নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
হুন্ডি হলো দক্ষিণ এশিয়ার একটি প্রচলিত অবৈধ অর্থ স্থানান্তর পদ্ধতি, বিশেষত বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানে এটি বেশ পরিচিত। ব্যাংকিং ব্যবস্থার বাইরে এই পদ্ধতিতে অর্থ স্থানান্তর করা হয়। হুন্ডির মাধ্যমে অর্থ লেনদেন সরকার বা আইনগত কাঠামোর নিয়ন্ত্রণে না থাকায়, এটি অর্থপাচারসহ বিভিন্ন অবৈধ কার্যকলাপের জন্য ব্যবহৃত হয়।
১. হুন্ডির মাধ্যমে বিদেশ থেকে রেমিট্যান্স পাঠানো:
বিদেশে প্রেরকের প্রক্রিয়া (যুক্তরাষ্ট্র থেকে):
রহিম নামে একজন বাংলাদেশি শ্রমিক যুক্তরাষ্ট্রে কাজ করছেন এবং তার পরিবারকে ঢাকায় $২,০০০ পাঠাতে চান। ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে পাঠানোর পরিবর্তে, উচ্চ ফি বা কর এড়ানোর জন্য তিনি যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত এক হুন্ডি এজেন্টের (হুন্ডিওয়ালা) সাথে যোগাযোগ করেন। রহিম ওই হুন্ডি এজেন্টের কাছে সরাসরি $২,০০০ নগদ প্রদান করেন।
হুন্ডি এজেন্টের প্রক্রিয়া (যুক্তরাষ্ট্র):
হুন্ডিওয়ালা রহিমের কাছ থেকে $২,০০০ গ্রহণ করে, কিন্তু এই অর্থটি সরাসরি বাংলাদেশে পাঠায় না। এর পরিবর্তে, হুন্ডিওয়ালা তাদের বাংলাদেশে থাকা সহযোগীকে জানায় যে ঢাকায় রহিমের পরিবারকে সমপরিমাণ টাকা (বাংলাদেশি টাকা) পরিশোধ করতে হবে। এই ডলার যুক্তরাষ্ট্রে থেকে যায় এবং এটি প্রায়শই অবৈধ কাজের জন্য ব্যবহৃত হয় বা অফশোর অ্যাকাউন্টে রাখা হয়।
গ্রহণকারীর প্রক্রিয়া (বাংলাদেশ):
রহিমের পরিবার ঢাকার হুন্ডি এজেন্টের কাছ থেকে একটি ফোন কল বা বার্তা পায়, যেখানে তাদের জানানো হয় যে তারা একটি নির্দিষ্ট স্থান থেকে $২,০০০ সমমূল্যের টাকা (বাংলাদেশি টাকা) সংগ্রহ করতে পারে। হুন্ডিওয়ালা ডলারের বিনিময় হার হিসাব করে (যেমন, ১ ডলার = ১১০ টাকা হলে) প্রায় ২,২০,০০০ টাকা নগদে প্রদান করে। এতে কোন ব্যাংক বা আনুষ্ঠানিক চ্যানেলের প্রয়োজন পড়ে না।
২. বাংলাদেশে হুন্ডির মাধ্যমে অর্থপাচার:
বাংলাদেশে অর্থপাচারের প্রক্রিয়া:
আকবর নামে একজন ব্যবসায়ী বাংলাদেশের কালো অর্থ (অবৈধভাবে অর্জিত অর্থ) সাদা করতে চান। আকবর তার অবৈধ আয় ব্যাংকে জমা না দিয়ে, হুন্ডি এজেন্টের (হুন্ডিওয়ালা) সাথে যোগাযোগ করেন। আকবর হুন্ডিওয়ালাকে ৫০ লক্ষ টাকা নগদে দেন, যাতে এ অর্থটি বিদেশে পাঠানো হয়।
হুন্ডিওয়ালার প্রক্রিয়া:
হুন্ডিওয়ালা বিদেশে (যেমন, দুবাই বা সিঙ্গাপুরে) থাকা তার সহযোগীকে জানায় এবং নির্দেশ দেয় যে আকবরের সহযোগীকে $৪৫,৪৫৪ (যদি বিনিময় হার হয় ১ ডলার = ১১০ টাকা) সমপরিমাণ ডলার বা অন্য কোন বিদেশি মুদ্রা প্রদান করতে।
আন্তর্জাতিক লেনদেন:
বিদেশে থাকা হুন্ডিওয়ালা সেই অর্থ আকবরের সহযোগীকে প্রদান করে বা সেই অর্থ অফশোর ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা করে। এভাবে অবৈধ টাকা বাংলাদেশ থেকে চুপিসারে বেরিয়ে যায় এবং আকবর পরবর্তীতে তা ব্যবহার করতে পারেন আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ বা অন্য কোন ব্যবসার জন্য।
হুন্ডিওয়ালারা কীভাবে এই ব্যবসা থেকে লাভবান হয়:
১. মূলত যারা কালো টাকা উপার্জন করে বিদেশে পাচার করেন তাদের কাছ থেকে কমিশনই তাদের এই অর্থ উপার্জনের বড় উৎস।
২. কালো টাকা বিনিয়োগে ব্যবহার:
হুন্ডি নেটওয়ার্কের মাধ্যমে প্রচুর কালো টাকা লেনদেন হয়, যা হুন্ডিওয়ালারা বিভিন্ন লাভজনক ব্যবসায় বিনিয়োগ করতে পারে। তারা রিয়েল এস্টেট বা উচ্চ সুদে ঋণ প্রদান করে এই টাকা কাজে লাগায়।
