নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
যদি তোর লেখা পড়ে কেউ না হাসে তবে একলা হাসো রে!
অনেকে বলে ভাই আপনি প্রায় লেখাতে শোভাকলোণী নিয়ে আসেন কেনো? আসলে বেপার হলো জন্মের পর থেকে আছি ৷ প্রেমে পরে গেছি ৷ কঠিন প্রেম ৷
.
মানুষগুলো কেমন জানতে হলে করোনাকালের একটি ছোট্ট ঘটনা বলবো তার একটি ছবিও আমি লেখাটির সাথে এড্ করে দিয়েছি ৷
.
সেদিন আমরা সকালে খবর পেলাম এলাকার একজন মুরুব্বী দুরারোগ্য ব্যাধিতে মারা গেলেন ৷ লাশ এখনো মেডিক্যাল থেকে রিলিজ করেনি ৷ মেডিক্যাল থেকে আসতে আরো দুই ঘন্টা লাগবে ৷ এদিকে লাশের গোসলের জন্য পানি গরম করা হয়ে গেছে ৷ উপরে বৃষ্টি আসলে ভিজে না যাওয়ার জন্য তেরপাল লাগানো থেকে শুরু করে যাবতীয় যা যা কাজ সব প্রস্তুত ৷
.
আমার কাজ ছিলো বিজ্ঞপ্তি লিখে বিভিন্ন মসজিদে প্রেরণ করা ৷ যে যার মতো কাজ বুঝে নিয়েছে ৷ আবারও বলছি মৃত দেহ আসতে আরো দুই ঘন্টা বাকী ৷
.
কলোনীর ভিতরে অ্যাম্বুলেন্স ঢুকলে সেটা ব্যাক করতে পারে না, প্রায় পনের বিশজনের একটি তরুণ দল মাস্ক পরে দাঁড়িয়ে আছে ঘন্টাখানেক, স্ট্রে করে মৃতদেহ ঘরে নিয়ে আসার জন্য ৷
.
একান্ত প্রয়োজন না হলে কেউ অফিসও যায় নি ৷ আরেকটা বেপার বলে রাখি কলোণীতে কেউ কারো নিকট আত্মীয় না ৷ তবে তার চেয়েও বেশী ৷ পাঞ্চাশটা ফ্যামেলি ৫০টা জেলার বলা চলে ৷ বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরির সুবাদে তারা একসাথে থাকে ৷ করোনাকালে যেখানে বাবার মৃত্যুতে সন্তানকে খুঁজে পাওয়া যায় না সেখানে এসব দৃশ্য দেখলে আপনার মনে হবে আপনি কোন স্বর্গে চলে এসেছেন ৷
.
মৃত ফ্যামিলির একমাত্র কাজ প্রাণভরে কান্নাকাটি করা ৷ আর কোন কিছু নিয়ে তাদের টেনশন করতে হয় না ৷ অ্যাম্বুলেন্স ভাড়াটা পকেটে থাকুক না থাকুক এটলিস্ট আন্তরিকতার সহিত বলে, আমি দিয়ে দিই?
.
নিরাপদ দূরত্বে থেকে এক প্রকার গার্ড অব অনার দিয়ে আমরা আমাদের সদ্যপ্রয়াত কলোণীর বাসিন্দাকে পরম আদরে তার বাসায় নিয়ে এসেছি ৷ মৃতদেহে যাতে সামান্য পরিমানেও ঝাঁকানি না লাগে সেদিকে থাকে সবার সজাগ দৃষ্টি ৷ যেনো এটা সবার বাবার লাশ ৷ দৃশ্যগুলো দেখলে চোখ জুড়িয়ে যায় ৷
.
শুধু তা না, অত্র বিশ্ববিদ্যালয়ে কেউ মারা গেলে আমার এলাকার মানুষ ই সবার আগে এগিয়ে আসে ৷ স্ট্যান্ড বাই আমাদের সব কিছু রেডি থাকে ৷ গল্প হচ্ছিলো মর্জিনা আপুর বাবার সাথে ৷ সে গোসল করানোর সুবিধার জন্য চারটা স্টেন মশারি সব নিজে বানিয়ে রেখেছে ৷ কেউ মরেছে শুনলেই নিজে কাঁধে করে তা নিয়ে উপস্থিত এমন ৷
.
আমাদের মসজিদে আবার লাশ কাঁধে করে পরিবহনের জন্য যেটাকে স্থানীয় ভাষায় খাইট্টা বলে সেটা নেই ৷ অনেক দূরের মসজিদ থেকে নিয়ে আসতে হয় ৷ এলাকার ছোট ছেলেরা এটা নিয়ে এসে তারপর সুন্দর করে সার্ফএক্সেল দিয়ে ধৌত করে, অতপর শুকিয়ে অগ্রীম প্রস্তুতি হিসেবে তাক্ করে রাখে ৷ কবরস্থান দূরে হওয়ায় ওদের পুরো টিম আশেপাশে সব সময় থাকে ৷ সময় হলে সবাই পাঞ্জাবী টুপি পরে এসে একসাথে রওনা হয় ৷
.
