নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ভালোবাসি বিজ্ঞানকে।। তাই বিজ্ঞান নিয়ে সকল পোষ্ট করার চেষ্টা করি।।

দীপংকর চক্রবর্ত্তী

যদি লক্ষ্য থাকে অটুট, বিশ্বাস হৃদয়ে, হবে হবেই দেখা, দেখা হবে বিজয়ে।।।

দীপংকর চক্রবর্ত্তী › বিস্তারিত পোস্টঃ

জাহানারা ইমাম এবং তাঁর রাজাকার বিরোধী গণআন্দোলন (২১তম মৃত্যু বার্ষিকী)

২৬ শে জুন, ২০১৫ দুপুর ২:২১



আজ শহিদ জননী জাহানারা ইমামের ২১তম মৃত্যুবার্ষিকী।আমরা সবাই জানি যে, একাত্তরে তাঁর জ্যেষ্ঠ পুত্র শফি ইমাম রুমী দেশের মুক্তিসংগ্রামে অংশগ্রহণ করেন এবং কয়েকটি সফল গেরিলা অপারেশনের পর পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর হাতে গ্রেফতার হন এবং পরবর্তীতে নির্মমভাবে শহীদ হন। বিজয় লাভের পর রুমীর বন্ধুরা রুমীর মা জাহানারা ইমামকে সকল মুক্তিযোদ্ধার মা হিসেবে বরণ করে নেন৷ রুমীর শহীদ হওয়ার সূত্রেই তিনি শহীদ জননীর মযর্দায় ভূষিত হন৷

বিভিন্ন সময়ে আমরা তাঁর বেড়ে ওঠা জীবন সম্পর্কে জানতে পেরেছি। তাই আমি এ সম্পর্কে না লিখে, মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী অর্থাৎ ৮০-র দশক এবং ৯০-র দশকে মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী রাজাকার, আলবদর, আলশামস বাহিনীর বিরুদ্ধে তাঁর গণআন্দোলন তুলে ধরছি:--

একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি প্রতিষ্ঠা
যখন ১৯৯১ সালের ২৯ ডিসেম্বর গোলাম আযমকে জামায়াতে ইসলামী তাদের দলের আমীর ঘোষণা করলে বাংলাদেশে জন বিক্ষোভের সূত্রপাত হয়। বিক্ষোভের অংশ হিসাবে জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে ১৯৯২ সালের ১৯ জানুয়ারি ১০১ সদস্যবিশিষ্ট মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী শক্তির নির্মূলে প্রথম সংগঠন "একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি" গঠিত হয়। তিনি হন এর আহ্বায়ক। এর পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরোধী প্রতিরোধ মঞ্চ, ১৪টি ছাত্র সংগঠন, প্রধান প্রধান রাজনৈতিক জোট, শ্রমিক-কৃষক-নারী এবং সাংস্কৃতিক জোটসহ ৭০টি সংগঠনের সমন্বয়ে পরবর্তীতে ১১ ফেব্রুয়ারি ১৯৯২ ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন ও একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল জাতীয় সমন্বয় কমিটি’ গঠিত হয়। সর্বসম্মতিক্রমে এর আহ্বায়ক নির্বাচিত হন জাহানারা ইমাম।
এই কমিটিই ১৯৯২ সালে ২৬ মার্চ ’গণআদালত’ এর মাধ্যমে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে একাত্তরের নরঘাতক গোলাম আযমের ঐতিহাসিক বিচার অনুষ্ঠান করে। গণআদালতে গোলাম আযমের বিরুদ্ধে দশটি সুনির্দিষ্ট অভিযোগ উত্থাপিত হয়। ১২ জন বিচারক সমন্বয়ে গঠিত গণআদালতের চেয়ারম্যান জাহানারা ইমাম গোলাম আযমের ১০টি অপরাধ মৃত্যুদন্ডযোগ্য বলে ঘোষণা করেন।

............................................জা্হানারা পুত্র শাফি ইমাম রুমী.............................................

