নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সাধু সাবধান ! ব্লগের মালিক বঙ্গালা সাহিত্যকে ধরিয়া বিশাল মাপের ঝাঁকি দিতে নিজেকে শারীরিক ও মানসিক ভাবে প্রস্তুত করিতেছেন। সেই মর্মে তিনি এখন কিটো ডায়েটিং, ডন-বৈঠক ও ভারোত্তলন প্রশিক্ষণে ব্যস্ত। প্রকাশিত গ্রন্থঃ১। শেষ বসন্তের গল্প । (২০১৪)২। মিসিং পারসন - প্যাত্রিক মোদিয়ানো, ২০১৪ সাহিত্যে নোবেল বিজয়ী (অনুবাদ, ২০১৫) ৩। আয়াজ আলীর ডানা (গল্পগ্রন্থ - ২০১৬ ৪। কোমা ও অন্যান্য গল্প(গল্প গ্রন্থ, ২০১৮) ৫। হেমন্তের মর্সিয়া (কবিতা, ২০১৮) ৬। কাঁচের দেয়াল (গল্পগ্রন্থ, ২০১৯) ৭।শহরনামা (উপন্যাস, মাওলা ব্রাদার্স, ২০২২), ৮। মুরাকামির শেহেরজাদ ও অন্যান্য গল্প (অনুবাদ, ২০২৩), ৯। নির্বাচিত দেবদূত(গল্পগ্রন্থ, ২০২৪), ১০। দেওয়ানেগির চল্লিশ কানুন/ফরটি রুলস অফ লাভ (অনুবাদ, ঐতিহ্য, ২০২৪)
১।
কোক স্টুডিও বাংলা কাজ শুরু করবার পর নানা অ্যাঙ্গেল থেকে তাদের ক্রিটিসিজম শুনেছি। সমালোচনার এক বড় অংশ ছিল কোক স্টুডিওর কর্পোরেট স্পন্সরশিপ নিয়ে। ক্ষোভ ছিল নামকরন নিয়েও। কোক স্টুডিও ‘বাংলা’ কেন, ‘বাংলাদেশ’ কেন নয়? এ সমস্ত পয়েন্টে বেশ ইন্টারেস্টিং আলোচনা - সমালোচনা এগিয়েছে। আমিও মোটামুটি আগ্রহ নিয়ে ফলো করেছি। কোক স্টুডিও নিয়ে আমার নিজেরও সমালোচনা ছিল। সে সমালোচনা অবশ্য কোক স্টুডিও বাংলার নামকরন, বা কর্পোরেট স্পন্সরশীপ নিয়ে নয়। কোক স্টুডিও বাংলা যে মূলত 'অর্ণব অ্যান্ড ফ্রেন্ডস', এবং এই সূত্রে হঠাৎই অর্ণবদা কে বাংলাদেশের 'অবিসংবাদী সেরা' মিউজিক ডিরেক্টর বানিয়ে দিচ্ছেন কেউ কেউ, এটা আমার কাছে অসততা মনে হয়েছে। কাজের সুযোগের জন্যে, বা তার সঙ্গে সদ্ভাব রেখে চলার জন্যে অনেকেই এই প্রচার চালাচ্ছেন, এটা ছিল আমার মত। এছাড়াও, ‘প্রার্থনা’ গানে অধিক পরিমানে রাজস্থানি ফোক ইন্সট্রুমেন্টের ব্যবহারে আমি বিরক্ত হয়েছিলাম। দেদারসে রাজস্থানি খমক, বা সারেঙ্গির বদলে বাংলা অঞ্চলে বাউলদের ব্যবহৃত যন্ত্র দিয়েই গানটা সাজানো যেতো, আমরা বাংলা ফোক ইন্সট্রুমেন্টের কেরদানি দেখতাম, এবং সবমিলিয়ে সেটা কোক স্টুডিও ‘বাংলা’ নামের সঙ্গে আরও প্রাসঙ্গিক হত। এতো বড় একটা ফ্র্যাঞ্চাইজ কর্পোরেট স্পন্সরশিপ ছাড়া আয়োজন করা সম্ভব না। আর কোক স্টুডিও ‘বাংলাদেশ’ না হয়ে ‘বাংলা’ হলে পশ্চিম বঙ্গের শিল্পীদেরও দাওয়াত করা যাবে। অডিয়েন্স দুই বাংলায় ছড়িয়ে পড়বে। সঙ্গে ছড়িয়ে পড়বে ব্যবসাও। কর্পোরেট মাইন্ডসেট এভাবেই কাজ করার কথা। “ফালতু” ন্যাশনাল সেন্টিমেন্ট বেচে তো পয়সা আসে না।
.
