলো।
ব্রাইটন গিয়ে নেমে ফোন দিলো বাবর খান কে যে স্টেশন এসে পৌঁছেছে,জবাবে উনি বললেন উনার রেষ্টুরেন্টের ওয়েটার জনি কে স্টেশনে পাঠানো হয়েছে সে তাকে রিসিভ করে আনবে।
ফোন শেষ করতে না করতেই একজন পিছনে ডাকলো --হেলো ব্রো
কামাল পিছনে তাকিয়ে সালাম দিয়ে বললো ভাই,
আগন্তুক লোকটা জিগ্যেস করলো আপনি কি বাঘের রেষ্টুরেন্টে যাবেন?
জ্বি মানে আমি বাবর খানের রেষ্টুরেন্টে যাবো, মোবাইলে টেক্সট মেসেজে বাবর খান যে ঠিকানা দিয়েছে তাতা লেখা টাইগার রেষ্টুরেন্ট আর তা সে মেলে ধরলো ওয়েটারকে সামনে আর তেমনি লোকটা সাথে সাথে এক চাপা হাসি হেসে বললো ঠিক আছে চলুন আমার সাথে।
আমার নাম জনি উনার রেষ্টুরেন্টের ওয়েটার
কামাল নিজের পরিচয় দেয়ার আগেই জনি বলে উঠলো তো ব্রো কেমন লাগছে লন্ডনের জীবন?
কামাল বললো ভাই আপনি আমাকে ব্রো বলেন কেন? উওরে জনি বললো ব্রো মানে ব্রাদার্স, ভাই কে এখানে সবাই সংক্ষেপে ব্রো বলে থাকে।
ও তাই বুঝি এর জন্য মনে হয় ভাই য়ের প্রতি ভাইয়ের টান, মায়া,মমতা ও এখানে সংক্ষিপ্ত।
জনি বললো শুনলাম আপনি কিচেন পর্টার হয়ে কাজ করবেন এখনি দেখি শিক্ষকের মতো কথা বলতেছেন।
হাহা এক মুচকী হেসে কামাল বললো যারা যত বেশি ভুল করে তারা বেশী নীতিবাক্য দেয় এটাই নিয়ম।
জনি বললো বাহ্ বেশ ভালো লাগলো আপনার কথাযাক ভালো হলো একজন ভালো কলিগ পাওয়া গেলো।
কামাল আবারো জিগ্যেস করলো কলিগ কি ভাই? একটু আগে বললেন ব্রো এখন কলিগ বিষয় টা বুঝিয়ে বলুন।
হাটতে হাটতে সে বললো কলিগ মানে হচ্ছে সহকর্মী যারা একসাথে কাজ করে তো আমরা তো এখন থেকে একসাথে কাজ করবে তাই কলিগ।
কামাল কিছুক্ষন চুপ করে নিচের দিকে চেয়ে জনিকে লক্ষ্য করে হাটতে লাগলো আর মন্তাজ চাচার কথা ভাবতে লাগলো আসলেই চাচার কথা সঠিক কিছু ইংলিশ শিখলে তো আর জনির কাছে অন্তত ছোট হতে হতে না, না সম্মান বলতে আর কিছু রইলো না বয়সে ছেলেটা আমার থেকে কত ছোট আর আমাকেই নাকি ওর কাছ থেকে অনেক কিছু শিখতে হচ্ছে, কপাল! আর কিছু না! কিছুক্ষণ পরে জনি নীরবতা ভেঙে বললো ব্রো কিছু খাবেন নাকি রেষ্টুরেন্টে গিয়ে খাবেন, আমি আসার সময় শুনলাম আমাদেরই গাবনার আপনার চাচার সাথে কথা বলতেছে এবং আপনি এসে পৌঁছে গেলে নাকি খাবার দেয় সকালে নাকি কোন কিছু খেয়ে আসেন নাই?
গাবনার মানে বাবর খান নাকি অন্য কেউ কিভাবে বলে রেষ্টুরেন্টে তো বাবার খান ছাড়া আর কেউ চাচাকে চেনে না? এই কথা ভাবার সাথে সাথে জনি আবার বললো আমাদের গাবনার মানে রেষ্টুরেন্টের মালিক বলেছেন শেফকে আপনার জন্য স্পেশাল রান্না করে রাখতে। কথাটা শুনার পরপর চাচার প্রতি শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা আরো বেড়ে গেলো এবং নিজেকে নিচুমানের এক কীট ভাবতে ভাবতে নিজের উপর বিতৃষ্ণা নিয়ে নিজেকেই গালি দিতে লাগলো। প্রায় ১০ থেকে ১২ মিনিট হাঁটার পর তারা পৌছালো টাইগার রেষ্টুরেন্টে,
ওয়েটার জনি সোজা তাকে কিচেনে নিয়ে গেলো এবং সেখানে উপস্থিত শেফ,কুক,তাকে বললো আগে খেয়ে নেন তারপর আমারা উপরে গিয়ে তোমার শুবার রুম দপখিয়প দেবো সেখানে বিশ্রাম করবে। গাবনার উপরে আছেন বিশ্রাম নিতেছেন।
এরমধ্যে কুক এক থালা ভাত, চিকেন ভুনা ও স্পেশাল চিংড়ি ভুনা নিয়ে কামাল কে বললো সামনে টেবিলে এসে বসে খাবার জন্যে। সাথে সাথে শেফও বললো পেঠ ভর খাওয়া দাওয়া করো পরে কথা হবে বলে শেফ উপরে চলে গেলো। জনি কামালের সাথে পাশের চেয়ারে বসে বললো আমরা সবাই খেয়ে ফেলেছি তুমি খাও আমি তোমার সাথে আছি আর ডিংকস কি খাবে বলো। কুক এরিমধ্যে একটা পেপসির বোতল নিয়ে এসে খাবার টেবিলে রাখলো এবং বললো এটা বাঘের রেষ্টুরেন্ট সবাই জানে এখানে খাবার খুব ভালো সেটা সবার জন্য সুখের কথা, গাবনারের কথা খাবার দাবারে যে যা চায় তাই যেন খায়।
