নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সাধু সাবধান ! ব্লগের মালিক বঙ্গালা সাহিত্যকে ধরিয়া বিশাল মাপের ঝাঁকি দিতে নিজেকে শারীরিক ও মানসিক ভাবে প্রস্তুত করিতেছেন। সেই মর্মে তিনি এখন কিটো ডায়েটিং, ডন-বৈঠক ও ভারোত্তলন প্রশিক্ষণে ব্যস্ত। প্রকাশিত গ্রন্থঃ১। শেষ বসন্তের গল্প । (২০১৪)২। মিসিং পারসন - প্যাত্রিক মোদিয়ানো, ২০১৪ সাহিত্যে নোবেল বিজয়ী (অনুবাদ, ২০১৫) ৩। আয়াজ আলীর ডানা (গল্পগ্রন্থ - ২০১৬ ৪। কোমা ও অন্যান্য গল্প(গল্প গ্রন্থ, ২০১৮) ৫। হেমন্তের মর্সিয়া (কবিতা, ২০১৮) ৬। কাঁচের দেয়াল (গল্পগ্রন্থ, ২০১৯) ৭।শহরনামা (উপন্যাস, মাওলা ব্রাদার্স, ২০২২), ৮। মুরাকামির শেহেরজাদ ও অন্যান্য গল্প (অনুবাদ, ২০২৩), ৯। নির্বাচিত দেবদূত(গল্পগ্রন্থ, ২০২৪), ১০। দেওয়ানেগির চল্লিশ কানুন/ফরটি রুলস অফ লাভ (অনুবাদ, ঐতিহ্য, ২০২৪)
এই বইয়ের মোড়ক উল্টানো মাত্র যে বারোটি গল্প আপনারা পাবেন, তা লেখা হয়েছে প্রায় আঠারো বছর ধরে। গল্প আকারে প্রকাশের আগে এদের মধ্যে পাঁচটি পত্রিকার কলাম এবং সিনেমার চিত্রনাট্য হিসেবে ছাপা হয়েছে, আর একটির উপর ভিত্তি করে নির্মিত হয়েছিলো টেলিভিশন সিরিয়াল। আরও একটি গল্পের প্লট আমি পনেরো বছর আগে আমার এক বন্ধুকে দেয়া সাক্ষাৎকারে শেয়ার করি। ভদ্রলোক অন্যসব কথার সাথে প্লটটিও টেপরেকর্ডারে রেকর্ড করে নিয়ে যায় এবং নিতান্তই ভদ্রলোকের মত তার পত্রিকায় ছাপিয়ে দেয়, আমার নামেই। তার সেই পত্রিকার লেখা থেকে গল্পটি উদ্ধার করে আমি আবার পুনরায় সেটা আমার মত করে লিখি। বইটি লেখা শেষ করে আমি অনুভব করছি- এই অদ্ভুত, জাগতিক সকল ব্যাখ্যার উর্ধে থাকা সৃষ্টিশীল প্রক্রিয়াটিকে আমার ব্যাখ্যা করার একটা প্রয়াস নেয়া উচিৎ। এতে করে তরুণ যেসব লেখক এখনও বুভুক্ষের মত চেষ্টা করছে, লেখালিখিতে একটা লাইনঘাট বের করবার, তারা বুঝবে যে লেখালিখির নেশা কতটা কঠিন এবং সর্বগ্রাসী হয়।
প্রথম প্লটটি আমার মাথায় আসে ১৯৭০এর গোড়ার দিকে। বার্সেলোনায় যে পাঁচটি বছর কাটিয়েছি আমি, তারই কোন এক রাত্রে, ঘুমের মাঝে এক আলোকিত স্বপ্নের আকারে প্লটটি আমার কাছে ধরা দেয়। স্বপ্নে দেখি, আমার মৃত্যু হয়েছে। আমি নিজেই আমার শেষকৃত্যে এসে হাজির হয়েছি। শোকপোশাক পরে আসা আমার পুরাতন বন্ধুবান্ধবদের সাথে চুপচাপ হেঁটে বেড়াচ্ছি এদিকসেদিক, যদিও আমার মনে চাপা প্রফুল্লতা। কারণ বহুদিন পর আমি আমার পুরনো বন্ধুবান্ধবদের সাথে একত্রিত হতে পেরেছি। আমার মৃত্যু আমাকে সুযোগ করে দিয়েছে ল্যাতিন আমেরিকার আমার শৈশব- কৈশোরের সেসব বন্ধুদের সাথে দেখা করবার, যাদের সাথে আমার দেখা হয়নি বছরের পর বছর। সে যাক, অনুষ্ঠান শেষ হল। যে যার মত করে ফিরবে এখন। আমিও তাদের সাথে চলে আসবার চেষ্টা করতেই তাদের একজন আমাকে স্মরণ করিয়ে দিল – “এটা তোমার শেষকৃত্য ছিল বন্ধু। তুমি আর ফিরে আসতে পারবে না”। মৃত্যু জিনিসটা আসলে কি- মৃত্যু আমার স্বপ্নে এসে দেখা দিয়ে প্রথমবারের মত তা আমায় বুঝিয়ে গেল। মৃত্যু মানে আর কখনোই নিজের বন্ধুবান্ধবদের সাথে একত্রিত হতে না পারা।
