গ্রামীন দারিদ্য যাদুঘরের উদ্বোধন হওয়ার আগেই সিএনএস তার প্রোমো ক্লিপ দেখিয়েছে। ইউনুস সাহেবের সঙ্গে দেখা করতে মেহমান আসছে বড় দেশ থেকে। থ্যাংক্স গিভিং এ বড় সর ছুটি চলছে পশ্চিমা দেশে। পাতা ঝরে গেছে। এশিয়ার দেশগুলোতে এখন বেশ মজা। বিমান বন্দরে অনেকগুলো প্লেন। যাত্রীবাহী প্লেনের যাত্রীদের উসমানী এয়ারপোর্টে ঘুরিয়ে দেয়া হয়েছে। প্লেন থেকে নামতেই প্রধানমন্ত্রী সংসদের অধিবেশন মুলতুবী করে ফুল হাতে মাইক্রোসফটের বিলগেটসকে স্বাগত জানালেন। দেশী ধনীদের পক্ষ থেকে মুসা বিন শমশের এগিয়ে বুক মেলালেন। পিছনেই ধনকুবের স্যামুয়েল ওয়ালটন ও সৌদি বাদশাহ আবদুল্লাহ।
অতিথিরা এয়ারপোর্টেই মুগ্ধ হলেন। সাদা শাড়ী পরা বিধবা নারীরা হাত নাড়ছে। ইউনুস সাহেব নিজেও এসেছে। মনটা সামান্য খারাপ। ক্লিন্টন শেষ মুহুর্তে সফর বাতিল করেছে। অথচ তার মেয়ে পুওর পুওর বলতে অজ্ঞান ছিল। ইউনুসকে ঘিরে সিতারা বেগম, মুক্তার মিয়া সহ গ্রামবাসী গিজগিজ করছে।
অতিথিরা মিউজিয়ামের বাইরে গরীবদের দেখতে পেলেন। একজন সাদা গেঞ্জী লুঙ্গী পরা মাঝি স্বাগত জানিয়ে বললেন, আল্লাহ আমগো যে কপাল দিসে আপনেগো তো দেয় নাই
:ঠিক বলেছ মাঝি, চাইলেই গরীব হওয়া যায় না। কী কি আছে দেখার? মাঝির দিকে স্যাটেলাইট ক্যামেরা দেখে বিরক্ত হয়ে ইউনুস বললো, কাদের তুমি নৌকায় ফেরত যাও। তিনি ব্যাখ্যা করে বললেন, আমরা প্রায় চলে এসেছি। এখনো তো পাইলট প্ল্যান্ট। সামনেই দেখবেন জয়নুলের দুর্ভিক্ষের ছবি টাঙানো। উপরে লেখা দা পোভার্টি মিউজিয়াম।
বিশ্ব ব্যাঙ্কের প্রেসিডেন্ট রবার্ট জোলিক খুব আনন্দিত। তার পাঁচ বছরের মেয়ে জেসি ছোটখাটো জলহস্তী। চীজ ,ফ্রাই হ্যাম, চকলেট খেয়ে শরীরে তিনশত পাউন্ড চর্বি। ডাক্তার বলেছে বায়ু পরিবর্তন দরকার। ওয়ালমার্টের স্যাম দুর থেকেই দেখছিল জায়গাটা আর ভাবছিল এখানে একটা সুপারস্টোর হলে মন্দ হতো না। প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী চড়া বেতনে কিউরেটর হয়েছে। তার সঙ্গে এগিয়ে যেতে নিয়নে লেখাটা চোখে পড়লো - হে দারিদ্র তুমি মোরে করেছ মহান তুমি মোরে দানিয়াছ খ্রীষ্টের সম্মান।
কিউরেটরের হাতে মিউজিয়াম পরিচিতি। তিনি সংক্ষেপে বললেন, প্রথমেই আপনারা যাবেন সুসজ্জিত কুড়েঘরগুলোতে। কৃষকদের মধ্যে গরীব পাবেন কয়েক ধরনের। না বুজতে পারলে ওদের জিজ্ঞেস করবেন।
বয়স অনুয়ায়ী তারা সাজানো। ওরা দু বেলা ভাত খায়, গুড়া মাছ খায়। মাসিক উপার্জন পনেরো ডলার করে। সে দিয়ে চারটি সন্তান সহ খেয়ে বেঁচে থাকে। ম্যাকডোনাল্ডের সিইও হা করে বললো, এতো খুব আশ্চর্যের। আমার বিগম্যাকের একবেলা মিলের চেয়ে সস্তা। ইউনুসের সঙ্গীটি বললেন,
হ্যা, ঐ দেখুন, জাল শুকাচ্ছে যেসব জেলে তাদের যেমন কোন জামা লাগেনা। ঐ একটুকরো কাপড় কাছা দিয়ে সারাদিন কাজ করে। তাদের স্ত্রীরা গ্রামীন চেকের শাড়ী পরে। রাতে ঘুমুবার জন্য পুরনো শাড়ীকে সেলাই করে গায়ে দেয়।
কিন্তু জনাব ইউনুস, গরীবরা তো যুদ্ধ করে স্বচ্ছল হতে চায়। কী করে গরীব থাকতে সাহায্য করলেন?