যা হোক, আমি অপেক্ষায় ছিলাম আর এক গোষ্ঠীর ক্রিটিসিজমের। বাংলাদেশের সংস্কৃতির জগতে যারা পুরোহিতের ভূমিকা পালন করছেন আজ দীর্ঘ দীর্ঘ দিন যাবত। উঁচু জাতের ব্রাহ্মণ্যবাদীদের মতো সঙ্গীতের সবরকমের এক্সপিরিমেন্টাল প্রয়াসেই যারা 'বিকৃতি' র গন্ধ খুঁজে পান, ব্যতিক্রমী সমস্ত প্রচেষ্টাকে যারা হাতের এক ইশারায় বাতিল, খারিজ করে দেন। সালাফি এক্সট্রিমিস্টদের মতো যাদের বিশুদ্ধতাবাদ, সলফে সালেহিনদের অনুসরন, অনুকরন ‘আদি – অকৃত্রিম - বিশুদ্ধ’ সুরে যাদের নজরুল – রবীন্দ্র – ফোক গানের চর্চা। সংস্কৃতিকে যারা মোটামুটি জগদ্দল বোঝা পাথরের মতো অপরিবর্তনীয় বিবেচনা করেন। শ্যাওলা পড়ে গেলেও সেই পাথরের পূজাঅর্চনা তারা করেই যাবেন।
.
কোক স্টুডিও বাংলার তৃতীয় রিলিজ, বুলবুলির সূত্র ধরে ছায়ানটের শিক্ষক, আমার এক সুহৃদের সেই গতানুগতিক মতামত জানা গেলো।
.
২।
ছায়ানটের শিক্ষক সে সুহৃদের মতে, এই জেনারেশন এতোটাই নজরুল - রবীন্দ্র সঙ্গীত বিমুখ যে, বাচ্চাদের আগে যেভাবে রসগোল্লার ভেতর ওষুধ পুরে ঔষধ খাওয়ানো হত, সেভাবেই এখন জ্যাজ - রেগে - ফ্ল্যামেঙ্কো নোটেশনের ফাঁকেতালে নজরুল 'গেলানো' লাগে। শুধু তাই নয়, এই জেনারেশন এতোটাই অশিক্ষিত, এবং সাংস্কৃতিকভাবে এতোটাই পঙ্গু (তার মতে) যে, বুলবুলি গানটার কোক স্টুডিও ভার্শনের শেষে যে 'দোল দোল ...' অন্য কি একটা গান জুড়ে দেয়া হয়েছে , সেটা যে নজরুলের গানের অংশ নয়, তারা না কি তাও জানে না। ফলে অশিক্ষিত জেনারেশন ঐ অংশটুকুকেও নজরুল গীতি হিসেবেই চিনবে, জানবে, গাইবে ভবিষ্যতে।
.
শুধু তাই না, এই আধুনিক যন্ত্রের সঙ্গে, ভিন্নধাঁচের স্কেলে গাওয়া গানটাকে, তার মতে 'বিকৃত' করে ফেলা হয়েছে। একজন 'প্রকৃত শিল্পী' নাকি কখনো অমনটা করতে পারেন না। সক্ষমতা থাকলে তারা নিজেরা নতুন গান তৈরি করুক, (অথবা সাংগীতিক বিশুদ্ধতাবাদী নাজীরা যতই গানের স্বাদকে গলা টিপে হত্যা করুক) নজরুলের গানকে 'বিকৃত' করা কেন?
.
শুধু তাই না, (ছায়ানট স্বীকৃত) আদি - অকৃত্রিম সুরে না গাইলে পেট খারাপও হবে শিল্পীর।
.