জানি না কেন, আমার মনে হল, এ স্বপ্নের মধ্য দিয়ে আমি আমার ব্যাক্তিসত্ত্বাকে, আমার লেখক পরিচয়কে নূতন করে আবিষ্কার করলাম। বুঝতে পারলাম যে সময় এসেছে ইউরোপে বাস করা ল্যাতিন অ্যামেরিকানরা যে অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যায়- তাকে লেখনীর মাধ্যমে তুলে আনার। আমার জন্যে ছিল এ এক অসাধারণ স্বস্তির আবিষ্কার। কারণ, মাত্রই আমি আমার এযাবৎকালীন সবচেয়ে পরিশ্রমসাধ্য এবং দুঃসাহসী কাজ –The Autumn of the Patriarch শেষ করেছি। এরপর লেখালিখি নিয়ে কোন পথে এগোবো, আমার কোন ধারণা ছিল না।
পরবর্তী দুইবছর ধরে আমার ঝুলিতে জমা হওয়া অভিজ্ঞতার ওপর যে প্লট বা আইডিয়াগুলো এসেছে, আমি নিরবচ্ছিন্নভাবে কেবল নোট নিয়ে গেছি। কিন্তু আমি বুঝতে পারছিলাম না যে এগুলো লেখার যে গুরুদায়িত্ব, তা ঠিক কোনদিক থেকে শুরু করে কোনদিকে গিয়ে শেষ করব। এমনও দেখা গেছে যে আমার মাথায় গল্পের প্লট এসেছে কিন্তু, সে রাতে আমার কাছে কোন নোটবুক নেই । আমাকে তখন আমার বাচ্চারা আমাকে তাদের পিয়ানোর স্টাফ নোটেশন লেখা একটি বই ধার দিলে আমি তার উলটো পীঠে আমি সেই প্লটগুলো লিখে রাখা শুরু করি। পরবর্তীতে আমাদের এদিক সেদিক বেড়াতে বের হবার সময় বইটা আমি বাচ্চাদের স্কুলব্যাগের ভেতরেই রেখে দিতাম, হারিয়ে যাবার ভয়ে। এভাবে মোটমাট চৌষট্টিটি আইডিয়া এত নিখুঁত ডিটেলস সহ আমার নোট করা হয়ে গেল যে বাকি রইল কেবল ঠাণ্ডামাথায় বসে লেখার কাজ শেষ করা।
১৯৭৪ সালে আমি বার্সেলোনা থেকে আবার ম্যাক্সিকোতে ফেরত আসার পর আমার মনে হয়, আমার সংগৃহীত আইডিয়াগুলোকে উপন্যাসে পরিণত করবার বদলে পর্যাপ্ত তথ্য উপাত্তের ঘোঁট পাকিয়ে ওদেরকে গল্পে পরিণত করা দরকার। গল্পগুলো হবে পত্রিকার কলাম লেখার মতই – কিন্তু অনেক অনেক কাব্যিকতার সংমিশ্রণে। এর আগে আমার ছোটগল্পের তিনটি সংকলন বেরিয়েছে, কিন্তু প্রতিটি সংকলনের গল্পগুলো ছিল খাপছাড়া। মানে, তাদের একটা গল্পের সাথে আরেকটা গল্পের কোন সম্পর্ক নেই। তাই আমার মনে হল, কোনক্রমে যদি এই চৌষট্টিটা গল্পকে আমি একই ছাঁচে ফেলে তৈরি করতে পারি, তবে এটা বিশ্বজুড়ে পাঠকদের মনে চিরস্থায়ী একটা জায়গা করে নেবে। এক সংকলনে একই বুনটের চৌষট্টিটা গল্প – ভাবা যায়!
প্রথমদুটো গল্প – “The Trail of Your Blood in the Snow” এবং “Miss Forbes’s Summer of Happiness” - দ্রুতই লেখা হয়ে গেল আমার, ১৯৭৬ সালের মধ্যে। গল্পগুলো ছাপিয়েও ফেললাম এদিকসেদিক। একটানা লিখে যাচ্ছিলাম আমি , কিন্তু তৃতীয় গল্পটা, যেটা আমার মৃত্যুর পর শেষকৃত্য নিয়ে ছিল- সেটা লিখবার সময় আমি অনুভব করলাম, আমি একদম হাঁপিয়ে পড়েছি। এতটাই ক্লান্তি এসে ভর করেছে আমার ওপর, যেটার তুলনা হয় কেবলমাত্র একটা নূতন উপন্যাস শুরু করবার ক্লান্তির সাথে। কাজেই সেই গল্প বাদ দিয়ে আরেকটা গল্পের ওপর কাজ শুরু করলাম। অবাক হয়ে খেয়াল করলাম, এখানেও একই অবস্থা! এগুলো শেষ করবার জন্যে আমি এনার্জিই পাচ্ছি না! কেন এই অবস্থা হয়েছিল- উত্তরটা তখন আমার জানা ছিল না, কিন্তু এখন জানি।
একটা ছোটগল্প লিখবার জন্যে যে পরিশ্রম করতে হয়, তা অনেকটাই একটা নূতন উপন্যাস শুরু করবার মতই। বিশেষ করে গল্পের প্রথম প্যারাটা তৈরি করতে হয় খুবই যত্ন সহকারে। কারণ গল্পের structure বা গঠন, tone বা ভাষ্য, style বা আঙ্গিক, রিদম বা ছন্দ, length বা দৈর্ঘ, এমনকি মুখ্য চরিত্রের গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্যগুলিও সেই প্রথম প্যারাতেই ফুটিয়ে তুলতে হয়। এই কাজটা ঠিকঠাক মত শেষ করতে পারলে গল্পের বাকি অংশ গল্প বলার আনন্দেই তরতরিয়ে এগোয়। সেটা বর্ণনাতিত এক আনন্দময় অভিজ্ঞতা!
