নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সাজিদ উল হক আবির

সাধু সাবধান ! ব্লগের মালিক বঙ্গালা সাহিত্যকে ধরিয়া বিশাল মাপের ঝাঁকি দিতে নিজেকে শারীরিক ও মানসিক ভাবে প্রস্তুত করিতেছেন। সেই মর্মে তিনি এখন কিটো ডায়েটিং, ডন-বৈঠক ও ভারোত্তলন প্রশিক্ষণে ব্যস্ত। প্রকাশিত গ্রন্থঃ১। শেষ বসন্তের গল্প । (২০১৪)২। মিসিং পারসন - প্যাত্রিক মোদিয়ানো, ২০১৪ সাহিত্যে নোবেল বিজয়ী (অনুবাদ, ২০১৫) ৩। আয়াজ আলীর ডানা (গল্পগ্রন্থ - ২০১৬ ৪। কোমা ও অন্যান্য গল্প(গল্প গ্রন্থ, ২০১৮) ৫। হেমন্তের মর্সিয়া (কবিতা, ২০১৮) ৬। কাঁচের দেয়াল (গল্পগ্রন্থ, ২০১৯) ৭।শহরনামা (উপন্যাস, মাওলা ব্রাদার্স, ২০২২), ৮। মুরাকামির শেহেরজাদ ও অন্যান্য গল্প (অনুবাদ, ২০২৩), ৯। নির্বাচিত দেবদূত(গল্পগ্রন্থ, ২০২৪), ১০। দেওয়ানেগির চল্লিশ কানুন/ফরটি রুলস অফ লাভ (অনুবাদ, ঐতিহ্য, ২০২৪)