কামাল সবার ব্যবহারে ও আন্তরিকতায় খুব মুগ্ধ হলো এবং খাবার পর সবাই একসাথে উপরে উঠলো। জনি বললো কামাল ব্রো আপনি আমাদের কুক আলম ব্রোর সাথে উনার রুমে থাকবেন এখানে একরা সিট খালি আছে যা কিচেনের লোকের জন্যে বরাদ্দ। কথাটার মানে সে কিছুই বুঝতে পারলো না শুধু জ্বি ভাই বলে সম্মতি দিলো।
আলাম আর কামাল রুমে প্রবেশের কিছুক্ষণ পরে বাবার খান রুমে এসে কামালের সাথে গল্প শুরু করলেন এবং দেশের সবার ও মন্তাজ চাচার পরিবারের সবার খোঁজ খবর নিলেন এবং তাকে আজকে কোন কাজ না করে শুধু দেখতে বললেন যাতে করে তার কি কি করা দরকার তা সে বুঝে নিতে পারে। আলম কে বললেন তাকে শিখিয়ে দিতে। কামালপর সাথে কথাচলা অবস্থায় বাবর খানের ফোন বেজে ওঠে এবং তিনি কথা বলতে থাকেন। কথা বলার সুরে কামাল বুঝতে পারলো চাচার সাথে তার ব্যাপারে কথা হচ্ছে। কামাল ভাবতে থাকলো এখনো চাচাকে একটা ফোন দেই নাই আর কি মুখে কফা বলবো আর চাচা বারবার ফোন করে খবর নিতেছেন যা তাকে নতুন করে চাচাকে ভালোবাসতে শিখালো এই ভাবনায় থাকা অবস্থায় বাবার খান তার ফোনটা কামালের সামনে নিয়ে এসে বললেন কথা বলো।
ওপাশ থেকে মন্তাজ চাচা --হেলো
আসসালামু আলাইকুম চাচা
আলাইকুম সালাম তোমার পৌছাতে তো কোন অসুবিধা হয় নাই আর চিন্তা করো না আমি খান কে বলে দিছি তোমার খেয়াল রাখবে যখন া ইচ্ছা হয় তাকে বলো আর যদি ভালো না লাগে চলে এসো আরো কিছুদিন বিশ্রাম নিয়ে কাজে যাবে। আর যদি ভালো।লাগে কাজ করো, সাপ্তাহিক ছুটির দিনে চলে এসো।
চাচার কথাগুলো মন্ত্রমুগ্ধের ন্যায় শুনলো মনে মনে বললো বাবার চেয়ে বড় যে নিজ কর্তব্য পালন করে চলছে যেখানে উনি রাগ করার কথা সেখানে আমাকে উৎসাহ দিয়ে চলছেন। আসলে সমস্যা হলো ভালো মানুষ চিনতে পারি না আর চিনলেও তাকে কষ্ট দিতে কার্পন্য করি না।
খুব অনুতপ্ত হয়ে কামাল চাচর কাছ থেকে ফোনে বিদায় নিলো।
বাবর খান বললেন আমাদের রেষ্টুরেন্টে দু বেলা ওপেন সকাল ১০-১২ টা আর বিকাল ৫ঃ৩০-১১ঃ৩০ আর তুমি আলমের সাথে এই রুমে থাকো। আর কোন অসুবিধা হলে আমাকে জানাবে, বিকালে দেখা হবে এবার বিশ্রাম নেও এই বলে তিনি চলে গেলেন। আলমের সাথে কথা বলতে চাইলে সে দেখলো।ও ঘুমিয়ে পড়েছে এত তাড়াতাড়ি কথা বলার মধ্যে লোকটা কিভাবে ঘুমিয়ে গেল এই একটু আগে শুনলাম ফোনে কথা বলতেছে। সুখী মানুষ মনে হয় যাক গে।
বিকাল এখন ৪ঃ০৯ আরো দেড় ঘন্টা বাকি কাজের এই বলে সে নিজে ঘুমানোর চেষ্টায় বেডে কাত হয়ে হেলেন দিলো।
পর্ব ৫
-----------
বিকাল ৫ঃ০০ দিকে দেখলো সবাই যার যার মতো করে রেডি হচ্ছে,একপাশে থেকে পারফিউমের বাহারি সুগন্ধ আসতেছে অনুভব করতে পেরে মুখ বাড়িয়ে দেখলো জনি ও আরো দু জন একই পোশাক কালো সার্ট,কালো টাউজার,কালো টাই পরে রেডি হচ্ছে আর বিভিন্ন রকমের পারফিউম দিতেছে যা তার কাছে বেশ ভালো লাগলো আর এই পাশে শেফ,কুক, আরো দু জন যাদের সাথে এখনো কোন পরিচয় হয় নাই তারা কোন কাপড় চোপড় বদলানোর কোন জামেলায় নাই,নাই কেন সুগন্ধি মাখার তালে শুধু ভোঁ করে নিচে নেমে গেলো।
কামাল জনির রুমে গেলো এরিমধ্যে কারণ জনি ওকে ডাকতেছে ওর রুমে গিয়ে খোশগল্পে করতে ভালোই লাগলো, ছেলেটা খুব মিশুক আর যত্ন করে কথা বলে যা তার কাছে বেশ ভালো লাগলো, কামাল বললো ভাই আপনি কি একা থাকেন এই রুমে? সবাই দেখলাম দু জন করে প্রায় রুমে আর এক রুমে তিনজন আপনার রুমে একটা বেড খালি নাকি?