একটা উপন্যাস লেখার পর যে অনেকেই বারবার সেটা এডিট করবার কষ্টের মধ্য দিয়ে যেতে চায় না, তার কারণ হল একটা উপন্যাস শুরু করবার পর সেটা শেষ করতে যতটুকু কষ্ট, একটা গল্প লিখে শেষ করবার পর একেবারে প্রথম থেকে আবার এডিট করে আসাটাও প্রায় সমপরিমাণের কষ্ট। এদিকে ছোটগল্পের ক্ষেত্রে কিন্তু ঘটনা ভিন্ন। ছোট গল্পের কোন শুরু বা শেষ নেই- হয় একটা ছোটগল্পের প্লট কাজ করবে, অথবা কাজ করবে না- এ দুইয়ের মাঝামাঝি কখনো কিছু হবে না।
এরকম একটা প্লট নিয়ে বেশ কিছুদূর এগোনোর পর যদি দেখি সেটা আর কাজ করছে না- তখন কি করা উচিৎ? আমার অভিজ্ঞতা বলে, তখন গল্পটি অন্য আরেক ডিরেকশনে বা অভিমুখে পরিচালিত করা উচিৎ। অর্থাৎ, গল্পের অভ্যন্তরীণ অন্যকোন একটি বার্তাকে মূল লক্ষ্য বানিয়ে আস্তে আস্তে সেদিকে গল্পটি নিয়ে যাওয়া। এতেও যদি কাজ না হয়, তাহলে কি করবো? আমি বলি, প্যাড থেকে সুন্দর মত কাগজগুলি টেনে আলাদা করে সেগুলি দিয়ে গোল্লা পাকান আর বাজে কাগজ ফেলবার ঝুড়িতে ছুঁড়ে ফেলুন! কার লেখায় যেন পড়েছিলাম, এখন আর ভদ্রলোকের নাম মনে পড়ছে না –“ একজন লেখককে পাঠকেরা ভালো লেখক হিসেবে স্মরণে রাখে তার ছুঁড়ে ফেলে দেয়া অখাদ্য প্লটগুলোর কারনেই, ছাপার অক্ষরে প্রকাশিত লেখার জন্যে নয়”। এ ক্ষেত্রে সত্য কথাটি স্বীকার করি, আমি আমার সেই প্রথম ড্রাফটগুলো ছিঁড়ে ফেলে দেই নি বটে, তবে করেছিলাম তারচেয়েও বাজে কিছু। আস্তে আস্তে আমি ভুলেই যাই প্লটগুলোর কথা।
আমার মনে আছে, ১৯৭৮ সাল পর্যন্ত ঝড়ে বিধ্বস্ত জাহাজের মত প্লট লিখে রাখা সেই স্টাফ নোটেশনের বই ম্যাক্সিকোতে আমার ডেস্কের ওপর পড়ে ছিল। একদিন, অন্য কি একটা জিনিস খুঁজতে গিয়ে আমার হঠাৎ মনে পড়ে, বইটাকে আমি বেশ কয়েকদিন যাবত আর দেখছি না। সেই মুহূর্তে ব্যাপারটা অত গুরুতর না মনে হলেও পরে যখন আমার টেবিলে গিয়েও আমি বইটা খুঁজে পেলাম না, তখন আমি সত্যি সত্যি ভয় পেয়ে গেলাম। ঘরের প্রতিটি কোনা তন্ন তন্ন করে খোঁজা হল। প্রতিটি আসবাব টেনে হিঁচড়ে দেখা হল, বইয়ের তাক থেকে প্রতিটি বই বের করে ছুঁড়ে ফেলা হল মেঝেতে, পাছে কোন বইয়ের ফাঁকে সেটার দেখা মেলে। এমনকি আমাদের গৃহ পরিচারিকা এবং আমার সব বন্ধুবান্ধবকেও তলব করা হল, যদি ভুলে তাদের কেউ নিয়ে গিয়ে থাকে। কিন্তু কোন চিহ্নই নেই! সম্ভাব্য এবং যুক্তিযুক্ত একমাত্র যে ব্যাখ্যাটি আমার মাথায় এলো, তা হচ্ছে – বাজে আইডিয়া কৃচ্ছতাসাধন অভিযানের শিকার হয়ে বইটির ঠিকানা হয়েছে আস্তাকুঁড়েতে।
তার প্রতিক্রিয়া আমার উপর যা হল, তাতে আমি নিজেই বিস্মিত হয়ে গেলাম! চারবছর ধরে যেসব গল্পের প্লট আমি একরকম অযত্নে অবহেলায় ধুলোর মাঝে ফেলে রেখেছিলাম, সেগুলো পুনরুদ্ধার এখন আমার সম্মানের প্রশ্ন হয়ে দাঁড়ালো। যেকোনো মুল্যে আইডিয়াগুলো পুনরায় দাঁড় করবার প্রচেষ্টাটা ছিল আমার যেকোনো উপন্যাস লেখার মতই কঠোর এবং একনিষ্ঠ পরিশ্রমের ব্যাপার। যা হোক, কোনক্রমে ত্রিশটি গল্পের প্লট ঘসেমেজে তৈরি করতে পারলাম। এর মধ্যে থেকে যেগুলোকে কোনভাবেই গল্পে পরিণত করা যাবে না বলে মনে হল, কোন দয়ামায়া দেখানো ছাড়াই সেগুলোকে পুনরায় ছুঁড়ে ফেলে দিলাম ডাস্টবিনে। এভাবে করে বাঁচল আঠারোটি গল্পের প্লট। এইবার আমি কোন ছাড়াছাড়ি ব্যাতিরেকে একটানা গল্পগুলো লিখে শেষ করতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হলেও শীঘ্রই আবার আবিষ্কার করলাম, আমি ওগুলো লিখবার অনুপ্রেরণা পাচ্ছি না। তরুণদের আমি বরাবরই প্রস্তাব দেই, এমতাবস্থায় ঐ প্রকল্প বাদ দেয়াই উত্তম, কিন্তু আমি নিজে করলাম তার ঠিক বিপরীত। গোঁয়াড়ের মত জেদ ধরে ঝুলে রইলাম গল্পগুলোর পিছে।