একটা পুরো জেনারেশনের মিউজিক্যাল টেস্ট, ক্যালিবার নিয়ে ভয়াবহরকমের সব অফেন্সিভ , রক্ষণশীল, জঙ্গি মনোভাবাপন্ন কথাবার্তা।
.
৩।
প্রথমত, সংস্কৃতির উপাদানকে এরকমভাবে ক্যাথলিক চার্চের প্রিস্টদের মতো কুক্ষিগত করে রাখার কি যৌক্তিকতা?
সংস্কৃতি প্রবাহিত হবার জিনিস। সংস্কৃতির উপাদানসমূহ প্রবাহিত হবে, বাঁক বদলাবে, সুধা ফুরালে নিঃশেষ হয়ে যাবে। কেউ তাকে জোর করে অক্সিজেন দিয়ে বাঁচিয়ে রাখতে পারবে না। একই কথা খাটে নজরুল - রবীন্দ্র - পঞ্চকবির গান সহ যেকোনো গানের ব্যাপারে। যতদিন ভালো লাগে, মানুষ কেবল হারমোনিয়াম আর ডুগিতবলায় শুনবে। তারপর, মনের স্বতঃস্ফূর্ত তাড়নায় সে অন্যান্য ইন্সট্রুমেন্টের সঙ্গে গাইবে সে গান। গাইবে প্রাচ্য - পাশ্চাত্যের সাংগীতিক স্কেলের মেলবন্ধনে। ইচ্ছে হলে শুধু কথাটুকু এক রেখে সুর বদলে গাইবে। তখন হয়তো সেই প্রোডাক্টটাকে 'অমুকগীতি, তমুকগীতি' দাবী করা হবে না। বলা হবে - স্রেফ লিরিক ব্যবহার করা হয়েছে রবীন্দ্রনাথের, বা নজরুলের। তাদের কবিতা সুর দিয়ে গাওয়া যায় না?
.
দ্বিতীয়ত, এই ছায়ানটপন্থী সাংস্কৃতিক উগ্রপন্থীরা যে দরদ দেখান নজরুল - রবীন্দ্রসঙ্গীতের প্রতি, একই ভক্তি, ভাব, ভালোবাসা সবাইকেই কেন দেখাতে হবে? বাংলা অঞ্চলে রবীন্দ্র - নজরুলের আগে সঙ্গীত চর্চা হয় নি? গান গাওয়া হত না বাংলায়, তার আগে? বিশুদ্ধতাবাদীরা কি সেগুলোর চর্চা করেন, একই রকম 'ধর্মীয়' জিল নিয়ে? হারিয়ে গেছে না ওসব গানের এক বড় অংশ? ২০ - ৫০ - ১০০ বছর পর, প্রজন্মান্তরে রবীন্দ্রসঙ্গীত বা নজরুলগীতি নিয়ে এরকম 'ধর্মীয়' ভক্তি থাকবে না। তারা অতীতের সুর ও কথার ওপর ইম্প্রোভাইজ করবে। করবেই। ক্যাথলিসিজম ভেঙ্গে প্রটেস্টান্টিজম বেরিয়েছে, জাতপাতভেদ ভেঙ্গে বেরিয়েছে শ্রীচৈতন্যদেবের ভাবান্দোলন। আর সাংস্কৃতিক ব্রাহ্মণ্যবাদ? ছোঃ
.
