নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
যদি তোর লেখা পড়ে কেউ না হাসে তবে একলা হাসো রে!
আমার আম্মুর যখন পা ভেঙ্গে যায় তখন আমার বাবা আমার কাছে ফোন করে ৷ সে সিএনজিতে করে নিয়ে আসতেছে ৷ মেডিক্যাল বেপারটা আমার কাছে অনেক নতুন ৷ ওখানে আমার সবকিছু ঘোলা লাগে ৷
.
আমি আমার আত্মীয় স্বজন পরিচিত অপরিচিত যাকে মনে হয়েছে কাজে আসবে তাকেই ফোন করি, সবাই ব্যস্ত ৷ কারো অফিস, কারো বাচ্চার ইস্কুল, কেউবা কক্সবাজার ঘুরতে যাবেন বলে ব্যাগ এন্ড ল্যাগেজ...!
.
আমার বাবাকে ছোট কাল থেকে দেখেছি ঘরের বাহিরে থাকে, কারো না কারো বিপদে আপদে মাসের পর মাস সঙ্গ দিয়ে যাচ্ছেন ৷ আত্মীয় স্বজনদের মধ্যে কেউ মাথা ঘুরিয়ে পরে গেলে সবার আগে উনার কাছে ফোন আসে ৷ এক প্রকার উনি যেনো পাবলিক গুডস্ ৷
.
আমার পরিবারের কারো এর আগে কেউ এমনভাবে পা ভাঙ্গেনি যেহেতু পুরো বেপারটা আমার কাছে ভয়ঙ্কর ৷ নতুন ছিলো ৷ এরপরেও আমি জানি বিপদ আসলে তেমন কাউকে কখনো পাওয়া যায় না ৷ যাবে না ৷
.
আসলে কাউকে পাওয়া যাবে না বেপারটা ভুল ৷ আমি সিএনজিতে আরো একজন মহিলাকে আবিষ্কার করলাম যে আমার বাসা থেকে অনেক দূরে থাকে তার নামও জানি না তবে মুখ চেনা ৷
.
অদ্ভুত দৃঢ় প্রত্যয়ের মহিলা ৷ আমি যখন মেডিক্যালের স্ট্রে টানতেছি তখন সে ও আমার সাথে ঠেলতেছিলো ৷ মা যখন শুয়ে যাচ্ছিলো সে তখন কোলে করে ধরে রেখেছিলো অথচ তার ওজন আমার আম্মুর অর্ধেক ৷
.
তার কথাবার্তাগুলো এতো অনুপ্রেরণা আমার মনে হয়নি আমরা একা সামলিয়ে নিচ্ছি সব ৷ উনি ই সামলিয়ে নিচ্ছেন ৷
.
এক্সরে রুমে উনি গিয়ে আমার আগে রিপোর্ট নিয়ে এসেছেন ৷ তারপর আমাকে ফন্দি শিখিয়ে দিয়ে বললেন, কর্ণারে একটা দোকানে গিয়ে বলবে ছাড় আছে কি না? ওনার কথায় কাজ হলো ৷ আমার কিছু টাকা বেঁচে গেলো ৷
.
এই মেডিক্যালে তিনি তার স্বামীকে নিয়ে তিন মাস ছিলেন ৷ শুধু তা না, বছরের পর বছর স্বামীর বিভিন্ন অসুখ নিয়ে এরকম ডজন খানেক হাসপাতাল ঘুরেছেন ৷ ডাক্তারদের সাথে তর্ক করেছেন ৷ যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছেন ৷ একাই ৷ 'বাজান কেউ ছিলো না, তোমার খালা একাই এগুলো চষে বেড়িয়েছি ৷'
.
প্লাস্টার করার পর আম্মু এবার ঝামেলা পাকাচ্ছে ৷ উনি মেডিক্যালে থাকেবন না ৷ ভদ্রমহিলা বললো আল্লাহ যা করে ৷ অ্যাম্বুলেন্স ডাকো ৷ খুব কৌশলে বাসায় নিয়ে যেতে হবে ৷ তারপর পনের কিলোমিটার রাস্তা দুই ভাগ হওয়া একটি পায়ে সদ্য ব্যান্ডেজসমেত উনি আড়কোলে করে ধরে রেখে বাসায় নিয়ে এসেছেন ৷
.