১৯৭৯এ এসে যখন আমি Chronicle of a Death Foretold লিখা শুরু করলাম, আমি খুঁজে বের করলাম সমস্যার মূল হোতা। পূর্বের বই লিখে শেষ করবার পর লম্বা সময় ধরে যে বিরতি নিয়েছি আমি, তাতেই আমার লেখালিখির হাত খারাপ হয়ে গেছে। এখন আমি নূতন যা ই লেখা শুরু করতে চেষ্টা করি, আমার কষ্টে দমবন্ধ হয়ে আসে। এই দুঃসহ অবস্থা থেকে ফিরে আসতে আমি ১৯৮০ সালের অক্টোবর হতে নিয়ে ১৯৮৪ সাল পর্যন্ত পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের পত্রপত্রিকাগুলোতে শিল্পসাহিত্যের সমালোচনামূলক একটি সাপ্তাহিক কলাম লেখা আরম্ভ করি। এই কঠোর অভ্যাস আমার ফাঁড়া কাটিয়ে লেখালিখির হাত পুনরায় খুলে দিল। এরপর, আমি দ্বিতীয় সমস্যা চিহ্নিত করলাম। গল্পগুলো যে আমার এতদিনেও লেখা শেষ হচ্ছে না, তার কারণ প্লটগুলোর সাহিত্যের শ্রেণী বা জেনার ঠিক করতে আমার ব্যার্থতা। আমার মনে হল, ওগুলো আসলে গল্প নয়, বরং পত্রিকার কলাম হবার কথা। এভাবে, সেই আঠারোটি প্লটের পাঁচটির ওপর পাঁচটি কলাম দাঁড়িয়ে পত্রিকায় ছাপাও হয়ে গেল। তারপর মাথায় এলো আরেক চিন্তা- পত্রিকার কলাম নয়, আসলে এগুলোর ওপর সিনেমা হওয়া উচিৎ! এভাবেই আমার প্লটগুলো বিচিত্র চিন্তার জাঁতাকলে পিষ্ঠ হয়ে পত্রিকার কলাম এবং সিনেমায় পরিণত হয়েছিল।
এতেও যদি সুরাহা হত! পত্রিকার কলাম এবং সিনেমা হিসেবে বড়পর্দায় আসার পর ঐ প্লটগুলো সংক্রান্ত আমার চিন্তাভাবনা একটু বদলে গিয়ে মাথার ভিতরে অন্য আকৃতিতে জমা হয়। আমি সঙ্গে সঙ্গে সেগুলো লেখতে বসে যাই। এইবার, এইবার সবগুলো গল্পের একটা ড্রাফট তো প্রস্তুত হল, তবে সে জন্যে আমাকে খুব সতর্কভাবে সিনেমার পরিচালকেরা প্লটগুলো থেকে সিনেমা বানানোর সময় ঐগুলোতে যে নিজস্ব সৃষ্টিশীল মোচড় দিয়েছে, তার প্রভাব থেকে নিজেকে মুক্ত রাখতে হয়েছে। আমি গল্পগুলো শেষ করবার নিজস্ব একটা পদ্ধতিও আবিষ্কার করে ফেললাম। তাহল – একটানা একটা গল্প লিখে শেষ করার চেষ্টা না করা, বরং পাঁচটা গল্পই একসাথে চালিয়ে যাওয়া। একটা লিখতে লিখতে ক্লান্ত হয়ে গেলে অন্য একটায় চলে যাওয়া এবং পরে পুনরায় আগের গল্পে ফিরে আসা। পরবর্তী একবছরে আঠারোটি প্লটের আরও ছয়টি প্লট আমার কাগজ ফেলবার ঝুড়িতে ঠাই পেলো। আমি অবাক হয়ে আবিষ্কার করলাম, তাতে আমার শেষকৃত্যের যে স্বপ্ন- সেই প্লটটাও বাদ পড়েছে। স্বপ্নে যেভাবে ঘটনাটি এসেছিল – সেই প্রাণবন্ততা, সেই বিষণ্ণ সজীবতা আমার পক্ষে লেখায় ফুটিয়ে তোলা সম্ভব হয় নি। বাকি গল্পগুলো শেষ করবার পর মনে হল, এগুলোর ভাগ্যে ভালোকিছুই অপেক্ষা করে আছে। পাঠকের মনে দীর্ঘদিন বেঁচে রবে এরা।
