নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
যদি তোর লেখা পড়ে কেউ না হাসে তবে একলা হাসো রে!
সন্দ্বীপে আজ আমার যে দাদাটা মারা গেলো সে আমার সব দাদাদের চেয়ে আলাদা, দাঁত না থাকলেও মুরগীর হাড্ডি মাড়ি দিয়ে চিবিয়ে খাওয়া যায় আমি তা উনার কাছ থেকে শিখেছিলাম!
.
ওনাকে দেখলেই মনে হতো তিনি হাসছেন, আমার বিশ্বাস হয় না এই মানুষটা স্ট্রোক করেছেন যদিও তার জ্বর হয়ে ভালো হয়ে গিয়েছিলো ৷
.
করোনাকে উনি দাঁতবিহীন মাড়ি দিয়ে চিবিয়ে খাওয়ার মতো মনোবল সমৃদ্ধ মানুষ, হয়তো হায়াত শেষ ৷
.
জীবনে যাকে কখনো মন খারাপ করতে দেখিনি তার মৃত্যুর সংবাদে আমার মন খারাপ হচ্ছে বেপারটা একদম ঠিক হচ্ছে না ৷
.
আমি বাড়িতে গেলে টর্চ লাইট হাতে উনি আমাকে খুঁজতে আসতেন ৷ তন্নতন্ন করে খোঁজ করার পর 'কিওওওও, কখন আইছো, আমি তো সংবাদ পেয়ে ছুটে এলাম' তার আন্তরিকতা আমাকে মুগ্ধ করতো ৷ এমন সাদা মনের মানুষ হারানো সত্যি বেদনার ৷
.
উনার সাথে বিয়ের দাওয়াত খেতে যাওয়া আমার জীবনের সবচেয়ে বড় শিক্ষা, পাহাড়সম মনোবল নিয়ে উনি গুরুর গোস্ত ওম্ ওম্ করে খেতেন আর বলতেন তুমি দাঁত থেকেও আমার সাথে ফেইল ৷ বুঝছো নাতী মানসিক শক্তি ই আসল ৷ কখনো তা হারাবে না ৷
.
তার জীবন সমুদ্রে হেরে হেরে বেঁচে যাওয়ার শত গল্প আজো আমার কানে বাজে ৷ বলতেন, একবার তিনি মাথার যন্ত্রণায় পাগলপ্রায় হয়ে প্রায় মরে গিয়েছিলেন ৷ সে বহু যুগ আগের কথা ৷ তারপর চিন্তা করলেন মাথা ব্যথাকে হারাবেই ৷ একদিন হারিয়ে আজ তোমার পাশে বসে আছি নাতী ৷ রোগ বালাই আসবে যাবে, কখনো ভেঙ্গে পরবে না, বুঝছো?'
.
আমার জীবনে, অর্ধেক দাঁড়িয়ে থাকার অনুপ্রেরণা তিনি ৷ তোমরা সুখন দার গল্প শুনো কারণ তোমাদের এমন আবদুল্লাহ দাদা নেই ৷
.
আমাকে প্রায় বলতেন, কিসের রিক্সা, কিসের সাইকেল, আমি হেঁটে চলি, হেঁটে চলে পার করে দিয়েছি জীবন ৷ আজ প্রথম তাকে কেউ কাঁধে করে নিয়ে যাবে ৷
.
আমার জীবনের অর্ধেক সময় তাকে আমি রেডিওর খবর আর পোগ্রাম শুনতে দেখেছি ৷ কোন ফেসবুক, টিভি, সংবাদপত্র, ব্লগ, পোট্রাল তাকে কখনো ছুতে পারেনি কেবলি একটি রেডিও তার নিত্যদিনের সঙ্গী ৷ যত খবর, বেখবর তার, রেডিও যেনো জীবন ৷
.
সকাল হলে রুমের সামনে এসে চিল্লাপাল্লা করতো ৷ কিগো নাতীরা ৷ ঘুম থেকে উঠে নাস্তা করে নাও ৷ সকালে পেট শান্তি তো দুনিয়া শান্তি ৷ উঠো! উঠো! কিগোও নাতীরা...!
.
