নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
যদি তোর লেখা পড়ে কেউ না হাসে তবে একলা হাসো রে!
বুড়ি রিটায়ার্ড হয়েছে অনেক দিন হলো, পেনশনের টাকায় তার সংসার চলতো, দুই মেয়ে, এক মেয়ের জামাই, নাতি, নাতনী সাথে আরো এক আত্মীয়ের মেয়ে মিলে পুরো এক পরিবার সে পেনশনের টাকার উপরে নির্ভরশীল,
.
চতুর্থ শ্রেণীর সরকারী চাকরির পেনশন, চোখে ভালো করে দেখতো না তবুও কারেন্ট চলে গেলে পথ হাতড়িয়ে পাশের বাসায় গিয়ে দিয়াশলাইয়ের কয়েকটা কাঠি নিয়ে এসে পুরনো বাক্সে ঘষে প্রদীপ জ্বালাতো!
.
সন্ধ্যা হলে প্রায় নাতি নাতনীদের কান্না কাটি শুরু হতো, দশ টাকার মুড়ি কিনে ডানো দুধের টিনের বাক্সে রাখতো, সেটা বের করে প্লেটে ঢালতে ঢালতে মেয়েকে বলতেন চায়ের পানি গরম হতে আর কতো দেরী,
.
একদিন দেখলাম বুড়ি টুকটুক করে নাতনীর মাথা ফেটে যাওয়ায় তাকে ব্যান্ডেজ করিয়ে বাসায় ফিরছে, নাতির মাথায় সাদা ব্যান্ডেজ সে উল্টো বুড়ির হাত ধরে তাকে পথ দেখাচ্ছে!
.
সেই সাঁজ সকালে বুড়ি অনেক পুরনো একটি টেবিল ঘড়ির কটকট শব্দে প্রতিবেশীদের ঘুম ভাঙ্গতো,
.
একদিন ঘড়ির ব্যাটারি শেষ হওয়ায় মনে হয় এলার্ম বাজেনি আরেকদিন এলার্ম বেজে চলছে তবুও বুড়ি ঘুম থেকে উঠছে না ভেবে আশে পাশের উৎসুক জনতা উঁকি দিয়ে জানতে পারলো তার খুব জ্বর!
.
পরের দিন বুড়ি মাটি দিয়ে ঘর লেপতেছিলো, বাসায় নাকি নতুন মেহমান আসবে!
.
উনার বয়সী সবাই বুড়ি হয়েছে, অবসর নিয়েছে কিন্তু বুড়ির কোন অবসর নেই,
.
মেয়ের জামাই সেই যে যায়, কোথায় থাকে, আর ফিরে না, কয়েকদিন পর রাত তিনটায় এসে এই সাজেদা বলে চিৎকার করতে থাকে, বউ রাগ করে দরজা খুলে না, বুড়ি খুকখুক্ করতে করতে উঠে দরজা খুলে দেয়!
.
মেয়ে যখন প্যাগনেন্ট ছিলো তখন বুড়ি তাকে নিয়ে ডাক্তার দেখিয়ে ফিরে এসে সান্ত্বনা দিতে দেখে তার মানসিক শক্তি দেখে খুব অবাক হয়েছিলাম,
.
একদিন পচন্ড ঝড়ে বুড়ির বেড়ার টয়লেটের এক পাশ উড়ে গেলে সে মাঝরাতে উঠে সেটা খুঁজে এনে একটা বাঁশ জোগাড় করে হেলান দিয়ে রেখেছিলো!
.
চোখে তেমন দেখতো না তবুও আরেকজনের সাহায্যে সুঁইয়ে সুতা ঢুকিয়ে কাঁথা সেলাই করতো,
.
বাসায় তালা দিয়ে অনেক দিন পর ফিরলাম, আমি ফেরার আগে দেখি বুড়ি ঘরের সামনে দাঁড়িয়ে, গায়ে হাত দিয়ে বললো, বাবা তুমি শরীফ না, এতোদিন কোথায় ছিলে! তারপর গল্পের ছলে জানলাম সে আমার অবর্তমানে রোজ আমাদের ঘরটি দেখে শুনে রাখতো!
.
কিছুক্ষন পর ঘর থেকে একটি পেঁপে নিয়ে এসে বললো, তোমাদের গাছের পেঁপে, বাতাসে পড়ে যাওয়ায় আমি বাসায় নিয়ে রেখে দিয়েছি, কয়েকদিনে পেকে গেছে, তুমি অনেক টায়ার্ড এটা খেয়ে নাও!
.
অদ্ভুত সেই বুড়িকে যখন কাছ থেকে দেখার সুযোগ হয়েছিলো তখন আমি খুব ছোট, উনি যে আসলে কতটা দৃঢ় মানসিকতার মানুষ সেটা বুঝার বয়স আমার তখনো হয়নি,
.
একদিন দেখলাম বুড়ির মেয়ের সাথে পাশের বাসার প্রতিবেশীর সাথে মনোমালিন্য হয়েছে, বুড়ি রাতে গিয়ে সেটা মিটমাট করে নিয়েছিলেন!
.
কয়েকটা সাদা শাড়ি কখনো ময়লা হতে দেখিনি, সব সময় এতোটা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকতো এতো কাজের ফাঁকে
.
নাতি নাতনী কান্না করলে মা উত্তম মধ্যম দিতো কিন্তু বুড়ি কিভাবে যেনো তাদের কোন বকা ছাড়া ই পোষ মানিয়ে নিতো,
.
শেষ যখন বুড়ির সাথে দেখা হয় তখন চুরি করে সিগারেট টেনে আসার পর খেয়াল করলাম পকেটে ম্যাচের বাক্স রয়ে গেছে! বাবা কিংবা গৃহশিক্ষকের হাতে ধরা খাওয়ার ভয়ে দিয়াশলাইটা বুড়িকে দিয়ে দিলাম!
.
বুড়ি হাত টেনে বসালো, মাথায় হাত দিয়ে বিভিন্ন সূরা পড়ে দোআ করে ফুঁ দিতে থাকলো! এক টাকা কারো কাছে কতটা মূল্যবান হতে পারে এমন জানলে বাসায় ধরা খাওয়ার ভয়ে কোন দিন সিগারেট ধরানোর পর ম্যাচগুলো ফেলে আসতাম না!
.
মনে পড়ে গেলো, দুটো ম্যাচের কাঠি একটি পুরনো বাক্সের কথা, অন্ধকারে পথ হাতড়িয়ে এগিয়ে চলছে একটি বুড়ি...!!!
২| ২৮ শে জানুয়ারি, ২০২০ সকাল ৯:৪২
রাজীব নুর বলেছেন: তেমন মজার হয় নি।
©somewhere in net ltd.
১| ২৭ শে জানুয়ারি, ২০২০ রাত ৮:৪২
মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন: ঠিক আছে।