গল্পগুলি যখন আবার আমি এক এক করে পড়া শুরু করলাম সে ছিল পুনরায় এক বিস্ময়কর অবস্থা! যে স্মৃতির ওপর ভিত্তি করে গল্পগুলো দাঁড় করবার চেষ্টা করে যাচ্ছিলাম আমি , লেখা শেষ হবার পর দেখি গল্পগুলোর সাথে তার কোন সম্পর্কই নেই! আমি কোনভাবেই আমার প্রাথমিক চিন্তার সাথে, যে ঘটনাসূত্রের মাধ্যমে আইডিয়াগুলির জন্ম হয়েছে তাদের সাথে গল্পগুলির চূড়ান্ত আকারকে মেলাতে পারছিলাম না। সত্য স্মৃতিগুলোকে লাগছিল দূরে বসে দাঁত কেলিয়ে হাসতে থাকা প্রেতের মত। আর কল্পনার জগত এতটাই বাস্তব বলে মনে হচ্ছিল যে একপর্যায়ে তারাই মহাসমারোহে বাস্তব ঘটনার জায়গা দখল করে নিল! আমি বুঝতে পারলাম, সবকিছুর উর্ধে আমার সমস্যা ছিল আমার ইয়োরোপে কাটিয়ে আসা দিনগুলির যে স্মৃতি, তার প্রতি সবসময় একটা সন্দেহপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গী পোষণ করা। অবশেষে বইটাকে চূড়ান্তরূপে ছাপার অক্ষরে প্রকাশ করবার জন্যে যে অনুপ্রেরণা আমার দরকার ছিল, আমি তা পেয়ে গেলাম। সেটা হল – ইয়োরোপের দিনগুলির ব্যাপারে বাস্তবঘেঁষা নয়, বরং বাস্তব ও কল্পনার মিশেলে তৈরি সম্পূর্ণই নিজস্ব একটি দৃষ্টিভঙ্গি।
আমি আট মাস সময় হাতে নিয়ে সবগুলো গল্প আবার আদ্যোপান্ত লিখলাম। বিশবছর আগে, ইয়োরোপের যে স্মৃতিগুলো আমার মাথায় জমা হয়ে আছে- তার কতটুকু সত্যি আর কতটুকু মিথ্যা, এ নিয়ে সন্দেহ দূর করা সম্ভব হচ্ছিল না। তাই কোনটা বাস্তব আর কোনটা কল্পনা – সে চিন্তা থেকে আমি নিজেকে মুক্তি দিলাম। বাস্তব আর কল্পনার সীমারেখা বা বেড়িবাঁধ ও একই সঙ্গে তুলে নিলাম আমার লেখা থেকে। এরপরে লেখা এত গতি পেল যে, আমি অনুভব করছিলাম, শুধুমাত্র একেকটা গল্প বলার আনন্দ থেকেই আমি ভুতের মতোন লিখে চলেছি! এটা এমন একটা আনন্দ, যার যথোপযুক্ত তুলনা করা যায় কল্পনায় উড়ে বেড়াবার অনুভূতির সাথে। আর যেহেতু গল্পগুলো লিখছিলাম আমি একটা থেকে আরেকটায় জাম্প করে করে, আমার পুরো বিষয়বস্তু সম্পর্কে এমন একটা সামগ্রিক ধারণা চলে এসেছিল যে প্রতিটি গল্প থেকে অপ্রয়োজনীয় বিষয়বস্তু ছেঁটে ফেলতে গিয়ে আমার দু’বার ভাবতে হয় নি। এছাড়া কোন গল্পের প্লটের তথ্যগত সত্যতা নিয়েও এমন তুমুল কোন দ্বিধাদ্বন্দ্বের মধ্য দিয়েও আমার আর যেতে হয় নি, যা আমার কোন গল্প লেখার স্পৃহাকে খেয়ে ফেলতে পারে। এভাবেই , আমি মনে করি , জন্ম নেয় আমার গল্পগুলো, যেগুলি একত্রে ও বিচ্ছিন্ন ভাবে একে অপরের খুব ঘনিষ্ঠ।
শেষ করতে চাই এই বলে, আমার কাছে প্রতিটি গল্পের শেষ ভার্শনটি তার আগের ভার্শন থেকে উন্নততর। তাহলে কেউ বুঝবে কি করে – কোন ভার্শনটি তার গল্পের শেষ ভার্শন? কোন চেইন ফুডশপ যেমন তাদের রান্নার রেসিপিকে কারো সাথে শেয়ার করতে চায় না, গল্পের নির্মাণ এবং পুনঃনির্মাণ সংক্রান্ত এই ব্যাপারটাও তেমনি একটা ব্যাবসায়িক সিক্রেট! শুধু এতটুকু বলি যে, পাকা রাঁধুনি যেমন ভাত চড়ানোর পর একটা ভাতে টিপ দিয়েই বুঝতে পারে কখন ভাত নামাতে হবে, তেমনি একজন পাকা গল্পকারও বুঝতে পারেন- কখন গল্পে কাটছাঁট করা থামাতে হবে। পঞ্চইন্দ্রিয়ের কোন কারবার নেই এতে, সবই ষষ্ঠ ইন্দ্রিয়ের খেলা!
তবে হ্যাঁ, বই আকারে বেরোবার পর আমি আর এই গল্পগুলো পড়ছি না। শুধু এই বই নয়, আমি আমার কোন বইই পড়ি না, কারণ আমার আফসোস হয়- ছাপার অক্ষরে যা বেরিয়েছে, তার থেকে আরও ভালো করে বইটা লেখা যেত। কাগজ ফেলবার ঝুড়ি থেকে বেরিয়ে এসে গল্পগুলোযে বই আকারে প্রকাশিত হচ্ছে, এতেই আমি যারপরনাই খুশী!
