নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সাধু সাবধান ! ব্লগের মালিক বঙ্গালা সাহিত্যকে ধরিয়া বিশাল মাপের ঝাঁকি দিতে নিজেকে শারীরিক ও মানসিক ভাবে প্রস্তুত করিতেছেন। সেই মর্মে তিনি এখন কিটো ডায়েটিং, ডন-বৈঠক ও ভারোত্তলন প্রশিক্ষণে ব্যস্ত। প্রকাশিত গ্রন্থঃ১। শেষ বসন্তের গল্প । (২০১৪)২। মিসিং পারসন - প্যাত্রিক মোদিয়ানো, ২০১৪ সাহিত্যে নোবেল বিজয়ী (অনুবাদ, ২০১৫) ৩। আয়াজ আলীর ডানা (গল্পগ্রন্থ - ২০১৬ ৪। কোমা ও অন্যান্য গল্প(গল্প গ্রন্থ, ২০১৮) ৫। হেমন্তের মর্সিয়া (কবিতা, ২০১৮) ৬। কাঁচের দেয়াল (গল্পগ্রন্থ, ২০১৯) ৭।শহরনামা (উপন্যাস, মাওলা ব্রাদার্স, ২০২২), ৮। মুরাকামির শেহেরজাদ ও অন্যান্য গল্প (অনুবাদ, ২০২৩), ৯। নির্বাচিত দেবদূত(গল্পগ্রন্থ, ২০২৪), ১০। দেওয়ানেগির চল্লিশ কানুন/ফরটি রুলস অফ লাভ (অনুবাদ, ঐতিহ্য, ২০২৪)
উত্তর আধুনিকতার কেন্দ্রচ্যুতি ও বিচ্ছিন্নতার যন্ত্রণা থেকে নিরসন খুঁজতে খুঁজতে ২১ শতকের মানুষ আশ্রয় নিয়েছে মেটামডার্নিজমে। আধুনিক ও উত্তর আধুনিক মানুষের জীবন দর্শনের সঙ্গে সংশ্লেষের চেষ্টা চলছে একদা পিছে ফেলে আসা রোম্যান্টিক ভাবাদর্শের। ২০২৩ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরষ্কার বিজয়ী নরওয়েজিয়ান নাট্যকার - উপন্যাসিক ইয়ন ফসে কি কেন্দ্রচ্যুত মানুষের শেষ গন্তব্য হিসেবে অন্তর্মুখিনতাকেই সমাধান হিসেবে বেছে নিচ্ছেন? 'স্লো - মেটাফিজিক্যাল প্রোজ' তথা ধীরগতিসম্পন্ন এবং আধ্যাত্মিকতাকে নিজ গদ্যে ধারনকারী লেখক হিসেবে বিশ্বসাহিত্যাঙ্গনে খ্যাতি পাওয়া এবং ২১ শতকের স্যামুয়েল বেকেট হিসেবে পরিচিত এ লেখক নাট্যকারের দেয়া বিবিধ সাক্ষাৎকারের চুম্বক অংশের এ অনুবাদে উঠে এসেছে তার জীবন ও সাহিত্য সংক্রান্ত ভাবনা।
প্রশ্নঃ আপনার সবচে সাম্প্রতিক, এবং আঙ্গিকের দিক থেকে সবচে বড় উপন্যাস সেপ্টোলজি (২০২২) দিয়েই আলাপ শুরু করি। একই নামের দু'জন মানুষ, যাদের একজন বাস করেন গ্রামে, অপরজন শহরে, যাদের মধ্যে অসংখ্য মিল থাকা সত্যেও তারা ঠিক একই ব্যক্তি নন - তাদের জীবন নিয়ে রচিত আপনার এ উপন্যাস। পূর্বের এক সাক্ষাৎকারে আপনি এই উপন্যাসকে উল্লেখ করেছেন - মৃত্যুর পূর্বমুহূর্তের এক পূর্ণাঙ্গ চিত্রকল্প হিসেবে। এর দ্বারা আপনি ঠিক কি বোঝাতে চেয়েছেন?
