নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
যদি তোর লেখা পড়ে কেউ না হাসে তবে একলা হাসো রে!
গতকাল আমার যে ডাক্তার চাচাটা করোনা আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা দিতে গিয়ে নিজেই করোনাক্রান্ত হয়ে মারা গেলেন সেদিনও তিনি তার মায়ের জন্য একটা হীরের আংটি এবং কয়েকটা হটপট্ কিনে রেখেছিলেন পাঠানোর জন্য ৷ হটপট্ পাঠিয়ে দিলেও আংটি আর নিজ হাতে পাঠানো হলো না ৷
.
চাচাটা মা কে বেশী ভালোবাসতেন ৷ মা বারবার কেঁদে কেঁদে বলতেছেন কেনো আমাকে তোর সাথে করে পরপারে নিয়ে গেলি না! ও পুত্!
.
মায়ের যখন যা লাগবে কখনো বিন্দুমাত্র দেরী করতেন না ৷ সবার সাথে চাচাটা একরকম মায়ের সাথে অন্যরকম ৷ জীবনে মাকে সবচেয়ে বেশী আপন ভাবতেন ৷
.
আমার বাবার সাথে চাচার ছিলো অন্যরকম আরেক সম্পর্ক ৷ দুইজনের উচ্চতা এবং গড়ন অনেকটা এক রকম ৷ বাবা যখনি ঢাকা যেতেন সাথে করে নিয়ে আসতেন পনের বিশটা শার্ট ৷ চাচার নতুন নতুন শার্ট পরার খুব শখ ছিলো ৷
.
চাচার চয়েস এতো সুন্দর ছিলো যে শার্টগুলো বাসায় আসার পর আমি নিজেই চার পাঁচটা মেরে দিতাম ৷ সেগুলোকে অল্টার করিয়ে সেই রকম মাঞ্জা মারা পিকে ভরপুর আমার অ্যালবাম ৷
.
অসম্ভব রকমের দিল খোলা একটা চাচা যখন বাড়িতে যেতেন সবাই কে ট্রিটমেন্টের পাশাপাশি হাসাতে হাসাতে এক প্রকার আধমরা করে ফেলতেন ৷ অসম্ভব ডোন্ট কেয়ার ভাবের ছিলেন ৷ এই তো সেদিন ছাগল একটা নিয়ে এসে হুট করে পুরো বাড়ির সবাই মিলে গ্রিল করেছি ৷ দেশের বাহিরে থেকে মশলা নিয়ে এসেছিলেন ৷ আহা! স্মৃতি ৷
.
করোনাক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়ার কারণে সরকারিভাবে তার দাফন করা হয়েছে ৷ ছেলে আমেরিকা থেকে বারবার বলে যাচ্ছিলো যত টাকা লাগে আমার বাবাকে এমন একটা জায়গায় কবর দাও যাতে দেশে আসলে একটু প্রাণ ভরে কবর জিয়ারত করতে পারি ৷ আজ করোনার কাছে যেনো পুরো পৃথিবী নিরুপায় ৷
.
সবাই একে ওকে ফোন করে কান্নাকাটি করে যাচ্ছে ৷ ফোন দিয়ে কান্নাকাটি করতে করতে লাইন কাটতে ভুলে যাচ্ছে ৷ এই এক আমার জীবনের অদ্ভুত হৃদয় বিদারক পরিস্থিতি ৷ আরো শঙ্কা, এরপর না জানি কে!
.
সবার একটাই কথা 'হায়! হায়! কি করবো আমরা এখন!' ও প্রান্ত থেকে একটা ই বাক্য 'দোয়া করা ছাড়া কি বা করার আছে!'
.
বিশ্বাস করবেন না ৷ আমার চাচা দাদাদের টাকা পয়সা থেকে শুরু করে ক্ষমতা প্রতিপত্তি কোন কিছুর কোন সংকট নেই ৷ কখনো দেখিওনি ৷ যে কোন সময় সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথে নিয়ে ভিআইপি চিকিৎসা করার সামর্থ্য সবার ই আছে ৷ তবুও আজ সবাই করোনার কাছে বড্ড অসহায় ৷
.