তৃতীয়ত, ছায়ানটপন্থীদের সাংগীতিক বিশুদ্ধতাবাদের চর্চার পক্ষে বিপক্ষে আমার কিছু বলার নেই। আমি ঘণ্টার পর ঘণ্টা সাবকন্টিনেন্টাল, বা পাশ্চাত্যের ক্লাসিক মিউজিক শুনতে পারি, যেমন শুনতে পারি আধুনিক সঙ্গীত। কিন্তু ছায়ানটের শিল্পী স্টেজে বসলেই আমার বিরাট বিরাট হাই ওঠে। আই ক্যান নট হেল্প। এতোটা বোরিং, এতোটাই প্রাণহীন তাদের অধিকাংশ নজরুল - রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পীদের পরিবেশনা। শ্রোতা হিসেবে, সঙ্গীত সংশ্লিষ্টতার সূত্র ধরেও অনেক কিছু আমার বলার আছে বা থাকে, কিন্তু আমি কখনো তাদের জাজ করি না। অন্তত আগে কখনো করি নি, পাব্লিক্যালি। তাদের চর্চার প্রতি, ভক্তির প্রতি আমার শ্রদ্ধা আছে। কিন্তু সে শ্রদ্ধা ততক্ষণই, যতক্ষণ তারা আমাকে, আমার জেনারেশনের মিউজিক টেস্টকে পাল্টা শ্রদ্ধা দেখাবেন। কিন্তু তারা অন্যের রুচিকে, অন্যের মিউজিক্যাল টেস্ট নিয়ে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করার এই কাজটা হরহামেশা করেন। খুব বাজে ভাবে করেন। তাদের ব্রাম্মন্যবাদি নাক ক্রমাগত শিটকে শিটকে তারা সংগীত সংশ্লিষ্ট বাকি সবার সমস্ত প্রচেষ্টাকে বিপথগামী প্রমাণের জন্যে উঠে পড়ে লাগেন সর্বদা। তাদের এই সমস্যা তাদের অনুধাবন করতে হবে দ্রুত।তাদের সাংস্কৃতিক "বিশুদ্ধতাবাদি" মনোভাব অলরেডি আধুনিক প্রজন্মের মাঝে তাদের সাংস্কৃতিক জঙ্গি এক্সট্রিমিস্ট রুপে চিহ্নিত করে ফেলেছে।
.
৪।
শেষ করি ডঃ আহমদ শরীফের একটি বক্তব্য দিয়ে।
.
ডঃ আহমদ শরীফ, তার "নজরুল সমীক্ষাঃ অন্য নিরিখে" প্রবন্ধে বলেন -
.
“মনে রাখা প্রয়োজন, দুনিয়ায় অক্ষয় অবিনাশী কিছুই নেই। রবীন্দ্রনাথের গান যেমন কাব্য হিসেবেও সুন্দর, ভাবগর্ভ অর্থাৎ তাতে ভাব, ভাষা, ছন্দ যেমন আছে, তেমনি আছে সূক্ষ্ম গভীর বানীও। নজরুলেরও অনেক গান তেমন সব গুণে ঋদ্ধ। কিন্তু আধুনিক গানের তোড়ে রবীন্দ্রসঙ্গীতই পিছিয়ে পড়ছে, নজরুলগীতিই বা কি টিকবে! কালান্তরে পুরনো সুর টেকে না বলেই গান নশ্বর। জুগে জুগে যুগোপযোগী সুরই যুগের চাহিদা মেটায় এবং কালান্তরে তা বিলীন হয় কালগর্ভে। মানুষ চিরকালই সুখে দুঃখে, কাজে অকাজে, ভয়ে ভক্তিতে, দ্বন্দ্বে সংগ্রামে গান গেয়েছে বটে, কিন্তু তা কখনো অপরিবর্তিত থাকে নি। বৈদিক বন্দি গন্ধর্বের গায়ত্রী বন্দনা থেকে আজকের আধুনিক গান অবধি সঙ্গীতের এদেশী বিবর্তন ধারাই আমাদের এ ধারণার সমর্থক। কালে কালে মানুষের মন বদলায়, বদলায় রুচি। তাছাড়া ভাষা আর সুরও বদলায়। কাজেই মনের কথা এবং ভাষার সঙ্গে সুরের পরিবর্তন অবশ্যম্ভাবী। তাই তো আমাদের কীর্তন, গাজন, গম্ভীরা, রামপ্রসাদী যেমন সাধন ভজন সংপৃক্ত হয়েও লুপ্তপ্রায়, তেমনি মানবিক সুখ দুঃখের গানও অতিক্রান্তকালে চিরদিন হয়েছে বিলুপ্ত। বাউল গান, ব্রহ্মসঙ্গীত, দ্বিজেন্দ্র – রজনী – অতুল – মুকুন্দের গানই বা আজ আর কে গায়! কাজেই মর্মান্তিক হলেও এ সত্য অস্বীকার করা চলবে না যে রবীন্দ্র – নজরুল সঙ্গীতও আগামী পঞ্চাশ বছর টিকবে না।“
.