জনি বললো হে খালি আছে আরেকজন ওয়েটার আসলে এখানে উঠবে।
কামাল ভাবছিলো সে বলবে আমি কি এই বেডে আসতে পারি কিন্ত কি ভেবে থেমে গেলো যাক ওকে বলে লাভ কি বাবর ভাই কে বলবে যদি ওই রুমে ভালো না লাগে। কারণ জনির সাথে থাকলে অনেক কিছু শিখা যাবে মনে হয়।
নিচে নেমে দেখলো রেষ্টুরেন্ট দুপুরে যে অবস্থা দেখছিলো তেমন নেই খুব সুন্দর করে ফুলের রুমাল দিয়ে প্রতিটি টেবিল সাজানো আর সুগন্ধ আসতেছে সব দিকথেকে। বাহ বেশ ভালো লাগলো সামনের দিক।
পিছনে এসে দেখলো সবাই যার যার কাজ নিয়ে ব্যস্ত, কেউ তান্ধুরি,কেউ মসলা, কেউ পাপাডাম নিয়ে খুব ব্যস্ত। কারি আর নানবিধ মসলার গন্ধ আর সেই সাথে চামচের বাড়াবাড়ি তার কাছে মনে হলো এ যেন টাঙ্গুয়ার হাওরের মাছ মারবার সময় ধর মার করে সেভাবে সবাই এক ধরনের শিকারে লিপ্ত।
তার বুখতে বাকি রইলো না সাধের লন্ডন আসলে যতটা সুখের মনে হয় ততটা না এত কষ্ট করে সবাই নিজের দিকে তাকানোর সময় নেই শুধু কাজ করেই যাচ্ছে আর কত কঠিন কাজ।
কামাল ভাবলো এগুলো কি তার পক্ষে সম্ভব নাকি আবারে পালাবে? আর পালিয়ে সে যাবে কোথায়? কজ শুরুর আগে পালানোর চিন্তা?
যেহেতু এই রেষ্টুরেন্টের পারমিট অন্য কোথায় কি গিয়প কাজ করতে পারবে? অন্য কোথায় গেলে কি হবে কাজ তো আর ভিন্ন হবে না এই সমান কাজ ই হবে? সামনের দিকে কাজ করতে কি পারবে? কিভাবে সামনের দিকে কাজ করবে সে তো ইংলিশ জানে না?
এই রকম হাজারো প্রশ্ন নিজের সাথে করতে থাকলো আর বললো যা ভাগ্য কি নিদারুণ কষ্ট লেখা আছে। এরিমধ্যে শেফ বললেন কাল সকালে ১০ টার দিকে এসে কামাল ও গনী মিয়া যেন এই দু বস্তা পেঁয়াজ খোসা ছড়ায়, গনী মিয়া যেন কামাল কে শিখিয়ে দেয়, শেফের কথা শেষ হওয়ার সাথে সাথে কামাল বললো এখনি শুরু করে দেই আমি তো আর কিছু করছি না। শেফ বললো না এখন না ভাই গাবনার বলছেন আজ আপনি শুধু দেখবেন কি কাজ, কাল সকালে পেঁয়াজের খোসা ছড়ানো, কিচেনের সমস্ত সেলফ ও মেঝে পরিস্কার, পাপাডাম কিভাবে তৈরি করতে হয় এগুলো শিখবেন আর বিকালে কাষ্টমারের খাবারের যত প্লেট,থালা বাসন আছে সবকিছু তাকে পরিস্কার করতে হবে তাই বলে শেফ নিজের কাজে চলে গলেন।
কামাল ভাবলো আমি সৈয়দপুরের ছেলে সব কাজ করে দিবো কোন চিন্তা করিবেন না, কেবল যাতে না বলে আত্মীয়ের এখানে এসে কাজ করি নাই।
সকালে নেমে সে পেঁয়াজের খোসা ছড়াতে লাগলো আর দু চিবুক বেয়ে অঝোরে অশ্রু জলে ভিজতে লাগলো এবং মুখ লুকিয়ে লুকিয়ে অশ্রু মুছতে লাগলো, মনে মনে বলতে লাগলো হায়রে লন্ডন তোর জন্যে এত প্রতীক্ষা, এত সাধনা, এত কষ্ট, এত লোভ আর আসলেই তো সব ভ্রম, সব মিথ্যে এর চেয়ে শতগুণ ভালো ছিল টাঙ্গুয়ার হাওরে মাছ মারা আর তা হাঁঠে এনে বিক্রি করে জীবিকা নিবারণ করা।
এত লোভ ঠিক নয় রে কামাল তা সে নিজে নিজে বলতে লাগলো আর মনে মনে এক বুক দীর্ঘশ্বাস ফেলতে লাগলো।
যাক যা আছে কপালে, কাজ করে যাবো বলে নিজেকে সামলে নেয়। কার ১১ঃ৩০ কাজ শেষ করে সবাই ঝাড়ু ও মেজে পরিস্কার করে সবকিছু ঘুছিয়ে রেখে যার যার মতো করে খেতে শুরু করলো। রাতে খাবারের সময় দেখলো কেউ দাড়িয়ে,কেউ মদের বারের উপর,কেউ বা আবার টেবিলে,কেউ ড্রামের উপর বসে খেয়ে নিচ্ছে, সে ভাবলো এত কষ্ট করে কাজের পরে কেউ আরাম করে চারটা ভাত পেটে পুরছে না, তাহলে এত কষ্টের কি প্রয়োজন?
যাক তাদের ব্যাপার! কিন্ত এমন লন্ডন তে আশা করি নাই!
