নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সাধু সাবধান ! ব্লগের মালিক বঙ্গালা সাহিত্যকে ধরিয়া বিশাল মাপের ঝাঁকি দিতে নিজেকে শারীরিক ও মানসিক ভাবে প্রস্তুত করিতেছেন। সেই মর্মে তিনি এখন কিটো ডায়েটিং, ডন-বৈঠক ও ভারোত্তলন প্রশিক্ষণে ব্যস্ত। প্রকাশিত গ্রন্থঃ১। শেষ বসন্তের গল্প । (২০১৪)২। মিসিং পারসন - প্যাত্রিক মোদিয়ানো, ২০১৪ সাহিত্যে নোবেল বিজয়ী (অনুবাদ, ২০১৫) ৩। আয়াজ আলীর ডানা (গল্পগ্রন্থ - ২০১৬ ৪। কোমা ও অন্যান্য গল্প(গল্প গ্রন্থ, ২০১৮) ৫। হেমন্তের মর্সিয়া (কবিতা, ২০১৮) ৬। কাঁচের দেয়াল (গল্পগ্রন্থ, ২০১৯) ৭।শহরনামা (উপন্যাস, মাওলা ব্রাদার্স, ২০২২), ৮। মুরাকামির শেহেরজাদ ও অন্যান্য গল্প (অনুবাদ, ২০২৩), ৯। নির্বাচিত দেবদূত(গল্পগ্রন্থ, ২০২৪), ১০। দেওয়ানেগির চল্লিশ কানুন/ফরটি রুলস অফ লাভ (অনুবাদ, ঐতিহ্য, ২০২৪)
ছবিঃ সাঁওতাল নারী, শিল্পী যামিনী রয়
বাঙ্গালী - আদিবাসী রেসিজমঃ কাকে অভিযুক্ত করবো, কাকে দেবো নান্দনিকতার উসিলায় ছাড়?
.
১।
.
(ক)
"দুর্ভিক্ষের প্রেতায়িত প্রহর কেটে যেতেই প্রাণরসে ভরপুর সাঁওতাল নারীপুরুষ বাসা বাঁধল শিল্পীর ক্যানভাসে। দীঘল দেহের সাঁওতাল রমণী। দেহের রক্তে মহুয়ার মদে চনমনে আর চনমনে জীবন আরও ঝলমল করে যখন দেখি সাঁওতাল মেয়ের খোঁপায় গোঁজা রক্তপলাশ। অনাবিল সুখ মানে আদিবাসী জীবন। এ - জীবনের স্বাদ অনুভব করে জয়নুল আবার স্বাপ্নিক হলেন। হলেন রোম্যান্টিক ... দূরে ময়ূরাক্ষী নদী, শালগাছ; তার গভীর থেকে সাঁওতাল নারীপুরুষকে বায়নোকুলার ঘুরিয়ে চোখের কাছে দাঁড় করিয়ে মানুষের দেহের রূপতৃষ্ণা মিটিয়েছেন শিল্পী। সর্পিল কালসাপের মতো রেখার গাঁথুনিতে তামাটে দেহের লাবন্য। খুব বেশী অনুষঙ্গ নেই আর।" (বাংলাদেশের চিত্রশিল্প, পৃষ্ঠা ৩২)
.
(খ)
"বুঝলা মিয়া, দ্যাশ নষ্ট হইয়া গেছে। সেই দেশ আর নাই। ছোটবেলায় দ্যাশের বাড়িতে রাইতের নদীর ধারে গিয়া বইতাম। কী সুন্দর নদী। সাপের সইলের মতো আঁকাবাঁকা অইয়া কতোদূর চইলা গেছে। মনে অইতো, একটা সাঁওতাল মাইয়া তার সমস্ত শইল মাটিতে বিছাইয়া হুইয়া রইছে। কি যে একটা অপূর্ব দৃশ্য।" (বাংলাদেশের চিত্রশিল্প, পৃষ্ঠা ৩৩)
.
উপরের যে দুটি উক্তি, তারমধ্যে প্রথমটি বাংলাদেশের নমস্য শিল্প সমালোচক মইনুদ্দিন খালেদ স্যারের। শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের চিত্রকলার উপর মন্তব্য করতে গিয়ে তিনি সাঁওতাল রমণীর শরীরকে সর্পিল কালসাপের সঙ্গে তুলনা করেছেন, শিল্পাচার্য নাকি দূর থেকে বায়নোকুলার দিয়ে 'দেহের রূপতৃষ্ণা' মিটিয়েছেন। আর দ্বিতীয় উক্তিটি স্বয়ং শিল্পাচার্যের।
.