অধ্যাপক - সমালোচক ডঃ আহমদ শরীফকে আমার সবসময় আপন মনে হয়, কারন তিনি পলিটিকাল কারেক্টনেসের ধার ধারেন না কখনো। মনে, বা বিবেচনায় যা আছে, একদম রাখঢাক ছাড়া সেটা বলে দেন। খেয়াল করে দেখুন, রবীন্দ্র - নজরুলের গানের মতো সাংস্কৃতিক উপাদানগুলোও যে দিনের শেষে টিকবে না, এটা তিনি অবলীলায় বললেন। টিকবে না বলতে কি তিনি বোঝাচ্ছেন, মানুষ আর গাইবে না - এটা? আমার মনে হয় না। তিনি বোঝাতে চেয়েছেন, যে ফর্মে মানুষ এগুলো প্র্যাকটিস করতো, গাইত, সেভাবে গেয়ে, সেভাবে চর্চা করে মানুষ আর রিলেট করতে পারবে না একসময় এদের সঙ্গে। যদি বিলুপ্ত হয়, সাংস্কৃতিক বিশুদ্ধতাবাদীদের উন্নাসিকতা বিলুপ্ত হবে। সংস্কৃতি এগিয়ে চলবে নিজের গতিতে।
.
বুলবুলি গানটির রিমেক করে যে 'সর্বনাশ' কোক স্টুডিও করেছে, তার ক্ষতিপূরণ হিসেবে ছায়ানটপন্থীরা কোক স্টুডিওর বাণিজ্যিক স্পন্সর প্রধান গাউসুল আজম শাওন বরাবর একটা মেইল করতে পারেন। দাবী করতে পারেন যে ছায়ানটের শিক্ষক - শিক্ষার্থীরা মিলে কোক স্টুডিও বাংলার বাকি গানগুলি কোন এক বটগাছের নীচে দাঁড়িয়ে শুধু হারমোনিয়াম আর ডুগিতবলা দিয়ে গাইবেন। সে গান রেকর্ড করে কোক স্টুডিওকে সেটা তাদের ইউটিউব চ্যানেলে প্রচার করতে হবে।
০২ রা মে, ২০২২ সকাল ১০:২১
সাজিদ উল হক আবির বলেছেন: আপনাকেও ধন্যবাদ। বিষয় হচ্ছে, আমি নিজেও, এই তো সেদিনও ছায়ানটের ছাত্র ছিলাম। উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত শিখতাম। ব্যস্ততা বাড়ায় ছেড়ে দিয়েছি। শেষ করতে পারি নি। কিন্তু এ সুবাদে ভেতর থেকে অনেক কিছু দেখার সুযোগ হয়েছিল। আপনি যে সমস্ত প্রসঙ্গের অবতারনা করলেন, তা আমিও দেখেছি। কিন্তু, এ লেখায় সমালোচনার জায়গাটুকু কেবল গানের ব্যাপারে তাদের পৌরোহিত্যকারী মনোভাব বিষয়েই স্থির রাখতে চাইছি।
২| ০১ লা মে, ২০২২ রাত ১০:৫২
বিজন রয় বলেছেন: ভাল লিখেছেন আবীর।
++++
অবশ্য ৯৫% মুসলিমদের দেশে রবীন্দ্র-নজরুল চর্চা কি দরকার?
০২ রা মে, ২০২২ সকাল ১০:২৪
সাজিদ উল হক আবির বলেছেন: ধন্যবাদ, বিজন রয়।
যারা এই ভূখণ্ডকে কখনো নিজের দেশ মনে করে নি, '৪৭ এ বাংলা ভেঙ্গেছে যারা, যাদের শরীর কোনক্রমে এই দেশের সীমার মধ্যে রইলেও মন পড়ে থাকে পাশের কোনো দেশে, তাদের পক্ষে এটা বোঝা সম্ভব না যে "৯৫% মুসলিমের" দেশে রবীন্দ্র - নজরুল চর্চার কি প্রয়োজন।
৩| ০২ রা মে, ২০২২ সকাল ১০:৩৩
বিজন রয় বলেছেন: আবীর আপনি আমার কথা ধরতে পারেননি না চাননি তা বুঝতে পারলাম না। আপনি কি মনে করেন এদেশে রবীন্দ্র-নজরুল চর্চার প্রয়োজন আছে?
