নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সাধু সাবধান ! ব্লগের মালিক বঙ্গালা সাহিত্যকে ধরিয়া বিশাল মাপের ঝাঁকি দিতে নিজেকে শারীরিক ও মানসিক ভাবে প্রস্তুত করিতেছেন। সেই মর্মে তিনি এখন কিটো ডায়েটিং, ডন-বৈঠক ও ভারোত্তলন প্রশিক্ষণে ব্যস্ত। প্রকাশিত গ্রন্থঃ১। শেষ বসন্তের গল্প । (২০১৪)২। মিসিং পারসন - প্যাত্রিক মোদিয়ানো, ২০১৪ সাহিত্যে নোবেল বিজয়ী (অনুবাদ, ২০১৫) ৩। আয়াজ আলীর ডানা (গল্পগ্রন্থ - ২০১৬ ৪। কোমা ও অন্যান্য গল্প(গল্প গ্রন্থ, ২০১৮) ৫। হেমন্তের মর্সিয়া (কবিতা, ২০১৮) ৬। কাঁচের দেয়াল (গল্পগ্রন্থ, ২০১৯) ৭।শহরনামা (উপন্যাস, মাওলা ব্রাদার্স, ২০২২), ৮। মুরাকামির শেহেরজাদ ও অন্যান্য গল্প (অনুবাদ, ২০২৩), ৯। নির্বাচিত দেবদূত(গল্পগ্রন্থ, ২০২৪), ১০। দেওয়ানেগির চল্লিশ কানুন/ফরটি রুলস অফ লাভ (অনুবাদ, ঐতিহ্য, ২০২৪)
১।
"আগার মিলে খোদা তো,
পুছুঙ্গা খোদায়া
জিসম মুঝে দে কে মিট্টি কা
শিসে সা দিল কিউ বানায়া ..."
সঞ্জয় লীলা বানসালির মুভি হাম দিল দে চুকে সানামের বিখ্যাত একটা গান - "তাড়াপ তাড়াপকে ইস দিল সে আহ নিকালতি রাহি ..."র দ্বিতীয় অন্তরার কিছু লাইন দিয়ে শুরু করলাম লেখাটা। সঞ্জয় সাহেব এখন তার সব মুভির সুর নিজে করলেও, তার ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে মিউজিশিয়ান - কম্পোজার ইসমাইল দরবার সাহেবের সঙ্গে তিনি বেশ কিছু গান করেন। তার এক অনন্য কম্পোজিশান, আরও অনেকগুলো গানের সঙ্গে, এই বিচ্ছেদি গানটাও। গানটায় কণ্ঠ দেন একসময়ের বলিউডের সেরা প্লেব্যাক সিঙ্গার 'কে কে'। এই গানটার
কোক স্টুডিও আনপ্লাগড ভার্শনে তিনি গান রেকর্ডিং এর পিছে কিছু না জানা গল্প শেয়ার করেন। গানটি রেকর্ড করবার মাঝেই স্টুডিওতে কিছু টেকনিক্যাল সমস্যা দেখা দিলে, তারা স্টুডিওতে অপেক্ষা করতে করতে পুনরায় যখন রেকর্ড করা শুরু করেন, তখন ঘড়ির কাটায় রাত চারটা। 'কে কে' বলেন, তিনি স্টুডিওর বাইরে গিয়ে দাঁড়িয়ে কিছুক্ষণ চিরন্তন ছুটে চলা মুম্বাই শহরের ঝিমিয়ে পড়া ভাবকে ভেতরে অনুধাবন করেন, অনুধাবন করেন শহরের মানুষদের অসংখ্য বলা না বলা গল্প, কথা রাখা না রাখার কাহিনী, বিশ্বাস স্থাপন ও বিশ্বাসভঙ্গের আফসানা, এবং স্টুডিওর ভেতরে প্রবেশ করে, গানের সুরে কণ্ঠ দিয়ে জন্ম দেন বিচ্ছেদী গানের জনরার এক অবিস্মরণীয় মাষ্টারপিস।
কিছু কিছু গান আছে, যা ঐ মাঝরাত থেকে শেষরাতেই শুনতে ভালো লাগে, তখনি অন্তরে অনুভূতির সঠিক তারগুলোকে অনুরণিত করে। কিছুকিছু কবিতা যেন লেখাই হয় ঐ সময়টাকে মাথায় রেখে। কিছু কিছু অনুভূতি আছে, যারা ঐ মাঝরাত থেকে শেষরাত ছাড়া দিনের অন্যান্য সময়ে বাস্তবতার ভিত্তিতে দাঁড়াতেই পারে না, হাস্যকর মনে হয়। আমার প্রিয় আইরিশ সিঙ্গার - সংরাইটার ড্যামিয়েন রাইস যেমন বলেন -
" Leave me out with the waste
This is not what I do
It's the wrong kind of place
To be thinking of you
It's the wrong time, for somebody new
It's a small crime
And I got no excuse
And is that alright?"
২।
আমরা শৈশব নিয়ে বেশী স্মৃতিচারণ করি। বয়স খানিকটা বেড়ে গেলেই ফিরে ফিরে চাই শৈশবের সোনাঝরা দিনগুলিতে। এর একটা কারন হয়তো এই যে, জীবনের বত্রিশ রকম চেহারা বাদে, সেই সময়টায় কেবল জীবনের দুশ্চিন্তাবিহীন সুন্দর দিকগুলোই প্রস্ফুটিত হয়ে ওঠে চোখের সামনে, মনের ভেতর। কিন্তু, আমাদের সবার জীবনেই একটা গুরুত্বপূর্ণ সময় আমাদের কৈশোর পেরুনো, যৌবনে পা রাখা রাতজাগা সময়গুলোও, এটা আমরা অনুভব করলেও আলোচনায় আনতে প্রায়ই ভুলে যাই। রাত বারোটা থেকে নিয়ে ভোররাত চারটা পর্যন্ত সময়টুকু আমরা কিশোর - তরুণ - যৌবনে প্রায়ই নকচারনাল / রাতজাগা প্রাণীতে পরিণত হই। এই রাতজাগার অভ্যাস আমি পিছনে ফেলে এসেছি বেশী দিন নয়, দুই - আড়াই বছর হবে হয়তো। তার আগে, দিনের সবচে পছন্দের সময় ছিল আমার ঐ রাত বারোটা থেকে নিয়ে তিনটা, কোন কোন রাতে চারটা - সাড়ে চারটা পর্যন্ত।
কি করতাম ঐ সময়?