রাতে কাজ সেরে উপরে উঠে আলমের সাথে দু চার কথা বলে একটু হালকা হবে এমন ভাবছিলো কিন্তু না সে কাঁথা মুড়ি দিয়ে দেশে নাকি কোথায় ফোনে বসে আছে, কয়েকবার চেষ্টার পর যখন কথা বলতে চাইলো আলম কথা বলতে চায় না, সে বলে ভাই সারাদিন কাজ করে ক্লান্ত সকালে ১০ঃ০০ নামতে হবে কি আর কথা বলবো ঘুমিয়ে পরি, কথা শেষে সে দু চারটা উওর দিবে এমন আশা করছিল কিন্ত খেয়াল করে দেখে আলম তো আর সজাগ নেয় সে তলিয়ে গেছে ঘুমের দেশে। সে আস্তে আস্তে জনির রুমে যায় এবং ঘন্টা খানেক ওর সাথে কথা বলে একটু হালকা হয়, জনি ছেলেটা আসলেই ভালে ওর সাথে কথা বলে কিছুটা ভালো লাগে এই ভেবে কামাল তার রুমে এসে ঘুমিয়ে পরে। বিছানায় শুয়ে শুয়ে ভাবে জনির রুমে একটা সুট খালি আছে কাল সেখানে গিয়ে ঘুমাবে, সকালে আলম কে বললো ভাই আপনি তো কথা কম বলেন তাই রুম বদলী করে জনির রুমে চলে যাবো, আলম শুধু বললো দেখো আপনাকে ওরা নেয় কিনা?আলমের কথা কিছুই সে বুঝতে পারলো না।
বিকালে কাজে নেমে নেশার ঘোরের মতো শুধু কাজ করেই যাচ্ছে যে যা বলছে তার সাধ্যমতো সবার কথা শুনছে। এত কাজ যে সময় কিভাবে বিকাল গড়িয়ে রাত হয়ে গেলো টেরই পেলো না।
বরাবরের মতো রাতে কাজ শেষ উপর তলায় উঠে জনিকে বললো আমি আপনার রুমে বদলী হতে চাই, জনি স্বভাবসুলভ চাপা হেসে বললো ব্রো গাবনার কে বলেন উনি যদি ইয়েস বলেন তবে আমার আপত্তি নাই। কামাল কিছু বুঝে উঠতে পারলো না সিট বদলানোর জন্যে সে বাবার খানের কাছে গেলো উনি সোজা বলে দিলেন ভাই ওটা হচ্ছে যারা রেষ্টুরেন্টের সামনের দিকে কাজ করে তাদের জন্য ওরা মাইন্ড করবে পিছনের লোকের সাথে একসাথে থাকতে। এখানে কি তোৃার কোন সমস্যা হচ্ছে যদি হয় তাহলে আমার রুমে চলে আসো।
কামাল বিষয়বস্তু কিছু না বুঝে সোজা নিজের রুমে গিয়ে শুয়ে পড়লো আর ভাবলো সবাই কেমন যেন বাঁকা কথা বলে একটা সহজ বিষয় নিয়ে, সে খুব কষ্ট পেলো কিন্ত কাউকে কিছু বললো না, তার অনস্তিত্বসূচক বুঝতে পেরে আলম বললো ভাই কিচেনের লোকদের সামনের লোকদের সাথে থাকতে দেয় না যদি কারির গন্ধ লেগে যায়। কামাল এবার বুঝতে পারলো আসল কি বিষয়। সে এই ঘটনায় যতটা না বিব্রত হলো তার চেয়ে বেশি আশাহত হলো বাবর খানের কথায়, কিভাবে মানুষ মানুষকে শ্রেনিভেদ করে অথচ বাবার খান তো তাদের চেয়েও বংশগত মর্যদায় কোন অংশে বেশি নয় বরং কমই আছে।
সে বুঝলো বিলেত আসলে বংশ মর্যদা কিছু নয় সবি টাকা আর কার কতটুকু সামাজিক অবস্থান তার উপর নির্ভরশীল।
আরেকটি জিনিস তার খুব অবাক লাগলো এখানে যারা সামনে বা পিছনে কাজ করে তাদের জীবন শুধু এই রেষ্টুরেন্ট কতৃক কাজেকর্মে নিয়ে চলে যায় বাহিরের জীবন সমন্ধে ওদের কোন ধারনা নেই আর থাকবেই বা কি করে সকালে কাজ, দুপুরে ঘুম আর বিকালে কাজ শেষে রাতে ঘুম এই নিদির্ষ্ট রুটিন যা রুটির খোরাক দেয় যাকে সবাই দেশে লন্ডনী বলে।
সবাই যেখান দুপুর ঘুমায় কামাল সেখানে জেগে থেকে কখনো দেশে ফোন করে কখনো বা পাশের মার্কেটে গিয়ে একাএকা সময় খাটায়। কিনতু সে প্রতিদিন লক্ষ্য করে জনি না ঘুমিয়ে দুপুরে কোথায় যেন যায় এমনি করে সে একদিন জিগ্যেস করলো জনি ভাই কোথায় যান? দুপুরে কি আপনি ঘুমান না? জনি বললো না আমিও ঘুমাই না শরীরে ক্ষতি হতে পারে তাই টাউন সেন্টারে যাই কখনো পাশের সী-বীচে যাই এই আর কি।
কামাল বললো আজ আপনার সাথে আসি ভাই? জনি বললো ওকে চলেন।
দুজন মিলে টাউন সেন্টার ঘুরে, সী-বিচে গিয়ে ঘুরে অনেক মজা করলো, কামাল ভাবলো এখন প্রতিদিন সী-বিচে চলে এসে সমুদ্র দেখবে যা তার কাছে ভালো লাগে আর তাতে টেনশন কম হবে।
ফেরারা পথে জনি বললো ব্রো আপনি কি একা ফিরে যেতে পারবেন? কামাল বললো হে পারবো? কিন্তু আপনি কি করবেন? জনি বললো একটা শপে কাজ আছে আধ ঘন্টা লাগবে, কামাল কিছু না বুঝে বললো আমি থাকি আপনার সাথে একসাথে যাই যদি হঠাৎ রাস্তা হারিয়ে ফেলি,জনি মৌন সম্মতি দিলো এবং বললো যেতে পারবেন কিন্ত একরা শর্তে, তা হলো রেষ্টুরেন্টে গিয়ে কাউকে কিছু বলতে পারবেন না। কামাল বললো ঠিক আছে ভাই বলবো না।
কামাল ও জনি দুজনে একটা ঘরে ঢুকলো সেখানো কামাল দেখলো চারিদিকে টিভি স্ক্রিনে বিভিন্ন রকমের খেলা হচ্ছে, কুকুর দৌড়, ঘোড়া দৌড়, ফুটবল ম্যাচ। কামাল ভাবলো এটা মনে হয় খেলা দেখার ক্লাব যাক জনি একটা ভালো যায়গায় নিয়ে এসেছে ভালো হলো। কিছুক্ষণ পরে জনি বললো কামাল ব্রো এই নেন ২০ পাউন্ড এটা আপনার জন্য কামাল বললো না ভাই আমি কেন নেবো? আরে রাখো বলছি বলে জনি তার পকেটে ভরে দিলো। জনি বললো ব্রো বলেন তো এই যে ঘোরা দেখছো কোনটা দৌড়ে আগে যেতে পারবে? কামাল বললো মনে হয় তিন নাম্বারটা আগে যাবে ওকে বেশ গতিশীল আর তীক্ষ্ণ দৃষ্টি সম্পন্ন মনে হয় ওটা আগে যাবে সবকটিকে পেছনে ফেলে, জনি বললো ঠিক আছে দেখি আপনার কথা কি ঠিক হয় যদি হয় তবে ৪০ পাউন্ড আপনার, এই কথা শুনার পর কামাল বললো ভাই এটা কি জুয়া নাকি? এর মধ্যে জনি টাস করে কামালের হাতে হাত দিয়ে বললো ব্রো ২৪০ টাকা পেলাম ২০ টাকা দিয়ে, এই নেন ৪০ টাকা আপনার। কামাল পকেটে থেকে গুজে দেয়া ২০ পাউন্ড ফিরত দিয়ে বললো ভাই মাফ করবেন আমি জুয়ার এক টাকাও নেবো না।আমি নতুন এদেশে আসছি, টাকা পয়সা না হয় নাই কিন্ত জুয়ার টাকা দিয়ে জীবনে কিছু করবো না। এটা আমার বংশের মর্যদার একটা বিষয়। আমরা হারাম খাই না, হারাম জিনিসের প্রতি লোভ নেই। জনি কিছু না বলে শুধু নিচের দিকে তাকিয়ে রাস্তা চলতে থাকলো।
এভাবেই সুখ দুঃখে সপ্তাহে ৬ দিন কাজ আর একদিন ছুটি, আর এই একদিন কখনো নিকট আত্মীয় স্বজনদের বাসায়, কখনো বন্ধুদের সাথে ঘুরে সময় কাটতে থাকলো আপন নিয়মে সপ্তাহ থেকে মাস,মাস থেকে বছর গড়ালো কামালের রেষ্টুরেন্টের কালো জীবন।
এই জীবন কবে শেষ হবে তা সে জানে না!
