নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সাধু সাবধান ! ব্লগের মালিক বঙ্গালা সাহিত্যকে ধরিয়া বিশাল মাপের ঝাঁকি দিতে নিজেকে শারীরিক ও মানসিক ভাবে প্রস্তুত করিতেছেন। সেই মর্মে তিনি এখন কিটো ডায়েটিং, ডন-বৈঠক ও ভারোত্তলন প্রশিক্ষণে ব্যস্ত। প্রকাশিত গ্রন্থঃ১। শেষ বসন্তের গল্প । (২০১৪)২। মিসিং পারসন - প্যাত্রিক মোদিয়ানো, ২০১৪ সাহিত্যে নোবেল বিজয়ী (অনুবাদ, ২০১৫) ৩। আয়াজ আলীর ডানা (গল্পগ্রন্থ - ২০১৬ ৪। কোমা ও অন্যান্য গল্প(গল্প গ্রন্থ, ২০১৮) ৫। হেমন্তের মর্সিয়া (কবিতা, ২০১৮) ৬। কাঁচের দেয়াল (গল্পগ্রন্থ, ২০১৯) ৭।শহরনামা (উপন্যাস, মাওলা ব্রাদার্স, ২০২২), ৮। মুরাকামির শেহেরজাদ ও অন্যান্য গল্প (অনুবাদ, ২০২৩), ৯। নির্বাচিত দেবদূত(গল্পগ্রন্থ, ২০২৪), ১০। দেওয়ানেগির চল্লিশ কানুন/ফরটি রুলস অফ লাভ (অনুবাদ, ঐতিহ্য, ২০২৪)
ছবিঃ বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, ঢাকা পরিসদের ফেসবুক পেইজের কাভার ফটো
১।
ভাষার মাস ফেব্রুয়ারিতে, খুব অবাক হয়ে লক্ষ্য করলাম, ছাত্র ইউনিয়নের সদস্যরা তাদের ফেসবুকের পোস্টে 'ফুক্কা কুল্লে নেজামিন' হ্যাশট্যাগ ব্যাবহার করা শুরু করেছে। নিঃসন্দেহে এই বাক্য বাংলা না। সারা বছর আমাদের ভাষার ব্যবহার নিয়ে অবস্থান যাই থাকুক, অন্তত ফেব্রুয়ারি মাসে আমাদের একটা আলাদা সচেতনতা থাকে সর্বক্ষেত্রে বাংলা ভাষা ব্যবহার করার। এমন সময়ে, ডিজিটাল প্লাটফর্মে এমন একটা শ্লোগানকে হ্যাশট্যাগ হিসেবে ব্যবহার করা, যা হয়তো আরবি, বা ফার্সি, অথবা উর্দু (আমার ভাষা বিষয়ক সংকীর্ণতার কারনে নিশ্চিত হতে পারছি না), কারন কি হতে পারে?
ফ্রেইজটা গুগল করলে মাওলানা ভাসানির নামে পরিচালিত অফিশিয়াল পেইজের একটা লিঙ্ক এলো। সেই লিঙ্কের সূত্রে পাওয়া পোস্টে জানা গেলো, মাওলানা ভাসানি নিজের বক্তৃতায় প্রায়ই এই বাক্যটা শ্লোগান হিসেবে ব্যবহার করতেন। 'ফুক্কা কুল্লে নেজামিন' শ্লোগানটার কাব্যিক বাংলা অনুবাদ এরকম - 'বিদ্যমান সকল শোষণ ভেঙ্গে দাও, গুঁড়িয়ে দাও'।
সোশ্যাল মিডিয়ায় গণ সংহতির পেইজে ঘোরাঘুরি করে দেখলাম, বিগত কয়েকমাস ধরে ধর্ষণ বিরোধী আন্দোলন, এবং ডিজিটাল অ্যাক্টে কারাবন্দী থাকা অবস্থায় লেখক মুশতাক আহমেদের মৃত্যুর ইস্যুতে তারা রাজপথে সোচ্চার। তাদের মধ্যে অনেকেই এই শ্লোগান, বা শ্লোগানের বঙ্গানুবাদকে ব্যবহার করে সরব হয়েছেন রাজপথে।