(আমার অনূদিত এই লেখাটি গ্যাব্রিয়েল গারসিয়া মারকেজের ছোট গল্পের সংকলন Strange Pilgrims এর prologue । গল্প লেখার খুঁটিনাটি অনেক টেকনিক শেয়ার করা আছে বলে অনুবাদ করে সবার সঙ্গে শেয়ার করতে উদ্বুদ্ধ হলাম)
১৬ ই জুলাই, ২০১৫ রাত ৯:১৭
সাজিদ উল হক আবির বলেছেন: ধন্যবাদ। স্বাগতম আমার ব্লগে।
২| ০৬ ই আগস্ট, ২০১৫ সকাল ৯:২২
খেয়ালি দুপুর বলেছেন: কবিতা কই? কবিতা লেখায় মনোনিবেশ করার জন্য অনুরোধ করা যাইতেছে। নতুন আরও কবিতা চাই। শুভকামনা।
০৮ ই আগস্ট, ২০১৫ বিকাল ৫:৫৮
সাজিদ উল হক আবির বলেছেন: প্রিয় ব্লগার, ধন্যবাদ জানালে কম হয়ে যাবে। আমার কবিতাকে অতটা সিরিয়াসলি আমি নিজেই কখনো নিই নি। সেখানে আপনি নিজ থেকে আমাকে উদ্বুদ্ধ করছেন নূতন কবিতা লেখার জন্যে। অনেক বড় পাওয়া আমার।
কবিতা ইদানিং আসছে না। জোর করে কবিতা লেখাও যায় না।
যাক, আজকে বাসায় ফেরার পথে জীবনানন্দ দাসের প্রতীতি কবিতাটি পড়ছিলাম। তার কিছু অংশ তুলে দিলাম আপনার জন্যে। কবিতায় আমার বর্তমান অপারগতার কারণ অনেকটাই এ পংতিগুলোতে ব্যাক্ত। শুভেচ্ছা জানবেন।
"মানুষেরই ভয়াবহ স্বাভাবিকতার সুর পৃথিবী ঘুরায়;
মাটির তরঙ্গ তার দু-পায়ের নিচে
আধোমুখে ধ্বসে যায় - চারিদিকে কামাতুর ব্যাক্তিরা বলেঃ
এ রকম রিপুচরিতার্থ করে বেঁচে থাকা মিছে।
কোথাও নবীন আশা রয়ে গেছে ভেবে
নিলিমার অনুকল্পে আজ যারা সয়েছে বিমান-
কোন এক তনুবাত শিখরের প্রশান্তির পথে
মানুষের ভবিষ্যৎ নেই- এই জ্ঞান
পেয়ে গেছে চারিদিকে পৃথিবীর বিভিন্ন নেশন পড়ে আছেঃ
সময় কাটায়ে গেছে মোহ ঘোচাবার
আশা নিয়ে মঞ্জুভাষা, ডোরিয়ান গ্রিস,
চীনের দেয়াল, পীঠ, পেপিরাস, কারারা- পেপার।"
৩| ০৮ ই আগস্ট, ২০১৫ রাত ১১:৩৭
খেয়ালি দুপুর বলেছেন: অসংখ্য ধন্যবাদ এত সুন্দর করে গুছিয়ে উত্তর দেবার জন্য। ভুল বলেননি, কবিতা জোর করে লিখবার বস্তু নয় আসলেই। ঐটা ভেতর থেকেই চলে আসে হুট করে, অসময়ে। তারপরও কবিতাটা সিরিয়াসলি নেবার জন্য অনুরোধ রইলো। তানাহলে কবিতার প্রতি সুবিচার করা হবেনা যদ্দুর মনে হচ্ছে । জীবনানন্দ দাসের কবিতার পংতিগুলোর জন্য আরও একবার ধন্যবাদ।
তার 'হে হৃদয়' কবিতার কিছু পংতি আপনার জন্য। শুভকামনা।
"আমি তবু বলি।
এখন যে ক’টা দিন বেঁচে আছি সূর্য সূর্যে চলি,
দেখা যাক পৃথিবীর ঘাস সৃষ্টির বিষের বিন্দু
আর নিষ্পেষিত মনুষ্যত্বের
আঁধারের থেকে আনে কী করে যে
শহর-নীলাকাশ।"
১১ ই আগস্ট, ২০১৫ রাত ৯:৫৪
সাজিদ উল হক আবির বলেছেন: ধন্যবাদের কি আছে? বিগত তিনবছর ধরে বছরের এই সময়টুকু কাটে সামনের বইমেলায় আগত বইয়ের কাজে ব্যাস্ত থেকে। মূলত গদ্যই লিখি, সামনের বইমেলায়ও আমার ১০টি ছোট গল্প নিয়ে তৃতীয় বইটি আসছে। সেটার এডিটিং , প্রকাশকের সাথে যোগাযোগ, কাভার তৈরি - এই নিয়ে কবিতায় মনোযোগ হচ্ছে কম। তবে রাখবো আপনার কথা। কবিতায় ফিরব শীঘ্রই।
ধন্যবাদ জানাই জীবনানন্দ দাসের পংতিগুলো শেয়ার করার জন্যে।
৪| ১২ ই আগস্ট, ২০১৫ বিকাল ৪:০৪
খেয়ালি দুপুর বলেছেন: ধন্যবাদ। আপনার বইটির সাফল্য কামনা করছি। অনেক অনেক ভাল থাকা হোক।
১২ ই আগস্ট, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:০৭
সাজিদ উল হক আবির বলেছেন: আপনিও ভালো থাকুন। শুভকামনা। কথা হবে ব্লগ পোস্টে
৫| ১৫ ই আগস্ট, ২০১৫ বিকাল ৫:৪২
রেজওয়ানা আলী তনিমা বলেছেন: ভালো লাগলো আপনার পোষ্ট । লেখালেখি করার কাজটা মানুষ যতটা সহজ ভাবে নেয় জিনিসটা আসলে মোটেই তত সহজ না। একজন প্রতিষ্ঠিত লেখকের পিছনে ভয়াবহ শ্রম সাধনা থাকে। শখের লেখালেখি করতে যেয়েই ওটা ভালোভাবে টের পেয়েছি। সিরিয়াস , লেখাই যাদের জীবিকা তাদের তো বলাই বাহুল্য।