পর্ব ৬
-----------
দেখতে দেখতে কামালের প্রায় এক বৎসর হয়ে গেলো এর মধ্যে তার ভিসার মেয়াদ প্রায় শেষ পর্যায়ে, সবকিছু যা হোক ভিসা তো ঠিক রাখতে হবে, কিন্ত সমস্যা হলো সে যে ভিসায় এসেছে সে ভিসার নিয়ম অনুযায়ী মেয়াদ বাড়ানোর কোন উপায় নেই একমাত্র বিয়ে ছাড়া। এমতাবস্থায় দুচোখে সে ঝাপসা দেখতে পায় আর দুশ্চিন্তা তাকে অষ্টপ্রহর ছেকে ধরে। সে ভাবে কি ভাবে থাকার রাস্তা বের করা যায় তার তো যেমন করে হোক একাটা সুরাহা করতে হবে। অবশ্য সবাই কম বেশি কামালের অবস্থা জেনে ফেলেছে এবং যার যার মতো যুক্তি ও বুদ্ধি দিয়ে তাকে নানাবিধ প্রসঙ্গে বললো,কেউ বললো এসাইলাম, কেউ বলে হিউম্যান রাইটস আরও কত কি এর মধ্যে জনিও একজন, সে বললো ভাই আমার এক পরিচিত মেয়ে আছে এর আগে বিয়ে হয়েছিল কিন্ত দূর্ভাগ্যবশত বিয়ের কিছুদিনের মধ্যে সংসারের টানাপোড়েন তা ভেঙে যায় এখন আপনি চাইলে দশ হাজার টাকা দিয়ে পেপার ম্যারিজ করতে পারবেন, আপনাকে পাসপোর্ট করে দেওয়ার দায়িত্ব আমার আর টাকার জামিন ও আমি যদি হয় তাহলে জানাবেন।
জনির পস্তাব টা বেশ ভালো কিন্ত এত টাকা সে কিভাবে যোগাড় করবে,কিংকর্তব্যবিমূঢ় কামাল কথাটা বাবর খান কে বললো, সব শুনে বাবার গাবনার বললেন দেখ জনিকে আমি চিনি অনেক দিন সে যে কথা বলেছে তা নিঃসন্দেহে ভালো আর আমি জনির সাথে এ ব্যাপারে কথা বলবো তুমি চাচার সাথে কথা বলো। কামাল বললো ভাই সবই তো ঠিক আছে কিন্ত আমার কাছে সর্বসাকুল্যে দু' হাজার পাউন্ড আছে বাকি আট হাজার কিভাবে দেবো? গাবনার কিছু না বলে শুধু বললেন চিন্তা করো না একটা দায় দায়িত্ব তো আমার আছে। গাবনারের কথায় কামাল যেন পুব আকাশে এক ফালি চাঁদের হাসি দেখতে পেলো।
পরদিনই গাবনার কামাল কে ডেকে বললেন তুমি কি মন্তাজ চাচার সাথে কথা বলেছো?কামাল বললো হ্যাঁ কথা হয়েছে চাচা বললেন যদি সম্ভব হয় তাহলে সত্যি বিয়েটা যেন করে এই কাগজ টাগজের ঝামেলা না করে আপনি যেন ওদের বুঝান আর একান্ত প্রয়োজনে আপনি যা ভালো মনে করেন তাতে উনার কোন আপত্তি নেই। ঠিক আছে বলে বাবার খান মন্তাজ চাচাকে ফোন দিতে লাগলো। ফোনে কামাল শুনতে পেলো গাবনার তাকে কাজে রাখতে চায় লং টাইম তাই সে চার হাজার পাউন্ড অগ্রিম দিয়ে দেবে আর কামালের আছে দুই হাজার আর বাকি চার হাজার পাউন্ড যেন চাচা দেখেন। তাদের কথা শুনে কামাল শুধু আল্লাহর নাম আর তসবিহ পড়তে লাগলো।
অবশেষে কামালের ডাক আল্লাহ কবুল করলেন আল্লাহর অশেষ মেহেরবানীতে সব কিছু ঠিক ঠাক ভাবে কাগজের বিয়ে সম্পন্ন হলো। এবং কামালের কাগজের বউ তাকে বেশ সাদাসিধা ছেলে মনে করে বাড়তি খাতির যত্ন করতে লাগলো,কামালের ব্যবহার তাকে আলোড়িত করলো। কিছুদিন পর সে বললো আপনি চাইলে আমরা সংসার জীবনের কথা ভাবতে পারি, আপনাকে আমার খুব ভালোলেগেছে। কথাটা শুনার পর কামাল ভাবলো এই বুঝি সুখ এলো তার দ্বারে দিপালোকের আলোর মাশাল হাতে নিয়ে, সে কিছু না বুঝার আগে সংঙ্গে সংঙ্গে রাজী হয়ে গিয়ে মিষ্টি নিয়ে এলো।চাচাকে ফোন করে ঘঠনা বললো চাচও আলহামদুল্লিলাহ বলে কামালকে দোয়া দিলেন।
পর্ব ৭
--------------
এভাবেই দীর্ঘ পাঁচ বছর চললো কামালের সংসার। সুখ যা হলো আর এই পাঁচ বছরের যা অর্জন পেলো, তা হলো সমস্ত রোজগারের টাকা দিয়ে একটা ঘর কেনা। আর ভাগ্য বিধাতার অপার কৃপায় বৃটিশ সরকারের নতুন জোন নীতিমালার আওতায় তার ঘর জোন-১ মানে সিটি জোনের মধ্যে চলে আসায়, যে ঘর ২২০ হাজার পাউন্ড দিয়ে কিনেছিলো যেখানে কামাল দিয়েছিলো চল্লিশ হাজার পাউন্ড ডিপোজিট সেই ঘরের দাম বর্তমান বাজার মূল্যে ৭৫০ হাজার পাউন্ড হয়ে গেলো এক বছরের মধ্যে এই যেন মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি আর এক পশলা বৃষ্টি খাঁ খাঁ রৌদ্রুরে, খুশিতে কামালের চোখো মুখে তৃপ্তির ছাপ কিন্ত কে জানে এই সুখ ও তার খুব সাময়িক।