বাসায় এনে খাটে বসিয়ে দেওয়া থেকে শুরু করে যাবতীয় কাজ একাই করেছেন ৷ খালাম্মাকে আমি এর আগে অনেকবার এখানে ওখানে দেখেছি ৷ সেদিন তার দিকে তাকিয়ে আমি আমার সকল আত্মীয় স্বজনদের ছবি দেখতে পেলাম ৷ হয়তো বাবা সবার কাজে দৌড়ে যায় বলে আল্লাহ উনার আকৃতির মধ্য দিয়ে ফেরেশতা পাঠিয়েছেন ৷
.
খালাম্মাকে বিদায় দেওয়ার সময় আমি আরেক দ্বিধায় পরে গেলাম ৷ তাকে কি ধন্যবাদ দেওয়া উচিত! ধন্যবাদ দিলে তাকে ছোট করা হবে ৷ তাই কিছু ই বললাম না ৷ চেয়ে চেয়ে দেখতে থাকলাম উনি চলে যাচ্ছে ৷ মায়া হচ্ছে ভীষণ ৷
.
তারপর থেকে নিয়মিত খোঁজ নিতো ৷ রোগী একটু সুস্থ হয়েছে জানার পর আর তেমন আসেনি ৷ খুব সহজে বাসায় যাওয়া যায় তবুও কেনো জানি যায় না ৷ রাস্তায় খুঁজি দেখা হলে একটা সালাম দিবো ৷ কেমন আছেন জিজ্ঞেস করবো ৷
.
কিছু মানুষ জানে ই না কিভাবে তারা হৃদয়ে গেঁথে থাকে ৷ আত্মীয়স্বজনের হৈ হুল্লর বাড়ে তারা হারিয়ে যেতে থাকে ৷ রক্তের সম্পর্ক ই নাকি সব! না রে ভাই, মাইনকার চিপায় পরোনি তো,
.
আমার এক দাদা আমাকে ঈদের সেলামি দেওয়ার সময় বললো, আমি মরে গেলে তুমি খাট ধরিও নাতী ৷ দাদা মারা যাওয়ার সময় আমি অনেক দূরে ছিলাম ৷ তার খাট আমি ধরতে পারিনি ৷
.
একদিন এক লোক আমাকে এসে বললো, আচ্ছা ঐ যে মারা গেলো সে তোমার দাদা হয় না? আমি বললাম, হয় ৷ আপনি কিভাবে চিনেন? সে বললো, দাফন করার আগে তার খাট কাঁধে করে কবরে নিয়ে গিয়েছিলাম ৷ হুট করে মনে পরে গেলো অতীত ৷
.
দাদা আমাকে বলে গিয়েছিলো, আমার খাট তুই ধরবি কিন্তু, অথচ এই লোকটার ভাগ্যে সেটা জুটলো ৷ তাকে একটা প্রশ্ন করার তীব্র লোভ আমি সামলাতে পারিনি ৷ বললাম, আমার দাদা আপনার কে হয়? উনি বললো, 'আমার কেউ হয় না ৷'
২| ১০ ই জুন, ২০২০ বিকাল ৪:৩৪
রাজীব নুর বলেছেন: একবার আমার মায়ের হাতের আঙ্গুল কেটে গিয়েছিলো। মানে ডাব কাটতে গিয়ে আঙ্গুল পড়ে গিয়েছিলো। আমিই নিয়রে গিয়েছিলাম ডাক্তারের কাছে। ভয়াবহ অভিজ্ঞতা হয়েরছিলো। এরপর থেকেই আমি হাসপাতাল ভয় পাই।
৩| ১০ ই জুন, ২০২০ বিকাল ৪:৩৬
ইসিয়াক বলেছেন:
পৃথিবীতে এখনো কিছু নিঃস্বার্থ মানুষ আছে বলেই পৃথিবীটা এতো সুন্দর।
৪| ১০ ই জুন, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:১৭
কৃষিজীবী বলেছেন: বিপদেই বন্ধুর পপরিচয়
©somewhere in net ltd.
১| ১০ ই জুন, ২০২০ বিকাল ৩:৪৫
কাজী আবু ইউসুফ (রিফাত) বলেছেন: মানুষগুলো এমন-ই হয়!