নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সাধু সাবধান ! ব্লগের মালিক বঙ্গালা সাহিত্যকে ধরিয়া বিশাল মাপের ঝাঁকি দিতে নিজেকে শারীরিক ও মানসিক ভাবে প্রস্তুত করিতেছেন। সেই মর্মে তিনি এখন কিটো ডায়েটিং, ডন-বৈঠক ও ভারোত্তলন প্রশিক্ষণে ব্যস্ত। প্রকাশিত গ্রন্থঃ১। শেষ বসন্তের গল্প । (২০১৪)২। মিসিং পারসন - প্যাত্রিক মোদিয়ানো, ২০১৪ সাহিত্যে নোবেল বিজয়ী (অনুবাদ, ২০১৫) ৩। আয়াজ আলীর ডানা (গল্পগ্রন্থ - ২০১৬ ৪। কোমা ও অন্যান্য গল্প(গল্প গ্রন্থ, ২০১৮) ৫। হেমন্তের মর্সিয়া (কবিতা, ২০১৮) ৬। কাঁচের দেয়াল (গল্পগ্রন্থ, ২০১৯) ৭।শহরনামা (উপন্যাস, মাওলা ব্রাদার্স, ২০২২), ৮। মুরাকামির শেহেরজাদ ও অন্যান্য গল্প (অনুবাদ, ২০২৩), ৯। নির্বাচিত দেবদূত(গল্পগ্রন্থ, ২০২৪), ১০। দেওয়ানেগির চল্লিশ কানুন/ফরটি রুলস অফ লাভ (অনুবাদ, ঐতিহ্য, ২০২৪)
১।
ভাষাভিত্তিক জেনোফোবিয়া, এপার বাংলা - ওপার বাংলার ভাষাভিত্তিক বিভক্তিকরণ, প্রমিত বাংলার ইস্যু -- ইত্যাদি বিষয়ে আমার প্রথম সচেতন করে তোলে আহমদ ছফার লেখা একটি প্রবন্ধ। 'খোয়াবনামা উপন্যাস' - নামে, আখতারুজ্জামান ইলিয়াস ও তার খোয়াবনামা উপন্যাসের উপর লিখিত একটি প্রবন্ধে ছফা কোলকাতায় ঘটে যাওয়া একটা ঘটনা উল্লেখ করেন। আনন্দবাজার গ্রুপের আয়োজিত দুইবাংলার এক লেখক কনফারেন্সের একটি নির্দিষ্ট সেশনের বিষয় ছিল 'বাংলা সাহিত্যের ভাষা কেমন হবে' - এই জাতীয় কিছু। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় ছিলেন সেশন চেয়ার। আলোচকদের একজন ছিলেন আমাদের আখতারুজ্জামান ইলিয়াস। ছফার ভাষ্যমতে, কোলকাতার লেখকরা প্রচলিত প্রমিত বাংলারে বাংলা সাহিত্যের জমি কর্ষণের লাঙ্গল হিসেবে উল্লেখ করলেও, ইলিয়াস কাটাকাটা ভাষায় বলেন - যে অঞ্চলের মানুষের মুখের ভাষা যেমন, সে অঞ্চলের সাহিত্যের ভাষাও হবে তেমনই। অর্থাৎ, প্রমিত বাংলার খবরদারি তিনি প্রমিত বাংলার প্রচারকদের মুখের উপর উড়ায়ে দেন। সেই কনফারেন্সের ফাইনাল ডিনারে অন্য সকল লেখকরে আমন্ত্রণ জানানো হইলেও, একমাত্র বাদ দেয়া হয় ইলিয়াস সাবরে। ইলিয়াসের এই অপমান ছফার গায়ে লাগে। ছফার সূত্রে আমার গায়েও।
.