কিছু বুঝার আগেই কামালের বউ বললো অনেক দিন হলো তোমার আমার সংসারে কোন ছেলে মেয়ে না আসাতে আমি তোমার সাথে বিচ্ছেদ করে নিবো এটাই সিদ্ধান্ত নিয়েছি আর তোমার তো ব্রিটিশ পাসপোর্ট হয়ে গেছে তাই আমার আর কোন দায়বদ্ধতা নেই তুমি তোমার মতো চলে যেতে পারো।
ঘটনার জন্যে মোটেই পস্তুত ছিলো না, হতবিহ্বল কামাল কোন উপায় নেই চোখে ছানাবড়া হয়ে শুধু বুক ফেটে কান্না করতে লাগলো কাউকে কিছু বলতে পারলো না কারণ ঘরটা যখন কেনে তখন সে তার বউয়ের নামেই কিনে বউ যে এভাবে তাকে লাথি দিয়ে বসতবাড়ি থেকে রাস্তায় ফেলে দেবে তা সে কখনো কল্পনা করতে পারে নাই।
সবকিছু হারিয়ে অর্ধ পাগল কামাল না খেতে পারে, না পারে কাজ করতে, তার পুরো পৃথিবীটাকে মনে হলো নেহাত বোঝা,বুকের ভেতর চাপা কান্না নিয়ে সে শুধু রাস্তা রাস্তায় ঘোর পাগলের মত ঘোরে।
দেশে বিদেশের সব আত্মীয় স্বজন কামালের এই অবস্থায় খুব দুঃখ পেলেন এবং সবাই সহমর্মিতা প্রকাশ করলেন।
কেউ কেউ তাকে আবার দোষারোপ করে বললেন ঘর কিনার কি প্রয়োজন ছিলো, এমনিতেই কাউন্সিল হাউজিং থাকতে বাসা কিনতে গেছিলো এখন বুঝ এর কুফল।
কামালের মা সন্তানের এই অবস্থা শুনে চোখের পানি ফেলতে ফেলতে প্রায় অন্ধ। বাবা সন্তানের এই কাহিনী শুনে খুব অবাক হলেন ও সমাজে কিভাবে মুখ দেখাবেন তাই ভেবে ভেবে অসহায়বোধ করতে লাগলেন। শুধু বললেন এমন লন্ডন তো চাইনি, আমাদের কপালে কি হলো? কেনো আমাদের বেলায় এমনটা হয়।
কামাল কারো সাথে কথা বলে না শুধু ঝিমিয়ে পড়া মোরগের মতো সারাদিন সারারাত জেগে থাকে। দেখত অনেকটা রোগা হয়ে গেছে এবং সরকারের সোস্যাল সার্ভিস তাকে তদারকি করছে এবং নিয়মিত মানসিক চিকিৎসকের পরামর্শ অনুয়ায়ী তার প্রতিটি পদক্ষেপ চলতে লাগলো।
ডাক্তাররা প্রায় আশা ছেড়ে দিলেন যে কামাল আর স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসবে না কারণ তার ব্রেনক্ষয় হয়ে গেছে যা আবার খুব সহজে ইতিবাচক পরিবর্তন হবে বলে নগন্য উদাহরণ চিকিৎসাশাস্ত্রে আছে। সুচক অনুযায়ী প্রতি একশো হাজারে এক জন মানুষ স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসে তাই তারা প্রায় আশাহীন যে সে সুস্থ হয়ে আবার জীবনে সংসারে ফিরে আসবে। আবার তার বোধ হবে ব্রেনের নিস্ক্রিয় কোষ সচল হবে তা কেবল অলৌকিকতা ছাড়া সম্ভবপর নয়।
শেষ পর্ব
-------------
মন্তাজ চাচা খুব অসুস্থ আর রয়েল লন্ডন হসপিটালে ভর্তি আছেন, এই খবর জানার পর সোস্যাল সার্ভিসের লোকজনের সাথে করে কামাল চাচাকে দেখতে হসপিটাল গোলো। চাচা কামালকে দেখে একে অপরকে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়লো এই কান্না যেন আর থামতে চায়না, দুজন রোগীর কান্নায় হসপিটালের চার দেয়াল বিবর্ণ হলো, গুমোট বাতাস আর ন্যাপথালিনের গন্ধ কান্নার সুরের সাথে মিশে এক বিষাক্ত পরিবেশ স্থাপিত হলো,
যেই দেখছে সেই যেন কান্নায় নিজকে শরিক করছে, চাচ ভাতিজার কান্না দীর্ঘ ৫০ মিনিট পর থেমে গেলো, ২৫ মিনিটের বেশি নাকি কোন লোক কাঁদতে পারে না কিন্তু তাদের এই কান্না যেন মুছে দেয়ার কান্না, এই কান্না যেন স্রোতস্বিনী হয়ে ভাসায়ে নিয়ে যেতে চায় অজস্র ব্যাথা, এই কান্না যেন অসীম পাওয়ার কিছু যা বয়ে নিয়ে যাচ্ছে মনের শত ক্লেশ।
অসুস্থ চাচা বললেন কামাল আজ আমি তোকে শেষ বারের মতো দুটি কথা বলতে চাই, জীবনে অনেক কথাই বলছি কোনটাই রাখো নাই আবার ফেলেও দেও নাই যা ঝুলিয়ে রেখে নিজকে শেষ করে দিয়েছো আমি আশাকরবো আমার শেষ দুটি কথা তুমি রাখবে, এই বলে চাচা হাত দিয়ে কামালের চিবুকে হাত বুলিয়ে দিলেন।
কামাল বললো চাচা আমি আপনার কথা রাখবো, এই শপথ নিলাম এবার বলো কি কথা?