আমি ঘুমিয়ে থাকতাম ৷ ঘুম থেকে উঠে আবারো উনার সাথে দেখা হতো ৷ সেই গোল গলার সেন্টু গেঞ্জি পড়ে বসে আছেন ৷ বলতাম কি অবস্থা দাদা ৷ কি কি করলেন ৷ খেলেন? দাদা তার সকালে তিন মাইল দূরে আকবর হাট হেঁটে যাওয়া থেকে শুরু করে আমি ঘুম থেকে উঠতে উঠতে তার ডজন খানেক কাজের লিস্ট বলতে থাকতেন ৷ হোয়াট এ এনার্জেটিক ম্যান ৷
.
দাদার সাথে পাঞ্জা লড়ার শখ ছিলো, ভাবছিলাম এবার গেলে একটু ট্রাই করে দেখবো ৷ মনে মনে জানতাম পেরে উঠবো না হয়তো তার মনোবলের কাছে হেরে যাবো, জানি আর কখনো দেখা হবে না ৷ যে যায় সে কখনো ফিরে আসেনা ৷
.
তবুও কিছু মানুষ থাকে অন্যরকম ৷ তাদের সাথে কারো তুলনা চলে না ৷ হঠাৎ আজ সকালে দাদার মৃত্যু সংবাদ শুনে মনে হলো, সেরা দাদাটা ই চলে গেছেন ৷ এমন মানুষগুলো সবার জীবনে দরকার!
.
লড়াকু মানুষ ৷ লড়াই করে বেঁচে থাকা বড় বেপার না ৷ কিন্তু জীবনের হাজারো দুঃখকে 'আই ডোন্ট কেয়ার' বলে শেষ জীবন পর্যন্ত বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়া যাওয়া মানুষ ঐ একটায় ৷ খোদার কসম ঐ একটা ই, আর দেখিনি ৷ দেখবো না ৷
২| ০৬ ই জুন, ২০২০ বিকাল ৪:৪৮
জুন বলেছেন: ভালোলাগলো দাদুকে নিয়ে লেখাটি।
৩| ০৬ ই জুন, ২০২০ বিকাল ৪:৫২
আমি সাজিদ বলেছেন: প্রার্থনা করি স্রষ্টার কাছে আপনার দাদুর জন্য।
৪| ০৬ ই জুন, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:০৭
চাঁদগাজী বলেছেন:
উনার বয়স কত হয়েছিলো, উনি কি গ্রামে ছিলেন?
৫| ০৬ ই জুন, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:০৮
চাঁদগাজী বলেছেন:
আপনার লেখা ভালো লাগলে বিকাশ করে টাকা পাঠাতে বলেছেন।
আপনার লেখা এখনো ভালো লাগছে না
৬| ০৬ ই জুন, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:০১
আবদুর রব শরীফ বলেছেন: ওপারে ভালো থাকুক মানুষগুলো ৷
৭| ০৬ ই জুন, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:০২
আবদুর রব শরীফ বলেছেন: দোয়া করবেন, সবার জন্য ৷
৮| ০৬ ই জুন, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:০৩
আবদুর রব শরীফ বলেছেন: আমীন ৷ আল্লাহ কবুল করুক ৷
৯| ০৬ ই জুন, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:০৪
আবদুর রব শরীফ বলেছেন: গ্রামে থাকতেন ৷ বয়স আশি হবে তবে বেশ্ ছিলেন এখনও ৷
১০| ০৬ ই জুন, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:১২
মীর আবুল আল হাসিব বলেছেন: আপনার লেখা ভালো লাগছে।
আমি এখন বিখাশ করতে চললাম!!!
১১| ০৬ ই জুন, ২০২০ রাত ৮:৪৪
আবদুর রব শরীফ বলেছেন: লকডাউনে আটকে গেছেন ৷ হেহে
১২| ০৬ ই জুন, ২০২০ রাত ৮:৪৪
আবদুর রব শরীফ বলেছেন: লকডাউনে আটকে গেছেন ৷ হেহে
১৩| ০৭ ই জুন, ২০২০ রাত ১২:১০
নেওয়াজ আলি বলেছেন: অত্যন্ত মুগ্ধকর।শ্রদ্ধা
১৪| ০৭ ই জুন, ২০২০ রাত ১২:১৩
মা.হাসান বলেছেন: আসলেই ইন্সপায়ার করার মতো লোক। প্রার্থনা করি ওনার পরকাল সুন্দর হোক।
©somewhere in net ltd.
১| ০৬ ই জুন, ২০২০ বিকাল ৩:৪৬
রাজীব নুর বলেছেন: শ্রদ্ধা জানাই তাকে।