শুধু বিবেকের টানে সকল জীবনের মায়া ত্যাগ করে করোনা রোগীদের চিকিৎসা দিতে গিয়েছিলো ৷ আমার জানা মতে ডাক্তারি ছেড়ে দিলেও ওনার কয়েক প্রজন্ম বসে খাওয়ার মতো সামর্থ্য ছিলো ৷ তিনদিন ধরে শ্বাস প্রশ্বাসের সাথে লড়াই করে যাচ্ছিলো ৷ টেনশন করবে বলে কাউকে জানাননি পর্যন্ত ৷
.
মানুষের জীবনে অনেক ভুলত্রুটি থাকে কিন্তু শেষ জীবন এভাবে বীরের মতো কয়জন মরতে পারে? আমি আমার চাচাকে নিয়ে শোকের চেয়ে গর্ব বেশী করছি ৷ ডাক্তারদের জীবনে অনেক গালি দিয়েছি আজ ডাক্তাররা দলে দলে কবরে চলে যাচ্ছেন কেবল করোনারোগীদের সেবা দিতে গিয়ে ৷ শেষ স্বাক্ষী তো আপন চাচা ৷
.
সেদিন নিউজে দেখলাম খুলনার রোগীর স্বজনের হামলায় নিহত রাইসা ক্লিনিকের পরিচালক ডা. মো. আব্দুর রকিব খানও ছিলেন একজন ‘গরিবের ডাক্তার’ কেমনে পেরেছেন আপনারা এমন করতে? আপনারা জানেন কতজন ডাক্তার মারা গেছে আমার চাচা রফিকুল হায়দারের মতো? কত পরিবার নিঃস্ব হয়েছে জানেন?
.
সিলেট মেডিক্যাল থেকে পাশ করে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেলে অফিসার হিসেবে যোগ দেওয়ার কিছু বছর পর এনাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চলে গেছেন ৷ রানা প্লাজা ধ্বংসের পরও গার্মেন্টস শ্রমিকদের সেবা দিতে বীরের মতো লড়েছেন ৷
.
সেদিন এক ডাক্তারের সাথে কথা হচ্ছিলো সে বললো, আমার এন-৯৫ মাস্কের ভিতর দিয়ে আমি বিড়ির গন্ধ পায়! আর কিছু বলতে পারবো না ৷ আমরাও আর কিছু বলবো না ৷ শুধু বিদায় পৃথিবী ৷ হ্যালো বাংলাদেশ ৷ একদিন দেখা হবে বেঁচে থাকলে ৷
২| ১৮ ই জুন, ২০২০ দুপুর ১:৩৪
শেরজা তপন বলেছেন: আপনার এই চরম কষ্টের সময়ে সমবেদনা!ধীরে ধীরে প্রতিটা পরিবারেরই কেউ না কেউ আক্রান্ত হচ্ছে-এই রকম সহানুভুতি আর সমবেদনা আমাদের সবাইকে সবাই জানাতে না হয়?
আপনার এমন অতি ভাল মানুষ চাচার রুহের মাগফেরাত কামনা করছি। নিশ্চয়ই উঁনি এর প্রতিদান পাবেন।
ডাক্তাররাও-তো মানুষ! ভাল মন্দ মিলিয়েই হবে। তবে আমি খুব বেশি গরিবের ডাক্তারের সাক্ষাত পাইনি
৩| ১৮ ই জুন, ২০২০ দুপুর ২:১৩
মোঃ খুরশীদ আলম বলেছেন: আমরা সবাই করোনা হতে মহান আল্লাহর দরবারে নিরাপদ আশ্রয় চাই। আমাদের রথি-মহারথিরা যেদিন নতজানু হয়ে পুরো জাতিকে নিয়ে মহান আল্লাহর দরবারে তওবার হাত বাড়িয়ে দিবেন সেদিন এই সমস্যা নির্মূল হবে বলে মনে হয়।
৪| ১৮ ই জুন, ২০২০ বিকাল ৩:২০
নেওয়াজ আলি বলেছেন: এই অন্ধকারেও শাসকবর্গ কালো চশমা পরা।
©somewhere in net ltd.
১| ১৮ ই জুন, ২০২০ দুপুর ১:২৮
রাজীব নুর বলেছেন: আপনার ডাক্তার চাচার জন্য শ্রদ্ধা।