মাওলানা ভাসানির নামে পরিচালিত পেইজ থেকে শেয়ারকৃত স্ট্যাটাসের সূত্রে আরও জানা গেলো, ভাসানি এই শ্লোগানের জন্মদাতা নন। বিদ্যমান জুলুম নিপীড়ন ভেঙ্গেচুরে গুঁড়িয়ে দেয়ার আওয়াজ জিনি তোলেন, তার নাম শাহ ওয়ালীউল্লাহ মুহাদ্দিসে দেহলভী (রঃ)।
২।
শাহ ওয়ালীউল্লাহ মুহাদ্দিসে দেহলভী রঃ, (১৭০৩ - ১৭৬২) - এর নাম প্রথম শোনা স্কুলজীবনে। তিনি প্রাসঙ্গিক হয়ে ওঠেন, যখন ক্লাস নাইনের থাকতে, মাধ্যমিক সামাজিক বিজ্ঞান বইয়ে ব্রিটিশ উপনিবেশবাদ বিরোধী গ্রাসরুট আন্দোলনগুলির একটা হিসেবে উল্লেখ করা হয় মুসলিম ফকির সন্ন্যাসীদের আন্দোলনকে। সে টেক্সট বইয়ে মীর নিসার আলী তিতুমীর (১৭৮২ - ১৮৩১), হাজী শরিয়তুল্লাহের( ১৭৮১ - ১৮৪০) উপর আলাদা অনুচ্ছেদ ছিল, যেমন ছিল মাষ্টারদা সূর্যসেন, ক্ষুদিরাম, প্রীতিলতার ওপর।
তিতুমীরের জীবনীর আলোচনায় সংক্ষেপে একটা নাম আসে, যার মতাদর্শ দ্বারা তিতুমীরকে প্রভাবিত ছিলেন বলে উল্লেখ করা হয়। তিনি হচ্ছেন, শাহ আহমদ শহীদ বেরেলভী (১৭৮৬ - ১৮৩১) । শাহ আহমদ শহীদ বেরেলভীর ব্যাকগ্রাউন্ড ট্রেস করে পাওয়া যায়, তিনি ছিলেন দিল্লীর শাহ আবদুল আজিজ মুহাদ্দিসে দেহলভী রঃ (১৭৪৬ - ১৮২৪) এর ছাত্র।
শাহ আবদুল আজিজ সাহেব, শাহ ওয়ালীউল্লাহ সাহেবের পুত্র, এবং স্থলাভিষিক্ত দেহলভী (দেহলভী অর্থ 'দিল্লীর' ) মুহাদ্দিস, বা হাদিসের শিক্ষক, যিনি ব্রিটিশ ভারতকে দারুল হারব বলে ফতোয়া দেন, এবং ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক যুদ্ধে জড়িয়ে পড়াকে ভারতীয় মুসলমানদের জন্যে প্রয়োজনীয় বলে ঘোষণা করেন।
এভাবে, শাহ ওয়ালীউল্লাহ মুহাদ্দিসে দেহলভী (রঃ) এর সঙ্গে আমাদের বাংলা অঞ্চলে ফকির সন্ন্যাসীদের একটা সরাসরি সূত্র তৈরি হয়। সূত্র তৈরি হয় অভিন্ন পরিচয়ে দাঁড়িয়ে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শক্তির বিরুদ্ধে সংগ্রামের।
"শাহ ওয়ালীউল্লাহ সাহেব মুহাদ্দিসে দেহলভী - শাহ আবদুল আজিজ সাহেব - সৈয়দ আহমদ সাহেব শহীদ - সৈয়দ ইসমেইল সাহেব শহীদ - বালাকোটের ময়দানে শিখদের বিরুদ্ধে মুসলমানদের পরাজয় - সিপাহী বিদ্রোহ - থানাভবন, সাহারানপুর এলাকায় সংঘটিত ব্রিটিশ বিরোধী শামলির যুদ্ধ - হাজী এমদাদুল্লাহ মুহাজেরে মক্কী - হাফেজ যামেন শহীদ - মাওলানা কাসেম নানুতবী - মাওলানা রশিদ আহমদ গাঙ্গুহি - দেওবন্দ মাদ্রাসা - মাওলানা ভাসানি" এই চেইনে ফুক্কা কুল্লে নেজামিন শ্লোগান আজকের গণ সংহতি আন্দোলনের মুখে।
৩।
কোন প্রসঙ্গে শাহ ওয়ালীউল্লাহ মুহাদ্দিসে দেহলভী 'ফুক্কা কুল্লে নেজামিন' , বা 'বিদ্যমান সকল শোষণ গুঁড়িয়ে দাও' বাক্যটি প্রথম উচ্চারণ করেছিলেন, তার ব্যাপারে দু' একটি কথা বলা প্রয়োজন হয়ে পড়ে।
