নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
যদি তোর লেখা পড়ে কেউ না হাসে তবে একলা হাসো রে!
বার্ষিক পরীক্ষা শেষ, সহপাঠী নাদিয়ার জানালায় উঁকি দিয়ে দেখলাম সে রিলাক্সে পরের ক্লাশের পূর্ব প্রস্তুতি নিয়ে অগ্রীম ব্যতিব্যস্ত,
.
ভাগ্যিস রবী ঠাকুর বেঁচে নেই, থাকলে সেদিন বলতো, 'ওরে নাদিয়া, আবারও শেষ হইয়া হইলো না শেষ ৷'
.
স্কুলের শরীরচর্চা বিভাগের স্যার প্রায় সময় বলতো, আরামে দাঁড়াও, সোজা হও! তারপর একদিন কাছে এসে বললেন, এটা কি আরামে দাঁড়ানো হলো ৷ বললাম, স্যার আমি এভাবে কাঁধ বাঁকা হয়ে না দাঁড়াইলেতো আরাম পাইনা!
.
জানিনা বার্ষিক পরীক্ষার শেষ, অনেকের কাছে সেই রকম আরামে দাঁড়ানোর মতো কোন বেপার কি না,
.
তবে আমার মতো অনেকের কাছে বার্ষিক পরীক্ষা শেষ মানে অনির্দিষ্টকালের জন্য ছুটি! আরেকটা বার্ষিক পরীক্ষা না এলে ভুলে যেতাম, এককালে আমিও ছাত্র ছিলাম না কি?
.
নানীর দীর্ঘ বিশ্বাস মতে বার্ষিক পরীক্ষা শেষে কারাবন্দী শয়তানগুলোর নাকি কারামুক্তি হয় ৷ বুঝতেই পারছেন জ্বালাময়ী ছিলো সে সব দিনগুলো,
.
গত রাতগুলোতে দশটার আগে ঘুমে নুয়ে যেতে থাকা ছেলেটিরও পরীক্ষার পর আনন্দে ঘুম ই আসতো না ৷ ছাত্র জীবনে রমজানের ঈদ, কোরবানের ঈদের পর আরেকটি ঈদ ছিলো তা হলো বার্ষিক পরীক্ষা শেষের আনন্দ ৷
.
যদিও বার্ষিক পরীক্ষা শেষে এলাকার ছোট ভাইদের প্রতি কিছু গুরু দায়িত্ব পালন করতে হতো, এই যেমনঃ লম্বা করে সালাম দিয়ে বড় ভাই ডাকা ছেলেটির হাতে চারশ টাকা দামের পাঞ্জেরি গাইডটি তুলে দিয়ে প্রতিদান দেওয়া ৷
.
প্রতি বার্ষিক পরীক্ষার পর একটা ভাব আসতো, দিনকে দিন এলাকার বড় ভাই হওয়ার যে একটা যাত্রা তার শেষ নিদর্শন স্বরূপ এমন একটা শার্টের খোঁজ করতাম যার কলার সর্বদা উঁচা থাকবে ৷
.
কি এক যুগে আছি যেখানে মান্না দে ও নেই, থাকলে নিশ্চিত সুর তাল লয় দিয়ে গেয়ে উঠতো, 'বার্ষিক পরীক্ষা শেষের সেই আনন্দগুলো আজ আর নেই, আজ আর নাই, কোথায় হারিয়ে গেলো সোনালী দিনগুলো সেইই, আজ আর নেই.....!'
.
লাল্লাল্লা টাইপের সেই দিনগুলোতে লাল নীল স্বপ্নের মধ্যে কেবলি ছিলো একদিন পরীক্ষা শেষ হবে, সেদিন অনেক মজা হবে!!!
.
কথিত পরীক্ষার জনক হেনরি এ ফিশেলকে মনে মনে উচ্চবাক্য করতে করতে কখন যে জীবন থেকে বার্ষিক পরীক্ষা নামক অধ্যায়টি পরিসমাপ্তি হয়েছে মনেও নেই,
.
তবুও স্মৃতির পাতা খুলে দেখতে পেলাম, বার্ষিক পরীক্ষা শেষে পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী ছাত্রগুলো মামার বাড়ি যাচ্ছে, আজ আমাদের ছুটিও ভাই! আজ আমাদের ছুটি ৷
.
বইয়ের ভারে হেলে যাওয়া কিছু কাঁধ টান টান করে আবারো বুক ফুলিয়ে দাঁড়িয়ে, এদিক ওদিক ছুটোছুটি করছে,
.
এ যেনো দীর্ঘ নয় দশ মাস রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পর খুব অল্প সময়ের জন্য পাওয়া স্বাধীনতা ৷ স্বাধীনতার এক্সপায়ার ডেট্ শেষ হওয়ার পর যখন গ্রাম ছেড়ে শহরে ঢুকতাম, নিশ্চিত শুনতে পেতুম, কিরে তুই এতো কালো হয়ে গেছিস কেনো ৷ সহজ স্বীকারোক্তি করে বলতে ইচ্ছে হতো, 'আমাদের রৌদ্রস্নান ভালো লাগে!'
.
তখন বার্ষিক পরীক্ষার প্রস্তুতি জানিয়ে বাবাকে পত্র লিখতে হতো, কিন্তু বার্ষিক পরীক্ষা শেষ, এখন কি করবো জানিয়ে যদি পত্র লিখতে হতো তাহলে সেটা নিশ্চিত কোন ডানপিটে বন্ধুকে উল্লেখ করে লেখা লাগতো,
.
একদিন বার্ষিক পরীক্ষাগুলোর নাম পাল্টে ইংরেজি হয়ে গেলো, কখনো বোর্ড পরীক্ষা, লাস্ট সেমিস্টার, ফাইনাল পরীক্ষা, মাস্টার্স পরীক্ষা অবশেষে একদিন বুঝতে পারলাম জীবন মানেই পরীক্ষা ৷
.
প্রতিটি দিন ই পরীক্ষার দিন, জীবনের বার্ষিক পরীক্ষায় শুধু ইকোনো ডি এক্স কলম, খাতা, কাগজ, স্কেল, টেবিল, টুল কিংবা সেই স্কুল নেই ৷
.
বার্ষিক পরীক্ষা শেষে লিখতে গিয়ে আবারো বুঝতে পারলুম, 'বাস্তবতা সেই নাদিয়ার মতো কিয়েক্টাবস্থা, শেষ হইয়াও হইলো না শেষ!'
২| ২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ সন্ধ্যা ৭:০২
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: অবশেষে একদিন বুঝতে পারলাম জীবন মানেই পরীক্ষা। এটা খুব ভালো বলেছেন। স্কুল, কলেজ, ইউনিভার্সিটি পরীক্ষামুক্ত করে দিলেও জীবন কোনোদিন আপনাকে পরীক্ষা থেকে মুক্তি দিবে না। সো, পরীক্ষার জন্য প্রতিদিনই প্রস্তুত থাকুন।
৩| ২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ রাত ১০:১৪
কামাল১৮ বলেছেন: তা হলে আদুভাইয়ের মতো একই ক্লাসে থাকে হবে অজীবন।
৪| ২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ দুপুর ১:৩৬
রাজীব নুর বলেছেন: ভালো। মজার।
©somewhere in net ltd.
১| ২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ বিকাল ৫:৪৬
অক্পটে বলেছেন: ভালো লাগল। ঠিক এমনি করেই ভাবতাম আমিও। হায়! কোথায় হারিয়ে গেল সেইসব দিন।