সাজিদ উল হক আবির › বিস্তারিত পোস্টঃ

পাঠ প্রতিক্রিয়াঃ তনুশ্রীর সঙ্গে দ্বিতীয় রাত (উপন্যাস) ~ মশিউল আলম

০৪ ঠা জুন, ২০২২ রাত ৯:২৫



১।
তনুশ্রীর সঙ্গে দ্বিতীয় রাত '৯০র দশকে বাংলা সাহিত্যের জগতে পা রাখা কথা সাহিত্যিক ও সুলেখক মশিউল আলমের দ্বিতীয় উপন্যাস। মাওলা ব্রাদার্স থেকে ২০০০ সালে প্রকাশিত এই বইটি পড়ে শেষ করেছি গতকাল রাতে। বইটি নিয়ে দু'কলম পাঠ প্রতিক্রিয়া ভাগ করে নিতে চাই সবার সঙ্গে।
.
আগে ওনার কিছু সংখ্যক ছোটগল্প পাঠের অভিজ্ঞতা থেকে জানি, মশিউল আলম ভাই স্বতঃস্ফূর্ত নন, বরং সচেতন লেখক। এ বছরের বইমেলাতেও যখন তার সঙ্গে হেঁটে হেঁটে, বা মাওলা ব্রাদার্সের স্টলে বসে আড্ডা দিচ্ছিলাম, তিনি বলেছিলেন, তিনি লেখেন কম, কাটেন বেশি। এই কাটাকাটির পরিশেষে যে নীট রেজাল্ট দাঁড়ায় - সে গল্পই হোক, বা উপন্যাস, তা বড় মেদহীন ঝরঝরে এবং উপাদেয় একখণ্ড লেখনীতে পরিণত হয়। 'তনুশ্রীর সঙ্গে দ্বিতীয় রাত' উপন্যাসটি পাঠেও আমার অভিজ্ঞতা তদানুরুপ।
.
২।
উপন্যাসটির শ্রেষ্ঠাংশে আছে বাংলাদেশের হাবিবুর রহমান, তথা হাবিব, এবং কোলকাতার মেয়ে তনুশ্রী চক্রবর্তী, তথা তনুশ্রী। তাদের পরিচয়, মেলামেশা হয় সোভিয়েত রাশিয়ায়, ৮০র দশকের শেষ দিকে। সোভিয়েত ইউনিয়নে তখন পতনের কালো ছায়া। এই বিরূপ পরিস্থিতিতে হাবিব - তনুশ্রীর সম্পর্কের রসায়ন কিভাবে গড়ে ওঠে, এবং কিভাবে মোড় নেয় - উপন্যাসের মূল বিষয়বস্তু এটাই। যদিও প্রাসঙ্গিকভাবে উঠে আসে আরও অনেক ব্যাপার।
.
উপন্যাসটির আরও শানিত সারসংক্ষেপের জন্যে আশ্রয় নেয়া যাক বাম ফ্ল্যাপে লেখা উপন্যাস পরিচিতির -
.
"তনুশ্রী চক্রবর্তীর সঙ্গে হাবিবুর রহমানের পরিচয় ও সখ্য সোভিয়েত ইউনিয়নের রাজধানি মস্কোতে, একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে। সোভিয়েত সমাজে তখন চলছে গ্লাসনস্ত - পিরিস্ত্রোইকার সুবাদে এক সর্বব্যাপী পরিবর্তন। বদলে যাচ্ছে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ব্যবস্থা; সেই সঙ্গে মানুষের মন, বিশ্বাস, চালচলন। তনুশ্রী আর হাবিবের চোখের সামনে রচিত হচ্ছে একটি দীর্ঘ, উচ্চাকাঙ্ক্ষী বিপ্লবের শেষ অধ্যায়।
.
এ হচ্ছে এই কাহিনীর দেশকাল। খোদ কাহিনীর পশ্চাৎপট বাংলা। কোলকাতার মেয়ে তনুশ্রীর সামন্ত পূর্বপুরুষ ১৯৪৭ এ পূর্ববঙ্গ থেকে বিতাড়িত। হাবিবের পূর্বপুরুষরা ছিলেন একই অঞ্চলের মধ্যবিত্ত কৃষক। অসম্ভব নয় যে, হাবিবের পিতামহ তনুশ্রীর ঠাকুরদার প্রজা ছিলেন।
কিন্তু তাতে হাবিব বা তনুশ্রীর কিছু যেত - আসতো না, কারন তাদের মধ্যে সম্পর্ক সহপাঠীর; বন্ধুত্বের; প্রেম বা প্রণয়ের কোন প্রসঙ্গ ছিল না। কিন্তু তনুশ্রীর কোষ্ঠীতে নাকি লেখা ছিল যে সে 'যবনকর্তৃক আক্রান্ত হইবে'। তাই কি এক 'দৈব দুর্বিপাকে' হাবিব কর্তৃক তার গর্ভসঞ্চার ঘটে? এ কাহিনীর কূটাভাস এই যে, মেধাবী, আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত, বাম মনোভাবাপন্ন তনুশ্রী কোষ্ঠীতে বিশ্বাস করে। তাহলে কিভাবে অগ্রসর হতে পারে এই কাহিনী? অতঃপর তনুশ্রীর হৃদয়ে কি কোন পরিবর্তন সূচিত হয়? বন্ধু হাবিবকে প্রণয়ী হিসেবে সে কি গ্রহণ করতে পারে?"
.
৩।
উপন্যাসটিতে যা কিছু ভালো লেগেছে, এবার তা ফর্দ আকারে বলে যাই।