ফসেঃ সেপ্টোলজি একটা বড় উপন্যাস। এতো বড় সাইজের কোন লেখাই আমি আগে কখনো লিখিনি। শুরুতে ধারনা ছিল, এ উপন্যাস হয়তো টেনেটুনে ১৫০ পৃষ্ঠা হবে। কিন্তু লিখতে লিখতে দেখি ১৫০০ পৃষ্ঠা ছাড়িয়ে গেছে। এ উপন্যাস আমার লেখার মধ্যে দিয়ে নিজেই নিজের গতিপথ আবিষ্কার করে নিয়েছে।
মৃত্যুর পূর্বমুহূর্তের পূর্ণাঙ্গ চিত্রকল্প - বিশেষণটি আমার এ উপন্যাসের ব্যাপারে আমি ব্যবহার করেছি। অনেকে বলে, মৃত্যুর আগে মানুষের পুরো জীবন মুহূর্তের মধ্যে তাদের চোখের সামনে দিয়ে বয়ে যায়। আমার এ উপন্যাসটিও, আমার সামগ্রিক সাহিত্যচর্চা বিবেচনায় একইরকম। আমার পূর্বে লেখা বিবিধ নাটক এবং উপন্যাসের নানা বিষয়বস্তু ও ফর্ম এই উপন্যাসে আমি পুনরায় ব্যবহার করেছি, কিন্তু ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গী এবং প্রকাশভঙ্গীতে।
প্রশ্নঃ সেপ্টোলজি লেখার এ ভিন্ন ধারার আঙ্গিকের খোঁজ পেলেন কীভাবে?
ফসেঃ লেখার কাজটা আমার কাছে শব্দ শোনার মতো। নানা দিক থেকে নানা আওয়াজ ভেসে আসছে আমার প্রতি, আমি ঠিক জানিও না যে আমি কি শুনছি, তাদের উৎস কোথায়। কিন্তু আমি জানি যে আমি শুনছি। ভেতর থেকে উঠে আসা এই আওয়াজগুলোকে ধরে ফেলাই আমার কাছে লেখার অপর নাম।
লেখা শুরু করবার আগে খুব খুঁটিনাটি পরিকল্পনা করে নেয়াটা আমার কায়দা নয়। সেপ্টোলজি লেখা শুরু করবার আগে আমার একটাই সিদ্ধান্ত ছিল, আমি এবার একটি 'স্লো প্রোজ' বা ধীরগতির গদ্য লিখব। আমার ভাষা সমুদ্রের বিশাল ঢেউয়ের মতো ধীরে ধীরে সরে যেতে থাকবে উৎসমুখ থেকে। আমি চেয়েছিলাম পুরো লেখার প্রক্রিয়াটিকে শান্ত, ধ্যানস্থ করে আনতে।
প্রশ্নঃ আপনি 'স্লো প্রোজ' - এর কথা বললেন। কিন্তু আপনার অধিকাংশ লেখাই তো দুর্দান্ত গতিশীল।
ফসেঃ আমি সেপ্টোলজির ভাষাকে ধীরস্থির করে আমার রচিত নাটকের ভাষা, যাকে আপনি গতিশীল বললেন, তা থেকে আলাদা করে তুলতে চেয়েছি। আমার নাটকগুলো সংক্ষিপ্ত, কিন্তু তাদের বিষয়বস্তুর ঘনত্ব থাকে বেশী। একটা নির্দিষ্ট সময়ের ব্যাপ্তির মধ্যে ওখানে পুরো বক্তব্যটা শেষ করতে হয়। কিন্তু সেপ্টোলজিতে আমি প্রতিটা মুহূর্তকে প্রশান্তভাবে ফুটিয়ে তুলতে যতটুকু বর্ণনা ও সময়ের প্রয়োজন, তা দিয়েছি।
প্রশ্নঃ নরওয়েতে আপনার শৈশবের একটা বড় অংশ আপনি নৌকা নিয়ে পানির মাঝে কাটিয়েছেন। এটা সহ, আপনার শৈশবের আরও নানা অভিজ্ঞতা কীভাবে আপনার লেখালিখিকে প্রভাবিত করেছে?