মাওলানা ভাসানির পেইজ থেকে শেয়ার করা পোস্ট দাবী করে এই মতবাদ শাহ ওয়ালীউল্লাহ মুহাদ্দিসে দেহলভী সাহেব প্রদান করেন ১৭৪৮ সালে। অপরদিকে বাংলাদেশের লেখক মনযূর আহমাদ, ভারতের মাওলানা উবাইদুল্লাহ সিন্ধী সাহেব বিরচিত শাহ ওয়ালীউল্লাহের সিয়াসতি (রাজনৈতিক) মতবাদ সংক্রান্ত বইয়ের বরাতে উল্লেখ করেন, শাহ ওয়ালীউল্লাহ সাহেব এই 'ফুক্কা কুল্লে নেজামিন' বা, 'ফুক্কা কুলা নিজাম' মতবাদের প্রবর্তন করেন ১৭২৮ - ২৯ খৃস্টাব্দে, যখন তিনি মাতৃভূমি ভারত ছেড়ে আরব ভূখণ্ডের হিজাজে ২ বছরের জন্যে গমন করেন হজ্জ, হাদিস শিক্ষা, আত্মিক ও আধ্যাত্মিক সাধনে উচ্চতর দক্ষতা অর্জনের জন্যে। পৃথিবীর নানা অঞ্চল থেকে আসা মুসলিমদের সঙ্গে আলাপ আলোচনা, তাদের স্ব স্ব দেশের রাজনৈতিক - অর্থনৈতিক - ধর্মীয় - আধ্যাত্মিক অবস্থার ব্যাপারে ওয়াকেফহালিয়ত তাকে ভারতে সামগ্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা ভেঙ্গে দিয়ে নতুন রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রবর্তনের চিন্তাধারার দিকে নিয়ে যায়।
ওয়ালীউল্লাহ সাহেবের এই মতবাদের পেছনে প্রেক্ষাপট হিসেবে কাজ করে সম্রাট আওরাঙ্গজেবের মৃত্যুর পর ভারতভূমে উদ্ভূত অস্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিস্থিতি। তারমধ্যে আছে মুঘল সাম্রাজ্যে বিদ্যমান শিয়া - সুন্নি বিভেদ, একেরপর এক প্রাসাদ ষড়যন্ত্রে ১৭০৭ থেকে ১৭৫৭ সালের মধ্যে সর্বমোট ১০ জন সম্রাটের পালাবদল, যাদের মধ্যে কেবল ৪ জনের মৃত্যু স্বাভাবিকভাবে হয়েছিল, বিভিন্ন রাজ্যের সুবাহদাররা দিল্লীর কেন্দ্রীয় শাসন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে নিজেদের স্বাধীন শাসক হিসেবে ঘোষণা করা, দক্ষিণ ভারতে মারাঠা বিদ্রোহী শক্তিসমূহের এক সংঘবদ্ধ রূপ ধারন, দিল্লীর উত্তর পূর্বাঞ্চলে রোহিলা পাঠানদের স্বাধীনতা ঘোষণা, দিল্লীর দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলে জাঠদের শক্তিবৃদ্ধি, এবং দিল্লীর উত্তর পশ্চিমে শিখ খালসার এক প্রবল শক্তিশালী রাজনৈতিক শক্তিরূপে আবির্ভাব। এরই মধ্যে ইরানী নাদির শাহ, আর আফগানি আহমদ শাহ আবদালির মুহুর্মুহু ভারত আক্রমণ যাতে হিন্দু - মুসলিম জনসাধারণের জীবন প্রায় একইভাবে আক্রান্ত হয়।