২।
কোলকাতা আর্ট কলেজের স্টুডেন্টরা তাদের ছুটিতে, দুমকার সাঁওতাল পল্লীতে যেতেন সাঁওতালদের জীবনযাপন পর্যবেক্ষণ করতে। সাঁওতাল রমণী, এবং সাঁওতাল পুরুষদের ছবি আঁকতে। এই যে বাঙ্গালী হয়ে আদিবাসীদের জীবনযাপনের প্রণালী পর্যবেক্ষণ, এবং ছবিতে বা ভাস্কর্যে তাদের রিপ্রেজেন্ট করবার শতবর্ষ পুরনো ইতিহাস, এর সঙ্গে দূরবর্তী মিল খুঁজে পাওয়া যায় অষ্টাদশ শতকের শেষদিকে নেপোলিয়ন বোনাপার্টের মিশর দখল করে, ফ্রান্স থেকে তার সঙ্গে করে নিয়ে আসা বিজ্ঞানী, নৃতাত্ত্বিক, চিত্রকরদের নিয়ে মিশরকে পর্যবেক্ষণ এবং ইউরোপিয়ানদের বোধগম্য উপায়ে উপস্থাপনের প্রয়াসের সঙ্গে। যেই কার্যক্রমটিকে আমরা ওরিয়েন্টালিজমের সূচনা হিসেবে ধরি।
.
বাঙ্গালী - আদিবাসীর সম্পর্ক সে সময় ঠিক কলোনাইজার - কলোনাইজড না হলেও, পাওয়ার ইকুইলিব্রিয়াম ছিল না কখনোই। কথা হচ্ছে - এই দুমকায় গিয়ে বহিরাগত হিসেবে উৎসুক চোখে সাঁওতালদের দিকে নিজের 'অপর' হিসেবে তাকিয়ে থাকা, তাদের নারীদের কৃশাঙ্গ শরীরকে সাপের সঙ্গে তুলনা করা (আর কে না জানে, সর্প হচ্ছে যৌনতার প্রতীক), তাদের ক্যানভাসে উত্তেজক উপস্থাপন - সবই রেসজিম।
.
চিত্রকলায় নারীদের, বা আদিবাসী রমণীদের যে উত্তেজক উপস্থিতি - তাকে আমরা রেসিজম বলবো, নাকি ছাড় দেবো নন্দনতত্ত্বের খাতিরে?
৩।
পৃথিবীতে এমন কোন সৃজনশীল সত্ত্বা নাই, জাতি - ধর্ম - বর্ণ - লিঙ্গ নির্বিশেষে, যে কখনো কোন বর্ণবাদী / রেসিস্ট বক্তব্য রাখে নাই। কারণ, ভালোবাসা - ক্রোধ - যৌনতা এরকম আরও অনেক ডেলিকেট অনুভূতির স্বতঃস্ফূর্ত স্ফুরণ ছাড়া সৃজনশীল কাজ হয় না। চিন্তারে খুব সরু সচেতন একটা ফিল্টারড টানেলের মধ্য দিয়া পাস করলে রিসার্চ আর্টিকেল লেখা সম্ভব। উপন্যাস না। কবিতা আরও না। ছবিও না। কথা হচ্ছে, লেখায় - আঁকায় - গানের কথায় বর্ণবাদী ইঙ্গিত থাকলেই আমরা উক্ত শিল্পী - কবি - কথা সাহিত্যিকরে বর্ণবাদী বলতে পারি? তারে বয়কট করার ডাক দিতে পারি?