সেটা বুঝতে হলে আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপট এবং সুদুর প্রসারী পরিকল্পনা লাগবে। ঐ যে দেখুন অসুস্থ কলিম শেখ, শীতের রোদে থর থর করে কাঁপছে। নদীর পারে তার বাড়ি ছিল। ভাঙনে সব হারিয়ে সে কিছুই খেতে পেত না।
তার অভাব দেখে ক্ষুদ্র ঋণের জন্য নির্বাচিত হলো। আমরা চব্বিশ শতাংশ সুদে লোন দিলাম। শর্ত ছিল একটা মোবাইল কিনে কথার ব্যবসা করবে। কিন্তু আগেই জেনেছি গরীবরা মিথ্যেবাদী। ওরা শুধু ক্ষুধা মিটায়। কলিম অনেকদিন ভাল খায়নি। সে শেখফরিদ হোটেলে গিয়ে পাঙ্গাস মাছের ঝোল দিয়ে ভাত খেয়ে সব পয়সা শেষ করেছে। এখন ভিক্ষে করে সুদের টাকা দিতে হবে তার। আর নিশ্চিত ভাবে সে গরীব থাকবে।
স্যাম বললো, ইন্টারেস্টিং আমরা অবশ্য খুব কম দামে কাজ করাই মার্কিনীদের । একটা বেল্ট থাকে - কনভেয়ার বেল্ট। ক্রমাগত খদ্দেরদের জিনিস পত্র সেই বেল্ট দিয়ে আসে। ঘন্টা মেপে পয়সা দেই। বসে থাকতে দেই না। তোমাদের গার্মেন্টসগুলোও আমার বুদ্ধিতে মেয়েদের কাজ করাচ্ছে।
জোলিক এসেছে গরীবদের সহায়তা কর্মসূচী দিয়ে। সে বললো, তা সব দেশেই দরিদ্র মানুষরা ধনী হতে চায়। তখন কি তাদের মিউজিয়ামে রাখেন? ইউনুস হাসছিল। বললো, না, রাখিনা। দেশে মসজিদ হয়েছে। সেখানে মৌলভীরা বুঝিয়ে দিয়েছে, এটা আল্লাহর পরীক্ষা। অনেক গরীবদের জামা নেই কিন্তু টুপি আছে। আপনারা যেমন চার্চটাকে কায়দা করে বিজনেসে ঢুকিয়েছেন। আমরাও চাইছি।
সারাদিন পরিপাটি সাজানো মিউজিয়ামে চাষা, মজুর, ভিক্ষুক দেখে সবাই খুব প্রীত হলেন। ইউনুসের প্রশংসা হলো। কংকাল সার মানুষগুলো শুইয়ে রাখা ছিল ফুটপাথে। কেউ সুর করে গোঙাচ্ছিল। জোলিকের মেয়ে তাদের জন্য খুচরো পয়সা ছুড়ে দিয়ে খুব খুশী ছিল।
ভ্রমন শেষে দোচালা ঘরে টক পান্তা ভাত এবং শক্তি দইয়ের আয়োজনে সব মুগ্ধ। চেপা মাছও খেলেন তারা। গরীবদের খাবারের রেসিপি টুকে নিলেন তাদের স্ত্রীরা। মর্জিনা নামের এক কাজের মেয়ে রান্না পরিবেশন করছিল। আরব বাদশাহ আবদুল্লাহ টিপস দিতে মর্জিনাকে ডাকলেন। ছুতো করে ছেঁড়া জামার ভেতর কিশোরীটির তুলতুলে পিঠে হাত বুলিয়ে বললেন, আমি এরকম গরীব মেয়েদের আমাদের দেশে কাজ দিতে চাই।
ফেরার সময় নোবেল বিজয়ী বললেন, প্রকল্প সবে শুরু হয়েছে। তার স্বপ্ন পুরো দেশটি একদিন মিউজিয়াম হবে। রাজনৈতিক দলগুলো তার সঙ্গে অনেক আগে থেকে একমত। তবুও তার জন্য অনেক কাজ বাকি। বিশ্বের ধনপতিদের সহায়তা ছাড়া তা সম্ভব নয়। ড. ইউনুসের দাদা খুব দরিদ্র ছিলেন। তার নামে দরিদ্রশ্রেষ্ঠ পদক চালু হবে খুব শিগগির।