এই প্রেক্ষিতে, "ফুক্কা কুল্লে নেজামিন" মতাদর্শের বিস্তারিত - বিস্তৃত দার্শনিক ব্যাখ্যাসম্বলিত বই "হুজ্জাতুল্লাহিল বালেগা" তে শাহ ওয়ালীউল্লাহ সাহেব তার সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, মৌলিক মানবাধিকার, পররাষ্ট্রনীতি, ধর্মনীতি সংক্রান্ত দর্শন তুলে ধরেন। এই গ্রন্থের 'সিয়াসাতুল মদিনা' বা 'নগর প্রশাসন' নামক অধ্যায়ে তিনি রোম/ বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্য, এবং প্রাচীন ইরানের সম্রাটদের জাঁক- জমক, বিলাসব্যাসন, প্রজাদের উপর অত্যাচার ও অন্যায়ভাবে কর আরোপের উদাহরণ দেখান, তার সঙ্গে তৎকালীন (১৮শ শতকের আওরাঙ্গজেব পরবর্তী) ভারতের শাসকদের তুলনা করেন, এবং উল্লেখ করেন, এই যুগে ( অর্থাৎ তার যুগে) রাষ্ট্রের অধঃপতন ঘটবে মূলত দুটি কারনে -
এক, বিশেষ কোন কাজকর্ম না করে, যোগ্যতার পরিচয় না দেখিয়ে বংশানুক্রমে, বা বৈশিষ্ট্যানুসারে পদ - প্রতিপত্তি, ও ধন সম্পদের অধিকারী হওয়া। যেমন রাজার অযোগ্য সন্তানের রাজা হওয়া, উজির , সুবাহদারদের অযোগ্য সন্তানদের পিতার স্থলাভিষিক্ত হওয়া, পীরের ছেলে গদ্দিনশিন পীর হওয়া ইত্যাদি।
দুই, রাজন্যবর্গের বিলাসব্যাসনের চাকা সচল রাখতে কৃষক, বণিক, কারিগরি ও হস্তশিল্পের সঙ্গে জড়িত ক্ষুদ্র পেশাজীবীদের ওপর ভারী অঙ্কের করারোপ, এবং কর আদায়ে অত্যাচারের আশ্রয় নেয়া।
এছাড়াও, মালিক - শ্রমিক সম্পর্কের আলোচনায় শ্রমজীবী মানুষের পক্ষে শাহ ওয়ালীউল্লাহ সাহেব তার হুজ্জাতুল্লাহিল বালেগাতে এমন অনেক বক্তব্য রাখেন, যার মূল সুর অনুরণিত হয় তার প্রায় একশো বছর পর কার্ল মার্ক্স - এঙ্গেলস প্রণীত ডাস ক্যাপিটালে, যদিও তার অর্থ এ নয় মার্ক্স - এঙ্গেলস শাহ ওয়ালীউল্লাহের চিন্তা দ্বারা প্রভাবিত ছিলেন।
মার্ক্সের চিন্তা, আর শাহ সাহেবের চিন্তার এপিস্টেমোলজিও ভিন্ন।
মাওলানা ভাসানির পেইজ থেকে শেয়ার করা পোস্ট থেকে যদি কোট করি -
"শাহ ওয়ালিউল্লাহ (রঃ) এবং কার্ল মার্ক্সের মতবাদের এক জায়গায় বিশাল পার্থক্য- ধর্ম। তাঁরা যার যার সময়ে, নিজ নিজ দেশে, আপন ভঙ্গিমায়, নিজস্ব ভাষায় নিজের মতবাদটি ব্যাখ্যা করেছেন এবং সফলও হয়েছেন।"
অর্থাৎ, মার্ক্সের চিন্তা ইউরোপিয়ান মূলধারার দার্শনিকদের সূত্র হতে উৎসারিত, যেখানে শাহ সাহেবের চিন্তার এপিস্টেমলজিক্যাল রুট ইসলামি থিওলজিক্যাল স্ক্রিপচারস। ভিন্ন ভিন্ন সমাজবাস্তবতায় তারা নিজ নিজ মতামত প্রদান করেছেন, দাঁড়িয়েছেন লুণ্ঠিত, নিপীড়িত মানুষের পাশে।