চাচা বললেন,
এক) টাকা,পয়সা,ধন দৌলত সবকিছুর চেয়ে তোমার জীবন বড়, আর জীবন যদি নাই থাকে সবই মিছে তাই যা হারায়েছো তা নিয়ে কোন দুঃখ করো না,তাতে বরং ক্ষতি হবে।তাই নিজের জীবনকে ভালোবাসো।
দুই ) যখন বিয়ে করবে তখন তোমার চেয়ে কম যোগ্যতাসম্পন্ন বা সমপর্যায়ের কেউ, হোক লেখাপড়ার দিক বা সম্পদের দিক সবসময় ভারসাম্যপূর্ণ বিবাহিত জীবন চিন্তা করো।
চাচার কথা শেষ হবার সাথে সাথে কামাল বোধ করলে সে যেন আবার নতুন প্রাণ ফিরে পেলো।তার শরীরের কোষগুলি যেন সতেজ হতে লাগলো, সে শুধু বললো চাচা ঠিক বলেছে নিজের জীবন বড়, নিজের টাকা গেলে টাকা পাবো কিন্ত জীবন গেলে কি আর পাবো?
চাচার কাছ থেকে এক সুস্থ কামাল নতুন জীবন নিয়ে নব উদ্দামে বেরিয়ে এলো।
সাথে থাকা সোস্যাল সার্ভিসের লোক জীবনে প্রথম অলৌকিক শক্তির দেখা পেলো।কিভাবে দুটি কথা একজন মানুষকে আমূল পরিবর্তন করে দেয়।সে আর কিছু না বলে শুধু অবলোকন করে গেলো আর সাক্ষী হলো এক নতুন ফর্মুলার যা সে জানলো, জীবনে মোটিভেশনের দরকার আছে যা মেডিসিন দিয়ে অনেক সময় হয় না।
পরিপূর্ণ সুস্থ কামাল এবার দেশে গিয়ে বিয়ে করে এলো এক মধ্যবিও পরিবারের কুসুম কে, আর কুসুমের সাথে তার খুব ভালো বুঝাপড়া হলো, তাকে খুব ভালো বুঝে কুসুম,জীবন যেন তার কাছে এখন মধুর, নিত্য ভালোবাসায় জড়ানো তার সুখের সংসার, কিন্ত এরিমধ্যে তার কাছে আকাশ ভাঙার সমান খবর এলো, যার জন্যে সে এবারো পস্তুত ছিলো না, সে কিছুতেই মেনে নিতে পারতেছেনা, সে বলতে লাগলো আল্লাহ কেন আমাকে ভালো করলেন যদি এমন শাস্তি দিবেন? আমার মনে হয় আমার অসুস্থ থাকাটাই ভালো ছিলো?
যার জন্য নব জন্ম, যার জন্যে বেঁচে আছি সেই চাচাই যদি আর বেঁচে নেই তাহলে কি লাভ বলো।
কাঁদতে কাঁদতে বুক ভেসে গোলো, কুসুম এসে কামালের মাথায় হাত রেখে বললো চাচার জন্যে দোয়া করো আল্লাহর কাছে এই জন্যে তোমাকে আল্লাহ ভালো করে দিয়েছেন। সবাই একদিন চলে যাবে, যেতে হয় এটাই নিয়ম আর স্বজনরা যদি দোয়া করে এটাই মৃত মানুষের অনেক পাওয়া। কুসুমের কথায় কামালের কিছুটা হুঁশ এলো ও আস্তে আস্তে স্বাভাবিক হলো।
ছুঠি শেষে লন্ডন এসে সে চাচার কবরের কাছে যায় আর বলে চাচা আমি আপনার কথামত সবকিছু করতেছি আর এখন তুমি নেই।তুমি আমার জন্যে এতকিছু করলে আর জীবনে তোমার জন্য কিছুই করা হলো না। সারাটা জীবন বিনিময় ছাড়া নিঃস্বার্থ ভালোবাসা দিয়ে গেলে, ভালোবাসায় যে কত নিখাদ,নিঃশর্তে হয় তা তোমাকে না দেখলে, তোমার সংস্পর্শে না এলে জানা হতো না। ভালোবাসা যো কোন প্রতিদান চায় না তা কামাল পরখ করে পারলো।আর হন্তদন্ত কামাল চাচার শোকে নিঃশব্দে পথ চলতে থাকলো আর ভাবতে থাকলো জীবনে মনে হয় কালো দিনগুলোর শেষ নাই। আর এই কলোকেই হৃদয়ে আঁকে তার বুঝি জীবনভর বয়ে বেড়াতে হবে।।
(সমাপ্ত)
গল্পটি সম্পুর্ণ কাল্পনিক কারো জীবনের সাথে মিলে গেলে দুঃখিত।
০৫ ই নভেম্বর, ২০১৮ রাত ১১:১৩
ল বলেছেন: সময় করে পড়ার জন্য ধন্যবাদ ।
২| ০৫ ই নভেম্বর, ২০১৮ রাত ৯:৩০
সৈয়দ তাজুল ইসলাম বলেছেন: লতিফ ভাই, খুব দীর্ঘ হয়ে গেছে! আপনি চাইলে এটাকে পর্ব আকারে প্রকাশ করতে পারতেন।
সময় করে পড়ে যাব বলে দিলাম
কামাল আমার এক ছাত্র ছিল
০৫ ই নভেম্বর, ২০১৮ রাত ১১:১৬
ল বলেছেন: পরামর্শের জন্যে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।
আমিও ভাবছিলাম পর্ব করবো পরে ভাবলাম সবাই সময় করে পড়ে যদি গঠনমূলক মন্তব্য দেয়।
তাই।
অপেক্ষায় রইলাম।
