নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

হোমিওপ্যাথিক বিজ্ঞান ও তার প্রয়োগকলা

হ্যানিম্যান

ডাঃ নাসির

সত্য ও সু্ন্দরের সন্ধানে....

ডাঃ নাসির › বিস্তারিত পোস্টঃ

আসে বসন্ত ফুলবনে

১২ ই আগস্ট, ২০১৩ রাত ১১:৩২

হঠাৎই ঘুম ভেঙ্গে গেল নিলুর ।বাইরে শিশিরের টুপটাপ শব্দ। আর কোথাও কোন শব্দ নেই।নৈঃশব্দের প্রকৃতিতে শিশিরের শব্দ শুনতে খুব ভালো লাগছিলো তার।রাত কত হল কে জানে!ধীরে ধীরে জানালার পাল্লা খুলল ও। পুবের আকাশে ভোরের আভাস।হিমমাখা বাতাসের শীতল ছোঁয়া যেন ভালবাসার পরশ। আচমকাই দেখতে পেল ও অনিকে। স্মিত হাসিতে উদ্ভাসিত মুখ। ঘোর কাটাতে চিমটি কাটল নিলু নিজের শরীরে। তারপর হেসে ফেলল।আজকাল প্রায় তার এরকম হচ্ছে।দুম করে অনি চলে আসছে তার চোখের সামনে।



শালটা টেনে নিয়ে নিলু বেরিয়ে এল বাইরে।ভোরের আকাশ রঙ পাল্টাচ্ছে দ্রুত। চেনা-অচেনা অজস্র পাখির কলতানে মাতোয়ারা ভোর। একটু এগোতেই এবার সত্যিই দেখতে পেল

অনিকে।

-আরে তুই? বিস্মিত কণ্ঠে বললনিলু।

-আমারও তো সেই একই প্রশ্ন।

আমি তো প্রায় হাঁটি। সেটা তুই ভালো করেই জানিস। আর তুই তো কুঁড়ের বাদশাহ। দু’চোখে দেখে ও তাই বিশ্বাস হচ্ছেনা।

আমি তো তোকে দেখব বলেই আজ বেরিয়েছি। অনি বলল নিরুচ্চারে।



নিলু আর অনিরা পাশাপাশি থাকে। একসঙ্গেই বেড়ে উঠেছে দু’জন। ছোটবেলা থেকেই সখ্যতা। তারপর বন্ধুত্ব। বন্ধুত্ব যে কখন ভালোবাসায় গড়াল টেরই পেলনা কেউ। অথচ মুখ ফুটে সত্যি কথাটা পরস্পরকে বলাই হলনা আজও। যা আছে শুধু দু’জনের বোধে, অনুভবে। হাঁটতে হাঁটতে ওরা দু’জন চলে এল রাস্তার মোড়ে। বকুল গাছটার নিচে। হালকা ফিকে

রঙের গালিচা পাতা বকুলতলে এসে শ্রেয়া বিহ্বল হল। তার পাশে অনি! এরকম ভোর শুধু ওর স্বপ্নেই ছিল।

-শ্রেয়া, আজ হাঁটতে না এলে সকালের এই স্নিগ্ধরূপ কখনোই দেখতে পেতামনা। অনি বলল আবেগভরে।

-হুঁ, আমার ও খুব ভালো লাগছে।

দু’জনে হাঁটতে লাগল চুপচাপ।



রাত কত হল কে জানে। নিলু এসে ব্যালকনিতে দাঁড়াল। বাইরে নরম চাঁদের আলো। সাথে নবীন বসন্তের

ফুরফুরে হাওয়া। নিচের বাগান থেকে ভেসে আসছে ফুলের সৌরভ। একই সাথে দু’ধরনের অনুভূতিতে আক্রান্ত হল ‘ও’। প্রচণ্ড ভালোলাগার পাশাপাশি গভীর দুঃখবোধ। এই নিঝুম-নিশীথ রাতে নিজের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে নিজেকে ভীষণ অচেনা লাগছিল ওর। দু’একটা পাখির ডাকে চমকে উঠল নিলু। ভোর হয়ে গেছে! কখন হল! ও তো কিছুই টের পায়নি। অনি তার সব সময় কেড়ে নিয়েছে। হেসে ফেলল নিলু। মা যদি জানতে পারে ও সারারাত ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে নির্ঘুম কাটিয়েছে তাহলে একেবারে খুন করে ফেলবে। তবু ও ওর ঘরে যেতে ইচ্ছে করল না। পা টিপে টিপে বেরিয়ে এল বাইরে। চারদিকে সুনসান নীরবতা। দু’একটা পাখির কিচির-মিচির