মাওলানা ভাসানির রাজনীতির সার, তার ফেসবুক পৃষ্ঠার উক্ত পোস্ট দাবী করে, শাহ সাহেবের হুজ্জাতুল্লাহিত বালেগার ফুক্কা কুল্লে নেজামিনের সঙ্গে মার্ক্স এঙ্গেলসের কমিউনিস্ট মেনিফেস্টোর শেষ লাইন - 'ওয়ার্কিং মেন অফ অল কান্ট্রিস, ইউনাইট!' বা 'দুনিয়ার মজদুর এক হও' - এই দুই স্লোগানের সংমিশ্রণ। যেহেতু শহুরে বিলাসপ্রবণ, পিছুটান সম্বলিত মধ্যবিত্ত শ্রেণী সংগ্রামে লিপ্ত হবে না, ধনিক পুঁজিপতি শ্রেণী ঘৃণার চোখেই দেখবে শ্রেণী সংগ্রাম, মাওলানা ভাসানির চিন্তা ছিল বাংলা ভূখণ্ডের খেটে খাওয়া কৃষক - শ্রমিক গোষ্ঠীর উপর। তাদের ধর্মবিশ্বাস থেকে বের করে আনার বদলে তাদের ধর্মবিশ্বাসকেই শক্তি হিসেবে ব্যবহার করে পুঁজিবাদী ব্যবস্থার শোষণের বিরুদ্ধে লড়াই করা ছিল তার 'হুকুমতে রব্বানিয়া' - র মূলনীতি
মাওলানা ভাসানি বলেন -
"কমিউনিস্টরা ব্যক্তিগত মালিকানার উচ্ছেদ কামনা করেন বটে, কিন্তু তাহাদের মতে উহা আল্লাহর নামে না হইয়া রাষ্ট্রের নামে হইতে হইবে। আলেম-ওলামারা সকল কিছুতে আল্লাহর মালিকানা মানিয়া লইয়া থাকেন বটে, কিন্তু ব্যক্তিগত মালিকানার উচ্ছেদ কামনা করেন না। এইভাবে হুকুমতে রব্বানিয়ার বিরুদ্ধে শক্তিশালী দুইটা মতবাদ রহিয়াছে, ইহা আমার অনুসারীদের বুঝিয়া লইতে হইবে।"
অর্থাৎ, কমিউনিস্টদের রাষ্ট্রের নামের জায়গায় আল্লার নাম প্রতিস্থাপন, আর মাওলানাদের ব্যক্তিসম্পত্তির ওপরে আল্লার মালিকানা, বা আল্লার ভূমিহীন বান্দাদের, বা জনগনের মালিকানা প্রতিষ্ঠা - এভাবে ইউরোপিয়ান ভূমিতে জন্ম নেয়া সমাজতান্ত্রিক মতবাদের সঙ্গে রবুবিয়তের মাসলাক মিলিয়ে মাওলানা ভাসানি মাথা উঁচু করে দাঁড়ান।
৪।
ভাসানি সাহেবকে ভাসানির মাওলানা বলা হলেও রাজনীতিতে তিনি জলে ভাসা পদ্ম ছিলেন না। নিজের দেশের মানুষের পালস হাতের তালুর রেখাসমূহের মতই বুঝতেন। যেকোনো একটি শ্লোগান যখন তিনি ইতিহাসের পাতা থেকে খুঁজে বের করে এনে প্রাসঙ্গিক করতেন, সে শ্লোগানের উদ্গাতা শাহ ওয়ালীউল্লাহ সাহেব, এবং তার রাজনীতি - মতাদর্শকে মাওলানা ভাসানি জানতেন না, বা বুঝতেন না - এটা বিশ্বাস করতে আমি রাজি নই।
প্রশ্ন হচ্ছে, #ফুক্কা_কুল্লে_নেজামিন শ্লোগানটি তার অভ্যন্তরীণ বিপ্লবী শক্তির সঙ্গে যে ইতিহাস, যে মতাদর্শকে বহন করে আনে, তার নির্যাস নতুন করে ঝেড়ে মুছে নিজেদের জীবনের সঙ্গে প্রাসঙ্গিক করতে বাংলার মানুষ, যারা রাজপথে সংগ্রাম করছে, তারা প্রস্তুত আছে কি না।
নিজের ধর্মপরিচয়ে পরিচিত হওয়াকে লজ্জাজনক, পশ্চাৎপদ, মধ্যযুগীয়, অনাধুনিক বেদুইন বর্বরতা হিসেবে দেখা এক কিম্ভূতকিমাকার সময়ে বাংলাদেশের মুসলিম জনগোষ্ঠী কী পারবে শাহ ওয়ালীউল্লাহ মুহাদ্দিসে দেহলভী (রঃ) -এর সঙ্গে নিজের নাড়ির যোগ খুঁজে নিতে? নাকি শেকড় অস্বীকার করে স্রেফ শাখা প্রশাখা নিয়ে সাময়িক উত্তেজনা ছড়িয়ে নিজের দায় সম্পন্ন হয়েছে বলে তারা মনে করবে?
