নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
যদি তোর লেখা পড়ে কেউ না হাসে তবে একলা হাসো রে!
জীবনে আমি প্রথম আয় করেছি বাবার মাথার পাকনা চুল তুলে দিয়ে ৷ প্রতি চারটা এক টাকা ৷ একটা তুলতাম আর বলতাম যথাক্রমে এক দুই তিন চার ৷
.
বাবা চোখ বন্ধ করলে একটা কাঁচা চুল তুলে লুকিয়ে রেখে নিচ থেকে ফেলে দেওয়া একটা পাকনা নিয়ে ছয়, সাত, আটটা, দুই টাকা ইনকাম হয়ে গেছে ৷
.
শর্ত আছে কালো চুল তুললে একটা পেনাল্টি ৷ এতো ঘন কালো চুলের ভিত্রে থেকে পাকনা চুলের খোঁজ করা ছিলো অনেকটা চিরুনি অভিযানের মতো ৷
.
একদিন বাবা ঘুম থেকে উঠে বললো, মেঝেতে এতো কালো চুল কেনো? তারপর থেকে পাকনা চুলের রেইট্ কমে প্রতি দশটা তুললে এক টাকা হয়ে গেছে ৷ ব্যবসায় খুব মন্দা দেখা দিয়েছিলো ৷
.
হাত তুলে মোনাজাত করতাম যাতে বাবার সব চুলে পেকে যায় আর আমি ইচ্ছামতো তুলে একদিন লাখপতি হয়ে যাবো ৷ স্বপ্ন দেখতাম, বাবার সব চুল পেকে গেছে আর আমি একে একে সব তুলে আব্বুকে ডাব্বু করে দিয়েছি ৷ সেই টাকা হিসেব রাখার দায়িত্ব দিয়েছি ভাইকে ৷ ওখান থেকে সে কয়েক হাজার টাকা সরিয়ে রেখেছে ৷ আর আমি সুপার ম্যান মার্কা গামছাটা গলায় প্যাঁচিয়ে শর্ট প্যান্ট যেটা টাইট হয়ে গেছে সেটা ফুল প্যান্টের উপর পরিধান করে উত্তম মধ্যম দিচ্ছি ৷
.
অতপর বড় ভাই রেসলারে তার প্রিয় কেইনের মুখোশটি ডয়ার থেকে বের করলো, খপ্ করে গলায় ধরে আমাকে উপ্রে তুলে আছাড় মারতে যাবে এমন সময় বললাম, স্যার, উপ্রে থেকে আপনার মাথায় পাকনা চুল দেখতে পাচ্ছি কিছু ৷ আমি ফ্রি তুলে দিবো একদম ৷ আমাকে এবার ছেড়ে দে প্লিজ ভাইয়া ৷
.
আরেকটু বড় হলে দেখলাম স্কুলের শেষ দিকে আমারও চুলে পাক ধরেছে ৷ এখন তো মহা মুসিবত ৷ আমাকে বিয়ে করতে হবে ৷ বাবারগুলো না হয় আমি তুলে দিতাম, আমারগুলো তুলে দেওয়ার জন্য আমারও একটা ছেলে দরকার ৷ একদিন পত্র লিখলাম, জরুরী প্রয়োজনে বিয়ে করার আবেদন পত্র ৷ বাংলা দ্বিতীয় পত্রের চিঠিপত্র বিভাগ খুলে, সবিনয় নিবেদন এই যে বাবা আমার জরুরী পাকা চুল তোলার জন্য বিয়ে করা প্রয়োজন আর বিনীত নিবেদন এই যে অনুমতি দিয়ে বাধিত করবেন ৷ ইতি,
.
সেই চিঠি মনে হয় ডাক বাক্সে থেকে গেছে ৷ তবুও এখনো চিঠি শেষে মেয়ের নাম কেনো ইতি লিখতে হবে সেটা মাথায় থেকে গেলো ৷
.
হাতে লেখা পত্রের যুগে, সবচেয়ে বেশী প্রেমপত্র পাওয়া মেয়ের রহস্যের খোঁজ করতে গিয়ে সেদিন বুঝলাম মেয়েটির নাম ছিলো ইতি ৷ ইতি, তোমার স্বামী ৷ ওমর সানী ৷ সালমান শাহ ৷ তবুও ভালো ছিলো ৷ একদিন ইতি ভাব কমে চুপসে গেছে, যখন ইতির কাছে পত্র এলো, ইতি, প্রিয় এলাকাবাসী ৷ মারেম্মা ৷
.
এভাবে হাজারো মজার রঙ্গ নিয়ে আমাদের বেড়ে উঠা ৷ সেদিন এক মেয়ে বললো, সে তার বাবাকে রাতে পাখা দিয়ে বাতাস করে টাকা ইনকাম করতো ৷ প্রতি বিশ বার বালান দিয়ে এক টাকা ৷ অবাক হলাম ৷ এখন আর অবাক হয় না ৷ শুধু বসকে বাতাস করে টাকা রোজগার এখন রোজ দিব্যি দেখে চলছি ৷
.
সেদিকে যাবো না, সেদিন বাবা বলে কিরে তোর তো অনেক চুল পাকছে ৷ বিয়ে করবি কবে? বললাম, 'বন্ধুর বাবার এখনো চুল ই পাকেনি ৷'
.
অনেক বছর পরও দেখি বাবা আয়না দেখে দেখে পাকা চুল তুলছে ৷ বললাম, পাকা চুল তোলার কারিগররা সব ভাতে মরে গেছে ৷ না খেতে পেয়ে ৷ আগে কি সুন্দর আয় করতাম ৷ বাবা বললো, 'আসলে বেপার হলো, তুই অংকে কাঁচা ছিলি তাই ছোট বেলায় পাকা চুল তুলতে দিয়ে তোকে যোগ বিয়োগ গণনা শিখাতাম ৷'
.
এখন তো মনে হচ্ছে অংকের শিক্ষক হিসেবে বাবাকে আমার মজুরি দেওয়া উচিত ৷
২| ১৯ শে মে, ২০২৩ দুপুর ১২:৫৬
রাজীব নুর বলেছেন: ছোটবেলা থেকেই আপনি বুদ্ধিমান ছিলেন।
৩| ১৯ শে মে, ২০২৩ বিকাল ৩:৩৯
মহাজাগতিক চিন্তা বলেছেন: অংক শিখানোর বেশ ভালো পদ্ধতি।
৪| ২১ শে মে, ২০২৩ বিকাল ৪:৪৩
শাওন আহমাদ বলেছেন: সহজ সরল সুন্দর লেখা।
©somewhere in net ltd.
১| ১৯ শে মে, ২০২৩ দুপুর ১২:৩৭
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: শরীফ ভাই, লেখাটা হয়ত রম্য হিসাবেই লিখেছেন, কিন্তু এটা পড়তে পড়তে মনে খুব বেদনাবোধের জন্ম হলো। সন্তানের প্রতি বাবার যে মমত্ববোধ, এবং বাবার প্রতিও সন্তানের যে টান, সে জিনিসটাই অনুভব করলাম এ লেখায়।