যতদূর জানি, আপনি সম্ভবত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র এবং একজন গুনী পিতার সন্তান। আপনি কি শুধু আমার নাম বিজন রয় দেখে উত্তর করেলেন? তাহলে শুধু বলতে পারি আপনার যদি এই মানসিকতা হয় তো এদেশের আরো অনেক দুঃখ আছে।
ব্লগে ২০১২/১৩/১৪ সালের আবীর আর এখনকার অবীরের অনেক পার্থক্য হয়েছে কিনা জানিনা।
০২ রা মে, ২০২২ সকাল ১০:৪৯
সাজিদ উল হক আবির বলেছেন: প্রথম মন্তব্যে আপনার শব্দ চয়ন, আর দ্বিতীয় মন্তব্যে আপনার শব্দচয়ন খেয়াল করুন। যদি প্রশ্নটা এরকম হত যে, এদেশে রবীন্দ্র - নজরুল চর্চার কি প্রয়োজন, তাহলে উত্তরটা সে অনুপাতে হত। কিন্তু যে বা যারা এ দেশটাকে স্রেফ "৯৫ % মুসলিমের" দেশ মনে করে এবং প্রচার করে, তাদের জন্যে আমার উপরের উত্তরই শ্রেয়।
আমাকে মাপার চেষ্টা করার কি প্রয়োজন? আয়না ধরেন নিজের চেহারার উপর। নিজেকে নিয়ে চিন্তাভাবনা করেন। এই দেশকে কিভাবে আর একটু আপন মনে করা যায়, সেটা নিয়ে ভাবেন।
৪| ০২ রা মে, ২০২২ সকাল ১০:৫৯
নিমো বলেছেন: @আলাপচারী প্রহর,অন্যকে গালাগালি করে নিজের পরিচয়টা নাই বা দিলেন। হাসান ইমাম সকল ভুল-ত্রুটির উর্ধ্বে নয়, তাই বলে তাকে যে গালিটি দিয়েছেন তাও তার প্রাপ্য নয় বলেই মনে করি।
৫| ০২ রা মে, ২০২২ রাত ১০:০৭
আলাপচারী প্রহর বলেছেন: বুঝতেছি না। স্কুলে আইছি না মসজিদে আইছি না মুক্ত ব্লগে আইছি। মনের সুখে খেদ ঝাড়তে আইছিলাম। আরেক ’ েদনায় আদব শিখাইতে আইসা পড়ছে।
০৩ রা মে, ২০২২ দুপুর ১২:২২
সাজিদ উল হক আবির বলেছেন: আপনার সেন্টিমেন্টের সঙ্গে আমি রিলেট করতে পারি। ব্লগ আদব লেহাজ শেখানোর জায়গা না, এটার সঙ্গেও আমি একমত। কিন্তু ভাই, গালিগালাজ ছাড়া নিজের ক্ষোভ ঝাড়তে পারাটাও আমার মনে হয় একটা ভালো গুণ। বিজন রয়ের প্রথম মন্তব্যের সূত্রে আমার উত্তরটা খেয়াল করেন কাইন্ডলি।
৬| ০২ রা মে, ২০২২ রাত ১০:৩২
নিমো বলেছেন: @আলাপচারী প্রহর,এটা না স্কুল, না মসজিদ আর মুক্ত ব্লগ কিনা সেটা ব্লগ কর্তৃপক্ষই জানে। আর আদবটা আপনার পরিবারেরই শেখানোর কথা, তারা বোধহয় সেটা ভুলে গেছে। ভালো থাকুন।
@আবির, ভিন্নমত আর গালাগলি বোধহয় এক নয়। আপনার ব্লগ আপনি কোন মন্তব্য প্রশয় দেবেন একান্তই আপনার ব্যাপার। আমার এই মন্তব্যের প্রতিমন্তব্য দেয়ার দরকার নেই। বেশি বিরক্তি এলে মুছে দিলেই চলবে।
৭| ০৩ রা মে, ২০২২ রাত ১২:২৫
জ্যাকেল বলেছেন: নদী, সংষ্কৃতি ও ভাষা এই তিন ব্যাপার(এনটিটি) সময়ের সাথে ডিল করে এগিয়ে যায়। কেহই আটকিয়ে রাখতে পারে না। যারা এখানে অর্থোডক্স পুরোহিতগিরি করছেন উহারা কিন্তু জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন। কারণ আজকালকার পোলাপান(ক্লাস অনুসারে) হলিউড, বলিউড, ঢালিউড কিংবা একেবারে নিচের দিকের গামছা পলাশ, শরীফ উদ্দিনদের গান শুনে। তারা ঐসব শাস্ত্রীয় সংগীত পুছেও না। তাহলে এইগ্লু কিভাবে আমাদের দেশজ সংষ্কৃতি/গানের প্রতিনিধিত্ব করে?