#ফুক্কা_কুল্লে_নেজামিন - এর তিনশত বছরের পথ পরিক্রমার সঙ্গে সঙ্গে তার পরিণতির দিকেও থাকবে আমাদের উৎসুক চোখ।
ছবিঃ মাওলানা ভাসানি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তমঞ্চ এলাকার দেয়াল লিখন
তথ্যসূত্র, ও পরবর্তী পড়াশোনার জন্যে -
১। বুদ্ধিবৃত্তিক জ্ঞানচর্চা, ইসলামি শিক্ষা, ও সমাজ বিপ্লবের জনক শাহ ওয়ালীউল্লাহ মুহাদ্দিসে দেহলভী (র: ) -মনযূর আহমাদ, মাকতাবাতুত তাকওয়া
২। হুজ্জাতুল্লাহিল বালেগাহ - ডঃ মোঃ আকরাম নাদভী, ডিন, ক্যামব্রিজ ইসলামিক কলেজ - view this link
৩। মাওলানা ভাসানির রচনা - খান মাহবুব, পলল প্রকাশনী
৪। মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানি - সৈয়দ আবুল মকসুদ, আগামী প্রকাশনী
৫। ফকিহুন নফস রশিদ আহমাদ গাঙ্গুহি, জীবন ও কর্ম - মাওলানা আশিকে ইলাহি মিরাঠী, মাওলানা নিজামুদ্দিন আসির আদরবি (কাজী আবুল কালাম সিদ্দীক অনূদিত), মাকতাবাতুল হেরা
৬। দেওবন্দ আন্দলনঃ ইতিহাস - ঐতিহ্য - অবদান (বেফাকের পাঠ্যপুস্তক), আবুল ফাতাহ মুহাম্মদ ইয়াহইয়া, আল আমীন রিসার্চ অ্যাকাডেমি
৭। মাওলানা ভাসানির নামে পরিচালিত অফিশিয়াল ফেসবুক পেইজ - view this link
০৫ ই মার্চ, ২০২১ সকাল ১১:০৪
সাজিদ উল হক আবির বলেছেন: ভাব লও? এই সমস্ত ফাউ মন্তব্য করো কেন?
২| ০৪ ঠা মার্চ, ২০২১ বিকাল ৫:২৬
রাজীব নুর বলেছেন: ‘ভাসানী যখন ইউরোপে’ গ্রন্থে খোন্দকার মোহাম্মদ ইলিয়াস বলেছেন, ইউরোপের যুক্তি নির্ভর এবং বাস্তববাদী অধিবাসীরা মওলানা ভাসানীকে কোন ছাঁচে ফেলতে পারেননি। যিনি একই সাথে ‘ফুক্কা কুল্লে নেজামিন’ এবং ‘দুনিয়ার মজদুর, এক হও’- এর ধারক-বাহক, তাঁকে প্রচলিত ধারণায় খাপ না খাওয়াতে পারাই স্বাভাবিক। তিনি একই সাথে বাংলার মজলুমের জন্য সুফী, তিনি একই সাথে বাংলার কমিউনিস্টদের সবচেয়ে বড় শুভাকাঙ্ক্ষী, তিনি একই সাথে জাতীয়তাবাদীদের পথপ্রদর্শক।
০৫ ই মার্চ, ২০২১ সকাল ১০:৫২
সাজিদ উল হক আবির বলেছেন: রাজীব ভাই, খণ্ডে খণ্ডে আপনার মন্তব্যের ওপর ক্রিটিকাল ডিস্কোরস অ্যানালাইসিস চালানো যাক।
১। "ইউরোপের যুক্তি নির্ভর এবং বাস্তববাদী অধিবাসীরা"
- ইউরোপ কী বরাবর যুক্তিনির্ভর, বাস্তববাদী ছিল?
