নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

একজন জেনারেল ব্লগারের নিজের সম্পর্কে বলার কিছু থাকে না ।

আবদুর রব শরীফ

যদি তোর লেখা পড়ে কেউ না হাসে তবে একলা হাসো রে!

আবদুর রব শরীফ › বিস্তারিত পোস্টঃ

গাঁজাটি বন্ধু মারুফ

২৯ শে জুন, ২০২০ দুপুর ২:১০

বিড়ি খাওয়াটা তার কাছে শিখেছি ৷ হুট করে কলেজে উঠে দেখলাম সে গাঁজা খাচ্ছে ৷ দুই মাসে, গাঁজা টানতে টানতে ঠোঁটগুলোর রং কয়লাকৃতি হয়ে আছে ৷ ক্লাশে বাথরুমে গিয়েও গাঁজা টানে ৷ পরীক্ষার হলে কলম ধার নিয়েছি সেখান থেকেও গাঁজার গন্ধ ৷ গাঁজার ডিলার মনে হচ্ছে ওকে ৷
.
একদিন ট্রেন ছাড়ার দুই মিনিট বাকী ৷ একসাথে বটতলী যাচ্ছি ৷ সে ব্যাগটা জানালা দিয়ে আমার কাছে দিয়ে বললো দোস্ত সিঁট রাখ ৷ তারপর সিগারেট থেকে অর্ধেক তামাক বের করে তাতে গাঁজা ঢুকিয়ে টানতে গিয়ে ট্রেন সেদিন দুই মিনিট আগে ছেড়ে দিচ্ছে ৷ সে কোন রকম ট্রেনের দরজার হাতল ধরে ঝুলে কেউ না দেখে করে গাঁজার বাকীটা টানছে আর ঝুলছে ৷ ভয় হচ্ছে আমার কখন যে পরে যাবে ৷
.
তার চোখ দেখলে আমার কখনো মনে হয় না সে গাঁজার ডিলার নিয়েছে ৷ ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজায় যখন ইহুদিরা বোমা হামলা করেছিলো সে তখন খুব ই প্রতিবাদ করেছিলো শুধু নামের মিলের কারণে ৷
.
আমি জীবনে এমন কাউকে দেখেছি যাকে গাঁজাটি বললে রাগ করে না ৷ বরং গর্ব করে ৷ একবার সে একটা ফেসবুক আইডি খুলে পেলেছে নাম দিয়েছে গাঁজাটি মারুফ ৷ পরে বহুত কষ্ট করে সেটার নাম পাল্টিয়েছি ৷
.
আমার রম্য লেখার ভালোবাসা তার গাঁজা নিয়ে জোকসগুলো থেকে ৷ গাঁজা খেলে নাকি সর্দি হয় না ৷ একদিন বলে, গাঁজা খেয়ে বনের ইঁদুর হাতিকে তিন ঘন্টা বনে ঘুরিয়েছে ৷ মাছ সাপের গর্তে ঢুকে বসেছিলো ৷ গাঁজা খাওয়া লুক নাকি মেয়েদের ইনোসেন্ট লাগে ৷
.
আমি যখন প্রথম প্রেমে পড়ি তখন সে আমাকে বলেছিলো তুই মেয়ে চিনবি না ৷ ওদের ক্লিয়ারলি বুঝতে হলে তোকে গাঁজা খেতে হবে ৷ এখনো মনে আছে সে একদিন পট্টি কষা হওয়ায় ইসুবগুল না কিনে গাঁজা কিনে ফিরছে ৷ অন্যদিন খুব টেনশনে আছে ৷ গাঁজা ধরালো ৷ আরেকদিন খুব আনন্দে আছে তা ও গাঁজা জ্বালালো ৷ অকারণে দুই হাতে তালু ঘষতো ৷
.
পরে তার সাথে মিশতে আমার পরিবার থেকে আমাকে নিষেধ করা হয় ৷ কয়েকজন বন্ধু আমাকে বললো, ওর সাথে চললে আমাদের সাথে মিশবি না ৷ নব্য প্রমিকা থ্রেট ই দিলো ৷ কিন্তু আমি তো জানি সে কতটা ভালো বন্ধু ৷ একদিন তাকে গিয়ে বললাম, তুই গাঁজা ছাড়বি না আমার বন্ধুত্ব? সে বললো, গাঁজা খেয়ে প্রশ্নটি করতে পারবি/ আমি তাঁকিয়ে আছি ৷ সে গাঁজা বানাচ্ছে ৷
.
এগুলো নিয়ে তারসাথে আমার খুব কথা কাটাকাটি হয়েছিলো ৷ একদিন সে আমার হাতে বেনসন্ দিয়ে বলে, হাফ্ লেডিস্ ৷ শুন দোস্ত, পুরুষরা গাঁজা খায়, সিগারেট না! মাথা টং করে উঠলো ৷ তার কলার ধরলাম ৷ সে আমার হাতে জ্বলন্ত গাঁজা লাগিয়ে টিপে দিলো ৷ একটা দস্তাদস্তির পর তাকে গাঁজাটি গালি দিয়ে চলে আসলাম ৷ আর কখনো দেখা হয়নি তেমন ৷ গাঁজাটির সাথে ৷ মাঝখানে কলেজ জীবন শেষ ৷ সে কোথায় যেনো ভর্তি হয়েছে ৷
.
সেদিন তার সাথে দেখা ৷ চেনা যাচ্ছে না ৷ কোনভাবেই ৷ আমাকে কঠিন এক সালাম দিলো ৷ আমি তাকে চেনার জন্য ঠোঁটের দিকে তাকিয়ে মনে হলো সদ্য লিপিস্টিক লাগিয়েছে ৷ সালামের উত্তর নিয়ে বললাম, দোস্ত মারুফ না? কোন কথা না বলে, সে বুকে টেনে নিলো ৷ আতরের গন্ধ ৷ আমি তার বুক শুকতেছি গাঁজার গন্ধ পাবো বলে ৷
.
মজা করে বললাম, দোস্ত গাঁজা খাবো ৷ সে পকেটে হাত দিলো ৷ সত্যি গাঁজা বানানো আছে মনে হয় পকেটে ৷ হাত বের করলো একটা অদ্ভুত দোয়া পাঠের মেশিন ৷ টিপ দিলে সংখ্যা উঠে ৷ বিড়বিড় করে ৷
.
ইয়া বড় দাড়ি ৷ মোলায়েম সুর ৷ আমাকে দুই মিনিট তালিম দিলো, এই দুনিয়া কিচ্ছু না ৷ আমিও ইয়ার্কির সুরে বললাম, গাঁজা ই সব ৷ তারপর আমাকে বললো, নামাজ পড়িস? আমি বললাম, একটু ঝামেলা আছে ৷ বললো, বাসায় গিয়ে পড়ে নিবি ৷ আমি পড়ে আসতেছি ৷ এখানে তিনটা মসজিদ ৷ ডানে অলিখা মসজিদ ৷ হেব্বী আরাম নামায পড়তে ওখানে ৷ এখানে বসে থাক ৷ আসতেছি ৷
.
সে আসলো ৷ গাঁজা না খেয়েও আমার মাথা প্রথম ঘুরতেছে ৷ দ্রুত সিগারেট জ্বালালাম ৷ ও দেখলে মনে হয়, মাইর দিবে ৷ সে নামায পড়ে আসার আগেই শেষ করতে হবে ৷ মনে হচ্ছে আমার পৃথিবী পাল্টে গেছে ৷ মাছগুলো সব সাপের গর্তে ৷ ইঁদুর হাতিকে নিয়ে ঘুরছে ৷ টংয়ের মামুর চোখে ইনোসেন্ট লুক্ ৷ কর্দমাক্ত আকাশ ৷ সুনীল মাঠ ৷ প্রেমিকার থ্রেট ৷ বাবার বকা, মারুফের সাথে একদম মিশবি না ৷ সিগারেট শেষ আমার ৷ এই মামা আরেকটা দাও ৷ এই নেন্ ৷ সিগারেটে পিছনটায় আগুনের ছ্যাঁকা দেন্ ৷ বাদ দেন করোনা ৷ মাস্কটা কানে ঝুলছে ৷
.
আরেকটা সিগারেট মারুফ আসতে আসতে শেষ করতে হবে ৷ টান দিলাম ৷ মনে পড়লো, বন্ধুরা বলছে, মারুফের সাথে মিশলে আমাদের সাথে মিশবি না ৷ তার কলার ধরে টানছি ৷ দস্তাদস্তি ৷ গাঁজাটি ৷ ওয়াক থু গাঁজাটি বলে আমার থুতু ওর মুখে লেপটে আছে ৷ আমি অতীতে দৌড়াচ্ছি ৷
.
এমন সময় মারুফ এলো ৷ সিগারেট আপনি আপনি পরে গেলো ৷ পা দিয়ে পিষে দিলাম ৷ তারপর বললাম, গাড়িতে উঠ্ ৷ কোন কথা বলবি না ৷ বাসায় ঢুকার সময় বাবাকে, আমার বন্ধু মারুফ ৷ খেয়ে বের হলাম ৷ প্রতিবেশী চাচার সাথে দেখা ৷ চাচা আমার বন্ধু মারুফ ৷ ঐ বন্ধুগুলোর আড্ডায় ৷ দোস্ত আমাদের মারুফ ৷ আজ গার্ল ফ্রেন্ডটা নেই তাকেও 'আমার বন্ধু মারুফ' বলতে পারলে কলিজাটা ঠান্ডা হতো ৷ একদম কঠিন ঠান্ডা ৷