২।
কবেকার ঘটনা এইটা? ২০১৫ - ১৬ সাল হইব এই প্রবন্ধ পড়ছি। মূল ঘটনা ৮০ / ৯০ এর দশকের। এই বিগত পাঁচ বছরে, আমি সচেতনভাবে পশ্চিমবঙ্গে চর্চিত বাংলা সাহিত্য থেকে নিজেরে দূরে সরায়ে আনসি। খুঁজে খুঁজে বাংলাদেশী বাংলা ভাষাভাষী সাহিত্যিকদের লেখা পড়ছি, যত পারা যায়। সৈয়দ ওয়ালিউল্লাহ, শহিদুল জহির, আখতারুজ্জামান ইলিয়াস এবং আহমদ ছফা - এই চারব্যক্তির যত ফিকশনাল রাইটিং, তথা সৃজনশীল কথাসাহিত্য আছে, আমি তার আদ্যোপান্ত পড়সি। একটা বই, একটা গল্প, একটা উপন্যাসও বাদ দিই নাই। আরও পড়সি হাসান আজিজুল হক, শওকত ওসমান। হালের শাহাদুজ্জামান, শাহীন আখতার আপা। হুমায়ূন আহমেদও। এবং, আনন্দবাজার গ্রুপের পাপের ফসল হিসেবে, বাদ দিসি পশ্চিমবঙ্গের সাহিত্যিকদের কাজের প্রচার প্রসার। আমার মত আদনা ব্যক্তি সুনীল - শীর্ষেন্দু - সমরেশরে নিয়া কথা বলা বন্ধ করলে তাদের কি ক্ষতি - প্রশ্ন আসতে পারে। আমার রাজনৈতিক সক্ষমতা অতটুকুই, যতটুকু আমি করসি।
.
৩।
কিন্তু এই যে প্রমিত বাংলা নিয়া এত কচলাকচলি, মনকষাকষি, একটা প্রশ্ন আজ সন্ধ্যায় মাথায় আসলো - প্রমিত বাংলার খবরদারীমূলক তাত্ত্বিক বয়ান তৈরিতে, পশ্চিমবঙ্গের সৃজনশীল লেখক - কবিদের ভূমিকা কতটুকু?
.
শীর্ষেন্দুর লেখা প্রবন্ধ পড়ছি বলে মনে পড়ে না। উনি কমবেশী উপন্যাসৈ লিখে গেছেন বেশীরভাগ সময়। সুনীলের নন ফিকশন লেখাগুলির মধ্যে আত্মজৈবনিক লেখাগুলিই বেশী সুন্দর। আধেক জীবন, বা ছবির দেশে কবিতার দেশে। সমরেশের লেখা আমার ভালো লাগে না, পড়ি নাই। জয় গোস্বামী আমার কোলকাতার সবচে পছন্দের কবি। হয়তো সমগ্র বাংলাভাষায়ও। আমার প্রকাশিত একমাত্র কবিতার বইটা ওনারে উৎসর্গ করা।
.
সত্যি বলতে, ভাষা কি বা কেমন হওয়া উচিৎ, এইটা নিয়া আজান দিয়া পশ্চিম বঙ্গের কোন লেখকরে মতামত দিতে আমি দেখি নাই তাদের সাহিত্যকর্মে। ফিকশনে, বা নন ফিকশনে। সাহিত্যিক মাত্রই জানেন, ভাষা একটা স্পন্টানিয়াস ব্যাপার, যদি না আপনি স্পেসিফিক্যালি একটা বিশেষ এলাকার উপর গল্প বা উপন্যাস লিখেন। হাসান আজিজুল হক সাহেব যেমন লিখেন রাঢ়বঙ্গের ভাষায়।
.
আর যদি দেনও, ক্ষতি কি? সবারই অধিকার আছে নিজের মতামত রাখার।
.
৪।
এইখানে ভাষাভিত্তিক রাজনীতির বিষয়টা আইসা পড়ে। কেউ বলতে পারেন, এইসব কইরাই পশ্চিমবঙ্গের কথা সাহিত্যিকরা শান্তিপুরি প্রমিত ভাষা আমাদের উপর 'চাপায়ে' দেয়ার চেষ্টা করছেন। প্রাসঙ্গিকভাবে এই প্রশ্নও এসে যায়, এই চাপায়ে দেয়ার উপায়টা কি? গায়ের জোর তো অবশ্যই না। তাইলে আর কি বাকি থাকে? মানসম্মত সাহিত্যচর্চা? কারো সাহিত্যের মান যদি ভালো হয়, সাথে গদ্যটা হয় স্বাদু - আপনি তো রাজনীতি ফাজনিতি বুঝায়া তার পাঠকরে থামাইতে পারবেন না।
.