কতোকিছুর স্মৃতিই তো জমে আছে, সব তো বলার মতোও না। প্রেম করতাম মূলত, কবিতার বই পড়তাম, কবিতা লেখার চেষ্টা করতাম, গান শুনতাম, নতুন গানে সুর বসাতাম। যে উপন্যাসের বই আমার খুব ভালো লাগতো, সেটা শেষ করবার পছন্দনীয় সময় ছিল সারা রাত জেগে পড়তে পড়তে, ভোরবেলার সময়টুকু, যখন আস্তে আস্তে সূর্য উঠছে। মনে হতো, একটা গল্পের পৃথিবীর পাট চুকিয়ে নতুন আর এক পৃথিবীতে পা রাখছি আমি, এই নবসূর্যোদয়ের সঙ্গে। এছাড়া, প্রেম নামের বায়বীয় অনুভূতি, কিছুদিন বেহেস্তের অনুভূতি জাগিয়ে পুনরায় বাতাসে উবে গেলে তার বিচ্ছেদযন্ত্রণা সবচে বেশী কাতর করে রাখতও এই সময়টা।
মনে পড়ে, পিয়ানো শিখতাম যে দিনগুলোতে, ২০১১ - ১২ সালের দিকে, গভীর রাত ছিল আমার পিয়ানোর লেসন প্র্যাকটিস করবার সময়। রাত বারোটার পর বসতাম সাধারণত। আমার স্ত্রী শ্বশুরবাড়িতে বেড়াতে গেলে এখনও মাঝেমাঝে রাতে খাবার পর বসা হয় কিবোর্ড সামনে নিয়ে। আমার বোন সেদিন আমাকে বলল, ঘুমানোর আগে আমার কিবোর্ডের টুংটাং শুনে ওর মনে পড়ে গিয়েছিল পুরনো ঢাকার আই জী গেইট ব্যাংক কলোনিতে আমাদের ফেলে আসা শৈশব - কৈশোর জীবনের কথা, যখন আমি একইভাবে রাত জেগে পিয়ানো লেসনস প্র্যাকটিস করতাম।
মনে পড়ে, চাকরী জীবনে প্রবেশ করার পরেও, জীবনসঙ্গী বাছাই করে যখনও থিতু হইনি, তখন মাঝরাত্রির গান নামে একটা ফেসবুক সেগমেন্ট আয়োজন করতাম। নিজের, বা কাভার সং রেকর্ড করে রাত আড়াইটা - তিনটার দিকে আমার ফেসবুক প্রোফাইলে সে গান আপলোড করতাম। মতিঝিল থেকে ফার্মগেটে আমার তৎকালীন অফিস / ইউনিভার্সিটির স্টুডেন্টদের সাথে লোকাল বাসে দেখা হয়ে যেতো, তাদের সঙ্গে কথা হতো সে গান নিয়ে।
যেমন, আমারমাঝরাত্রির গান শিরোনামে একটা আলাদা গানই আছে, যার লিরিক এরকম -
"রাত্রি তখন গভীর, ঘড়িতে তিনটা এক
স্নায়ু ভুগছিল শীতল মাদকতায়
বুকে দারুণ তোলপাড়, অস্থির এক ব্যাথা
কে যেন বলছে স্বপ্ন খুঁজে দেখ!
...
কারো বৌ বাচ্চায় সাজানো সুখের ঘর
কারো একলা জীবন ধুধু বালুচর
কেউ ভিড়ের মাঝেও একলা বসে কাঁদে
কারো একলা জীবন ভালো, বাকি সব পর।
শূন্য হৃদয়ে শূন্য ঘরে বসে,
বুঝলাম আমি তোমায় ভালোবাসি
ফর্মালিটির পর্দা পড়ুক খসে
বুড়োবুড়ি মোরা হবো বসে পাশাপাশি ..."
আমার, আর আমার ইংরেজি বিভাগের এক প্রাক্তন - দুজনেরই পছন্দ ছিল জয় গোস্বামীর কবিতা। একা থাকার রাতগুলোতে জয় গোস্বামীর কবিতা আবৃত্তি করবার মতো করে পাঠ ছিল অভ্যাস -
"কিন্তু ব্যাপারটা হচ্ছে, তুমি আমার সামনে দাঁড়ালেই আমি
তোমার ভিতরে একটা বুনো ঝোপ দেখতে পাই।
ওই ঝোপে একটা মৃতদেহ ঢাকা দেওয়া আছে।
অনেকদিন ধ'রে আছে। কিন্তু আশ্চর্য যে
এই মৃতদেহ জল, বাতাস, রৌদ্র ও সকলপ্রকার
কীট - বীজাণুকে প্রতিরোধ করতে পারে। এর পচন নেই।
বন্য প্রাণীরাও এর কাছে ঘেঁষে না।
রাতে আলো বেরোয় এর গা থেকে।
আমি জানি মৃতদেহটা আমার।
কিন্তু ব্যাপার হচ্ছে, এই জারিজুরি এবার ফাঁস হওয়া প্রয়োজন।
আর তা হবেও, যেদিন চার পায়ে গুঁড়ি মেরে গিয়ে
পা কামড়ে ধ'রে, ওটাকে, ঝোপ থেকে
টেনে বার করব আমি ..."
('বিবাহিতাকে' , কাব্যগ্রন্থ - " ওঃ স্বপ্ন" )
আমার মনে পড়তো আমার বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের একমাত্র বন্ধু দুখাই নরকান্দ্রনাথ, ওরফে চিশতি অনিমেশের কথা, দুজনে মিলে বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক জগতের খোলনলচে বদলে দেয়ার স্বপ্ন দেখতাম যে দিনগুলোতে, টিএসসির সোডিয়াম বাতি স্নাত সে রাতগুলোর কথা। আমার মনে পড়ে, আমার বন্ধু ওর আইনের পড়াশোনা শেষ করতে পারে নি। অনার্স শেষ করার আগেই ও ড্রপআউট করে। ও বলতো, ও এক পারিবারিক অভিশাপের চক্রে আটকা পড়া মানুষ। ও বলতো, ওর বাবাও সেই অভিশাপের শিকার হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই আইনের পড়াশোনা আর শেষ করে বের হতে পারে নি। ও বলতো, একই অভিশাপ অজগর সাপের মতো গিলে খাবে ওকেও। আমার মন চাইতো ওকে বলতে, এই অভিশাপের ঘের আমরা একসঙ্গে পেরুবো, হাতে হাত ধরে, দুই ভাইয়ের মতো। কিন্তু মানুষের প্রত্যেকের জীবনের লড়াই আলাদা আলাদা, সে লড়াই একার লড়তে হয়, পরম একাকী, প্রভাস্বর শূন্যতা প্রস্ফুটিত হয়ে থাকা সেই একাকী জায়গায় মানুষের যুঝতে হয় একাই, সঙ্গী হলে এক খোদা হতে পারেন - এটা বুঝতে আমার একটু সময় লাগে। আমি ততদিন খাদ বেয়ে উপরে উঠে এসেছি। আমার বন্ধু দুখাই নরকান্দ্রনাথ, যা ছিল কবি হিসেবে তার ছদ্মনাম, সেই নরকে বসেই কালাতিপাত করলো কিছু দিন। তারপর ডুব দিলো শুন্যে।
ওর একটা গানের কথায় আমি সুর বসিয়েছিলাম, তাও সেই মাঝরাতেই। আমার খুব পছন্দের একটা লিরিক ছিল সেটা -
"চোখ ভেঙ্গে আসা ঘুমে
মাঝরাতে বেডরুমে
আবছায়া যত কালি ও কাগজে
ঘূর্ণিপাকে আমার মগজে
যত কবিতা
সব ভনিতা
তোমাকে শোনাতে চাইছি আর কি ...