মন্তব্য ৫ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ২৯ শে জুন, ২০২০ দুপুর ২:২৮

জুন বলেছেন: আপনার বন্ধু গাজা ছেড়ে হুজুর হয়েছে খুবই ভালো কথা । আমার পরিচিত এক গাজা, হেরোইন আর যা যা আছে সবই খায় নিয়মিত। ইদানীং সে আবার দাড়ি টারি রেখে হুজুরও হয়েছে কিন্তু মাদক ছাড়ে নি।

২৯ শে জুন, ২০২০ দুপুর ২:৪৯

আবদুর রব শরীফ বলেছেন: সীমিত আকারের হুজুর ৷

২| ২৯ শে জুন, ২০২০ বিকাল ৩:১৪

নেওয়াজ আলি বলেছেন: অসাধারণ লেখা ।

৩| ২৯ শে জুন, ২০২০ বিকাল ৫:২০

রাজীব নুর বলেছেন: আপনি সত্যবাদী মানুষ।

৪| ২৯ শে জুন, ২০২০ রাত ৮:২৭

সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: মনীষীরা বলেছেন - পাপকে ঘৃণা কর পাপিকে নয়। তবে গাঁজা খেলে মাথা খোলে। সৃষ্টিশীল লোকদের ব্যাপারে আসলে অনুমতি দেয়া উচিত। গাঁজার নৌকা নাকি পাহাড় বাইয়া যায়। এটাও মনীষীরা বলেন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.