.
সারাংশ আলোচনায়ই হয়তো খেয়াল করেছেন, বলা আছে যে - এ উপন্যাস রচিত হয়েছে এক 'দীর্ঘ - উচ্চাকাঙ্ক্ষী বিপ্লবের' সমাপ্তিলগ্নে। সোভিয়েত ইউনিয়ন তো কেবলি এক দেশের নাম নয়, এটা এক স্বপ্নেরও নাম। স্থানিক নয়, বৈশ্বিক। পৃথিবীর যে প্রান্তে যে বা যারা সমাজতন্ত্রে বিশ্বাস করেন, তাদের জন্যে সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রকাঠামোর জাজ্বল্যমান এক উদাহরণ ছিল পৃথিবীর সবচে বড় এই দেশটি। এই দেশটিকে তার আদলে আনার জন্যে গোড়ার দিকে রাশানরা একের পর এক পাঁচসালা প্রকল্পে গতর খাটিয়েছে ভুতের মতো। নগদ কোন প্রাপ্তির আশা নেই। শুধুমাত্র অনাগত সন্তানের জন্যে আরও একটু সুন্দর, আরও একটু বাসযোগ্য, আরও একটু সাম্যবাদী এবং বৈষম্যহীন এক পৃথিবী তৈরি করবেন - এটাই দু'চোখে স্বপ্ন। তারপর এলো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ। তাতে ফ্যাসিবাদি শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করে মারা পড়লো ২ কোটি রাশান তরুণ যোদ্ধা। এতো ত্যাগ তিতিক্ষার ফসল যে রাষ্ট্রকাঠামো, তার যখন পতন হয় - সে পতন কেবল অর্থনৈতিক বা সামাজিক কাঠামোতে সংঘটিত হয় না, ধ্বস নামে সমাজের প্রতিস্তরের মানুষের মূল্যবোধও। মূল্যবোধের এই শিফট বা পরিবর্তনের চিত্রটি মশিউল আলম এঁকেছেন বড় নিপুণ কিন্তু নির্মেদ কাঠামোতে।
.
লম্বা রেশনের লাইনে সোভিয়েত যুগের মতোই সারিবদ্ধ সুশৃঙ্খল হয়ে তরুণদের সঙ্গে দাঁড়িয়ে থাকেন বৃদ্ধারা। এরমধ্যেই গাড়ি হাঁকিয়ে আসে উচ্চবিত্ত একদল তরুণ। তাদের সঙ্গে আগে থেকেই রেশনওয়ালাদের হাত মেলানো থাকে। সরকারি রেশন বণ্টনকারীদের ঘুষ দিয়ে তারা সবার আগে লাইন ভেঙ্গে, একজনের জন্যে বরাদ্দ রেশনের চেয়েও অনেক বেশি পরিমান রেশন নিয়ে চলে যায়। লাইনে দাঁড়ানো এক বৃদ্ধা হয়তো তখন চেঁচিয়ে উঠে জানায়, এই দিন দেখবার জন্যে তারা একদিন লেনিন - স্তালিনের নামে ভুতের বেগার খাটে নি, স্বামী - সন্তান হারায় নি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে। মাটিতে থুথু ফেলে ঘৃণা ভরে বলে এই বিকিয়ে যাওয়া মনমানসিকতার লোকেদের হাত থেকে রেশন তিনি মাগনাতেও নেবেন না। তাতে না খেয়ে মরা লাগলেও সই।
.
সোভিয়েত রাশার পতনের আরও একটি দৃশ্য উপন্যাসে খুব সুন্দর করে আঁকা হয়েছে। হাবিবদের ইউনিভার্সিটিতে ততদিনে লেকচার দেয়া শুরু হয় পুঁজিবাদী দেশগুলোর কোর্স - কারিকুলাম - দর্শনের আদলে। লাতিন অ্যামেরিকা থেকে আসা সোশ্যালিস্ট একটি ছেলে প্রতিবাদ করে বলে -
"এরকম ফাকৎ জানার জন্যে আমাদের সোভিয়েত ইউনিয়নে আসার দরকার ছিল না। আমাদের কন্তিনেন্তে এসব ফাকতের ছড়াছড়ি। আপনারা অ্যামেরিকার দালাল হয়ে গেছেন। আপনাদের কপালে দুঃখ আছে।"
.
বিষয় এই যে, ক্লাসে শিক্ষিকা এসে বলেছেন, লেনিন - স্তালিনের নেতৃত্বে সত্তর বছরের টোটালেটেরিয়ান সিস্টেমের গ্যাঁড়াকলে পড়ে তাদের সমাজে স্বতঃস্ফূর্ত স্বাভাবিক চিন্তার গতিপ্রকৃতিকে রুদ্ধ করে দিয়েছে। মিখাইল গরবাচেভ এই ফাঁকে নতুন বানী নিয়ে এসেছেন। তার পিরিস্ত্রৈকাতে লেখা আছে যে সমাজতন্ত্র আরও শক্তিশালী করবার জন্যে চাই গণতন্ত্র। দরকার চিন্তার স্বাধীনতা। আর এ জন্যেই দরকার গ্লাসনস্ত।