৫।
তাইলে ভাষার আলাপ থেকে আমরা এসে পড়লাম কন্টেন্টের আলাপে। হুমায়ূন আহমেদ এই জায়গায় প্রাসঙ্গিক। ওনার সংলাপভিত্তিক লেখা, এবং জাদুকরী চরিত্র চিত্রণের সক্ষমতা তারে জীবিতাবস্থায় দুইবাংলার কথা সাহিত্যের জগতে বাদশাহী করসেন। উনি কি ইলিয়াস - ছফার ভাষাভিত্তিক ডিবেটের অংশী ছিলেন? অন্তত চর্চিত কথাসাহিত্যে? আমার মত হইল, ছিলেন না।
.
শহিদুল জহিরের লেখার বিষয়বস্তু, গল্প বলার ধরন বাংলা সাহিত্যের জগতে একদমই ইউনিক। যেমন ইউনিক ইলিয়াস নিজে। হাসান আজিজ সাহেবও।
.
কিন্তু তাদের ভাষাভিত্তিক রাজনীতিটা স্বাদু গদ্যের বিপরীতে হওয়ায় তারা তা পাঠকের মনে প্রোথিত করতে পারেন নাই। সাধারণ মানুষের এতো সময় কই সাহিত্য পড়ার? এক্সপিরিমেন্টাল / আঞ্চলিক ভাষার কথাসাহিত্য পড়ার? সাহিত্য নিয়া কচলা কচলি করবার? এইখানে এসে ইলিয়াস - ছফার প্রমিত বাংলা বিরোধী রাজনীতি মাইর খাইসে।
.
৬।
কথা সাহিত্যের ভাষা কি হবে - এ নিয়া রাজনীতি কি তবে অপ্রয়োজনীয়? তা না। নইলে আমাদের দেশে একবার রাজনৈতিকভাবে রবীন্দ্রনাথরে বাদ দেয়া, এবং আর একবার, দেশ স্বাধীন হওয়ার পর রাজনৈতিকভাবে রবীন্দ্রনাথরে প্রতিষ্ঠা করবার প্রয়োজন পড়তো না।
.
কিন্তু এই রাজনীতির ঝাণ্ডা কার হাতে থাকবে, সেটা চিন্তার বিষয়। রাজনীতিটা কীভাবে করা হবে, সেটাও। বর্তমানে আমাদের দেশে প্রাবন্ধিক গবেষকদের প্রমিত বাংলা সমাচার নিয়া মাথাব্যাথা বেশী। অথচ সাহিত্যের ভাষা কেমন হবে - তা ঠিক কইরা দেয়ার কোন শক্তি আদতে তাদের হাতে নাই। কীভাবে করা হবে - তার উত্তর হইল, সেইভাবে, যেমনভাবে করসেন পশ্চিমবঙ্গের লেখকরা। তারা তো সেমিনার কইরা তাদের ভাষার ষ্ট্যাণ্ডার্ড ঠিক কইরা পাঠকদের বাধ্য করেন নাই তাদের লেখা পড়তে। তারা অসাধারণ লিখসেন। অনেকে মুরুব্বীগিরি দেখাইতে গিয়া বলবেন সুনীল - শীর্ষেন্দু বাল। তা বলতে পারেন। আমি ব্যক্তিগতভাবে শীর্ষেন্দুর বিশাল ভক্ত। সুনীলের সাত কাণ্ড রামায়ন সাইজের উপন্যাস ফাঁদতে ইতিহাসের আশ্রয় নেয়া লাগে। শীর্ষেন্দু সেটা করেন সাধারণ মানুষের জীবন নিয়ে। হুমায়ূন আহমেদও তাদের পছন্দ করতেন।
.
৭।
আমার পুরা আলোচনার সারাংশ তিনটা -
.
ক) গল্প উপন্যাস লেখার ক্ষেত্রে ভাষাভিত্তিক বিতর্ক একটা পার্শ্বিক ব্যাপার। ভাষার চয়েজে সাহিত্যিকরে সৎ হইতে হয়। চাইলেও একজন চাষার মুখে আপনি পশ্চিম বঙ্গের স্বাদু গদ্য বসায়ে দিতে পারবেন না। তা ন্যাচারাল লাগবে না। আবার, শহরের একটা সিন বর্ণনায় আপনি চাইলেই 'প্রমিত' বাংলায় সংলাপ তৈরি করতে পারেন, পাঠকের সুবিধা বিবেচনায় রেখে।
.