ছাড়া আর কোন শব্দ নেই। দূরে কোথাও মন উতল করা সুরে একটা কোকিল ডেকে যাচ্ছে থেকে থেকে। কয়েক

পা এগোতেই দেখতে পেল অনিকে। কাঁধে একটা ব্যাগ নিয়ে হনহনিয়ে এদিকেই আসছে। ভোরের অপার্থিব আলোয় ওকে ভীষণ স্নিগ্ধ দেখাচ্ছিল। নিলু তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছিল চুপচাপ।

-কি রে দাঁড়িয়ে পড়লি যে। কি দেখছিস? অনি বলল শশব্যস্তে।

-কোথায় যাচ্ছিস তুই? কাঁধে ব্যাগ কেন? নিলু নিচুকণ্ঠে জানতে চাইল।

-আমি তো তোর কাছেই যাচ্ছিলাম। আমার একতা টুর্নামেন্ট আছে। সেখানেই যাচ্ছি।

-কবে ফিরবি?

-জানিনা।

-তুই তো কিছুই জানিস না।

-দ্যাখ নিলু, এই ভোরবেলায় আমার সাথে ঝগড়া করিসনা।

-আচ্ছা বেশ, করবনা। যেখানে যাচ্ছিলি যা।



আজ নিলুর মনটা খুব অস্থির। অনি গেছে বেশ কয়েকদিন হল। কোন পাত্তাই নেই। অনি এত ব্যস্ত যে, ফোনে ও কথা হয় টুকটাক। ও আনমনা হয়ে বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে। দূরে রেইনট্রির

মাথায় একটুকরো মেঘ থমকে আছে। বুঝিবা নিলুর মতই অপেক্ষা করছে একান্ত কারো জন্য। নিলুর বুকের ভেতরটা আকুলি-বিকুলি করে উঠল। কবে জানাতে পারবে ‘ও’অনিকে ভালবাসার কথা। কিংবা অনি কি ওকে কোনদিন বলবে!

হা ঈশ্বর! এত দ্বিধা কেন! মুঠোফোনের জলতরঙ্গে নিলুর ভাবনায় ছেদ পড়লো। স্ক্রিনে অনির নাম দেখে এক অচেনা আলো খেলে গেল ওর দু’চোখে। ভালোলাগার আবেশে বিবশ হল মন।

-হ্যালো নিলু, কি করছিস?

-ক্রিকেট খেলছি। নিলুর মুখে দুষ্টুমীর হাসি।

-মানেটা কি?

-কোন মানে নেই।

-মাথা ঠিক আছে তো?

-সেতো অনেক আগেই গেছে।

-তোর কথার মাথামুণ্ডু কিছুই আমি বুঝতে পারছিনা।

-বুঝতে হবেও না। কবে আসছিস?

-আসছিনা।

হঠাৎই খুব রাগ হয়ে গেল নিলুর। দুম করে লাইনটা কেটে দিল। কান্না পেল প্রবলভাবে। প্রাণপন

চেষ্টায় কান্নাটাকে গিলে ফেলল ‘ও’। ঘরে গিয়ে বসল সঞ্চয়িতা নিয়ে। তারপর ডুবে গেল বইয়ের