গণআদালতের রায় প্রতিষ্ঠা
এই গণআদালতের সদস্য ছিলেনঃ এডভোকেট গাজিউল হক, ডঃ আহমদ শরীফ, মাজহারুল ইসলাম, ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ, সুফিয়া কামাল, কবীর চৌধুরী, কলিম শরাফী, শওকত ওসমান, লেঃ কর্ণেল (অবঃ ) কাজী নুরুজ্জামান, লেঃ কর্ণেল (অবঃ ) আবু ওসমান চৌধুরী এবং ব্যারিস্টার শওকত আলী খান।
জাহানারা ইমাম গণআদালতের রায় কার্যকর করার জন্য সরকারের কাছে জোর দাবি জানান। গণআদালত অনুষ্ঠিত হবার পর খালেদা সরকার বিচার পরিচালনা তো দুরের কথা উল্টো ২৪ জন বিশিষ্ট ব্যক্তিসহ জাহানারা ইমামের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগ এনে অ-জামিনযোগ্য মামলা দায়ের করে। পরবর্তীতে হাইকোর্ট ২৪ জন বিশিষ্ট ব্যক্তির জামিন মঞ্জুর করেন। এরপর লাখো জনতার পদযাত্রার মাধ্যমে জাহানারা ইমাম ১২ এপ্রিল ১৯৯২ সালে গণআদালতের রায় কার্যকর করার দাবি সংবলিত স্মারকলিপি নিয়ে জাতীয় সংসদের মাননীয় স্পীকার, প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া ও বিরোধীদলীয় নেত্রী শেখ হাসিনার কাছে পেশ করেন। ১০০ জন সাংসদ গণআদালতের রায়ের পক্ষে সমর্থন ঘোষণা করেন। জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় দেশব্যাপী গণস্বাক্ষর, গণ সমাবেশ, মানব বন্ধন, সংসদ যাত্রা, অবস্থান ধর্মঘট, মহা সমাবেশ ইত্যাদি কর্মসূচি পালনের মাধ্যমে আন্দোলন আরো বেগবান হয়। সরকার ৩০ জুন ১৯৯২ সালে সংসদে ৪ দফা চুক্তি করে। ২৮ মার্চ ১৯৯৩ সালে নির্মূল কমিটির সমাবেশে পুলিশ বাহিনী হামলা চালায় । পুলিশের লাঠিচার্জে আহত হন জাহানারা ইমাম, এবং তাঁকে পিজি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এমনকি বিদেশেও গঠিত হয় নির্মূল কমিটি এবং শুরু হয় ব্যাপক আন্দোলন। পত্র-পত্রিকায় সংবাদ শিরোনাম হয়ে উঠলে আন্তর্জাতিক মহলেও ব্যাপক পরিচিতি অর্জন করেন জাহানারা ইমাম। গোলাম আযমসহ একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার দাবির আন্দোলনকে সমর্থন দেয় ইউরোপীয় পার্লামেন্ট। আন্দোলন ব্যাপকতা লাভ করে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে।
২৬ মার্চ ১৯৯৩ সালে স্বাধীনতা দিবসে গণআদালত বার্ষিকীতে জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে গণতদন্ত কমিটি ঘোষিত হয় এবং আরো আটজন যুদ্ধাপরাধীর নাম ঘোষণা করা হয়। এই ঘৃণ্য আটজন যুদ্ধাপরাধীর নামঃ আব্বাস আলী খান, মতিউর রহমান নিজামী, মোঃ কামরুজ্জামান, আবদুল আলীম, দেলোয়ার হোসেন সাঈদী, মওলানা আবদুল মান্নান, আনোয়ার জাহিদ এবং আব্দুল কাদের মোল্লা ।
২৬ মার্চ ১৯৯৪ সালে স্বাধীনতা দিবসে গণআদালতের ২য় বার্ষিকীতে গণতদন্ত কমিশনের চেয়ারম্যান কবি বেগম সুফিয়া কামাল ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটের সামনে রাজপথের বিশাল জনসমাবেশে জাহানারা ইমামের হাতে জাতীয় গণতদন্ত কমিশনের রিপোর্ট হস্তান্তর করেন। এই সমাবেশে আরো আটজন যুদ্ধাপরাধীর বিরুদ্ধে তদন্ত অনুষ্ঠানের ঘোষণা দেয়া হয়।