সবশেষে অনেক শুভকামনা।
১৫ ই আগস্ট, ২০১৫ রাত ৮:০৫
সাজিদ উল হক আবির বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যে, ব্লগার তনিমা।
আখতারুজ্জামান ইলিয়াস স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশের সেরা লেখক। তিনি "লেখালিখি" - শব্দটা নিয়েই বিরক্ত ছিলেন। কেউ যদি তাকে জিজ্ঞেস করতো - লেখালিখি ক্যামন চলছে - তিনি রাগ করতেন সাংঘাতিক। তার যুক্তি ছিল - যে প্রফেশনাল পেইন্টার , তাকে কেউ জিজ্ঞেস করে না আপনার আঁকাআঁকি ক্যামন চলছে, যে প্রফেশনাল সিঙ্গার , তাকে কেউ জিজ্ঞেস করে না আপনার গানবাজনা ক্যামন চলছে। খালি লেখকদের ক্ষেত্রেই এটা হয়। প্রফেশনাল রাইটারদের ক্ষেত্রেও লেখালিখি শব্দটা ব্যাবহার করি, যদিও সামাজিক ভাবে তা স্বীকৃত।
মানুষ লেখালিখিটা সহজভাবে নেয়া শুরু করেছে ফেসবুক ব্লগ ইত্যাদির কারনে। কিছু একটা লিখলাম, লিখে ফেসবুকে ছেড়ে দিলাম একশটা লাইক পড়লো, পাঁচজন শেয়ার করলো - এইভাবে অনেকে ফেসবুকে পার্সোনাল ডায়রি লিখে লেখকের খ্যাতি কুড়ায়, কিন্তু তনিমা একজন লেখক আর ফেসবুকারের মধ্যে পার্থক্য যে আছে, সেটাই আমরা ভুলে গেছি।
আমার দুশ্চিন্তার জায়গাটা ঐ খানে। প্রফেশনালি লেখক হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে চাই, কিন্তু ফেসবুকে লাইক কুড়ানোর ফেরে আটকা পড়তে চাই না। আবার ব্লগ এমন একটা জায়গা, যেখানে আমি নিজে গিয়ে কারো লেখা পড়ে একটা কমেন্ট না করলে কেউ আমার লেখা পুঁছবেও না। অথচ ব্যাপারটা এমন হওয়ার কথা ছিল না। হুমায়ূন আহমেদ তার সাক্ষাৎকারে বলেছেন, মানুষের জীবন সংক্ষিপ্ত, তাই তিনি নূতন লেখকদের লেখা পড়ার বদলে ওয়ার্ল্ড ক্লাসিকস পড়তে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন, কারণ বিখ্যাত লেখকদের লেখা থেকে আমাদের শেখার আছে। কিন্তু নূতন একজন লেখকের লেখা থেকে শক্তিশালী একজন লেখক কিই বা শিখতে পারেন? ব্লগ কখনো এই পার্থক্যটা তৈরি করতে পারে না। এখানে সবাই রাজা।
প্রথম্নবার আমার ব্লগে এলেন, অনেক কথা বলে ফেললাম। লেখালিখি কি এবং কেন - এই প্রশ্নগুলোই আজকাল কেউ করে না। আপনি প্রসঙ্গটা তুললেন বলেই আমার কমপ্লেক্সের জায়গাগুলি বেরিয়ে এলো।
আপনার জন্যেও শুভকামন। ভালো থাকবেন। লেখা চালিয়ে যান এমন করে যাতে আপনার কলমই আপনার গতিপথ নির্দেশ করে। শখের লেখিকা হতে প্রো লেভেল রাইটার হয় যান।
৬| ২০ শে আগস্ট, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:৪০
এহসান সাবির বলেছেন: পরে পড়ে নেব ভাই।
আপনি কেমন আছেন বলেন?
২২ শে আগস্ট, ২০১৫ রাত ৯:০১
সাজিদ উল হক আবির বলেছেন: ধন্যবাদ সাবির ভাই। আমি ভালো আছি আলহামদুলিল্লাহ। আশা করি আপনিও ভালো আছেন ।
৭| ২১ শে আগস্ট, ২০১৫ দুপুর ২:৫৬
জাহাঙ্গীর.আলম বলেছেন:
ছোট করে গ্যাবোর ভাষায়- When I’m writing I’m always aware that this friend is going to like this, or that another friend is going to like that paragraph or chapter, always thinking of specific people. In the end all books are written for your friends.
হৃদয়ঙ্গম সহযোগে ৷ শুভকামনা ৷
২২ শে আগস্ট, ২০১৫ রাত ৯:৩২
সাজিদ উল হক আবির বলেছেন: একদম ! ধন্যবাদ বড়ভাই। ভালো থাকবেন।
৮| ২১ শে আগস্ট, ২০১৫ বিকাল ৩:২৪
বিদ্রোহী সিপাহী বলেছেন: লেখা পড়ে ভালো লাগলো ভাই, তবে লেখা কেমন শক্ত শক্ত লাগলো......
নাকি গার্সিয়া মার্কেজ বলেই এমন......