তুমি জেগে আছো কী?
তুমি জেগে আছো কী?"
বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে যে মেয়ের প্রেমে পড়েছিল ও, তার ছদ্মনাম রেখেছিল ও রেডওয়াইন। সে মেয়েকে নিয়েই লেখা এই গান। ঘুম আসছে না। স্মরণে বারবার ঘুরেফিরে আসছে সেই মেয়ে। তাকে নিয়েই অসংখ্য অগণিত শব্দ ঘুরে ফিরে আসছে ঘূর্ণিঝরের মতো মনের আকাশে। জন্ম নিচ্ছে একটার পর একটা কবিতা। এ সবকিছুই আসলে তার পর্যন্ত পৌঁছাবার একটা উপলক্ষ্য মাত্র। উপলক্ষ্য, এই মাঝরাতে তার সঙ্গে একবার কথা বলবার, ফোনে। কিন্তু সে কি জেগে আছে? জেগে যদি না থাকে, তাহলে তো ফোন করে তাকে ডিস্টার্ব করা হবে। কি করা? সে কি জেগে আছে? তুমি জেগে আছো কী?
কিছু প্রেম বেঁচে যায় পরিণতি লাভ না করে। আমার তেমনি এক স্বল্পদিনের প্রণয়ের কথা মনে পড়ে।
আমি তখন দীর্ঘদিন স্থায়ী এক সম্পর্ক চিরস্থায়ীভাবে হারানোর শোকে কাতর। এই একটা মেয়ে কোথা থেকে ঝড়ের মতো উদয় হয়েছিল সেই বিষণ্ণ শৈত্যের ঋতুতে। তাকে দেখতাম বাংলাদেশের সেরা সব মিউজিশিয়ানদের কণ্ঠলগ্না হয়ে ঘুরে বেড়াতে। তাও যে সে মিউজিশিয়ান না, হাবীব ভাই, তাহসান ভাই, বা অর্ণবদা'র সঙ্গে। তাদের স্টুডিওতে, বা অ্যালবাম লঞ্চের প্রোগ্রামে। আমাকে খুঁজে বের করেছিল সে ফেসবুকে। তখন আমি দিনরাত সম্পর্ক হারানোর বেদনায় কান্নাকাটি পোস্ট দিয়ে বেড়াতাম।
মেয়েটা এসে আমাকে বলল, সে আমাকে কেয়ারফ্রি ভাবে বেঁচে থাকা শেখাবে। কার্পেডিয়াম থিম, বা 'সীজ দা ডে' , বা আজকের দিনটা এমনভাবে বাঁচো, যেন কোন আগামীকাল নেই - এই তত্ত্ব ততদিনে আমি কেবল এন্দ্রু মারভেলের মেটাফিজিক্যাল কবিতায় পড়েছি। আমার বাস্তব জীবনে তার কোন প্রমাণ প্রয়োগ নেই।
আমার মনে পড়ে, সেই মেয়েটা আমাকে বলেছিল ওর একসময়ের প্রেমিক কীভাবে ওকে ড্রাগের সঙ্গে জড়িয়ে ড্রাগে অভ্যস্ত করে ফেলে,এবং পরে এই ড্রাগের চক্করে পড়ে কীভাবে ওকে জীবনের অনেক চড়াই উৎরাই এর মধ্য দিয়ে নিয়ে যায়।
আমার মনে পড়ে আমাদের একরাতের কথোপকথন।
'- উড ইউ বি মাই টয় টুনাইট?
- ( দীর্ঘক্ষণ চুপ থাকার পর) নৌ, আই গেস ...
- কেনো!!!
- বিকজ, দেন দেয়ার উড রিমেইন নৌ ডিফারেন্স বিটুইন মি অ্যান্ড দা আদার বয়েস হু হ্যাড বিন ইওর টয় ফর আ নাইট। হুম ইউ নেভার কল্ড ব্যাক এগেইন।
- প্রবাব্লি আই কল্ড দেম অ্যাগেইন ...
- প্রবাব্লি ইউ হ্যাভন্ট!
- ( দীর্ঘক্ষণ চুপ থাকার পর) হোয়াই ডু ইউ নিড টু বি দ্যাট ডিপ অল দা টাইম আবির! ...'
অসাধারণ মিউজিকের টেস্টওয়ালা মেয়েটি বর্তমানে থিতু এক তরুণ সিনেমা নির্মাতার সঙ্গে। স্রষ্টা ওদের জীবনকে সর্বাঙ্গীণ সুন্দর করুন।
৩।
২০১৮ সাল হচ্ছে সেই বছর, যে সময় থেকে আমি ধীরে ধীরে ঘৃণা করতে থাকি এই নাইট আউলের জীবন। আমি টের পাই, আমার রাতগুলো ক্রমশ কাটতে থাকে কবিতার বই, গানের সঙ্গে নয়, বরং ফেসবুকের নীল - সাদা স্ক্রিনে তাকিয়ে তাকিয়ে। আমার মনে পড়ে, একজন রমণী, যার সঙ্গে আমার পরিচয় পরিণয়ে পরিণত হয় নি, এবং যে আমাকে সবচে বেশী মানসিক কষ্টের ভেতর দিয়ে নিয়ে গিয়েছিল , তার সঙ্গে কথোপকথন। প্রচণ্ড ঝগড়াঝাটির মুহূর্তে একদিন আমার চোখ দিয়ে অঝোরে জল ঝরতে থাকে (ছেলেরাও কাঁদে ভাই। এটা স্বীকার করবার মধ্যে অন্তত আমার কোন লজ্জা নাই।)। উক্ত রমণী অবাক হয়ে আমাকে প্রশ্ন করে এ আমার কি নতুন ঢং। আমার মনে পড়ে, শেষরাতে, আমি তাকে যে জবাব দিয়েছিলাম। আমি তাকে বলেছিলাম, আমার শৈশবে এই সময়ে ঘুম থেকে উঠে আমি আমার খোদার সামনে দাঁড়াতাম। আর আজকে আমার অধঃপতন আমাকে কই নিয়ে দাঁড় করিয়েছে! একজন মানুষের হাতে আমি ক্ষমতা তুলে দিয়েছি, আমাকে এতটা কষ্ট দেবার ...