হুন্ডির মাধ্যমে অর্থপাচারের সমস্যা:
১. স্বচ্ছতার অভাব: হুন্ডির লেনদেন কোন ধরনের নথিভুক্ত বা নিয়ন্ত্রিত নয়, ফলে অর্থ কোথা থেকে আসছে বা কোথায় যাচ্ছে তা জানা অসম্ভব। এই অস্বচ্ছতাকে কাজে লাগিয়ে অর্থপাচার, সন্ত্রাসী অর্থায়ন এবং কর ফাঁকির মতো অপরাধমূলক কাজ করা হয়।
২. সরকারি রাজস্বের ক্ষতি: হুন্ডি পদ্ধতিতে অর্থ লেনদেন সরকারী অর্থব্যবস্থার বাইরে ঘটে, যার ফলে সরকার অনেক রাজস্ব হারায়। এটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
৩. আর্থিক ঝুঁকি: হুন্ডি নিয়ন্ত্রিত নয়, ফলে অর্থ প্রেরক এবং গ্রহীতা উভয়েই প্রতারণার শিকার হতে পারেন অথবা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়তে পারেন।
৪. অপরাধকে উৎসাহিত করে: হুন্ডির মাধ্যমে বড় অংকের অর্থ অবৈধভাবে স্থানান্তর করার ফলে মাদক পাচার, মানব পাচারসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক নেটওয়ার্কের সহায়তা হয়।
৫. অর্থনৈতিক উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত করে: হুন্ডির মাধ্যমে অর্থ লেনদেন আইনসম্মত আর্থিক ব্যবস্থার বাইরে চলে যায়, ফলে দেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থায় তারল্যের অভাব দেখা দেয় এবং অর্থনীতিতে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি হয়।
যদি হুন্ডি ব্যবসা সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে কী হতে পারে?
১.রেমিট্যান্স বৃদ্ধি পাবে: হুন্ডি বন্ধ হলে মানুষ বৈধ চ্যানেল যেমন ব্যাংক ও আন্তর্জাতিক অর্থ স্থানান্তর সেবা ব্যবহার করতে বাধ্য হবে, যার ফলে সরকারের রাজস্ব বাড়বে এবং অর্থনীতির উপর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।
২. অর্থপাচার রোধের প্রচেষ্টা জোরদার হবে: হুন্ডির অনুপস্থিতিতে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলি অবৈধ অর্থপ্রবাহ শনাক্ত ও প্রতিরোধ করতে আরও বেশি সক্ষম হবে, যা অর্থপাচার এবং অন্যান্য অপরাধ কমাতে সহায়ক হবে।
৩. অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বৃদ্ধি পাবে: বৈধ চ্যানেলের মাধ্যমে লেনদেন হওয়ায় অর্থ দেশের নিয়ন্ত্রিত অর্থনীতির মধ্যে ঘুরতে থাকবে, যা দেশের আর্থিক স্বাস্থ্যকে উন্নত করবে এবং আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকে উৎসাহিত করবে।
৪. সাময়িক সামাজিক ও অর্থনৈতিক অস্থিরতা: হুন্ডির উপর নির্ভরশীল অনেক প্রবাসী এবং ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী হুন্ডি বন্ধ হলে সমস্যার সম্মুখীন হতে পারেন। ফলে রেমিট্যান্স প্রবাহের সাময়িক বিঘ্ন ঘটে পরিবারগুলো আর্থিক চাপে পড়তে পারে।
৫. ডিজিটাল আর্থিক ব্যবস্থার প্রসার ঘটবে: হুন্ডি বন্ধ হলে ডিজিটাল আর্থিক প্ল্যাটফর্মের ব্যবহার বাড়বে, যা লেনদেনের স্বচ্ছতা এবং কার্যকারিতা বাড়িয়ে তুলবে।
অবৈধ হুন্ডি ব্যবসা বন্ধ করা হলে দেশীয় অর্থনীতির জন্য এটি একটি সুসংবাদ হতে পারে, তবে এর সাথে সম্পর্কিত সমাজের বিভিন্ন স্তরে যে সমস্যা রয়েছে তা সমাধান করাও গুরুত্বপূর্ণ।
©somewhere in net ltd.
১| ২৮ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:০০
শিশির খান ১৪ বলেছেন: এক এনবিআরের সদস্য মতিউরের কাছে কতো টাকা দেখেন নাই ,বেনজিরের কাছে কতো টাকা দেখেন নাই ,আজকাল তো ড্রাইভার পিয়ন অনেকের কাছেই শত শত কোটি টাকা এই অবৈধ অর্থ সিঙ্গাপুর দুবাই তে হুন্ডি হবে সেটাই স্বাভাবিক আটকাবেন কেমনে ? দুর্নীতি বন্ধ না করা পর্যন্ত হুন্ডি বন্ধ হবে না।আগে দুর্নীতি বন্ধ করতে হবে।