পাতায়।

আলোকরঙা শেষ বিকেলে ঝিলের ধারে চুপচাপ একা বসে আছে নিলু। আনমনা। চারদিকে ঘন সবুজ গাছ-গাছালি। পাখিদের কলতানে মুখর প্রকৃতি। কিন্তু কিছুই টানছেনা নিলুকে। আজ ১৪’ই ফেব্রুয়ারি। ভেবেছিল, সব দ্বিধা ঝেড়ে অনিকে বলবে সব। সারাদিন ঘুরবে, গান শুনবে, চুপচাপ দু’জন বসে থাকবে ঝিলের ধারে। হলনা, কিছুই হলনা। অনি হয়তো একদিন তার কাছ থেকে হারিয়েই যাবে অনবধানে। নিজের অজান্তেই দু’ফোটা জল গড়িয়ে পড়ল নিলুর। আর তক্ষুনিই কাঁধে যেন কার হাতের স্পর্শ। ফিরে তাকাল নিলু।

মিটিমিটি হাসছে অনি। হাতে একতোড়া হলুদ গোলাপ।

মুহূর্তেই সাতরঙা রামধনু নেমে এলো নিলুর পৃথিবীতে। কাঁহারবা রাগে সেতার বেজে উঠল মনের ঘরে। অনি এসে বসল পাশে। কপট গাম্ভীর্যে নিলু বলল,

-তোর সাথে কোন কথা নেই।

-তাই?

-হ্যাঁ, তাই।

-ঠিক আছে।চলে যাচ্ছি।ফুলগুলো কি করব? নিয়ে যাব? অনি উঠে দাঁড়াল যাওয়ার জন্য।

-ভাল হবেনা কিন্তু। নিলুর গলায় অভিমান।

-যাহ্‌ বাবা। আমার কি দোষ! থাকতেও দিবিনা আবার যেতেও দিবিনা । তাহলে করবোটা কি

আমি?

-ঝিলের জলে ঝাঁপ দে।

-অপরাধ?

-বুঝতে পারছিসনা অপরাধ কি?

-না তো।

-সে তুই কোনদিনই বুঝবিনা। নিলু মনে মনে বলল।

-অনি বসে পড়ল আবার। দু’জনই চুপচাপ।

কমলারঙা আকাশে কুসুমরঙা সূর্য ডুবে যাচ্ছে ধীরে ধীরে। অচেনা ফুলের সৌরভ ভাসছে বাতাসে। কথা না বলেও অনেক কথা বলে যাচ্ছে দু’টি উন্মন হৃদয়। অনি কিছু বলতে গেল। কিন্তু নিলু বলল,

-কথা বলিস না প্লিজ। তাই অনির আর বলা হলনা, যে কথা শুনতে চাইছে নিলু জনম জনম ধরে। কেটে যাচ্ছে মুহূর্ত্বগুলো। অনি বুঝতে পারল, আজ বলতে না পারলে নিলুকে সে কোনদিনই বলতে পারবে না কথাটা। হাতে নিল মুঠোফোন। বাটন টিপতেই সাদী মোহাম্মদের উদাত্ত মোলায়েম কণ্ঠ ছড়িয়ে পড়ল বাতাসে-

“ভালোবাসি ভালবাসি

এই সুরে কাছে-দূরে

জলে-স্থলে বাজায় বাঁশি...........................।”

আর সেই সুর ছড়িয়ে গেল ঝিলের জলে, সদ্য তারাফোটা আকাশে আর দূরে ফুলের বনে।



মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৩ ই আগস্ট, ২০১৩ রাত ২:২৯

নিষ্‌কর্মা বলেছেন: কিন্তু যার বোঝার সেই বুঝলো না এই গানের মানে =p~ =p~ =p~ =p~ =p~ =p~ =p~ =p~

২| ১৫ ই আগস্ট, ২০১৩ সকাল ১১:৪৪

অলওয়েজ ড্রিম বলেছেন: নিলু আর অনিরা পাশাপাশি থাকে। .-------
রঙের গালিচা পাতা বকুলতলে এসে শ্রেয়া বিহ্বল হল। তার পাশে অনি! এরকম ভোর শুধু ওর স্বপ্নেই ছিল।
-শ্রেয়া, আজ হাঁটতে না এলে সকালের এই স্নিগ্ধরূপ কখনোই দেখতে পেতামনা।
শ্রেয়া এল কোত্থেকে? গান শুনিয়ে ভালবাসা জানানোর বুদ্ধিটা ভালই।

লিখে যান। আপনাকে আমি কিন্তু অনুসরণ করছি অনেক আগে থেকেই। ভাল থাকবেন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.