ফসেঃ নরওয়েতে আমি সহ আমার সমবয়সী শিশুরা বেশ মুক্ত, বল্গাহীন এক পরিবেশে বেড়ে উঠেছি। ৭ - ৮ বছর বয়স থেকেই আমাদের একাকী নৌকা নিয়ে নদীতে বেরিয়ে পড়ার অনুমতি ছিল। আমার শৈশবের সবচে সুন্দরতম স্মৃতি হচ্ছে বাবার সঙ্গে গ্রীষ্ম কিংবা শরতের বিকেলে নৌকায় করে মাছ ধরতে যাওয়ার অভিজ্ঞতা। সাঁঝ নেমে আসছে, এমন সময় বিশাল জলধিতে যে নৈসর্গিক নৈঃশব্দ নেমে আসতো, আমি ঐ অপরূপ সুন্দর চিত্রকল্পটিকে নয়, বরং নৈসর্গিক নীরবতাকেই যেন বাকি জীবন খাতায় লিপিবদ্ধ করার চেষ্টা করেছি। এভাবেই, পরবর্তীতেও, লেখালিখির কাজটা আমার জন্য মূলত শব্দকে শোনা এবং শ্রুত শব্দকে লিপিবদ্ধ করার একটা প্রক্রিয়ায় পরিণত হয়েছে।
প্রশ্নঃ অনেক লেখক পরিণত বয়সে লেখালিখিকে অবলম্বন হিসেবে গ্রহণ করেন। কারন হিসেবে তারা উল্লেখ করেন যে, তারা কথা বলার মাধ্যমে গুছিয়ে তাদের মনের ভাব প্রকাশ করতে পারেন না। আপনার ক্ষেত্রেও পরিণত বয়সে এসে কি বিষয়টি এরকমই দাঁড়ালো?
ফসেঃ অনেকটাই। দার্শনিক উইটেনস্টাইনের একটা বক্তব্য আছে, যা ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব না, তা নীরবতার হাতে ছেড়ে দাও। আবার দার্শনিক দেরিদা একই কথা একটু ঘুরিয়ে বলেছেন যে - যা তুমি কথায় প্রকাশ করতে পারো না, তা লিখে ফেলো। আমি দেরিদার বক্তব্যের কাছাকাছি অবস্থান করি।
প্রশ্নঃ অটোফিকশান (নিজের বা পরিচিতজনের জীবনের অভিজ্ঞতাকেই গল্প- উপন্যাসের প্রেক্ষাপটে পরিণত করা) -এর ব্যাপারে আপনার অবস্থান কি?
ফসেঃ এটা তো ইদানীং খুব জনপ্রিয় একটা সাহিত্য জনরা। নোবেল বিজয়ী ফরাসী সাহিত্যিক এনি আরনো এই জনরায় কাজ করেছেন অনেক। তার একটি ছোট উপন্যাস পড়লাম সম্প্রতি, সিম্পল প্যাশন(১৯৯১) নামে। ভালোই লেগেছে। কিন্তু আমার জন্য নিজের জীবনের অভিজ্ঞতাকে গল্পউপন্যাসের বিষয়বস্তুতে পরিণত করা এক কথায় অসম্ভব।
ধরুন উপন্যাসে আমি এক মায়ের কথা লিখছি, বা তার অনুভূতি বর্ণনা করছি। অনেকে মনে করবে যে আমি হয়তো আমার মায়ের কথা মাথায় রেখে লিখছি। যারা সত্যি সত্যি আমাকে এবং আমার মা'কে চেনে তারা জানবে যে এটা সত্য নয়। আমি কখনো এটা করবো না। কারন অন্য কারো জীবনকে তুলে এনে সাহিত্যের বিষয়বস্তুতে পরিণত করাকে আমার খুব অনৈতিক একটা কাজ মনে হয়। আমি তাদের যাপিতজীবনের কিছু কিছু চিহ্ন মাত্র ব্যবহার করতে পারি, কিন্তু তার প্রেক্ষাপটে উপন্যস বা নাটক রচনার জন্য তাদের গোটা চরিত্রের আমূল আমাকে পরিবর্তন করে নিতে হবে।
প্রশ্নঃ আপনাকে কেউ কেউ মেটাফিজিক্যাল ফিকশনের লেখক হিসেবেও চিহ্নিত করে। এ ব্যাপারে আপনার মতামত?