অতএব এইসব পিছু ডাকা পুরোহিতদের কথায় কি-ইবা আসে আর যায়?
০৩ রা মে, ২০২২ দুপুর ১২:১৯
সাজিদ উল হক আবির বলেছেন: শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের সবচে ভালো শিক্ষকরা ছায়ানটে শেখান, ঐ সাবজেক্টটা নিয়ে আমার সমালোচনা নেই। আমার সমালোচনার পয়েন্টটা রবীন্দ্র - নজরুল - পল্লিগীতির সুর নিয়ে তাদের রেডিক্যাল কনজারভেটিভ মনোভাবের। খেয়াল করে দেখেন, আমজনতার শুনবার রুচিকেও কিন্তু আমরা মান, বা ষ্ট্যাণ্ডার্ড ধরতে পারি না। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে যারা নতুন আঙ্গিকে রবীন্দ্র - নজরুল - ফোক - আধুনিক গানের সঙ্গিতায়োজন করার চেষ্টা করছে, ওনারাই নতুন ষ্ট্যাণ্ডার্ড সেট করবেন। ছায়ানটের মনোভাব তাদের প্রতি শত্রু ভাবাপন্ন। এটা সমস্যা।
পিছু ডাকা পুরোহিতদের কথায় যায় আসে, কারন তারা দেশের সংস্কৃতির অঙ্গনে সবচে বড় পাণ্ডা।
৮| ০৩ রা মে, ২০২২ ভোর ৪:০৩
রেজাউল৯৬ বলেছেন: বুলবুলি গানটির রিমেক করে যে 'সর্বনাশ' কোক স্টুডিও করেছে, তার ক্ষতিপূরণ হিসেবে ছায়ানটপন্থীরা কোক স্টুডিওর বাণিজ্যিক স্পন্সর প্রধান গাউসুল আজম শাওন বরাবর একটা মেইল করতে পারেন। দাবী করতে পারেন যে ছায়ানটের শিক্ষক - শিক্ষার্থীরা মিলে কোক স্টুডিও বাংলার বাকি গানগুলি কোন এক বটগাছের নীচে দাঁড়িয়ে শুধু হারমোনিয়াম আর ডুগিতবলা দিয়ে গাইবেন। সে গান রেকর্ড করে কোক স্টুডিওকে সেটা তাদের ইউটিউব চ্যানেলে প্রচার করতে হবে।
একাডেমিক কৌতুহল থেকে জানতে চাচ্ছিলাম- ইহাকে কি স্যাটায়ার না কি সারকাজম বলে?