ব্যাস, হয়ে গেলো! লাতিন অ্যামেরিকার স্টুডেন্ট ক্ষেপে গিয়ে বলতে লাগলো যে তারা সমাজতন্ত্রের কবর খুঁড়ে ফেলেছেন ইতোমধ্যে তাদের দেশে। ১৯১৬ সাল থেকে তাদের ইতিহাস আবারো শুরু হতে যাচ্ছে। গরবাচেভ এবং তার অনুসারীরা গোটা দুনিয়ার মুক্তিকামী মানুষদের স্বপ্ন ধূলিসাৎ করে দিয়েছে। বিশ্বাসঘাতকতা করেছে এশিয়া আফ্রিকা আর লাতিন অ্যামেরিকার শত শত প্রলেতারিয়েতের সঙ্গে।
.
এভাবে দারুন উপভোগ্য কথা কাটাকাটির দৃশ্য অঙ্কন করেছেন মশিউল আলম, তার উপন্যাসে, সোভিয়েত রাশার পতন নিয়ে সাধারণ মানুষের আবেগের সঞ্চারণ বোঝাতে গিয়ে।
.
খুবই স্পর্শ করে যায় এমন একটা ঘটনা উপন্যাসের একদম শেষ প্রান্তে এসে আমরা দেখি। সোভিয়েত রাশিয়ার পতনের পর তাদের সমাজে নতুন আর একটি পুঁজিবাদী ফ্রডুলেন্স চালু হয়। সমাজের বয়স্ক, নিঃসঙ্গ একাকী মানুষদের দেখভাল করার দায়িত্ব নেয় তরুণ তরুণীরা। কিন্তু এটা সম্পূর্ণ কমিউনিটি সার্ভিস না। এই দেখভালের বিনিময়ে সেই বৃদ্ধ বা ব্রিদ্ধার মৃত্যুর পর তার ফ্ল্যাটের দখল পাবে তারা। এই নিয়ে খুব হৃদয় বিদারক একটি গল্প আছে উপন্যাসে, হাবিবকে জড়িয়ে।
.
লেখক মশিউল আলম নিজে সেই সময়টাতে মস্কোতে থাকার কারনে সোভিয়েত রাশিয়ার নৈতিক অধঃপতনের চিত্রগুলো আঁকতে পেরেছেন খুবই বিশ্বাসযোগ্যতার সাথে।
.
৪।
বাংলাদেশী কমিউনিটির বাসিন্দারা, যারা নানান বামপন্থী সংগঠনের রেফারেন্স বা স্কলারশিপ নিয়ে রাশিয়ায় পড়তে গেছেন, তাদের জীবনযাপনের ধরনেরও একটা সৎ ও আকর্ষণীয় বর্ণনা পাওয়া যায় এই উপন্যাসে। মুখে যত বড় বড় আদর্শের তুবড়িই তারা ফোটাক না কেন, তাদের অধিকাংশই মদ্যপ, জুয়াড়ি। নানারকম ফ্রডগিরির সঙ্গে যুক্ত। ইউনিভার্সিটির ছুটিতে সোজা লন্ডনে দৌড় মারে কিছু কাঁচা পয়সা কামিয়ে নেবার আকাঙ্খায়। ফিরে এসে ডলারের ইলিগ্যাল ব্যবসা করে। নানা রকম ফেরেববাজির সঙ্গে যুক্ত থাকে। চিন্তাভাবনায় তাদের অধিকাংশই অসৎ ও সংকীর্ণমনা।
.
৫।
রাশিয়ার জীবনযাপন এবং তৎকালীন পপ কালচারের ছবি মশিউল আলম তার এ উপন্যাসে এঁকেছেন দারুন নৈপুণ্যের সঙ্গে। দুর্দান্ত আবেদনময়ি রুশ সুন্দরীর অহরহ আগমন ও প্রস্থান ঘটতে থাকে তার এ উপন্যাসে। তারা প্রেমিকা হিসেবে, বা শয্যাসঙ্গিনী হিসেবে কতোটা উদারমনা, তারও পরিমিত ও পরিশীলিত বর্ণনা চোখে পড়ে। '৯০র দশকে রাশিয়ায় নারীদের মধ্যে বিখ্যাত গান "অ্যামেরিকান বয়, ইউয়েদু স্তাবোই, প্রাশাই মাস্কভা" বা অ্যামেরিকান বয়, তোমার সঙ্গে চলে যাবো, বিদায় মস্কো গানটি এক সতেরো - আঠারো বছর বয়েসি সোনালি চুলের রুশ নারীর কণ্ঠে, হাবিবের সঙ্গে আলাপচারিতায় রত থাকা অবস্থায় আমরা শুনতে পাই। এই গানের ঠিক বিপরীতে, লেখক প্রাসঙ্গিক করে তোলেন আলেগ গাজমানভের রচিত বিখ্যাত গান 'পুতানা' , বা ভ্রষ্টা, যে গানে পুঁজিবাদী সমাজ ব্যবস্থার খপ্পরে পড়ে রুশ নারীদের কারো কারো রূপোপজীবিনী হয়ে ওঠার গল্প বর্ণিত হয়। বা, অনেকটা একই দ্যোতনা বিশিষ্ট ১৯৯১ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত রুশ সিনেমা ইন্তেরদেবোচকা, বা আন্তর্জাতিক মেয়ে। পতিতার প্রতিশব্দ হিসেবে শব্দটি রুশ দেশে ব্যবহৃত হয়। তো, এই দ্বৈত মানসিক অবস্থা - পুঁজিবাদকে আলিঙ্গন করবো, না একে খপ্পরে পড়ার মতো হাল বলে বিবেচনা করবো, রুশ তরুণ - তরুণীদের এই দ্বৈততাকে সমসাময়িক রুশিয় পপ কালচার দ্বারা দারুনভাবে ব্যাখ্যা করেছেন মশিউল আলম।