ফসেঃ আমাকে তো নানাভাবেই লেবেল করার চেষ্টা করা হয়েছে সারাজীবন। একজন পোষ্ট মডার্নিস্ট, একজন মিনিমালিস্ট, এদিকে আমি নিজেই নিজেকে পরিচয় দিই 'স্লো প্রোজ রাইটার' হিসেবে। জ্যাক দারিদার প্রভাবও আমি আমার চিন্তায়, লেখনীতে - অস্বীকার করতে পারি না।
আবার আমার উপন্যাস সেপ্টোলজিতে দেখবেন জার্মান আধ্যাত্মিক দার্শনিক মেইস্টার এখহার্টের অনেক আলাপ, দর্শন, বিবৃতি আছে। ৮০র দশকে দার্শনিক মারটিন হাইডেগারের পাশাপাশি আমি এখহার্টের ধর্মীয় দর্শনও বিস্তৃতভাবে পড়েছি। আমার লেখনীতে তার প্রভাব পড়েছে। টিনএজ বয়সে ফ্যাশন হিসেবে মার্ক্সবাদী নাস্তিক্যবাদের চর্চা করলেও, পরিণত বয়সে আশ্রয় খুঁজে নিয়েছি ক্যাথলিসিজমে। যদিও ধর্মীয় কোন উগ্রতা আমার মধ্যে কাজ করে না। এবং আমি নিজেকে স্রেফ একটা ট্যাগের মধ্যে আটকাতেও আগ্রহী নই।
প্রশ্নঃ নরওয়েতে প্রচলিত দুটি ভাষা নিউনর্সক আর বোকমলের মধ্যে আপনি অপেক্ষাকৃত কম ব্যবহৃত নিউনর্সকেই লেখালিখি করেছেন। এর পেছনে কোন রাজনৈতিক প্রেরনা কাজ করেছে?
ফসেঃ রাজনৈতিক কোন কারন নেই। নিউনর্সক আমার মাতৃভাষা। স্কুলে এই ভাষায় আমি পড়ালেখা করেছি। তবে এটা নরওয়ের মূল ভাষা নয়, বাণিজ্যিক কাজেও এই ভাষা ব্যবহার হয় না। যেহেতু ভাষাটি বহুল ব্যবহৃত নয়, কাজেই আমার এ ভাষাটিতে রচিত সাহিত্য আমাদের সাহিত্যাঙ্গনে একধরণের সজীবতা বয়ে এনেছে।
প্রশ্নঃ আপনার বেশীরভাগ নাটকের বিষয়বস্তু হিসেবে উপস্থিত যৌন ঈর্ষা। ড্রিম অফ দা অটাম নাটকে আপনার খুব সুন্দর একটি লাইন আছে - "সে ভালোবাসায় আমি বিশ্বাস করি না, যা এক বাবাকে তার সন্তান থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলে।" আসলেই আপনি এটা বিশ্বাস করেন?
ফসেঃ খুব খারাপ কি বলেছি? আর ঈর্ষার কথা যদি ধরেন, যেকোনো নাটক রচনার ক্ষেত্রেই ঈর্ষা সবচে ভালো একটা বিষয়। সুপ্রাচীন আমলের নাটকগুলোর দিকে তাকালেও দেখবেন, ঈর্ষাকে তারা নানাভাবে ব্যবহার করেছে।
প্রশ্নঃ উপন্যাস সেপ্টোলজিতেও একটা লাইন আমার নজর কেড়েছে বিশেষভাবে - "যাপিত জীবনে যা কিছু সুন্দর, চিত্রকরের ক্যানভাসে তা অসুন্দর হয়ে ওঠে কেবল তার অতিরিক্ত সুন্দরভাবে তা উপস্থাপনের প্রাণপন চেষ্টার কারনে।" সাহিত্যেও জীবনকে বাস্তবতা থেকে বিচ্ছিন্ন করে অতিরিক্ত সুন্দরভাবে উপস্থাপনের চেষ্টা করা হয় কি না?
ফসেঃ অবশ্যই। একটা সুন্দর কবিতা পড়েও আমার প্রায়ই খারাপ লাগে, যখন এটা তৈরির পেছনে ব্যায়িত চাতুর্য আমার চোখে ধরা পড়ে। এরকম আরোপিত যেকোনো সাহিত্যকর্মকেই আমার প্রাণহীন মনে হয়। বাহ্যিক পৃথিবীতেও সৌন্দর্য লুকিয়ে থাকে অসংলগ্নতার মাঝে, অসম্পূর্ণতার মাঝে। সাহিত্য, কিংবা শিল্পেও এটাই সত্য।
প্রশ্নঃ ফ্রাঞ্জ কাফকার দা ট্রায়াল উপন্যাসটিও তো আপনি অনুবাদ করেছেন।
ফসেঃ হ্যাঁ। সেপ্টোলজি লিখে শেষ করবার পর আমি ভিন্ন ধাঁচের কিছু করতে চাইছিলাম। আগে অনেক নাটক, বিশেষ করে সফোক্লিস, অ্যাস্কিলাস, ইউরিপিডিসের লেখা গ্রিক ট্র্যাজেডিগুলো অনুবাদ করলেও উপন্যাস অনুবাদ এই প্রথম। আমার এই অনুবাদ খুব ভালো পাঠ প্রতিক্রিয়া অর্জন করেছে। আমার প্রকাশক, যিনি নিজে একজন জার্মান, অনুবাদের প্রতিটি দাঁড়িকমা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে কাফকার মূল জার্মানের সঙ্গে মিলিয়ে পড়েছেন। বলা চলে স্ক্যান্ডিনিভিয়ান ভাষায় আমার এই কাফকার অনুবাদ সবচে নিখুঁত কাজগুলোর একটি।
প্রশ্নঃ আপনার নিজের লেখাপত্রের ইংরেজি বা অন্যান্য অনুবাদগুলো পড়ে দেখেন?