কোক স্টুডিওর মূল লক্ষ্য মনে হয় বানিজ্য। শুধু দেশিয় অডিয়েন্স এদের টার্গেট না। অন্য দেশের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে বাংলা গান থেকে এরা ব্যাবসা করবে । বাংলা সংস্ক্বতি প্রমোট করা এদের মূল লক্ষ্য হয়তো না। তবে আমার ভুল হবার সম্ভাবনা বেশি, এই বিষয়ে জ্ঞান খুব কম।
০৩ রা মে, ২০২২ দুপুর ১২:২৭
সাজিদ উল হক আবির বলেছেন: শেষ প্যারাটা সারকাজম। পুরো লেখাটা রম্য হলে তাকে স্যাটায়ার বলা যেতো। যেহেতু পুরো লেখাটি সিরিয়াস টোনে, কাজেই এটাকে স্যাটায়ার বলা যাবে না।
আর শেষে যেটা বললেন, তার সঙ্গে আমিও একমত। কোক স্টুডিও বাংলার মূল লক্ষ্য বাণিজ্য। এখানে আদর্শ, কিংবা নীতি নৈতিকতা খুঁজে লাভ নেই।
৯| ০৩ রা মে, ২০২২ ভোর ৪:১২
রেজাউল৯৬ বলেছেন: বিজন রয়ের বিষয়ে আপনার পর্যবেক্ষণ যথার্থ। উনি অতীতে অনেক বার বিভিন্ন যায়গায় কৌশলে সম্প্রদায়িক বক্তব্য দিয়েছেন
দুটার কথা এখনো মনে করতে পারছি-
১) মডারেটরের কপি-পেস্ট-লেখা চুরির বিষয়ে সাম্প্রতিক পোষ্টে ওনার মন্তব্য দেখুন।
২) ব্লগার শায়মা ইদে রান্না-বান্না নিয়ে পোষ্ট দেন। গত ইদের (২০২১ - মে - রোজার ইদ) পো্ষ্টে বিজন রায়ের মন্তব্য দেখুন
০৩ রা মে, ২০২২ দুপুর ১২:৩০
সাজিদ উল হক আবির বলেছেন: বিজন রয় এই পোস্টের মন্তব্যের ঘরে এসে ভিক্টিম কার্ড প্লে করার চেষ্টা করেছেন। এই কাজ ওনার মতো সাম্প্রদায়িক মন মানসিকতার লোকজন হরহামেশা করেন। প্রথমে নিজে খোঁচা দিয়ে উত্যক্ত করেন, পরে সেই সূত্রে পাল্টা খোঁচা দিলে বড়ই আহত হন।
©somewhere in net ltd.
১| ০১ লা মে, ২০২২ রাত ৮:৫৩
আলাপচারী প্রহর বলেছেন: দারুণ লিখেছেন।
অভিনন্দন।
ছায়ানটের ব্রাম্ণন্যবাদ নিয়ে আমারও কিছু বলার ছিল।
একবার (সম্ভবতঃ) শিল্পকলায় গেলাম রবীন্দ্রসঙ্গিতের এক অনুষ্ঠান দেখতে। উদ্ভোধন দেখে আমি হতভম্ভ। ঠিক কোলকাতার পূজোর মতো মন্চের অতিথিদের উত্তরীয় পরায়ে দিলেন। মঙ্গল প্রদীপ জ্বালালেন। শুধু নমস্কারটা বাদ গেলো সংকোচে।
ওদের উত্তরীয় / প্রদীপের মাধ্যমে উদ্ভোধনের বিকল্প বের করার মেধা যাদের নাই বা ইচ্ছা নাই তাদের দ্বারা সঙ্গীতের উৎকর্ষ আপনি কিভাবে আশা করবেন । তাই ছায়ানটের অনুষ্ঠানে প্রানোচ্ছ্বল তরুণ প্রজন্ম যায় না। যায় কোলকাতার উচ্ছিষ্ট খাওয়া আধা বাংলাদেশীরা।
হাসান ইমাম নামে এক হারামজাদা এখন তড়পায়ে বেড়াইতেছে। বিএনপি আমলে ভেগে কোলকাতায় আশ্রয় নিয়েছিলো বিএনপি-র অত্যাচারের ভয়ে। যেন সে একাই আওয়ামী লীগ করতো। বড় হ্যাডম। কোলকাতায় যতদিন ছিল হিন্দুয়ানী কেতায় চলা ফেরা করেছে কি পোশাকে কি আদবে।