বলা বাহুল্য, সেই সম্পর্ক আর টেকে নি। সম্ভবত, তার জীবনে ছাড়াছাড়ির পেছনে শোনা সবচে উদ্ভট কারনগুলির একটা।
আমার স্ত্রীর সঙ্গে আমার পছন্দের বিয়ে। তার সঙ্গে পরিচিত হবার আগে আমি নিজের কাছে কয়েকটা প্রতিশ্রুতি করেছিলাম। তারমধ্যে একটা ছিল, আমি মুখবইয়ের পাতায় আমার জীবনসঙ্গী খুঁজবো না। বাস্তব জীবনে যার সঙ্গে পরিচয় নেই, এমন কারো সঙ্গে আর কিছু নয়। দ্বিতীয়ত, আমি লাইফে একটা চেইঞ্জ এনেছিলাম। ঘুমিয়ে পড়তাম দশটার দিকে। উঠতাম সকাল ছয়টায়। কাজেই সেই মাঝরাত, শেষরাতের রোমান্টিসিজম আমার বিয়ের আগেই শেষ হয়ে গিয়েছিল।
রাত জাগতে একটা সময় পর্যন্ত ভালো লাগে। তারপর ক্লান্তি এসে পড়ে। ফেসবুকের পাতায় একসঙ্গে পাঁচজনের সঙ্গে চ্যাট করাটা, ভুল উইন্ডোতে রিপ্লে না দিয়ে, সেটাও একটা বয়স পর্যন্ত স্কিল বলে মনে হয়। তারপর, একটা সময় গিয়ে এই পুরো ব্যাপারটার মধ্যে যে নিঃসীম শূন্যতা, হলোনেস, সেটা চোখের সামনে প্রস্ফুটিত হয় ধীরে ধীরে।
৪।
সবশেষ রাত জাগলাম গতপরশু। লাইলাতুল বারাত ছিল। কিছু প্রার্থনা, কিছু বিরতি নিতে নিতে ফজরের সময় চলে এলো। বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ালাম। আকাশের শুকতারা - দীর্ঘ দীর্ঘ দিন পর তার পুরাতন বন্ধুকে দেখে মুচকি হাসলো যেন। আমিও হাসলাম বিনিময়ে। এমন সময় ঘটলো এক অদ্ভুত ঘটনা। ভোরের স্নিগ্ধ হাওয়ার দমকে আমার ভেতর থেকে আরেক আমি, ছিটকে বেরিয়ে এলো আমার শরীর থেকে। আমার চোখের সামনে পাক খেতে খেতে দমকা হাওয়ার ঘূর্ণিপাকের সঙ্গে উড়ে চলল সে। মুগদা - টিটিপাড়া হয়ে জসিমুদ্দিন রোড - মতিঝিল - গুপিবাগ - টিকাটুলির মোড় - দয়াগঞ্জ - সূত্রাপুর - গ্যান্ডারিয়া - ফরিদাবাদ হয়ে আই জী গেইট ব্যাংক কলোনি, এ - ১ /১ নং ফ্ল্যাটে আমার রুমের সামনে নিয়ে হাজির করিয়ে দিলো আমাকে। ঘড়িতে তখন রাত চারটা।
আমার পুরনো বাড়িতে, আমার রুমের জানালার এপাশে দাঁড়িয়ে রুমের ভেতরে উঁকি দিয়েই আমি দেখতে পেলাম আমাকে। আমার দশ বছর আগের সেই আমি, বসে আছে জানালার ঐ ধারে। হাতে গিটার, চোখ বন্ধ তার, চোখে পানি ঝরছে, আর সেই আমি গেয়ে চলছে - "আমি অপার হয়ে বসে আছি, ওহে দয়াময়, পারে লয়ে যাও আমায়, পারে লয়ে যাও আমায় ..."। আমার মন চাইলো আমি ওকে ডাকি। আমার মন চাইলো, আজ হতে দশ বছর আগের আমিকে ডেকে আমি জিজ্ঞেস করি - সে কোন পারে যেতে চায়? সে কেন পারে যেতে চায়? সে কার হাত ধরে পারে যেতে চায়? সে কারে ডাকে, এই শেষ রাতে?
আমার ডাকা লাগে না। আমার কৈশোরের আমি, জানালার ঐ পাড় থেকে আমাকে দেখে ফেলে। এগিয়ে আসে। জানালা খুলে দেয়।
কিছুক্ষণ আমরা দুজনেই কোন কথা না বলে চুপচাপ থাকি। একটু পর সে নিজেই প্রথম মুখ খোলে।
- 'তুমি বদলে গেছো অনেক!'
- 'আমরা আলাদা কেউ নই।' আমি ভুল শুধরে দিই।
- 'তাও ঠিক।' একটু থেমে আমার আমি আবার প্রশ্ন করে
- 'কেমন আছো তুমি? কেমন আছি আমরা?'
- 'তোমার প্রার্থনা গৃহীত হয়েছে ভাই।' আমি হাসিমুখে উত্তর দিই, 'তুমি পাড়ে পৌঁছাবে।'
একটু থেমে যোগ করি
- 'বরং, তুমি পাড়ে পৌঁছেছো বন্ধু ...'
আমার আমি, আরেক আমি হাত বাড়িয়ে দেয় জানালার কাঁচের ওপার থেকে। আমিও হাত বাড়িয়ে দিই। কিন্তু আমি, আমার আমির হাত ছুঁতে পারি না। আমার শরীর আবার হালকা হয়ে, হাওয়া হয়ে যায়। আমি ফের উড়ে চলি। আমার আমি আমার দিকে তাকিয়ে থাকে, উরধে, উরধে। তার মুখে হাসি। তার চোখে পানি।
আমি ফের এসে মিলিত হই গ্রিন মডেল টাউনে আমার শরীরের সঙ্গে। শুকতারা তখন প্রায় নিভুনিভু। সুবেহ সাদিকের আলো ফুটে উঠি উঠি করছে।
আমি শুকতারাকে বলি - বন্ধু, অন্তরে কষ্ট নিয়ে যে তরুণ, বা তরুণী আজ বিছানায় গিয়েছে, একাকীত্ব - আর অপূর্ণতার কষ্ট নিয়ে, তাদের এই সংবাদ পৌঁছে দিও যে, তাদের কষ্ট কেটে যাবে একদিন, শীঘ্রই।
তারা যেন আশা না ছাড়ে।
তারা যেন খোঁজ বন্ধ না করে।
আগে নিজের খোঁজ।
তারপর মনের মানুষের।
আমি খোদার সামনে গিয়ে যখন দাঁড়াই, শুকতারা তখন আকাশে একলা জ্বলজ্বল করছে।
ছবিসুত্রঃ " Whirling Dervishes II — Sharmeen Malik "
৩১ শে মার্চ, ২০২১ বিকাল ৪:০৭
সাজিদ উল হক আবির বলেছেন: আচ্ছা ভাই। ধন্যবাদ।
২| ৩১ শে মার্চ, ২০২১ দুপুর ২:১৯
অধীতি বলেছেন: মোহিত হয়ে পড়লাম। নেছারিয়া মাদ্রাসায় থাকতে কলোনিতে পানি আনতে যেতাম। কলোনির মসজিদটা সুন্দর। কোন বৃষ্টির রাতে সেহেরির পরে হালকা বৃষ্টিতে কামিনি ফুল চুরি করে রেল লাইন ধরে সোজা হেটে গিয়েছিলাম বান্ধবীকে ফুল দিতে। মাঝরাত থেকে শেষরাত,শেষ রাত থেকে সকাল মাদ্রাসার রুমের জানালা থেকে কলোনির বিল্ডিংয়ের উপরে চাদের সাথে রোমান্টিকতা হত।
৩১ শে মার্চ, ২০২১ বিকাল ৪:০৯
সাজিদ উল হক আবির বলেছেন: ধন্যবাদ সুহৃদ ব্লগার। আমি চাচ্ছিলাম আমার এই লেখা তার পাঠককে নিজের ফেলে আসা অস্থির রাতগুলোর স্মৃতি স্মরণ করিয়ে দেয়। আপনার মন্তব্যে সে উদ্দেশ্য পূরণ হল। আপনার স্মৃতিচারণ ভালো লাগলো। কোন নেছারিয়া মাদ্রাসায় ছিলেন আপনি?