মৃত্যু
কিন্তু, এ সময় খুব দ্রুত শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটতে থাকলে ২ এপ্রিল ১৯৯৪ সালে চিকিৎসার জন্যে যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগান ডেট্টয়েট হাসপাতালের উদ্দেশ্যে ঢাকা ত্যাগ করেন জাহানারা ইমাম। ২২ এপ্রিল চিকিৎসকরা জানান, চিকিৎসার আওতার সম্পূর্ণ বাইরে চলে গেছেন তিনি। তাঁর মুখগহ্বর থেকে ক্যান্সারের বিপজ্জনক দানাগুলো অপসারণ করা আর সম্ভব নয়। বাকশক্তি হারিয়ে কথা বলা বন্ধ হয়ে গিয়েছিলো তাঁর। এ সময় ছোট ছোট চিরকুট লিখে প্রিয়জনদের সঙ্গে প্রয়োজনীয় কথাবার্তা চালিয়ে যেতেন। ২২ জুনের পর থেকে তাঁর অবস্থার দ্রুত অবনতি ঘটতে শুরু করে। সব ধরনের খাবার গ্রহণ বন্ধ হয়ে যায়। চিকিৎসকরা ওষুধ প্রয়োগও বন্ধ করে দেন। ২৬ জুন ১৯৯৪ সালে বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৭টায় মিশিগানের ডেট্টয়েট নগরীর সাইনাই হাসপাতালের বেডে ৬৫ বছর বয়সে জাহানারা ইমাম শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

#দীপংকর চক্রবর্ত্তী

মন্তব্য ৭ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৭) মন্তব্য লিখুন

১| ২৬ শে জুন, ২০১৫ দুপুর ২:৫২

কাবিল বলেছেন: আজ শহিদ জননী জাহানারা ইমামের ১৯তম মৃত্যুবার্ষিকী।



শ্রদ্ধা জানাই।

২৬ শে জুন, ২০১৫ বিকাল ৪:২৯

দীপংকর চক্রবর্ত্তী বলেছেন: ২১তম মৃত্যুবার্ষিকী!!


শ্রদ্ধা জানাই তাঁকে।

২| ২৬ শে জুন, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:২৩

সুমন কর বলেছেন: উনার প্রতি রইলো বিনম্র শ্রদ্ধা। শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ।

২৬ শে জুন, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:২৫

দীপংকর চক্রবর্ত্তী বলেছেন: অাপনাকেও ধন্যবাদ!!

৩| ২৭ শে জুন, ২০১৫ সকাল ৯:৪১

সুফিয়া বলেছেন: বাংলার মানুষ এই মহিয়সী নারীর কাছে আজীবন ঋণী থাকবে।

৪| ০৬ ই জুলাই, ২০১৫ রাত ১২:০৪

দীপংকর চন্দ বলেছেন: "জয় আমাদের হবেই"

শ্রদ্ধা শহীদ জননীর প্রতি। বিনম্র।

অামার শুভকামনা জানবেন। অনিঃশেষ।

অনেক ভালো থাকবেন। সবসময়।

০৬ ই জুলাই, ২০১৫ বিকাল ৫:০৪

দীপংকর চক্রবর্ত্তী বলেছেন: অসংখ্য ধন্যবাদ।

যত দিন জাহানারা ইমামের মত মহীয়সী মানুষের আদর্শ থাকবে অবশ্যই "জয় আমাদের হবেই"

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.