নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সাধু সাবধান ! ব্লগের মালিক বঙ্গালা সাহিত্যকে ধরিয়া বিশাল মাপের ঝাঁকি দিতে নিজেকে শারীরিক ও মানসিক ভাবে প্রস্তুত করিতেছেন। সেই মর্মে তিনি এখন কিটো ডায়েটিং, ডন-বৈঠক ও ভারোত্তলন প্রশিক্ষণে ব্যস্ত। প্রকাশিত গ্রন্থঃ১। শেষ বসন্তের গল্প । (২০১৪)২। মিসিং পারসন - প্যাত্রিক মোদিয়ানো, ২০১৪ সাহিত্যে নোবেল বিজয়ী (অনুবাদ, ২০১৫) ৩। আয়াজ আলীর ডানা (গল্পগ্রন্থ - ২০১৬ ৪। কোমা ও অন্যান্য গল্প(গল্প গ্রন্থ, ২০১৮) ৫। হেমন্তের মর্সিয়া (কবিতা, ২০১৮) ৬। কাঁচের দেয়াল (গল্পগ্রন্থ, ২০১৯) ৭।শহরনামা (উপন্যাস, মাওলা ব্রাদার্স, ২০২২), ৮। মুরাকামির শেহেরজাদ ও অন্যান্য গল্প (অনুবাদ, ২০২৩), ৯। নির্বাচিত দেবদূত(গল্পগ্রন্থ, ২০২৪), ১০। দেওয়ানেগির চল্লিশ কানুন/ফরটি রুলস অফ লাভ (অনুবাদ, ঐতিহ্য, ২০২৪)
১।
শিল্পী সাহিত্যিক ফিল্মমেকারদের সৃষ্টকর্মে তাদের জীবনসঙ্গী, বা সাংসারিক জীবনের আলাপ অনেকটা অনুপস্থিত, এমনটা আমার অব্জারভেশন। আপনাদেরও কী তাই মনে হয় না?
.
যেমন , খুব পরিচিত পরিসর থেকে যদি উদাহরণ দিই, হুমায়ূন আহমেদের অমর চরিত্র হিমুর নায়িকা যে রূপা, সেই রূপা কী মিসেস গুলতেকিন? আবার সুনীলের প্রেমের কবিতায় নীরার অহরহ উপস্থিতি। এই নীরা কী তার স্ত্রী স্বাতী গাঙ্গুলি? অঞ্জন দত্তের স্ত্রী ই কী তার বেলা বোস?
.
আমার মনে হয় যাপিত সাংসারিক জীবন, অর্থাৎ, যে সংসার জীবন শিল্পী নিজে যাপন করছে সত্যি সত্যি - তা সরাসরি শিল্পের ক্যানভাসে তুলে আনা মুশকিল।
.
২।
এখন কেন যে মুশকিল, এটা বুঝিয়ে বলা আরও মুশকিল।
.
তার একটা কারণ হয়তো এই যে, নিজের দাম্পত্য জীবনকে শিল্পের ক্যানভাসে ছুঁড়ে মারাটা অস্বস্তিকর। সবার পক্ষে কিম কারদেশিয়ান হওয়া সম্ভব না।
.
দ্বিতীয়ত, দাম্পত্যের সম্পর্ক প্রেমের সম্পর্কের চে' অনেক বেশী জটিল।
.
একজন আপাদমস্তক রোম্যান্টিক মানুষের জন্যে প্রেমের সম্পর্ক সাধারণত অন্ধ, নন জাজমেন্টাল, কাণ্ডজ্ঞানহীন, কামনাবাসনাময়। অপরদিকে, একজন সংবেদনশীল মানুষের নিজের স্পাউসের প্রতি যে অনুভূতি, তা উপরের লিস্টের অনুভূতিগুলো, এবং অনুভূতির আরও অনেক বেশী ডিপ এবং ওয়াইডস্প্রেড ডাইমেনশনকে কাভার করে।
.
নিজের শিল্পকর্মে উপস্থিত লিনিয়ার ডাইমেনশনের প্রেমের সম্পর্কের ব্যাপারে নিজের দাম্পত্য জীবন থেকে তাই হিন্ট নেয়ার সুযোগ কম।
..