- ইউরোপ কবে থেকে র্যাশনালিস্ট - রিয়ালিস্ট হয়ে উঠে?
- এর পিছনে কি কি ফ্যাক্ট কাজ করে?
- ওরা যখন কলোনিয়াল পাওয়ার হিসেবে দুনিয়া জুড়ে অমানবিক লুটতরাজ করসে, খুন - জখম - রাহজানি - ধর্ষণ - দাসব্যবসা চালাইসে, সে সময়ে অর্জিত সম্পত্তি ওদের মার্জিত হইতে সহায়তা করসে কী?
- যখন ইউরোপ ভুখানাঙ্গা ছিল, তখন একটা রাষ্ট্র হিসেবে অবিভক্ত ভারত, চীন, ইরান - এগুলি আরও সভ্য ছিল কি না?
- কাজেই উপর্যুক্ত প্রশ্নের উত্তর না খুঁজে এখন একবাক্যে, যেন জাদুমন্ত্রের মতো হঠাৎ করে তারা 'যুক্তিনির্ভর, বাস্তববাদী' - হয়ে উঠসে, এটা বলা কী বুদ্ধিমত্তার পরিচায়ক?
- আর আমি এই প্রশ্নগুলি কি পোস্ট কলোনিয়াল ডিস্কোরস আকারে তুললাম, না রেগুলার 'ইহুদি নাসারার ষড়যন্ত্র' খুঁজলাম?
২। 'ইউরোপের যুক্তি নির্ভর এবং বাস্তববাদী অধিবাসীরা মওলানা ভাসানীকে কোন ছাঁচে ফেলতে পারেননি।'
- কেন বারবার বারবার আমাদের ইউরোপের ছাঁচে নিজেদের চিনতে হবে? একটা জাতি, আরেকটা জাতিকে যতদূর সম্ভব য়াগোমারা যায়, তারা কী তা আমাদের মারে নি? তারপরেও, ইউরোপিয়ানদের ছাঁচে আমাদের রাজনৈতিক আন্দোলন, এবং আন্দোলনের নেতাদের আমাদের প্রাসঙ্গিক করে তুলতেই হবে? কেন তাদের ছাঁচ নিয়া আমাদের এতো মাথাব্যাথা?
- চীন কি চাইসে কখনো, পাশ্চাত্যের থিঙ্কট্যাঙ্ক অনুযায়ী নিজেদের রাষ্ট্র ব্যবস্থা তৈরি করতে? কিউবা? ভেনেজুয়েলা?
- মার্ক্সবাদকে নিজ এলাকার শ্রমজীবী মানুষের সঙ্গে প্রাসঙ্গিক করা লাগে, তাকে প্রয়োগ করতে হইলে। ভাসানি সেই দুরূহ চেষ্টাই করসে। মজুরের ধর্মের সঙ্গে মার্ক্সের চিন্তাকে মিলাইতে চাইসে।
৩। বাদবাকি যে কথাগুলি ভাসানিকে নিয়ে বললেন, তার উপর আলাদা কইরা মন্তব্য করবার কিছু নাই। রেটোরিকাল বক্তব্য। আমি ইতিবাচকভাবেই গ্রহণ করলাম।
৪। ভাসানিরে ইউরোপিয়ানরা বুঝুক না বুঝুক, আপনি যখন নিজেরে লাল মাওলানার শুভাকাঙ্ক্ষী হিসেবে দাবী করেন, আমি চাই - আপনি তার মতাদর্শ আদ্যোপান্ত বুইঝা তারপর তারে গ্রহণ করেন, বা বর্জন করেন। পাশ্চাত্য দুনিয়ার চে' আপনার ভাসানির মতাদর্শ ভাসানির মতো কইরাই বোঝা দরকার। একই সঙ্গে প্রয়োজন যে লিনেজ ধইরা ভাসানি উইঠা আসছে সেইটারেও, অন্তত নিরপেক্ষভাবে বুঝা।
৩| ০৪ ঠা মার্চ, ২০২১ বিকাল ৫:৪৩
আমি সাজিদ বলেছেন: ভালো লেখেছেন। যাই হোক, মাফিয়া রাষ্ট্র ও ক্যাঙ্গারু কোর্টের কালো হাত ভেঙ্গে দাও গুড়িয়ে দাও। জগিং থেকে আসুন আলোচনা হবে।
