নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
যদি তোর লেখা পড়ে কেউ না হাসে তবে একলা হাসো রে!
রাত দিন পরিশ্রম করে সন্দ্বীপের সেজান বাড়ির মেয়ে পক্ষ সতের গাড়ি নাস্তা নিয়ে যাচ্ছিলো বরের বাড়িতে,
.
হুলস্থুল কান্ড! সাধারণত হাতের তৈরী নাস্তার জন্য বিখ্যাত ছোট দ্বীপটি! রাতের পর রাত উৎসবমুখর পরিবেশে গ্রামের আবাল বৃদ্ধ বনিতারা বসে এসব পিঠাপুলি বানিয়ে থাকে!
.
নানী কিংবা দাদীর নেতৃত্বে এগিয়ে চলে পিঠা তৈরীর যাত্রা, সেসব নিয়ে যাত্রাপালা করতে করতে এগিয়ে যায় নানা দাদারা
.
সেজান বাড়ির মেয়ে বলে কথা,
.
কিন্তু নিজ বাড়ি অতিক্রম করে কিছুদূর যাওয়ার পথে আরেক গ্রামের জনৈক মুরুব্বি সেই পিঠার যাত্রা মাঝপথে থামিয়ে দেয়!
.
পাঠক, কি ভাবছেন? একদম অনুচিত হচ্ছে! সামান্য পিঠা ই তো!
.
পিছন থেকে সেজান বাড়ির শার্টের বোতাম খোলা রেখে ঘুরে বেড়ানো ছেলেটি দাদুর লাঠি নিয়ে এগিয়ে আসলো! তারও দুই জন পেছনে বর পাঞ্জাবীর হাতা ভাঁজ করতে লাগলো,
.
তবুও পথ আটকিয়ে দাড়ানো বৃদ্ধ অটল! হুংকার দিয়ে বললো, এই পথ দিয়ে শুধু দুটো গাড়ি যাবে! বাকী পনেরটি ফেরত যাবে সেজান বাড়িতে!
.
মাঝখান থেকে একজন এসে বললো, দাদা মশাই, একটা গাড়ি না হয় আপনার বাড়িতে পাঠিয়ে দিলে বাকী ষোলটি ছেড়ে দিলে কি এমন আর হবে, একটা শুভ যাত্রা! জন্ম মৃত্যু বিয়ে পিঠা ভোজন করে রিজিক সবি উপরওয়ালার হাতে!
.
নারাজ লোকটি কোন মতে নিজেও পিঠা খাবে না, অন্যের বাড়িতেও পিঠা নিতে দিবে না!
.
এরি মাঝে গাড়ি থেকে কনের নানা নেমে এলো, স্লামলাইকুম বেয়াই সাব বলে কোলাকোলি করতে করতে রাস্তার মাঝখান থেকে জনৈক লোককে সরানোর চেষ্টা করে চলছে! কোলাকোলি চলছে তবে ঠিক রাস্তার মাঝখানে,
.
ঘটনা কি!
.
নানা বুক ছেড়ে হাত ধরলো! বৃদ্ধ এবার আগলানো পথে দাঁড়িয়ে এক হাত পিছনে নিয়ে বক্তব্য শুরু করলো! সামনে চেয়ারম্যান ইলেকশন! পাশ থেকে একজন স্লোগান ধরলো, দাদা ভাইয়ের চরিত্র, ফুলের মতো পবিত্র!
.
কিন্তু না, তিনি গম্ভীর মুখে বলা শুরু করলেন, এই গ্রামে আরো একশ মেয়ে আছে! তাদের অনেকের বাবার জামাইয়ের বাড়িতে এক গাড়ি পিঠা দেওয়ারও সামর্থ্য নেই! আমি জানি, আপনাদের টাকা আছে সাথে সামর্থ্যও.....!
.
এরি মাঝে সেজান বাড়ির বিটলা পোলাটা 'আমার বিয়ে করার ইচ্ছেও আছে' বলে কিছু মানুষকে হাসিয়ে মাথা লুকিয়ে বসে অদ্ভুত ভঙ্গিমা করে লুটিয়ে পড়তেছিলো!
.
থামেন সবাই বলে তিনি আবার আঙ্গুলি উপরের দিকে উঠিয়ে বলতে লাগলেন, আপনারা আজকে সতের গাড়ি পিঠা পাঠিয়ে যে সংস্কৃতির যাত্রা করতেছেন অন্য গরীব বাবার মেয়েরা যখন সে রকম করতে পারবে না তাদের মন খারাপ হবে! এমনকি বরের বাড়ি থেকে চাপও সৃষ্টি হতে পারে!
.
পিনপতন নীরবতা, এমনভাবে কেউ চিন্তা করেনি আগে! মুরুব্বি এবার সবিনয়ে বলতে আরম্ভ করলেন, আপনারা বরের বাড়িতে শুধু দুটো গাড়ি আমাদের বাড়ির সামনে দিয়ে নিতে পারবেন বাকী পনেরটি ফিরিয়ে নেওয়ার অনুরোধ করছি!
.
কনের নানার দিকে লক্ষ্য করে কাকুতি মিনতি করে বলতেছিলেন 'আমার যা কিছু বলার ছিলো বলেছি! এবার আপনি যদি চান তাহলে সব গাড়ি বরের বাড়িতে নিয়ে যেতে পারেন! আর কোন বাধা দেবো না! আপনি মুরুব্বি মানুষ, বাকীটা আপনার বিবেকের উপ্রে ছেড়ে দিলাম' বলে বৃদ্ধ পথ থেকে সরে উল্টো পথে হাঁটা শুরু করেলো!
.
কনের নানা কি যেনো চিন্তা করছিলেন সাথে অপলক নয়নে বৃদ্ধের চলে যাওয়া দেখছিলেন!
.
পথে আর কোন বাধা থাকলো না! তবুও থমকে গেছে একটি সংস্কৃতি! গাড়িগুলোর দিকে লক্ষ্য করে কনের নানা হুংকার দিলেন, দুটি গাড়ি নয় কেবল মাত্র একটি গাড়ি বরের বাড়িতে যাবে!
.
শুধু একটি গাড়ি, সেজান বাড়ির একটি গাড়ি সামনে এগিয়ে চলছে বাকী সব পেছনের দিকে,
.
বিদায় ঘন্টা বেজে চলছে একটি অপসংস্কৃতির....মেয়ের বাবাদের মাধ্যমে গল্পটি ছড়িয়ে যাচ্ছিলো সাথে একরাশ আনন্দ অশ্রুজল!
©somewhere in net ltd.
১| ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৯ রাত ১০:০৬
রাজীব নুর বলেছেন: শিরোনামটাই সুন্দর হয় নি।