ফসেঃ প্রায় ৫০টির অধিক ভাষায় আমার নাটক অনূদিত হয়েছে। সেপ্টোলজির ১ম পর্বও ইতোমধ্যে ১৪টি ভাষায় অনুবাদ হয়েছে। সত্যি বলতে, আমি অনুবাদক আর প্রকাশকের ওপরে ভরসা রাখি। নিজের মূল রচনার সঙ্গে অনুবাদ খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পড়া খুব শ্রমসাধ্য ও সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। অপেক্ষাকৃত তরুণ বয়সে চেষ্টা করতাম আমার লেখার অনুবাদ কতোটা মুলানুগ হল তা বের করবার। এখন আর করি না।
প্রশ্নঃ প্রায় ৩৭ বছর হতে চলল, আপনি এই লেখালিখি পেশার সঙ্গে যুক্ত। এই লম্বা সময়ে কাজ করেছেন নানা বিস্তৃত প্রেক্ষাপটে। ক্লান্তি কাজ করে কোন? মনে হয় যে ঘুরে ফিরে একই রকম হয়ে যাচ্ছে লেখা?
ফসেঃ ১২ বছর বয়সে কবিতা আর ছোটগল্পের মাধ্যমে লেখালিখিতে হাতেখড়ি আমার। নানাভাবে মনে হয়, এখনো আমি সেই ১২ বছর বয়সেই আটকে আছি। আবিষ্কার করেছি যে, লেখালিখির কাজটা আমাকে একধরনের আশ্রয় দেয়। যেখানে বসে আমি লিখি, তা আমার প্রশান্তির জায়গা। সত্যি বলতে, দিন যত যাচ্ছে, লেখালিখির কাজটাকে আমি আরও অভিনব, আরও চিত্তাকর্ষক উপায়ে আবিষ্কার করছি। কারন হয়তো এই যে, লেখালিখির জগতে কোন ধরাবাঁধা নিয়ম নেই। চিত্রকরেরা যেমন একই প্রতীক, একই মোটিফ সারাজীবন ধরে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে ব্যবহার করে ক্যানভাস ভরে তোলেন, আমার লেখনীর ক্ষেত্রেও দেখা যায় সেই একইরকমের মোটিফ ফিরে ফিরে আসছে, কিন্তু আমি তাদের প্রকাশ করছি ভিন্ন ভিন্ন ফর্মে। আমার বলার প্রেক্ষাপট বদলে যাচ্ছে।
প্রশ্নঃ সাহিত্যের নানা পুরস্কার আপনি জিতেছেন আজীবন। পুরস্কার প্রাপ্তিকে আপনি কীভাবে দেখেন?