০৫ ই মার্চ, ২০২১ সকাল ১০:৫৯
সাজিদ উল হক আবির বলেছেন: ধন্যবাদ সাজিদ। লেখাটা স্বয়ংসম্পূর্ণ হয় নাই। শাহ ওয়ালীউল্লাহ সাহেবের চিন্তার সঙ্গে মার্ক্সের চিন্তা মিলানোর মতো দুরূহ কাজটা সংক্ষেপে, এবং দ্রুতগতিতে শেষ করতে গিয়ে লেখাটা যে শেইপে নিলো, আমি তাতে স্বস্তি পাইতেসি না। দ্বিতীয়বার কলম চালানোর পর এখন একটু শেইপে আসছে, আমি যেটা বলতে চাইসি, সেটাও যুক্ত করলাম। দেখেন, এরপরেও আপনার আলোচনা করার আগ্রহ থাকলে করা যাবে।
৪| ০৪ ঠা মার্চ, ২০২১ রাত ৯:৩১
অধীতি বলেছেন: মাওলানা ভাসানীকে কোন ধাচে ফেলার সুযোগ নেই। মানুষের জন্য যে জন তিনি সেই জন।
লেখক বলেছেনঃ শাহ ওয়ালিউল্লাহ রঃ (এবং) কার্ল মার্ক্সের মতবাদের একজায়গায় বিশাল পার্থক্য-ধর্ম।
কবি ফরহাদ মজহারের এক বক্তৃতায় শুনেছি তিনি দাবি করেছেন কার্লমার্ক্স যারা এ দেশে চর্চা করে তার মার্ক্সের দর্শনের সাথে ধর্মের পার্থক্য করতে চান। আসলে মার্ক্সের সাথে ধর্মের সম্পর্ক নেই।
০৫ ই মার্চ, ২০২১ সকাল ১১:০৩
সাজিদ উল হক আবির বলেছেন: একটু গুছায়ে মন্তব্যটা করতেন ...
যদি মার্ক্সের সঙ্গে ধর্মের কোন সম্পর্ক না থাকে, তবে বাংলাদেশের মার্ক্সবাদীরা মার্ক্সের দর্শনের সঙ্গে ধর্মের পার্থক্য করতে চাবেই, সমস্যা কি?
মনে হয় না ফ।ম। এই কথা বলসে। আপনি আরেকটু ক্লিয়ার হন।
৫| ০৫ ই মার্চ, ২০২১ সকাল ৭:৩৯
কবিতা ক্থ্য বলেছেন: তথ্য সুত্র থাকলে ভালো হতো।
অসাধারন গবেষনামুলক পোষ্ট।
০৫ ই মার্চ, ২০২১ সকাল ১১:০৩
সাজিদ উল হক আবির বলেছেন: শুকরিয়া। সূত্র অ্যাড করা হইসে।
৬| ০৫ ই মার্চ, ২০২১ রাত ৯:৪৩
মোঃ মাইদুল সরকার বলেছেন: ভাষার মাসে কেন এই স্লোগান বাংলা হইলেও একটা কথা। কখন যে কোন হুজুগে মেতে উঠে মানুষ বলা মুসকিল।
০৫ ই মার্চ, ২০২১ রাত ১০:০৮
সাজিদ উল হক আবির বলেছেন: এই শ্লোগানের চর্চা চলতেসিল বছরখানেক ধরেই, অনলাইনে, মাইদুল ভাই। ভাষার মাসে এই শ্লোগান উঠা বিস্ময় জাগাইতে পারে, কিন্তু আমি নেতিবাচক হিসেবে দেখতেসি না ব্যাপারটাকে। আলোচনায় আসার জন্যে ধন্যবাদ।
©somewhere in net ltd.
১| ০৪ ঠা মার্চ, ২০২১ বিকাল ৪:৪০
সাজিদ উল হক আবির বলেছেন: লেখাটা সূত্র - টুত্র সহ আরও কিছু এডিট করুম। খসড়াটা থাকলো। এখন হাইটা আসি। বিকাল বেলা আমার জগিং এর সময়।