এক সময় আমাদের কলোণীর সমপ্রীতি ছিলো জগতখ্যাত ৷ এখন অনেক ভাটা পরেছে যদিও ৷ একটা সময় ছিলো যখন কেউ মাঝরাতে চোর বলে ডাক দিলে একশ মানুষ দা কাস্তে তলোয়ার নিয়ে খালি পায়ে বের হয়ে চোরের পিছনে পিছনে দৌড়াতো কিংবা খোঁজ করতো ৷ এমনও অনেক হয়েছে মাত্র একহাত দূরত্বের কারণে চোর বেঁচে গেছে তবে তাকে আধা মাইল দৌড়িয়ে আধমরা করে দেওয়া হয়েছিলো ৷
.
এগুলো কোন কাল্পনিক গল্প না ৷ রক্তের সম্পর্কের বাহিরেও যে অনেক আপন সম্পর্ক থাকে সেটা তার প্রমাণ ৷ আমাদের কলোনীতে অমুকের ছেলে তমুকের মেয়ের সাথে বিয়ে দিতেও কেউ আপত্তি করে না ৷ বেপারটা এমন ৷
.
দয়ালু, অমায়িক, সৌজন্যসূচক, বিনীত, শিষ্ট, বন্ধুত্বপূর্ণ, বন্ধুসুলভ, মিত্রভাবাপন্ন, বন্ধুভাবাপন্ন, মধুর ও সৌহার্দ্যপূর্ণ এমন শত শব্দ আমি চোখ বন্ধ করে আমার এলাকাবাসীকে দিতে বাধ্য থাকিব ৷ যদিও কখনো তাদের ধন্যবাদও দিইনি ৷
.
লিখে আসলে সুন্দর করে প্রকাশ করা সম্ভব না ৷ কিছু অনুভূতি হৃদয়ে থেকে যাক্ ৷ এমন একটি বাংলাদেশ চাই ৷ আমাদের শোভাকলোণী হতে পারে তার রোল মডেল ৷
২০ শে জুন, ২০২০ দুপুর ১:২১
আবদুর রব শরীফ বলেছেন: ধন্যবাদ ৷ বেড়াতে আসবেন ৷
২| ২০ শে জুন, ২০২০ দুপুর ১২:২৪
মুজিব রহমান বলেছেন: শোভাকলোনীর জন্য শুভ কামনা।
২০ শে জুন, ২০২০ দুপুর ১:২১
আবদুর রব শরীফ বলেছেন: এলাকাবাসীকে শুভকামনা পাঠিয়ে দেওয়া হবে ৷
৩| ২০ শে জুন, ২০২০ দুপুর ১:৩২
মাহমুদুর রহমান সুজন বলেছেন: সত্যি এ যেনো বিরল। শুভা কলোনীর মতো হতে পারে দেশের প্রতিটি অঞ্চল।
২০ শে জুন, ২০২০ দুপুর ১:৩৯
আবদুর রব শরীফ বলেছেন: সেই কামনা থাকলো ৷
৪| ২০ শে জুন, ২০২০ দুপুর ১:৫৬
নেওয়াজ আলি বলেছেন: শিল্পসম্মত মনোভাবের প্রকাশ,
৫| ২০ শে জুন, ২০২০ দুপুর ২:২৭
রাজীব নুর বলেছেন: শোভা কলোনীর বাসিন্দারা ভালো থাকুক। সুস্থ থাকুক।
৬| ২১ শে জুন, ২০২০ সকাল ৯:৪৭
পদ্মপুকুর বলেছেন: কলোনীর জীবনগুলোই আলাদা বিশেষত্ব বজায় রাখে। এক বন্ধনহীন বন্ধনে জড়িয়ে রাখে সবাইকে। আমার জীবনও কলোনীতেই কেটেছে। অবশ্য নির্দিষ্ট একটা কলোনীতে নয়, দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বিভিন্ন কলোনীতে। আপনার বলা পরিবেশ ওই সব কলোনীতেও বিদ্যমান ছিলো।
তবে কলোনীগুলোর প্রধানতম বৈশিষ্ট্য হলো- এগুলো শহরের মধ্যে গ্রাম আর গ্রামের মধ্যে শহর। মফস্বল এলাকার কলোনীগুলোতে দেখা যায় এরা পার্শ্ববর্তী লোকালয়গুলো থেকে একটু আপার স্ট্যাটাস বজায় রাখে। একটা শ্রেণীবদ্ধ শিক্ষিত ও উচ্চ রুচীসম্পন্ন জনগোষ্ঠী। আবার শহরের কলোনীগুলোতে একটু মফস্বলের ছোঁয়া, বিল্ডিংয়ের সামনে উচ্চে গাছ, মাচায় শিম/লাউ লতা। চাই কি এক ঝাড় কলাগাছও রয়েছে। কোথাও হয়তো কিছু মুরগী চড়ে বেড়াচ্ছে।
তবে আন্তরিকতা, পারস্পরিক যোগাযোগ, বাসায় ভালো রান্না হলে পাশের বাসায় দিয়ে আসা, এগুলো সবখানেই সমান তালে চলে। অবশ্য এখন কি অবস্থা হয়েছে জানিনা। বহুদ্দিন হয়েছে কলোনী ছেড়ে নিজেদের আস্তানায় ডেরা বেঁধেছেন বাবা-মা। আর আমি তো তারও আগ থেকে ঢাকায় এসে উঠেছি।
©somewhere in net ltd.
১| ২০ শে জুন, ২০২০ দুপুর ১২:২০
বিজন রয় বলেছেন: জয়তু শোভাকলোনী!!
+++++