.
৬।
বাকি থাকে উপন্যাসে সাবকনশাসের প্রয়োগ। উপন্যাসের ভেতর স্বপ্নে, বা স্বপ্ন ঘোরে হাবিব প্রায়ই দেখা করে হেগেলের সঙ্গে, কখনো বা গরবাচেভের সঙ্গে। উত্তরবঙ্গের আঞ্চলিক ভাষায় আলাপচারিতায় নিমগ্ন হয় আপন মনে এইসব রথি মহারথীদের সঙ্গেও, তাদের স্বপ্ন বা স্বপ্নভঙ্গের বেদনা নিয়ে আলাপ করে তাদেরকেও প্রাসঙ্গিক করে তোলেন তার উপন্যাসের প্রেক্ষাপটে।
.
৭।
সমালোচনার রইলো তবে কি?
.
আমার বিবেচনায় সমালোচনার এতোটুকুই রইলো যে - উপন্যাসটি সেমি অটোবায়োগ্রাফিক্যাল, এবং মশিউল আলম ভাই স্বয়ং উপন্যাসটিতে উপস্থিত। তার কথা বলার ধরন-ধারন, শব্দচয়ন বা বাক্যকাঠামোর সঙ্গে যারা পরিচিত, তারা স্পস্ততই বুঝবেন, হাবিবের জায়গায় আসলে কথা বলছেন লেখক নিজেই। এটা শুধু এই উপন্যাসের নয়, বরং অনেক দেশী বিদেশি ঔপন্যাসিকের সমস্যা যে - বায়োগ্রাফিক্যাল এলিমেন্ট ব্যবহার করে লিখতে গেলে তারা নিজেকে পৃথক রাখতে গিয়ে মুশকিলে পড়েন। তবে এ উপন্যাসের বিষয়বস্তু, এবং গতিপ্রকৃতি এতো দারুন যে হয়তো এ ছোট সমস্যাটি সহজেই আমরা এড়িয়ে যেতে পারি। বিশেষত যারা টেক্সটকে কোন হিস্টোরিক্যাল প্রিটেক্সটে না ফেলে উপন্যাসটি পড়বেন, তাদের কোন সমস্যাই হওয়ার কথা না।
.
উপন্যাসটি দারুন সাহসী, এবং এক্সপেরিমেন্টাল। লেখক সরাসরি রুশ ভাষার শব্দ ব্যবহার করেছেন এবং তা অদ্ভুত দ্যোতনা সৃষ্টি করেছে বক্তার বক্তব্যের সঙ্গে। মনে হয়েছে, ঐ রুশ চরিত্রটি কথাটি রুশ ভাষায় না বলে তার জায়গায় বাংলা ব্যবহার করা হলে কোনভাবেই তার অর্থ সম্পূর্ণ হত না।
.
উপন্যাসের নামটি কিঞ্চিত সমস্যার। আমার বৌ আমাকে বেশ কয়েকবার ঝাড়ি দিয়েছে, এরকম অশালীন নামের বই আমি কেন পাঠ করছি, আমার রুচি কই গিয়ে নেমেছে ইত্যাদি ইত্যাদি বলে। ওকে যতবারই বোঝানোর চেষ্টা করেছি, যে টাইপের বই তুমি এটাকে মনে করছ, এটা আসলে তা নয়, খুব একটা লাভ হয় নি। আমি সাধারণত বাসে বই বেশি পড়ি। এই বইটা বাসে বসে পড়তে গিয়েও অস্বস্তিতে পড়তে হয়েছে। মলাট ঢেকে রেখে খুব কায়দা কসরত করতে পড়তে হয়েছে।
.
কিন্তু পুরো উপন্যাসের সবচে গুরুত্বপূর্ণ মোড়, তনুশ্রীর সঙ্গে হাবিবের সেই দ্বিতীয় রাত। কি হয় সেই দ্বিতীয় রাতের পর? প্রথম রাতের পদস্থলনে হাবিব কর্তৃক তনুশ্রীর গর্ভসঞ্চার ঘটে। তনুশ্রী এর পরেও ক্রমাগত এড়িয়ে চলে হাবিবকে। কিন্তু কেন? তার ডিলেমাটা কোথায়? সে কি এই ডিলেমা আদৌ কখনো কাটিয়ে উঠতে পারে? তবুও সে দ্বিতীয় এক রাতে এসে হাজির হয় হাবিবের কক্ষে। এক সঙ্গে রাত কাটায়। কি হয় সেই রাতে? কি হয় তার পরদিন সকালে?
.
এপার - ওপার বাংলার শতবর্ষী পুরাতন সেই বিবাদকে নতুন করে আস্বাদন করার জন্যে হলেও এ উপন্যাস পাঠ করা যায়।
মশিউল আলম ভাইকে অনেক ধন্যবাদ এবং অভিনন্দন, গদগদ - মাখো মাখো এক প্রেমের আখ্যান রচনার বদলে খুবই বাস্তববাদী এবং কাট কাট একটি মানব - মানবীয় উপাখ্যান রচনা করবার জন্যে।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০৪ ঠা জুন, ২০২২ রাত ১০:০৮

