নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সাধু সাবধান ! ব্লগের মালিক বঙ্গালা সাহিত্যকে ধরিয়া বিশাল মাপের ঝাঁকি দিতে নিজেকে শারীরিক ও মানসিক ভাবে প্রস্তুত করিতেছেন। সেই মর্মে তিনি এখন কিটো ডায়েটিং, ডন-বৈঠক ও ভারোত্তলন প্রশিক্ষণে ব্যস্ত। প্রকাশিত গ্রন্থঃ১। শেষ বসন্তের গল্প । (২০১৪)২। মিসিং পারসন - প্যাত্রিক মোদিয়ানো, ২০১৪ সাহিত্যে নোবেল বিজয়ী (অনুবাদ, ২০১৫) ৩। আয়াজ আলীর ডানা (গল্পগ্রন্থ - ২০১৬ ৪। কোমা ও অন্যান্য গল্প(গল্প গ্রন্থ, ২০১৮) ৫। হেমন্তের মর্সিয়া (কবিতা, ২০১৮) ৬। কাঁচের দেয়াল (গল্পগ্রন্থ, ২০১৯) ৭।শহরনামা (উপন্যাস, মাওলা ব্রাদার্স, ২০২২), ৮। মুরাকামির শেহেরজাদ ও অন্যান্য গল্প (অনুবাদ, ২০২৩), ৯। নির্বাচিত দেবদূত(গল্পগ্রন্থ, ২০২৪), ১০। দেওয়ানেগির চল্লিশ কানুন/ফরটি রুলস অফ লাভ (অনুবাদ, ঐতিহ্য, ২০২৪)
সিপাহিবাগ থেকে রিকশায় উঠলাম। কাজ শেষে বাসায় ফিরবো। ঘড়িতে তখন দুপুর সোয়া দুইটা। রমজানের বিকেলবেলার ধুন্ধুমার জ্যাম আর কোলাহল তখনও শুরু হয় নাই। সিপাহিবাগ টু গ্রিন মডেল টাউনের যে রেগুলার রিকশাভাড়া, রিকশাওয়ালা তার চে অন্তত ২০ টাকা কম চেয়েছে। আমি উঠার সময় স্রেফ শিওর হওয়ার চেষ্টা করলাম, সে জায়গাটা আসলে চেনে কি না। না কি জায়গা না চিনেই ভাড়া চাইলো। কথাবার্তায় শিওর হলাম, না, সে জায়গাটা চেনে।
.
চালকের রিকশা চালানো দেখে বুঝলাম, এই বিজনেসে সে নতুন। কয়েকবার এক্সিডেন্ট হতে হতে বাঁচলো। যা হোক, বাসার সামনে রিকশা থেকে নেমে তাকে ভেঙ্গে ভেঙ্গে বুঝায়ে বললাম, সিপাহিবাগ গ্রিন মডেল টাউন পর্যন্ত, কোন স্টপেজ পর্যন্ত রিকশাভাড়া, সাধারণত কত। তারপর তারে জেনুইন ভাড়াটাই দিলাম। বললাম, আপনি খেটে খান, আপনারে ঠকায়ে আমার কি লাভ? লোকটা নোটগুলো গুছায়ে পকেটে ঢুকাতে ঢুকাতে বলল, স্যার, আপনারা দেন বলেই তো আমরা খাইয়া পইড়া বাইচা আছি।
.
লোকটার এই সহজ সরল বক্তব্য আমাকে খুব জোরে হিট করলো। কথাটা, আমার বিবেচনায় আসলে ঠিক না এই কারনে যে, দেয়া থোয়া সংক্রান্ত কোন যোগ্যতা আমি মায়ের পেট থেকে নিয়ে আসি নাই। আমি যে আজকে আমার জায়গায় আছি, মন চাইলেই কাউকে বিশ - পঞ্চাশ টাকা দিতে পারি, এটার পেছনে আমার তেমন কোন যোগ্যতা নাই। ভালো পরিবারে জন্ম নিয়েছি, যে সমস্ত সুযোগ সুবিধা জন্ম থেকে পেয়েছি, তার সদ্ব্যবহার করে করে আজকের আমি। অপরদিকে এই যে লোকটা, যে রোদের মাঝে রিকশা টেনে সংসার চালাচ্ছে, তার এ জীবনের পিছেই বা কোন কর্মফল থাকতে পারে? সবই ভাগ্যের খেল, তেলেসমাতি। আমিও ঐ রিকশা শ্রমিকের জায়গায় থাকতেই পারতাম, যেমন সে থাকতে পারতো আমার জায়গায়।
.
রিকশা থেকে নেমে দুই পা এগুতেই, আমাদের মহল্লার এক ডিপার্টমেন্টাল স্টোরের সামনে দেখলাম, চারজন দিনমজুর আড়াইশো টাকার ভাগ বাটোয়ারা নিয়ে জোর গলায় ঝগড়া করছে (অথবা, হয়তো তারা স্বাভাবিকভাবেই কথা বলছে, ওদের কথার স্টাইলের সঙ্গে আমার পরিচয় না থাকার কারনে সাধারণ আলাপকেও ঝগড়া মনে হচ্ছে)। এটা দেখে আমার আবার কৃতজ্ঞতায় মাথা নুয়ে আসলো। জীবনের ঠিক এই পর্যায়ে এসে ২৫০ টাকা, আমার কাছে, আলহামদুলিল্লাহ, বড় কোন অঙ্ক না। আর এই চারজন লোকের হয়তো একবেলা খাবার নির্ভর করে, এই টাকার সুষম বণ্টনের উপর। এই কষ্টের জীবন যে আমার দেখতে হচ্ছে না - এর পেছনেও তো খোদার রহম ছাড়া আমার কোন বিশেষ যোগ্যতা নাই।
.
আমার মনে হয়, এই রিয়ালাইজেশনটা আমাদের জীবনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ যে, জীবনে অনেক কিছুই আমরা পেয়ে যাই ভাগ্যের ফেরে, অথবা, ঠিক সময়ে ঠিক জায়গায় উপস্থিত থাকবার কারনে। এই চিন্তার প্যাটার্ন ভেতরে আমিত্বের হামবড়ামো কমায়, অপ্রাপ্তির যন্ত্রণাও কমে আসে। হাম্বলনেস বাড়ে। জীবন স্বস্তি আসে।
©somewhere in net ltd.