আপনার প্রতি উত্তরগুলো চমৎকার। খুব ভালো লাগা
২২ শে আগস্ট, ২০১৫ রাত ৯:৩৬
সাজিদ উল হক আবির বলেছেন: আমার ব্লগে স্বাগতম ভাই। লেখাটিকি শক্ত লাগলো? তবে তো বিপদ! আমি চেষ্টা করি একদম সহজ ভাষায় লিখবার, কিন্তু কখনো কখনো বেখায়ালে কঠিন কিছু শব্দ ঢুকে পড়ে।
সাহিত্যচর্চার প্রক্রিয়াটি খুবই নিঃসঙ্গ এবং বেদনাদায়ক। সৃষ্টিশীল মুহূর্তগুলি যদিও ইহজাগতিক সব সুখের উর্ধে। তবুও, অন্যের কষ্ট ভেতরে ধারণ করে তা লেখায় ফুটিয়ে তুলতে হয় বলে বেদনাভারে অধিকাংশ সময় লেখক ন্যুব্জ হয়ে থাকেন। এমতাবস্থায় কেউ যদি লেখালিখি সংশ্লিষ্ট কোন বিষয়ে প্রস্ন করেন - না চাইতেও অনেক কিছু বেরিয়ে আসে উত্তরে - প্রতিউত্তরে। এই জন্যেই।
ভালো থাকবেন। কথা হবে, আপনার বা আমার কোন লেখার পীঠে।
৯| ২৩ শে আগস্ট, ২০১৫ সকাল ১১:৩১
বিদ্রোহী সিপাহী বলেছেন: ঠিক বলেছেন ভাই। সাহিত্যচর্চা নিঃসঙ্গতা আর বেদনায় আকন্ঠ নিমজ্জিত হওয়ার প্রবল বাসনা বলেই মনে হয়।
ভালো থাকবেন আপনিও।
২৩ শে আগস্ট, ২০১৫ দুপুর ১২:৪৫
সাজিদ উল হক আবির বলেছেন: পুনরায় ধন্যবাদ ।
১০| ২৩ শে আগস্ট, ২০১৫ দুপুর ১:২৭
গিয়াস উদ্দিন লিটন বলেছেন: আবার ব্লগ এমন একটা জায়গা, যেখানে আমি নিজে গিয়ে কারো লেখা পড়ে একটা কমেন্ট না করলে কেউ আমার লেখা পুঁছবেও না। অথচ ব্যাপারটা এমন হওয়ার কথা ছিল না।
এখানে আমার দ্বিমত আছে ।
একজন ভালো লিখক তখনি প্রমানিত হবেন যখন আম পাবলিক তাঁর লিখা পরবেন । লিখক সবাই হতে পারে । বাট ভাল লিখক
পাঠকরাই তৈরি করে ।
কারো লিখা সাধারণ লিখকরা পড়ে আর কমেন্ট করেই যাবে , অথচ তিনি কাউকে পুছবেন না ; এটাও মেনে নেয়া যায় না ।
তাই ব্লগে এদের প্রত্যখান করার সুযোগ আছে , এবং ব্লগের মজা এখানেই ।
--- আপনার অনুবাদ অসাধারণ হয়েছে , অভিনন্দন !
২৩ শে আগস্ট, ২০১৫ দুপুর ২:২২
সাজিদ উল হক আবির বলেছেন: লিটন ভাই , প্রথমবার আমার ব্লগে এলেন, আপনাকে স্বাগত জানাই।
খুশী হলাম, আপনি দ্বিমত পোষণ করেন জেনে। বিপরীত মতপথের লোক থাকাটাই স্বাস্থ্যকর, ভারসাম্য রক্ষাকারী।
এবার আমার জবাবটা আমি দেই।
আপনার খুব মৌলিক জায়গায় একটা ভুল ধারণা আছে। পাঠক কখনো "ভালো লেখক" তৈরি করতে পারে না। পাঠক "জনপ্রিয় লেখক" তৈরি করতে পারে বড় জোর।
অসংখ্য উদাহরণ আছে এর পক্ষে। ছোট করে যদি বলি, হুমায়ূন আহমেদের প্রথম দুটি বই সমালোচকদের কাছে এখনও সেরা দুটি সাহিত্য কর্ম। এই দুটি বই তিনি লেখেন ছাত্র জীবনে, যখন তার লেখার পাঠক ছিল তার পরিবারের হাতে গনা কয়েকজন, এবং ইউনিভার্সিটি সার্কেলের কজানা।
স্বাধীন বাংলার অন্যতম শক্তিশালী লেখক আখতারুজ্জামান ইলিয়াস তার সাহিত্যিক জীবনের প্রথম দশ বছর পাঠক আনুকূল্য পান নি। তার প্রথম প্রকাশিত গল্পগ্রন্থ অন্য ঘরে অন্য স্বর(১৯৭৬) দ্বিতীয় মুদ্রন হয় ১২ বছর পর ১৯৮৮ সালে। মানে, কত পরে তিনি পাঠক আনুকূল্য লাভ করেন। কিন্তু, পাঠকরা তাকে "পোঁছা" র আগে তার যা লেখা - সেগুলো ভালো ছিল না?
অথবা সমসাময়িকদের মধ্যে শহিদুল জহির সাহেব। তার বিচিত্র লেখনভঙ্গী এবং ঘটনার বর্ণন তাকে প্রথম প্রকাশিত গ্রন্থ থেকেই অন্য সবার চাইতে আলাদা করে দিয়েছিল। তাকে কোন পাঠক ভালো লেখক হিসেবে গড়ে তোলে , জানার ইচ্ছা রইল।
একজন লেখক, তার যদি ইচ্ছা থাকে যে সে সময়ের সেরা লেখকদের একজন হবে, তবে তার জন্যে সময় থাকার কথা না সমসাময়িক অন্য অনেকের লেখাই পড়ে দেখার। কারণ সে শ্রেষ্ঠ সাহিত্যকর্মগুলি পড়ে , নূতন কিছু শেখার উদ্দেশ্যে। এটা আমার কথা না, হুমায়ুন আহমেদের কথা। তার ইন্টারভিউর লিঙ্ক শেয়ার করে দিলাম। - https://www.youtube.com/watch?v=HIS8fK1dqxs
এমতাবস্থায় , একজন মানসম্মত লেখকের লেখা যদি এই কারণে অ্যাভয়েড করা হয় - কারণ (ফেসবুকিয় ভাষায়) আমি তার ব্লগে লাইক কমেন্ট করি, আর সে আমারটায় করে না - তা হলে ব্যাপারটা নিজের গালে চপেটাঘাত করার মতই।
সময়ই শ্রেষ্ঠ বিচারক। আমরা অনুঘটক মাত্র।
অনুবাদটা পড়ে দেখার সময় হয়েছে আপনার, এ জন্যে কৃতজ্ঞতা।
কথা হবে আশা করি , পরবর্তীতে, আপনার বা আমার কোন লেখার পীঠে।
©somewhere in net ltd.
১| ১৫ ই জুলাই, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:৩৩
বঙ্গতনয় বলেছেন: লম্বা লেখা। পরে পড়ব