নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
যদি তোর লেখা পড়ে কেউ না হাসে তবে একলা হাসো রে!
আমার নাহিদা আন্টি স্কুলে থাকতে ঘরে ঘরে ঝুলানো ব্যাগ নিয়ে হাঁটতো আর নানীকে জিজ্ঞেস করতো, তাকে মাস্টারের মতো লাগছে কি না! নানীও হেসে উত্তর দিতো, একদম মাস্টারনীর মতো লাগছে,
.
সুন্দরী হওয়ার কারণে ছোট বেলা থেকে রোজ করে নাহিদা আন্টির বিয়ের প্রস্তাব আসতো, কিন্তু নানী তাকে পড়াশুনা করাবেই!
.
নানা যদিও কালাপানিয়া স্কুলের প্রাইমারীর হেড মাষ্টার ছিলো তবুও চাইতেন মেয়ের বিয়ে দিয়ে দিতে! নানীর সাথে তাই নানার প্রতিদিন এক প্রকার ঝগড়া হতো এগুলো নিয়ে! লেগে থাকতো!
.
আসলে গল্পটা বুঝতে হলে আপনি সন্দ্বীপ কিংবা গ্রামের সংস্কৃতি বুঝতে হবে যেখানে মেয়ে বড় হলে আশেপাশের মানুষের নানা রকম মন্তব্য কিংবা সলাপরামর্শ একজন বাবাকে এমন সব সিন্ধান্ত নিতে অনেকটা অনুপ্রাণিত করে! মেয়ে বিয়ে দিতে পারলেই যেনো মুক্তি!
.
নানীর দুই জোড়া স্বর্ণের কানের দুল ছিলো, প্রথম জোড়া আমার বড় আন্টি ফরিদাকে ক্লাশ নাইনে ভর্তি করার জন্য বিক্রী করে দিয়েছিলেন! তবুও বিয়ের প্রস্তাবের চাপে আন্টিকে বিয়ে দিয়ে দিতে হয়েছিলো! নানার সাথে সংগ্রামে সেই যাত্রায় নানী হেরে গিয়েছিলেন! বড় আন্টিরও আর এসএসসি পাশ করা হয়নি! সেই আফসোসের গল্প বলার সময় নানীর চোখে আজো জল চিকচিক করে ৷
.
গল্পটি লেখার সময় আমি নানীর কানের দিকে লক্ষ্য করে জিজ্ঞেস করেছিলাম, আপনার কানে কি এখন আর কোন স্বর্ণের দুল নেই! মুচকি হেসে উত্তর দিলেন, 'কানে হাত দিলে খালি খালি লাগে! সাথে গর্বও হয়!'
.
শুরু করেছিলাম নাহিদা আন্টির কথা দিয়ে, যাকে এক প্রকার ওয়ান ম্যান আর্মির মতো এসএসসি, এইচএসএসি পাশ করিয়েছেন নানী অতপর যখন মোস্তাফিজুর রহমান ডিগ্রী কলেজে ভর্তি করার সময় এসেছিলো, নানা কোন কথা মানবেই না, মেয়েকে বিয়ে দিয়ে দিবে! পড়াশুনার যবানিকা!
.
শেষ সম্বল নানীর আরেক জোড়া কানের দুল! এবার সেটিও বিক্রী করে দিয়ে মেয়েকে ডিগ্রীতে ভর্তি করালেন! সবচেয়ে বড় কথা আমার আন্টিদের পড়াশুনার আগ্রহ ছিলো অতুলনীয়!
.
আমি মনে করি আমার ছোট মামা সদ্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ব্যাংকিং থেকে পাশ করা থেকে শুরু করে বড় মামার চাটার্ড একাউন্টিং পড়াশুনা কিংবা আন্টিদের উচ্চ শিক্ষার পথে যাওয়ার যে আলোকবর্তিকা কেবলি তা নানীর সংগ্রাম কিংবা নানাকে সুকৌশলে মটিবেশন করার ফলস্বরূপ,
.
ঘরে ঘরে ব্যাগ নিয়ে হাঁটতে থাকা ছোট্ট বেলার সেই নাহিদা আন্টির ছোট্ট স্বপ্নটি অবশেষে পূরণ হয়েছিলো, কাধে ব্যাগ ঝুলিয়ে রোজ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকতা করে যাচ্ছেন প্রায় পাঁচ বছর ধরে!
.
আজ যে মেয়েরা বাবা মায়ের অনুপ্রেরণায় নানা রকম সুযোগ সুবিধার মধ্য গিয়ে উচ্চশিক্ষিত হচ্ছে তারা জানেনা এখনো গ্রামে গ্রামে বেগম রোকেয়ারা কতটা মনোবল থাকলে সব বাধা ডিঙ্গিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে, কত রত্মগর্ভা মায়ের গল্প কারো গল্পে উঠে আসবে না কখনো!
.
এভাবে জীবন পাতার অনেক খবর অগোচরে হারিয়ে যাবে, বিয়ের কিংবা ভালবাসার কয়েকটি স্মৃতিও যখন স্বর্ণকারের ঝুলিতে শোভা পায় তখন কতটা কষ্ট হয় কেউ বুঝবেও না!
.
তবুও দুল হারা দুটি কানের গল্পে আলোকিত হতে থাকবে একটি সমাজ! এভাবে এগিয়ে যাবে একটি দেশ, জাতি কিংবা সম্প্রদায়!
২| ২৯ শে নভেম্বর, ২০১৯ বিকাল ৫:৪১
জুলিয়ান সিদ্দিকী বলেছেন: এটা বৈষম্য থেকে না, এটা হয় গ্রাম্যতার কারণে। মেয়েরা বেশি পড়াশোনা করুক এমনটা এখনও আমাদের সমাজ ভালো চোখে দেখে না। আপনার নানা মেয়েদের উচ্চ শিক্ষিত করতে চান নাই, পাছে গ্রামের দুষ্টু লোকে কিছু বলে বা দুর্নাম ছড়ায় সেই ভয় থেকেই হয়তো। এখন যদি জানতে চান, তিনি নিশ্চয় কারণটা বলবেন হাসিমুখে।
৩| ২৯ শে নভেম্বর, ২০১৯ সন্ধ্যা ৬:১৮
নাহিদ০৯ বলেছেন: আমরা বিয়ে কে সবসময় শিক্ষা চাকুরি বা জীবনমানোন্নয়ন এর বিপক্ষে দাঁড় করাই কেন? কেন বিয়ে আমাদের সবার জন্য সমান কল্যান বয়ে নিয়ে আসে না? বেশিরভাগ বিয়ে ভিত্তিক অনলাইন গল্পগুলোতে পারিবারিক অশান্তি ও অকল্যাণ এর কথাই কেন শুনতে পাই? কেন দুজন মানুষ একে অন্যের জন্য উত্তম সহযোগী হয় না?
৪| ২৯ শে নভেম্বর, ২০১৯ রাত ৯:৩১
রাজীব নুর বলেছেন: ভেরি গুড।
©somewhere in net ltd.
১| ২৯ শে নভেম্বর, ২০১৯ বিকাল ৫:৩৪
চাঁদগাজী বলেছেন:
সন্দ্বীপেও শক্তিশালী মহিলারা আছেন!