নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

একজন জেনারেল ব্লগারের নিজের সম্পর্কে বলার কিছু থাকে না ।

আবদুর রব শরীফ

যদি তোর লেখা পড়ে কেউ না হাসে তবে একলা হাসো রে!

আবদুর রব শরীফ › বিস্তারিত পোস্টঃ

কয়েদী নাম্বার ৩৩৮৩৭৫

১৭ ই আগস্ট, ২০২০ দুপুর ২:৫০

মেয়েটা দেখতে অবিকল কদম আলীর মায়ের মতো হয়েছিলো ৷ রোজ মা বলে ডাকতো ৷ মায়ের মৃত্যুর আগে একটা নাক ফুল পছন্দ হয়েছিলো ৷ কিনে এনে দেওয়ার পর সেটা না পরে কেনো জানি তুলে রেখেছিলেন সেদিন ৷
.
কদম আলীও মা মারা যাওয়ার পর দীর্ঘদিন নাক ফুলটা আগলিয়ে রেখেছিলেন ৷ কোন একদিন মা রূপে ফিরে আসা মেয়ের নাকে সেটা দেখবেন বলে ৷ নাকটাও মায়ের মতো হয়েছে অবিকল ৷
.
আস্তে আস্তে মেয়েটি বড় হতে থাকলো ৷ এই তো সেদিন কখন যে দেখতে দেখতে মেয়েটি নিজেই নাক ফুল পরবে বায়না ধরলো ৷ কদম আলীর মন আনন্দে ভরে উঠলো ৷ ঘটা করে নাক বিঁধিয়ে সেখানে নাক ফুলটি পরিয়ে দেওয়া হলো ৷
.
ইদানিং মেয়েকে দেখলে মায়ের স্মৃতি মনে পরে রোজ ৷ হঠাৎ একদিন খবর এলো তার মেয়েকে পাওয়া যাচ্ছে না ৷ বুকটা হাহাকার করে উঠলো ৷ চারদিকে খোঁজ লাগানো হলো ৷
.
একটি বারো বছরের মেয়ের নিখোঁজ বিজ্ঞপ্তিতে ঢেকে গেলো পুরো শহর ৷ থানার দারোগা আশ্বাস দিলো ৷ কোনো কিছু যেনো বিশ্বাস হচ্ছে না ৷ যাকে সামনে পায় তাকে জড়িয়ে ধরে বাবা বলতে থাকা, 'আমার মেয়ের খোঁজ চাই ৷'
.
সপ্তাহ ব্যাপী উষ্কুখুষ্কু নির্ঘুম এক বাবার কাছে অবশেষে খবর এলো ৷ টানা সাত দিন ধর্ষণের পর তার মেয়েকে ফেলে রেখে যাওয়া হয়েছে ৷ এলাকাবাসী উদ্ধার করে তাকে মেডিক্যালে ভর্তি করিয়ে দিয়েছে ৷ বেঁচে আছে মেয়ে ৷
.
বাসার সবাই মেডিক্যালের দিকে ছুটছে ৷ তা না করে কদম আলী সাইন বোর্ড লিখছে ৷ দুটো প্লে কার্ডও ৷ চোখের জলে প্লেকার্ড কিছু লেখা লেপ্টে গেছে ৷ আমার মেয়ে ধর্ষিত কেনো ৷ প্রশাসন জবাব চাই ৷
.
প্রেসক্লাবের সাংবাদিকদের পা ধরা বাকী ৷ জীবনের নতুন অভিজ্ঞতা ৷ কেউ কেউ ক্লিক করছে ৷ দেখছে ৷ মুখ ফিরিয়ে চলে যাচ্ছে ৷ এই যেনো সাধারণ ঘটনা ৷ পত্রিকার এক কোণে পরে থাকা খবর ৷ অবশেষে কদম আলী ক্লান্ত পরিশ্রান্ত ৷ সেদিন কয়েকজন পুলিশ এসে তারা পুনরায় আশ্বাস দিয়ে গেছে ৷
.
এভাবে আরেক সপ্তাহ চলে গেলো ৷ সব আশা ভরসা নিঃশেষ ৷ একজন ব্যর্থ বাবা ফিরে যাবেন ভাবছেন, প্রেস ক্লাব থেকে, বিচার না পেয়ে ৷ থানাকে পিছনে ফেলে ৷ এক বুক জমা অভিমান ৷
.
সেটা খেয়াল করছিলো এক তথাকথিত ফেসবুক সেলেব্রেটি ৷ তার মুঠোফোন বের করে সে লাইভে আসলো ৷ সাথে ধর্ষিত এক বাবার গল্প ৷ মুহূর্তে শেয়ার হতে থাকলো ৷ কয়েক ঘন্টার পর সেটি টক্ অব দি কান্ট্রি ৷ ইস্যু হয়ে গেলো ৷ শুরুতে দেখেও না দেখা এতোগুলো মাইক্রোফোন থেকে আজ একজন তার লতার ডান্ডাটা আরেকটু এগিয়ে দিয়ে বললো, 'মেয়ে ধর্ষিত হয়েছে, আপনার অনুভূতি কি?'
.
ঐদিকে চারদিকে বিচার চাই ৷ বিচার চাই ৷ স্লোগান ৷ একটু আগে প্রধানমন্ত্রী ফোন করে সান্ত্বনা দিলো ৷ পরের দিন নুয়ে থাকা এক বাবার সাথে সহস্র বাবার ভীড় ৷ তাকে ঠেলে নিজের মেয়ে মনে করে সামনে চলে আসছে অন্য বাবারা ৷
.
আবারো জনস্রোতের উত্তাপে পেছনে সরে যাচ্ছে এটি ধর্ষিত মেয়ের বাবা ৷ যতদূর চোখ যায় কেবলি একটি স্লোগান, আমার মেয়ে ধর্ষিত কেনো ৷ বিচার চাই ৷ বিচার চাই ৷ তার মেয়ে আজ সবার মেয়ে ৷
.
ঐ যে ছেলেটি ৷ লাইভ করা ছেলেটির আইডি চিরতরে নিখোঁজ ৷ তার খোঁজ না করা একটি বাবারও অনেকদিন পরে জানতে ইচ্ছে হলো ৷ কেমন আছে তার মেয়ের বিচার চেয়ে লাইভ করা ছেলেটি? সর্বশেষ অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে সেদিন জানতে পারলো তার ঠিকানা ৷ কয়েদী নাম্বার ৩৩৮৩৭৫ ৷

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৭ ই আগস্ট, ২০২০ বিকাল ৩:২৪

রাজীব নুর বলেছেন: পড়ে ভালো লাগলো।

২| ১৭ ই আগস্ট, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:৪৩

ঘরহীন বলেছেন: সুন্দর লিখেছেন, শেষের টুইস্টটা দারুন হয়েছে। মুগ্ধ হলাম।

ভালো কথা, আপনি দেখি আজাদ ভাইয়ের পথ ধরেছেন!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.