ফসেঃ সাহিত্যিক ক্যারিয়ারে জাতীয় পর্যায়ে প্রথম উল্লেখযোগ্য পুরস্কারটা পেতে আমাকে কিছুটা সময় অপেক্ষা করা লেগেছে, তারপর থেকে আমি নিয়মিতই নানা পুরস্কার জিতেছি। তার প্রতিটাই আমাকে উৎসাহিত করেছে। উপলব্ধি দিয়েছে যে আমার পুরো জীবনের পরিশ্রম বৃথা যায় নি। এমন কিছু চিন্তা বা কাজ পৃথিবীর মানুষদেরকে উপহার দিয়ে যেতে পেরেছি, যা অর্থবহ।
(গ্রান্টা, দা নিউ ইয়র্কারস, লস অ্যাঞ্জেলস রিভিউ অফ বুকস - ইত্যাদি ওয়েবজিনে দেয়া সাক্ষাৎকার অবলম্বনে কৃত আমার এ অনুবাদে বাংলা ট্রিবিউনের সাহিত্য পাতায় ছাপা হয়েছিল নোবেল ঘোষণার পরদিনই। )
০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ রাত ২:২৫
সাজিদ উল হক আবির বলেছেন: ওটা এক মেটাফিজিক্যাল কন্ডিশন। জীবিতদের পক্ষে জানা বা বোঝা সম্ভব নয়। মাই নেম ইজ রেড উপন্যাসে মৃত্যুর ঠিক আগের মুহূর্তের বর্ণনা করে দারুণ একটা চ্যাপ্টার আছে। সেটা, সুযোগ থাকলে পড়ে দেখতে পারেন। আমার দারুণ লেগেছিল। অন্যান্য ফিকশন রাইটারদের মতো আমরাও কল্পনা করতে পারি।
২| ০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ সকাল ৯:২৫
শ্রাবণধারা বলেছেন: অনেক ভালো একটা সাক্ষাৎকার পড়লাম। নরওয়েজিয়ান এই লেখক সম্পর্কে কিছুই জানা ছিলো না। তাকে কিছুটা জানার সুযোগ করে দেবার জন্য অনেক ধন্যবাদ।
১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ রাত ১২:০৯
সাজিদ উল হক আবির বলেছেন: আপনাকেও পাঠে - মন্তব্যে অনেক ধন্যবাদ।
৩| ০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ সকাল ১০:৫১
জাহিদ অনিক বলেছেন: সাজিদ উল হক আবির
দারুণ- উনি নোবেন পাওয়ার পরে থেকেই ওনার নাম শুনেছি, আগে শোনা হয় নি। এটা আমার নিজেরই একটা সীমাবদ্ধতা। কিছু কিছু সাক্ষাৎকার আর ইউটিউব ভিডিও দেখেছিলাম ওনার। কোনও বই পড়া হয়নি। বিশেষ করে সেপ্টোলজি তো নয়ই, যদিও এত বড় লেখা! ভয় লাগে ভাবিতেই --
যাইহোক, আপনার অনুবাদ খুবই সাবলীল আর প্রাণবন্ত হয়েছে। তাই প্লাস সহ প্রিয়তে রেখে দিলাম। ভালো থাকবেন। এরকম লিটারেচার আপডেট আরও চাই!!
১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ রাত ১২:১৮
সাজিদ উল হক আবির বলেছেন: ধন্যবাদ। আমার মনে হয় যে আমাদের নিজেদের ক্ষমা করতে শেখা উচিৎ। নোবেল পুরষ্কার পাওয়ার আগে কারো নাম না জানা, বা নোবেল পুরষ্কারের পরেও কারো নাম না জানাটা সীমাবদ্ধতা না, অপরাধও না। নোবেল, অনেকটা বাংলাদেশের সাহিত্য পুরষ্কারগুলোর মতোই। তদবিরে কাজ হয়। ফসে, যদিও নাট্যকার হিসেবে আগে থেকেই বিখ্যাত। শুভকামনা।
৪| ০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:২৪
রাজীব নুর বলেছেন: সুন্দর ঝরঝরে অনুবাদ।
১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ রাত ১২:১৯
সাজিদ উল হক আবির বলেছেন: ধন্যবাদ রাজীব ভাই
৫| ১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ সকাল ৭:৪৫
কোলড বলেছেন: Having read all these schmutz here and then coming across this gem of a translation, verklempt!
Felt like the interview was in Bengali.
১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ রাত ১০:৫১
সাজিদ উল হক আবির বলেছেন: Humble thanks for your generous comment, dear Mr. Cold. Feeling happy to see you here after so many days on my blog. I hope everything is going in your life.
৬| ১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ দুপুর ২:২৭
নিবারণ বলেছেন: যারা লিখবার চায় তাগো জন্য ম্যালা উপকারি বই হইব এইডা
১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ রাত ১০:৫৫
সাজিদ উল হক আবির বলেছেন: সেপ্টোলজি? এটা অনেকটা জেমস জয়েসের ইউলিসিসের মতো। ঢাউস সাইজের। বাতিঘর একটা সংস্করণ এনেছিল, আমার মেম্বারশিপ কার্ডের ছাড়ের পরও ওটার দাম চেয়েছিল প্রায় সাড়ে চার হাজার টাকা। কিনিনি পরে। ওর্থ ইট মনে হয় নি।
©somewhere in net ltd.
১| ০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ রাত ১:৫০
কামাল১৮ বলেছেন: মৃত্যুর পূর্বমুহূর্তের চিত্রকল্প কেমন হয়,না মরে বোঝার কোন উপায় কি আপনার জানা আছে।