ছোট একটা উদাহরণ যদি দিই।
.
প্রায় পূর্ণিমায় আমাদের বেডরুমে মাথার কাছে যে জানালা, তা দিয়ে চাঁদের আলো প্রবেশ করে। আমার অভ্যাস রাতে ঘুমানোর আগে বই পড়বার। যখন ঘুমে চোখ জড়ায়ে আসে, আর আমি বই বন্ধ করে ল্যাম্প নিভায়ে দিই, সে মুহূর্তে জোছনার আলো মশারী ভেদ করে পাশে ঘুমন্ত আমার স্ত্রীর মুখচ্ছবিতে অপরূপ আলোছায়ার কারুকার্য সৃষ্টি করে। ফলশ্রুতিতে আমার মনের মধ্যে অদ্ভুত প্রশান্তিসহ এই প্রশ্ন জাগে যে - এই যে অলৌকিক একটা দৃশ্য, এটা তাহলে জীবনসঙ্গী বিষয়ক আমার সমস্ত প্রার্থনার উত্তরসমূহের মধ্যে একটা ?
.
ঐ মুহূর্তের এই যে একটা জটিল অনুভূতির বুনন, যার কিছুই আসলে লেখার হরফে ফুটায়ে তুলতে পারলাম না, এবং যার ভারবহন করতে করতে আমার মস্তিষ্ক আরও দ্রুতগতিতে ক্লান্ত হয়ে যায়, এবং আমি ঘুমে ঢলে পড়ি - এরকম, এবং দাম্পত্যজীবনের এরকম আরও অসংখ্য জটিল অনুভূতির নকশা আঁকা সাধারণ প্রেমের সম্পর্কের প্রেক্ষিতে, বাংলাদেশের বাস্তবতায়, প্রায় অসম্ভব।
.
৩।
হয়তো এই সমস্ত কারণে নিজের সৃষ্টকর্মে শিল্পীরা প্রেমিক - প্রেমিকার চরিত্র চিত্রনের সময় ব্যাকস্লাইড করে নিজের বা নিজের পরিচিতজনের পেছনের অকার্যকর সম্পর্কগুলির সহায়তা নেয়। ঐ সম্পর্ক মোটের ওপর লিনিয়ার, সহজসরল, একরৈখিক। তাতে নন জাজমেন্টাল, কাণ্ডজ্ঞানলুপ্ত, কামনাবাসনাময় ভালোবাসাই থাকে কেবল। আর যে বিচ্ছেদ অতিক্রম করা গেছে একবার, তাকে ভাষার জালে বন্দী করা যায়। নিজেরে নৈব্যত্তিক একটা অবস্থানে এনে সেই সম্পর্কের দিকে ফিরে তাকানো যায়, কোন অনুভূতির উদ্রেক ছাড়াই। তাই হয়তো কবি সাহিত্যিক, চিত্রকর, ফিল্মমেকাররা নিজেদের শিল্পকর্মে প্রেমের সম্পর্ক ডেপিকশনে প্রায়ই জীবনের অপূর্ণ সম্পর্কগুলিরে শিল্পের ক্যানভাসে প্রক্ষেপ করে কাটাছেঁড়া করে।
.
তবে এতে শিল্পীদের জীবনসঙ্গীদের চিন্তিত হওয়ার মতো কিছু নাই। নাই অসম্মানের কিছুও। কারণ প্রতিটা মানুষের জীবনের ম্যাগনাম ওপাস, বা মহাকাব্য আসলে একটাই। সেটা হচ্ছে তার যাপিত জীবন। সেই যাপিত জীবনের একচ্ছত্র আধিপত্য সেই মহীয়সীর। সেই উপন্যাস, যেটা মূল উপন্যাস, জীবন নামে সেই উপন্যাসের মুখ্য নারী চরিত্র যদি তিনি হন, এটা যেকোনো ফিকশনাল ক্যারেক্টার হিসেবে গল্প উপন্যাসে উপস্থিতির চে' অনেক বেশী সম্মানের। এবং দামী।