৩| ০৫ ই নভেম্বর, ২০১৮ রাত ১০:২৩
পদাতিক চৌধুরি বলেছেন: প্রিয় লতিফ ভাই,
বেশ বড় গল্প। প্রথম দুটি পর্ব পড়েছি । ভালো লেগেছে , লাইক ও দিয়েছি ।তবে বড় করার জন্য কিনা জানি না , বাক্যে র গঠনে আপনাকে আরো নজর দিতে হবে ।
সময় পেলে আবার আসবো ।।
শুভকামনা জানবেন।
০৫ ই নভেম্বর, ২০১৮ রাত ১১:১৮
ল বলেছেন: আমার প্রিয় ভাই,
আপনার লেখা থেকে শিখতেছি প্রতিনিয়ত। সময় পেলে আপনার পুরানো পোস্ট পড়ে আসি আর কাওছার ভাইয়ের।
অনেক দিন পরে লেখা, আস্তেে আস্তেে ঠিক হবে।
ভুলগুলি বলে দিলে খুশি হবো।
যেমনটা আপনি সবসময় দেন।
উপদেশের অাশায়।
৪| ০৬ ই নভেম্বর, ২০১৮ দুপুর ১:৩৪
ফারিহা হোসেন প্রভা বলেছেন: বাস্তবতা তুলে ধরেছেন লেখায়। শুভ কামনা জানাই।
০৭ ই নভেম্বর, ২০১৮ রাত ১২:২৬
ল বলেছেন: সময় করে পড়ার জন্য কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।
৫| ০৬ ই নভেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৪:০৪
সূর্যালোক । বলেছেন: দুঃখিত কেন । গল্প যদি জীবনে খণ্ডাংশ হয় তাহলে তো মিলবেই । এত বড় গল্প এক সাথে দিলেন । আপনার কি ধারণা ,পাঠক পুরোটা পড়ে মন্তব্য করবে (সবাই না) আমি কিছু পড়েছি ভালো লাগছে ।
০৭ ই নভেম্বর, ২০১৮ রাত ১২:৩১
ল বলেছেন: আলো ছড়ালো আপনার মন্তব্য।
এটা আমার ভার্চুয়াল ডায়েরি তাই একসাথে করে রাখলাম।
কেউ সময় করে পড়বে এটাই আশা।
নাহলে তো নিজেই পড়তে পারবো।
৬| ০৬ ই নভেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৪:১০
হাবিব বলেছেন: পরে পড়ে নিব.......
০৭ ই নভেম্বর, ২০১৮ রাত ১২:৩২
ল বলেছেন: সময় ---- তুমি সময় করে এসো
দুজনে বসি পাশাপাশি --+--
৭| ০৬ ই নভেম্বর, ২০১৮ রাত ৯:৪০
রাজীব নুর বলেছেন: বিশাল পোষ্ট পড়ছি তো পড়ছি। শেষ আর হয়।
অথচ একটুও বিরক্ত লাগেনি।
০৭ ই নভেম্বর, ২০১৮ রাত ১২:৩৩
ল বলেছেন: আপনার মূল্যবান মন্তব্যে আলোড়িত হলাম।
এত সময় কোথায় পান?
৮| ০৭ ই নভেম্বর, ২০১৮ সকাল ৯:৩৭
নজসু বলেছেন:
গল্পে জীবনের স্পর্শ থাকলে ছোট বড় প্রভেদ কেউ করেনা।
আমি গতকাল আর আজকে মিলে শেষ করলাম।
গল্পে বাস্তবতার ছোঁয়া পেয়েছি আমি।
০৭ ই নভেম্বর, ২০১৮ রাত ৮:০২
ল বলেছেন: আন্তরিক ধন্যবাদ প্রিয় ,
৯| ০৮ ই নভেম্বর, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:৩৪
আরোগ্য বলেছেন: বড় ভাই গল্পটা খুব ভাল হয়েছে। কামালের জীবনের হতাশার পর ইতিবাচক শুরুটা দারুণ হয়েছে।
লেখায় কিছুটা টাইপো আছে, ঠিক করে দিলে ভালো হবে।
০৯ ই নভেম্বর, ২০১৮ রাত ৮:৪১
ল বলেছেন: সময় করে পড়ার জন্য কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি
১০| ০৩ রা নভেম্বর, ২০১৯ রাত ১১:৫৯
ইসিয়াক বলেছেন: প্রথম পর্বটা পড়লাম ......।ঘুম পাচ্ছে আবার কাল পড়বো ।
বিদায়......।
০৪ ঠা নভেম্বর, ২০১৯ সকাল ৭:৫২
ল বলেছেন: ধন্যবাদ নিরন্তর।।
১১| ০৯ ই নভেম্বর, ২০১৯ সন্ধ্যা ৭:৩২
ইসিয়াক বলেছেন: অনেক মানবিক । বাস্তবজীবনের গল্প । হৃদয় ছুয়ে গেল।
খুব ভালো লেগেছে।আপনার গল্প লেখার হাত ভালো। তবে লিখে বারবার পড়ে দেখতে হবে ।নাকি আমার মতো রোগ আছে , লেখা হলো তো পো্ষ্ট দিয়ে দিলাম। হা হা হা...।
কেমন আছেন ?
দোয়া রইলো।
১০ ই নভেম্বর, ২০১৯ বিকাল ৫:২৩
ল বলেছেন: তাড়াহুড়ো করে পোস্ট দিয়াছিলুম.....
পড়ার জন্য কৃতজ্ঞতা৷ রইলো।।।
©somewhere in net ltd.
১| ০৫ ই নভেম্বর, ২০১৮ রাত ৯:২৩
আব্দুল্লাহ্ আল মামুন বলেছেন: বাহ। বাস্তব এর মতোই লাগলো। সুন্দর