৩| ৩১ শে মার্চ, ২০২১ বিকাল ৩:১১
মোঃ মাইদুল সরকার বলেছেন:
আমার নিয়মিত রাতজান কখনো হয়নি। আমার প্রেমে পড়ে কেউ সরাসরি আমাকে ভালবাসে কথাটি জানায়নি বলে- আমি প্রেম-বিরহ সংক্রান্ত রাতজানগার অভিশাপ থেকে মুক্ত।
বই পড়া বা রেডিওর- ভুত এফ এম/জীবনের গল্প/কুয়াশা/ডর....ইত্যাদি শুনতাম। গতরাতে পড়লাম নগ্ন পুতুল নামের বিদেশি গল্পের বাংলা অনুবাদ।
গভীর রাতে মানুষ জেগে থাকে........বিভিন্ন কারণে । কেউ একাকীত্ব অনুভব করে, কেউ শুন্যতা, কেউ প্রেম-বিরহ। বিচিত্র মানুষ আরও বিচিত্র মানুষের মন তাই ফেলে আসা রাতেরা মনে পড়ে কখনো কখনো নিবরভাবে বা কখনো আলতোভাবে। ডাকে .. আগের আমিকে খোঁজে.... অতপর ফিরে যায়।
অবশ্যই যে গিয়েছে একাকী বিছানায় তার অপূর্ণতা সহসা দূর হবে, তাই আশা হারা না হই।
সুন্দর লিখেছেন। +++++++
৩১ শে মার্চ, ২০২১ বিকাল ৪:৪২
সাজিদ উল হক আবির বলেছেন: মন্তব্যে ধন্যবাদ, প্রিয় মাইদুল ভাই।
প্রেমবিরহজনিত কারণে রাত্রিজাগরণও জীবনের একটা অভিজ্ঞতা। দিল্লীকা লাড্ডুর মতই। বই পড়া নিয়ে অভিজ্ঞতা শেয়ার করলাম উপরেই, তবে কোন এক কারণে রেডিওটা আমার ঠিক শোনা হয়ে ওঠে নি। অনুবাদ বইয়ের ক্ষেত্রে, বাংলার বদলে ইংরেজিটা একটু কষ্ট করে অভ্যাস করে নিলে দেখবেন, বেশ মুলানুগ পাঠ সম্ভব হয়।
ঢাবির ক্যাম্পাস লাইফে আমাদের মধ্যে একটা কথা চাউর ছিল - সোডিয়াম বাতিতে জীবন দর্শন পুরো ভিন্ন রকমের হয়। এই জন্যে আমাদের ক্যাম্পাসে সাঁঝবেলাগুলো ছিল ঘোরলাগানো। কতো কতো স্বপ্নের জন্ম - রুপায়ন - আর মৃত্যু যে হোল ঐ আলোয়।
একই রকম কথা বোধয় গভীর রাতের ক্ষেত্রেও খাটে। গভীর রাতের একাকী যে আমি - সে আমির সঙ্গে অন্যান্য সময়ের আমির অনেক তফাৎ। একটা সময় ভালো লাগতো সেই সময়টাকে। পরে ক্রমাগত দোয়া করে গেছি ঐ সময়টা উৎরে যাবার। এখন আমার দিনের সবচে পছন্দের সময় বাদ ফজর, ভোরবেলাটা।
শুভকামনাসহ!
৪| ৩১ শে মার্চ, ২০২১ বিকাল ৩:২৩
মোঃ মাইদুল সরকার বলেছেন: গানটা শুনলাম। আপনি অভিনেতাও বটে। দেখছি গুণের যে শেষ নেই।
ছবিটা দেখে একটা টিভি প্রোগামের কথা মনে পড়ে গেল ঠিক এভাবে নাচছে একদল মানুষ। পড়নে সাদা পোষাক অনেকটা জায়গা জুড়ে সে পোষাকের বৃত্ত ঘুরে চলছে। স্প্যানিস নাকি অন্যদেশের নৃত্য ঠিক মনে নেই।
৩১ শে মার্চ, ২০২১ বিকাল ৪:৪৮
সাজিদ উল হক আবির বলেছেন: আবারো ধন্যবাদ, ফিরে এসে মন্তব্য করবার জন্যে, মাইদুল ভাই। অভিনয় শখে করতাম। এটা নিয়ে কয়েকদিন আগের একটা লেখায় কিছু হিন্টও দিয়েছিলাম বোধয়। গানের লিরিক যাতে কেউ হাপিস করে দিতে না পারে, এই ভয়ে মূল গানের লিঙ্ক যুক্ত করে দেয়া।
এই নৃত্যের ফর্মেট টা লেজেন্ড/ মিথ অনুযায়ী, মাওলানা রুমি রাহিমাহুমুল্লাহের আবিষ্কার। ঘূর্ণায়মান বিশ্ব চরাচরের মূল সূত্রের সঙ্গে নাড়ির সংযোগ আবিষ্কার করবার পর ফানাহ হয়ে যাওয়া দরবেশ এভাবেই নৃত্য করেন। এটা একটা ট্র্যাডিশন আকারে এখনও তুরস্কে প্রাকটিস করা হয়। এদের বলা হয় - ঘূর্ণায়মান কলন্দর, বা হুয়ারলিং দারভিশেস - view this link
৫| ৩১ শে মার্চ, ২০২১ বিকাল ৪:২৬
মনিরা সুলতানা বলেছেন: আমি অন্য লাইনে বা মোবাইলে রাতজাগার আগের জেনারেশন ! আমাদের রোকেয়া হলের রাত জাগা ছিল, পোস্টার ব্যানার কখনো ছাদের আড্ডা, রাতের বৃষ্টি। পরীক্ষার আগের রাত। আর অবধারিত ভাবে গল্পের বই সাথে ফিতার গান।
৩১ শে মার্চ, ২০২১ বিকাল ৪:৫৫
সাজিদ উল হক আবির বলেছেন: এটা ছিল আমার স্কুলজীবনের গল্প আপা। সময় পেছনের দিকে যায় না, নইলে এই তুমুল কানেক্টিভিটির সময় পেরিয়ে ঐ আগের ধীর স্থির সময়ে ঘাপটি মেরে বসে থাকতাম। প্রযুক্তির যা কিছু উন্নতি, তা মূলত ব্যবসায়ীদের জন্যেই। আমরা সাধারণ মানুষরা ক্রমশ নিজের থেকে নিজে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছি অতি সংযুক্ততার কারণে। শীতকালে রোকেয়া হলের বিপরীতের টং থেকে বিস্বাদ কর্ণসুপ, আর চা ছিল শরীর চাঙ্গা করবার হাতিয়ার। খুব সেরেইন একটা হল, আপনাদের রোকেয়া হল। আমি হলে থাকিনি কখনও যদিও।
শুভকামনাসহ।
৬| ৩১ শে মার্চ, ২০২১ বিকাল ৫:০২
বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: সুফিনৃত্যের তালে তালে ঘুরতে ঘুরতে আবার আত্মাকে ফিরিয়ে আনলেন অনন্ত প্রশান্তির মহাজগতে!