খ) সাহিত্যের ভাষা কেমন হবে - এই ডিবেটটা আসলে একাডেমিক ডিবেট না। মানে, চাইলে করা যায়। কিন্তু এই আলাপে ফয়দা নাই। এটা সাহিত্যিকদের ইচ্ছার ও সক্ষমতার ব্যাপার।
.
গ) ভাষার রাজনীতি করতে হইলে আপনার মানসম্মত সাহিত্য চর্চার দ্বারাই করতে হবে। ফার্স্টে কিছু প্রবন্ধ লিখলেন প্রমিত বাংলা আপনার কি সর্বনাশ করতেছে সেইটা নিয়া, তারপর প্রাণপাত কইরা বহুকষ্টে আঞ্চলিক বাংলায় দুই - তিনটা উপন্যাস - গল্পের কিতাব বাইর কইরা ক্ষান্ত দিলেন, এভাবে হবে না। ইলিয়াসের খোয়াবনামা বাইচা থাকবে, যেমন বাইচা থাকবে হাসান আজিজের আগুনপাখি, কিন্তু তাদের ভাষার ব্যবহাররে একটা ফ্যাশন হিসেবে চর্চা করা যাবে না - তাদের লেখার সংখ্যার স্বল্পতার জন্যে। হুমায়ূন - সুনীল - শীর্ষেন্দু তাদের জীবদ্দশাতেই ফেনোমেনা ছিলেন। ইলিয়াস - জহির বা হাসান আজিজ মরার পরেও অধিকাংশ বাংলাদেশী বাঙ্গালীর কাছে অজানা।
.
৮।
ছফারে দিয়া শুরু করসিলাম, ছফারে দিয়াই শেষ করি। ছফার গুরু আব্দুর রাজ্জাক স্যার ছফারে দেখলেই বলতেন তলস্তয়ের ওয়ার অ্যান্ড পিসের মতো হাজার পাতার উপন্যাস লিখতে হবে। ছফার আটটা উপন্যাস মিলায়ে সাকুল্যে পৃষ্ঠা সংখ্যা ৬৭১। এদিকে সুনীল - শীর্ষেন্দুর উল্লেখযোগ্য উপন্যাসগুলিই হাজার পাতার মতন।
.
আমাদের বাংলাদেশের শিল্প সাহিত্যের অঙ্গনের মানুষদের কোলকাতা জুজু কাটাইতে হবে। লেখার মান, লেখার পরিমাণ, লেখার প্রতি অনুরাগ বাড়াইতে হবে। এটাই বাংলা সাহিত্যের একজন সক্রিয় কথা সাহিত্যিক হিসেবে আমার মত।
.
বারবার 'কলকাত্তার ঔপনিবেশিক প্রভাব আমাদের কাটায়া উঠতে হবে' - এই বুলি আওড়ানোও তো হীনমন্যতার লক্ষণ, তাই না?
২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২১ রাত ১০:৫৯
সাজিদ উল হক আবির বলেছেন: না পড়ে তো ভালো লাগে না - এই দাবী করা যায় না রাজীব ভাই। সমরেশের গর্ভধারিণী পড়সি। কালবেলা - কালপুরুষ পড়সি। লেখায় জোর করে মার্ক্সিজম ঢুকাইতে চায়, ওরে ভালো না লাগার এইটা একটা কারন। হুমায়ূন আহমেদরে ছোট করে একটা লেখা লিখসিল আনন্দবাজার পত্রিকায় হুমায়ূন মারা জাবার পর, এইটাও ওরে অপছন্দ করার আরেকটা কারন।
২| ২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২১ রাত ৩:০৪
নেওয়াজ আলি বলেছেন: আপনার লেখা বানন ভুল দেখলে খারাপ লাগে। টাপিং ভুল মনে হয়।
২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২১ সকাল ১০:৩৭
সাজিদ উল হক আবির বলেছেন: বানান নিয়ে আমি খানিকটা ক্যাজুয়ালি ই অসচেতন নেওয়াজ ভাই। ধন্যবাদ পাঠে, মন্তব্যে।
©somewhere in net ltd.
১| ২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২১ রাত ১০:৫২
রাজীব নুর বলেছেন: সমরেশ মজুমদার আপনার ভালো লাগে না শুনে বেশ অবাক হলাম। তারপরও আমি বলব, অন্তত পক্ষে 'গর্ভধারিনী' উপন্যাসটা পড়েন। এরপর পড়বেন 'মেয়েরা যেমন হয়''।