আমারে যদি এই প্রশ্ন করা হয়, আমার উত্তর হবে - যেই শিল্পীর ব্যাপারে তার শিল্পকর্মে বর্ণবাদী আচরণের অভিযোগ এসেছে, সেই শিল্পী তার ব্যক্তিজীবনে বর্ণবাদী আচরণ করেন কিনা, এবং বর্ণবাদী চিন্তা তার শিল্প সৃষ্টির মূল ইন্সপিরেশন কিনা - এই দুটা জিনিস খতিয়ে দেখা দরকার, সেই শিল্পীকে বর্ণবাদী বলার আগে।
দ্বিতীয়ত, যদি উক্ত শিল্পীর শিল্পকর্মরে কেন্দ্র করে বর্ণবাদী রাজনীতির চর্চা হয়, যদি কোন শিল্পীর শিল্পকর্ম কোন বর্ণবাদী মুভমেন্টের শ্লোগান / পোস্টার হিসেবে ব্যবহার হয়, দেখতে হবে যে তখন উক্ত শিল্পী সেই রাজনীতিরে ডিজঔন করতেসেন কি না। যদি তিনি উক্ত বর্ণবাদী মুভমেন্ট বা রাজনীতিরে প্রচ্ছন্ন বা প্রকট উপায়ে সায় দেন, নিঃসন্দেহে তিনি বর্ণবাদী। আর যদি তিনি তার শিল্পকর্মের বর্ণবাদী ব্যবহারে সম্মতি না দেন, তাকে বর্ণবাদী বলা উচিৎ না।
৪।
আলোচনার প্রথমে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের নিজের, এবং তার বিষয়ক কিছু মন্তব্য ও উক্তি শেয়ার করেছিলাম। তাতে শিল্পাচার্যের উৎসুক দৃষ্টি নিয়ে আদিবাসী সাঁওতালদের জীবন অবলোকন করার কথা অকপটে উঠে আসে।
ছাত্রজীবনে জয়নুল আবেদিন যখন দুমকায় গিয়ে আদিবাসী সাঁওতাল রমণী (অবশ্যই কেবল রমণী নয়, তাদের পুরো পল্লীর জীবনযাত্রার দিকেই থাকতো তার চোখ, তবুও তর্কের খাতিরে ধরা যাক) দের দিকে তাকিয়ে থাকতেন উৎসুক দৃষ্টিতে, তাতে কৌতূহল থাকতো, অ্যাডমিরেশন থাকতো, যৌনাকাঙ্ক্ষাও থাকতো, থাকতো ব্যাখ্যাতিত আরও অনেক অনুভূতি।
শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন, বা শিল্পগুরু সফিউদ্দিন আহমেদের সাঁওতাল জনগোষ্ঠীর প্রতি এ কৌতূহলী চোখে তাকানোকে কি আমি আপনি শুধু মাত্র বাঙ্গালীর আদিবাসী রমণীর প্রতি যৌনলোলুপ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকার মধ্যে সীমাবদ্ধ করতে পারি?
আজীবন অসাম্প্রদায়িকতার চর্চা করা বাম ঘরানার মানুষ জয়নুল আবেদিন কখনো তার ব্যক্তিজীবনে কোন সাম্প্রদায়িক বা বর্ণবাদী আচরণ করেছেন, বা এমন কাউকে আসেপাশে ঠাই দিয়েছেন? যদি তার ব্যক্তিজীবনে এ সমস্ত সমস্যা থাকতো, তবে তাকে আমি আপনি বর্ণবাদী বলতে পারতাম।
৫।
শিল্প সৃষ্টির প্রক্রিয়াটা, বা কিসের তাড়নায় একটা শিল্পের জন্ম হোল - এটা বহিরাগতদের পক্ষে বোঝা মুশকিল। মন্তব্য করা আরও কনফিউশনের জন্ম দিতে পারে। যাই হোক, বয়কটের ইস্যুটা রাজনৈতিক। যদি কেউ একজন নির্দিষ্ট কবি - সাহিত্যিক - চিত্রকরের নির্দিষ্ট একটি বা কিছু কাজের দায়ে তাকে বর্ণবাদী সাম্প্রদায়িক হিসেবে অভিহিত করতে চান, এবং উক্ত আর্টিস্টরে বয়কট করতে বলেন, তবে সেই ডাক দেনেওয়ালার পূর্বপর বিচার করে দেখতে হবে যে এই বয়কটের ডাক সিলেক্টিভ কিনা। মানে, কেবলমাত্র নির্দিষ্ট কাউকে, বা কারু উদ্দেশ্যেই সে এই বয়কটের ডাক দেয় কি না।
সমপরিমাণ বর্ণবাদী শিল্পের চর্চা যদি সমাজে অন্য কেউও করে থাকে, এবং সেই 'অন্য কেউ' যদি অধিক প্রতিভাধর হয়, তার গুণ গাইলে যদি কিছু লাভ আদায় করে নেয়া যায়, তার বদনাম করলে যদি ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে, তার নাম রাম বা রহিম হওয়ার কারণে তার একই বর্ণবাদী আচরণের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে প্রথমোক্ত ব্যক্তির দ্বিধা থাকে, তবে তার এই সিলেক্টিভ বয়কটের ডাকের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করা সম্ভব হবে না অনেকের পক্ষেই।
১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০২১ সকাল ৮:১৯
সাজিদ উল হক আবির বলেছেন: আপনার কাছে অপূর্ব লাগছে। তবে একজন সাঁওতাল আদিবাসী পুরুষের কাছে, একজন বাঙ্গালী চিত্রকর দ্বারা তাদের রমণীদের এমন রিপ্রেজেন্টেশন পছন্দ নাও হতে পারে, এমনকি বর্ণবাদীও লাগতে পারে। সেই প্রেক্ষিতেই আলোচনাটা।
©somewhere in net ltd.
১| ১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০২১ রাত ১:৪১
সত্যপথিক শাইয়্যান বলেছেন:
ছবিটা অপূর্ব। স্রষ্টার অনুপম এক সৃষ্টি - নারী জাতি।
যে স্তন দেখা যাচ্ছে, তা এক বাংলা মায়ের রূপ।