ভাল লাগলো!
মিলে গেল এক রাতের অনুভবের সংগে -
প্রিয়া আসবে বলে জেগে আছি বিনিদ্র রজনী! আসছে না .. আসছে না..
রাত বয়ে চলে- - কামস্রোতের তীব্রতায় আবিষ্ট স্বপ্নরা মূখর
রাত ৩ টে, সাড়ে তিনটা,
একসময় হঠাৎই মহাকাল যেন ঝাকুনি দিল-
হেই কি করছো?
একটা নারীর জন্য এত কষ্ট! একটু শারিরীক সূখের আশায় এত ধৈর্য্য!
সেই সাধূর গল্প মনে পড়ে গেল- প্রিয়ার কথা সারারাত বরফের চাইয়ে বসে থাকতে থাকতে যিনি
শেষ বেলায় স্রষ্টার সন্ধান পেয়েছিলেন-
কেঁপে উঠেছিল দেহমন!
লয় প্রলয়ের -ভেতর দিয়েই আসে জাগৃতি- যে জাগতে চায়!
৩১ শে মার্চ, ২০২১ সন্ধ্যা ৭:২৯
সাজিদ উল হক আবির বলেছেন: ভৃগুসাহেব, এই লেখায় আপনার মন্তব্যের হাকিকত, এবং মৌলিক সত্যটা ব্যাখ্যা করে বুঝান তো আমাকে - view this link
৭| ৩১ শে মার্চ, ২০২১ সন্ধ্যা ৭:১৮
মোঃ মাইদুল সরকার বলেছেন:
ধন্যবাদ লিংক দেওয়ার জন্য। অনেকদিন পর আবার দেখলাম সাদা পোষাকে তুর্কি ঘূর্ণায়মান কলন্দর নৃত্য।
রাত জেগে একসময় ম্যাসে থাকতে কার্ড(তাস ) খেলা হতো মাঝে মাঝে, অনেক বছর খেলা হয়না মিস করি।
গভীর রাতের নিজস্ব একটা মহিমা আছে। অনেক সফল ব্যক্তিত্বই রাত জেগে কাজ করেছেন। তবে রাত হচ্ছে বিশ্রামের জন্য সবচেয়ে বড় নেয়ামত।
মনে পড়ে যায় অন্ধাররাতে গ্রামের ক্ষেতে একবার গিয়েছিলাম। কি যে ভয়াবহ অনুভূতি নিজের অস্তিত্বই যেন টের পাওয়া যায়না এমন ঘুটঘুটে আধার, চারপাশ কেবল শূন্যতা যেন পৃথিবীতে কেউ নেই, কিছু নেই .........।
৩১ শে মার্চ, ২০২১ সন্ধ্যা ৭:৪৭
সাজিদ উল হক আবির বলেছেন: আবারো এসে মন্তব্য করায় ধন্যবাদ, প্রিয় মাইদুল ভাই। ম্যাসে বা হলে কখনও না থাকার কারণে দলবদ্ধভাবে রাত উৎযাপন আমার আসলে হয়ে ওঠে নি কখনও। ঘুটঘুটে আঁধার রাতে আকাশ দেখার স্মৃতি মনে দাগ কেটে আছে বান্দরবানে, আর সেইন্ট মারটিনস দ্বীপে। রাত্রিবেলা একা থাকার মুহূর্তগুলোর একটা বড় বৈশিষ্ট্য হল, এসময় আমরা একদম একাভাবে নিজের অস্তিত্বের সম্মুখীন হই। তখনই অতীত জীবনের ঘটন অঘটন বায়স্কোপের মতো চোখের সামনে ভাসতে থাকে। সেটা এড়ানো খুব মুশকিল, যদি না হাতে স্মার্টফোন থাকে।
আপনার সুন্দর অনুভূতিগুলো শেয়ার করবার জন্যে শুকরিয়া।
৮| ৩১ শে মার্চ, ২০২১ সন্ধ্যা ৭:৫০
বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন:
কিসের মাঝে কি?
পান্তা ভাতে ঘি!!!!
ঐ পোষ্টে আপনার প্রতমিন্তব্য কতৃপক্ষ দেখলাম মুছে দিয়েছে!!!
নিশ্চয়ই ভাল কিছু মুছে ফেলা হয় না! তাই না।
আর বিশ্বাসের ব্যাপারটা মানুষের সংখ্যার মতোই বহুত্ববাদী! মিল-অমিল ব্যাবধান থাকবেই!
আখেনাটেন ভায়ার প্রশ্নের উত্তর সুন্দর ছিলনা। হয়নি যে জন্যেই তা মুছে দেয়া হয়েছে!
তো এতদিন পর সেই লিংক এবং ইস্যু উল্লেখ হাকীকত আর মৌলিকত্ব দিয়ে কি বোঝাতে বা প্রমান করতে চাইছেন?
আপনার পোস্টে এসেছি, মন্তব্য করেছি তা পছন্দ নয়?
৩১ শে মার্চ, ২০২১ রাত ৮:০৮
সাজিদ উল হক আবির বলেছেন: আমার আগ্রহের জায়গা স্রেফ এতটুকু বোঝা যে, আপনি আপনার নিজের কথার দু'পয়সা মূল্য নিজে দেন কিনা।
ঐ গীবতের আখড়া পোস্টে আপনি আমার মূল্যায়ন করেছেন এভাবে যে -
"তবে সত্য হলো কি, মূখোশ কেউ বেশিদিন ধরে রাখতে পারেনা।
হাকিকত বা মৌলিক সত্যটা এমনি কোন মুহুর্তে বুঝি টুস করে খসে পড়ে!"