শার্দূল ২২ বলেছেন: আমি বিশ্বাস করিনা হটকারি বইয়ের নাম দিয়ে লেখা কোন লেখক ভালো হতে পারে। হতে পারে সে ভালো কিছু লেখেছে কিন্তু লেখকের উদ্দেশ্য ভালো ছিলোনা, এমন শিরোনাম যা দিয়ে পাঠক টানা যায়। সো মাইনাস

২| ০৪ ঠা জুন, ২০২২ রাত ১০:২৪

পদাতিক চৌধুরি বলেছেন: আপনি যে ভাবে গোটা বিষয়টি সামনে এনেছেন তাতে উপন্যাসের প্রতি আকর্ষণ জন্মেছে। দারুণ রিভিউ++
শুভেচ্ছা আপনাকে।

০৪ ঠা জুন, ২০২২ রাত ১১:০৯

সাজিদ উল হক আবির বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ, পদাতিক ভাই! শুভকামনা। : )

৩| ০৫ ই জুন, ২০২২ সকাল ৯:০৫

সৈয়দ মশিউর রহমান বলেছেন: ঢুঁ মেরে গেলাম পরে পড়বো।

৪| ০৮ ই জুন, ২০২২ রাত ১২:৩৩

নুরুন নাহার লিলিয়ান বলেছেন: ভাল লাগল

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.