অথচ আজ বেশ দুলকি চালে এসে মন্তব্য করছেন, যেন কোনদিন আমার নামে মিথ্যে কোন অপবাদ দেন নি।
আখেনটানের সঙ্গে ঘটনাটার আগে, আমার পূর্বের বিবিধ পোস্টে আপনি আমাকে সাধুবাদ জানানোসহ টুপি খোলা অভিবাদন পর্যন্ত জানিয়েছেন।আখেনটান নিকের মন্তব্যের আগে বা পরে, আমার এরকম বিক্ষুব্ধ মন্তব্য কখনও দেখেছিলেন বলে আপনার মনে পড়ে? তাহলে, আপনার সঙ্গে আমার পূর্বে হৃদ্যতাপূর্ণ ব্লগীয় সম্পর্ক বিবেচনা না করে, আখেনটান নিকের মন্তব্যের মধ্যেও সমস্যা থাকতে পারে কিনা- সেটা চিন্তা না করে, আমি ব্লগে সবসময়ই একটা মুখোশ পরে থাকি - এরকম একটা ঘোষণা দিয়ে দেয়াটা কি আপনার সঠিক হয়েছে?
ব্লগে আমি মুখোশ পরে থাকি - এই মিথ্যে কথাটা বলার জন্যে আপনি ঐ পোস্টে, অথবা এই পোস্টে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইবেন।
নইলে আজ যে কথাগুলো শুনালাম, এগুলো নিয়ে অন্য কোন পোস্টে কান্নাকাটি করবেন। এমুখো হবেন না।
আমার কাছে আমার আত্মমর্যাদা গুরুত্বপূর্ণ। আপনাদের মতো ঠুনকো নই, যে কাল একটা মিথ্যে অপবাদ দিলাম একজনের নামে, আবার পরশুদিন গিয়ে তার কাঁধে হাত রেখে খুব একটা বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ করে বেড়ালাম। এটা আমার ধাত নয়। এই নিয়েই টিকে আছি এই প্ল্যাটফর্মে। সমস্যা হয় নি। হবেও না ইনশাআল্লাহ।
৯| ৩১ শে মার্চ, ২০২১ রাত ৮:৩৪
বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: হা হা হা
হাসালেন বৈকি!
কেউ কারো পোষ্টে না গেলে কিছু যায় আসে কি? আর এমন শিশুতোষ আচরণ করে আপনি আবারো নিজের হাকীকতই প্রকাশ করলেন বটে।
ঐ পোষ্টের শুরুতেই বলা ছিল আমার পূর্বাপর অনুপস্থিতির কথা। তারপরও আপনার মন্তব্য শালীনতা অতিক্রম করেছিল বলেই মনে হয়েছিল। এবং এখন যা প্রমানীত। কারণ তা মুছে দেয়া হয়েছে।
সো তা নিয়ে ক্ষমা চাইবার প্রশ্নই আসে না।
অন্য পোষ্টে কান্নাকাটি মানে? কি মনে করেন নিজেরে? ব্লগের সক্রেটিস?
আপনার ব্লগে না এলে পেটে ব্যাথা হবে? হা হা হা
লেখার টানে এসেছিলাম। এবারও বেশ ক মাসের গ্যাপ গেছে । এবং পুরানা সিলি কাসুন্দি মনে ধরে রাখিনা।
তাই অত খেয়াল করিনি। এখন থেকে মনে থাকবে। আর আসলাম না।
তবে একটা লাভ হলো মানুষ চিনলাম ।
ভাল থাকুন।
৩১ শে মার্চ, ২০২১ রাত ৯:০৭
সাজিদ উল হক আবির বলেছেন: আমি কি মন্তব্য করেছি, আপনার নামে গীবতের আখড়া পোস্টে বাকি কে কি বলেছে, ব্লগ কর্তৃপক্ষ কি করেছে - এগুলো নিয়ে আমার অভিযোগ নয়। আপনার প্রতি আমার সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছিল - আপনি গীবত করেছেন আমার নামে, যে আমি মুখোশ পড়ে ব্লগিং করি। আপনি এ প্রসঙ্গে কোন কথা না বলে প্রথমে হাসলেন, চোখ টিপ দিলেন - যেটা প্রমাণ করে আপনি একজন বেয়াদব। দ্বিতীয়ত, আমার মুখোশ কোনটা, আর আমি সাড়ে সাত বছরের ব্লগে আখেনটানের ঐ মন্তব্যের জবাব ছাড়া আর কবে কার সঙ্গে উত্তেজিত ব্যবহার করেছি, বিশেষত অন্য কারো পোস্টে মন্তব্য করার সময় - তা নিয়ে একটা বাক্য ব্যয় না করে, নানা আবোল তাবোল বলে নিজের অপরাধ ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করে প্রমাণ করলেন আপনি একজন জালেম। ব্যাস এতোটুকুই বোঝাই যথেষ্ট আমার জন্যে।
৩১ শে মার্চ, ২০২১ রাত ৯:১৬
সাজিদ উল হক আবির বলেছেন: আর কয়েকজনের হুক্কাহুয়ার প্রেক্ষিতে আমার মন্তব্য ব্লগ কর্তৃপক্ষ যে মুছে দিয়েছিলেন, এটা নিয়ে আপনাদের মধ্যে এক বিশাল বিজয়ের পৈশাচিক আনন্দ দেখা যায়। যদিও, ব্লগের তরফ থেকে নেয়া একটি সঠিক সিদ্ধান্ত ছিল বলে আমি মনে করি। এটাও ভালো হত, যারা আমার মন্তব্যের সমাচলনা করতে গিয়ে আমার পরিবারকে টেনে এনেছিল তাদেরকে বিচারের আওতায় আনা হত। কারন, এটা একটা জঘন্যতম কাজ। আখেনটান নিককেও আমি বাপ মা তুলে কোন কথা বলি নি।
ঐ গীবতের আখড়ায় আপনারা যারা ছিলেন, তারা এই ব্লগের সবচে মাস্তান সিন্ডিকেট। নিজেরা নিজেরা লেখেন, আর পীঠ চাপড়ে চাপড়ে কমেন্ট করে করে পোস্ট হিট বানিয়ে রাখেন। আপনারা কি লেখেন, তার মান কতদূর, তার প্রাসঙ্গিকতা কি, বাংলাদেশের মানুষ তা থেকে কি শিখবে, কি চিন্তা করবে - এ সমস্ত বিষয় নিয়ে মন্তব্য করব না।
যদি আমার ঐ মন্তব্য মুছে ফেলা না হতো, আর আপনারা এক সিন্ডিকেটের দশ - পনেরো জন একসঙ্গে লেখা শেয়ার করা বন্ধ করে দিতেন, যেটা উদাসী স্বপ্ন লেখা বন্ধ করবার পর ব্লগার জেন রসিসহ আরও কয়েকজন করেছে, তবে সেটা ব্লগের জন্যে একটা আলাদা ঝামেলা হতো। এটা আমার মন্তব্য ডিলিট হওয়া সংক্রান্ত আন্ডারস্ট্যান্ডিং। নইলে ব্লগে এখনও আল্লাহ, রাসুল (সঃ), এবং কোরআনকে নিয়ে প্রচুর পরিমাণ বাজে, অসভ্য, অভব্য মন্তব্য প্রতিদিন করা হয়। ব্লগ কর্তৃপক্ষ - এসমস্ত সেনসিটিভ ইস্যুতে চোখ বুজে রেখে আমার একটা ব্যাখ্যা প্রদান করা যৌক্তিক ক্ষোভ, (যেটার বহিঃপ্রকাশের ধরন ঠিক ছিল না বলে আমি নিজে দুঃখ প্রকাশ করেছি, আপনাদের গীবতের ছয় মাস পরে, ভয় থেকে নয়, বরং একজন মুসলমানের আচরণ যেরকম হওয়া উচিৎ, সে অনুযায়ী) ব্লগ কর্তৃপক্ষ যেচে এসে মুছে দেবেন, এটা আমি মনে করি না।
৩১ শে মার্চ, ২০২১ রাত ৯:১৮
সাজিদ উল হক আবির বলেছেন: আর প্রতিমন্তব্যেও, অত্যন্ত ক্রুদ্ধ, এবং আপনাদের ভাষায় কদর্য শব্দ চয়নে হলেও, আমি ব্যখ্যা দিয়েছিলাম কেন আমি বিরক্ত হয়েছিলাম আখেনটান নিকের মন্তব্যে। আমি এখনও একহাজার শব্দের একটা আলাদা আর্টিকেল লিখতে পারবো আখেনটানের মন্তব্যের সমস্যা নিয়ে। আপাতত একটা পুনরুল্লেখ করি, যেটা বোঝা ছিল সবচে সহজ, কিন্তু আপনাদের ঘিলু আপনাদের আত্মমর্যাদার সমানুপাতিক হওয়ায় চোখ এড়িয়ে গেছে। আখেনটান নিক স্রেফ তর্ক শুরু করবার জন্যে "ধরুন যদি..." বলে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের জেনোসাইড সাপোর্ট করছিল। যদি এটা ঐ নিকের সরাসরি ইনটেনশন না ও হয়ে থাকে, এ সমস্ত সেনসিটিভ ইস্যুতে মন্তব্য করার সময় সতর্কতা অবলম্বন করা উচিৎ ছিল। একটা জেনোসাইডের ব্যাপারে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ সমর্থন পৃথিবীর সমস্ত জেনোসাইডকেই হেলাফেলার চোখে দেখার সুযোগ তৈরি করে দেয়।
এবং, সৃষ্ট ব্যাকল্যাশ ট্যাকল দিতে, ব্লগ যাতে আপনাদের কান্নাকাটি করে লেখা বন্ধ করে দেয়ায় ক্ষতিগ্রস্থ না হয়, সে উদ্দেশ্যে ক্রমাগত প্রায় দু' - তিনসপ্তাহ প্রতিদিন কিছু না কিছু লেখা শেয়ার করেছি, যাতে ব্লগে পোস্টের চাকা সচল থাকে। এটা নিয়েও বিশাল গবেষণা চলেছে ব্লগে।
৩১ শে মার্চ, ২০২১ রাত ৯:২০
সাজিদ উল হক আবির বলেছেন: আপনাদের সিন্ডিকেটের তরফ থেকে 'ব্লগের পরিবেশ রক্ষা' আন্দোলন ব্লগের সবচে ফ্যাসিবাদী আন্দোলন। তাই রাজীব নূর সাহেবের ব্লগে গিয়েও যখন আপনারা একই আওয়াজ তোলা শুরু করেছিলেন এ মাসে, আমি সরাসরি গিয়ে মন্তব্য করেছিলাম, ব্লগের পরিবেশ রক্ষার ঠ্যাকা কাঁধে না নিয়ে মানসম্মত লেখা শেয়ার করে ব্লগের মান বৃদ্ধি করুন। যদিও রাজীব নূর সাহেব মাঝেমাঝেই আমার ধর্মীয় সেন্টিমেন্টে আঘাত দিয়ে লেখেন। তবুও, আমি চাই, তার বাকস্বাধীনতা থাকুক, যতক্ষণ তা চিন্তিত হয়, এবং অন্যমানুষের জন্যে খুব বড়সর পীড়ার কারন না হয়।
আপনাদের সবাই, ঐ পোস্টে যারা মন্তব্য করেছিলেন, আমার মন্তব্যের সমালোচনা করতে গিয়ে আমার পরিবারকে পর্যন্ত গালিগালাজ করতে ছাড়েন নি - আপনাদের উদ্দেশ্যে আমার একটা ওপেন চ্যালেঞ্জ আছে। বর্তমানে যে নিকে যা কিছু লেখেন, সে নিকে লেখা বন্ধ রেখে নতুন একটা নিক থেকে লেখা শেয়ার করে দেখুন কি রেসপন্স পান। শর্ত এতটুকু যে - সৎ থাকবেন। নিজেদের মধ্যে তথ্য বিনিময় করবেন না যে আমি এই নিক থেকে লিখছি, পুনরায় এসে আমার নতুন নিকে একটু পীঠ চুলকে দাও। এবং গনহারে ব্লগে সবার লেখায় গিয়ে মন্তব্য করে করে ব্লগে পাঠক টেনে আনবেন না। দেখেন সেফ হতে কয়দিন লাগে। কয়জন আপনাদের লেখা পড়ে। আমার লেখায় যেমন লেখার টানেই এসেছেন, দেখেন আপনার - আপনাদের লেখার চৌম্বকত্ব কতোদূর।
১০| ৩১ শে মার্চ, ২০২১ রাত ৯:৪০
নুরুলইসলা০৬০৪ বলেছেন: তিন
৩১ শে মার্চ, ২০২১ রাত ১০:০০
সাজিদ উল হক আবির বলেছেন: হেই মিয়া, এক দুই তিন গনা বাদ দিয়া যান আমার উপরের কমেন্টগুলিতে একটা কইরা লাইক দিয়া আসেন।
১১| ০৮ ই এপ্রিল, ২০২১ রাত ৮:৩২
অধীতি বলেছেন: কলোনীর শেষ মাথায় দেয়ালের ওপাশে একটা মাদ্রাসা আছে ওটা।
©somewhere in net ltd.
১| ৩১ শে মার্চ, ২০২১ দুপুর ২:০৭
শোভন শামস বলেছেন: এ ইয়ার উইথ রুমি, রুমির কবিতা,বইটা ভাল লাগবে। বাংলায় অনুবাদ করেছেন আনোয়ার হোসেইন মঞ্জু।