“সবুজ পাতার খামের ভেতর
হলুদ গাঁদা চিঠি লেখে
কোন্ পাথারের ওপার থেকে
আনল ডেকে হেমন্তকে?”
বারবার আমাদের মাঝে ফিরে আসে এই হেমন্ত। আবহমান কাল থেকে হেমন্ত নিয়ে আসে উৎসব আর আনন্দমুখর দিন। ঘরে ঘরে চলে নতুন ধানের উৎসব। ছেলে বুড়ো, কিশোর কিশোরী, নবীন-প্রবীণ সবার মাঝে দেখা দেয় প্রাণচাঞ্চল্য। মেয়েরা অপেক্ষায় থাকেন সেই সময়ে জন্য, কখন যাবেন ‘নাইওর’। নতুন আমন ধানের মৌ মৌ ঘ্রাণে নির্মল বাতাস সুরভিত হয়। সবুজ মাঠ হয়ে যায় পাকা ধানে হলুদাভ। মাঠে মাঠে ধান কাটার ধুম পড়ে। দলবেঁধে কৃষকের মাঠের ফসল কাটার ব্যস্ততার দৃশ্য হেমন্তের প্রধান দৃশ্য। রৌদ্রকর তাপদাহ উপেক্ষা করে বর্ষার আগে যে ধান বুনেছিল, সেই কষ্টের ফসল আজ সে ঘরে তুলছে। তাই কৃষাণ-কৃষাণীর মুখে অনাবিল হাসির ছাপ লেগেই থাকে। কিন্তু উৎসবমুখর সেই দিনগুলো ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে। কালের বিবর্তনে, জলবায়ু পরিবর্তনে হেমন্তের সেই প্রাঞ্জল দিনগুলো আর আসছে না।
হেমন্ত এলো বলে…
হেমন্ত হলো ষড়ঋতুর চতুর্থ ঋতু, যা কার্তিক ও অগ্রহায়ণ মাসের সমন্বয়ে গঠিত। শরৎকালের পর এই ঋতুর আগমন। এর পরে আসে শীত, তাই হেমন্তকে বলা হয় শীতের পূর্বাভাস। শীতের আগাম আভাস দেয় বলে তাকে শীতের পূর্বাভাস ঋতুও বলা হয়। নানা বৈচিত্র্য নিয়ে এ হেমন্ত ঋতু আগমন করে। গ্রাম-বাংলায় এ ঋতু উৎসবের ঋতু বলে পরিচিত।
হেমন্ত দিয়েই শুরু
এক সময় বাংলায় বছর শুরু হতো হেমন্ত দিয়ে। কারণ, ধান উৎপাদনের ঋতু হলো এই হেমন্ত। বর্ষার শেষ দিকে বোনা আমন-আউশ শরতে বেড়ে ওঠে। আর হেমন্তের প্রথম মাস কার্তিকে ধান পরিপক্ব হয়। এ ঋতুতে ফোটে গন্ধরাজ, মল্লিকা, শিউলি, কামিনী, হিমঝুরি, দেব কাঞ্চন, রাজ অশোক, ছাতিম, বকফুল।
এলো হেমন্ত
“ঋতুর খাঞ্চা ভরিয়া এল কি ধরণীর সওগাত?
নবীন ধানের আঘ্রাণে আজি অঘ্রাণ হল মাত।
‘গিন্নি-পাগল’ চালের ফিরনি
তশতরি ভরে নবীনা গিন্নি
হাসিতে হাসিতে দিতেছে স্বামীরে, খুশিতে কাঁপিছে হাত।
শিরনি রাঁধেন বড়ো বিবি, বাড়ি গন্ধে তেলেসমাত!
মিয়াঁ ও বিবিতে বড়ো ভাব আজি খামারে ধরে না ধান।
বিছানা করিতে ছোট বিবি রাতে চাপা সুরে গাহে গান!
‘শাশবিবি’ কন, “আহা, আসে নাই
কতদিন হল মেজলা জামাই।”
ছোট মেয়ে কয়, “আম্মা গো, রোজ কাঁদে মেজো বুবুজান!”
দলিজের পান সাজিয়া সাজিয়া সেজো-বিবি লবেজান!”
কবি নজরুলের এই কবিতায় ফুটে ওঠে হেমন্তের চিত্র। মূলত হেমন্তের ফসল কাটাকে কেন্দ্র করেই উৎসবের সূচনা হয়। এটা পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী শস্যোৎসব। নতুন আমন ধান কাটার পর সেই ধান থেকে প্রস্তুত চালের প্রথম রান্না উপলক্ষে আয়োজিত উৎসব, যা সাধারণত অগ্রহায়ণ মাসে আমন ধান পাকার পর এই উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশের কোনো কোনো অঞ্চলে ফসল তোলার পরদিনই নতুন ধানের নতুন চালে ফিরনি-পায়েস অথবা ক্ষীর তৈরি করে আত্মীয়স্বজন ও পাড়া-প্রতিবেশীর ঘরে ঘরে বিতরণ করা হয়। এ সময় জামাইকে নিমন্ত্রণ করা হয়, মেয়েকেও বাপের বাড়িতে ‘নাইওর’ আনা হয়।
নানা ধরনের দেশীয় গানসহ আবহমান বাংলার সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পালিত হয়। লাঠিখেলা, বাউলগান, নাগরদোলা, বাঁশি, শখের চুড়ি, খৈ, মোয়ার পসরা বসে গ্রাম্য মেলায়।
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব
জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বাংলাদেশে সাম্প্রতিক কয়েক বছর ধরে ষড়ঋতুর মধ্যে চারটি ঋতুর উপস্থিতি টের পাওয়া যাচ্ছে। আর বাকি দু’টি ঋতু হেমন্ত ও বসন্ত প্রকৃতি থেকে প্রায় হারিয়ে গিয়েছে।
পানি ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞ ড. আইনুন নিশাতের মতে, বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তনের যে নেতিবাচক প্রভাব দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশ তার প্রাথমিক অবস্থায় রয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে দেশে বৃষ্টিপাতের সময়ও বদলে গেছে। দেখা যাচ্ছে ঘোর বর্ষায় বৃষ্টি কম হচ্ছে আবার ভাদ্র মাসে বেশি বৃষ্টিপাত হচ্ছে। অন্য দিকে অল্প সময়ের মধ্যেই বেশি বৃষ্টিপাত হচ্ছে। বঙ্গোপসাগর ক্রমেই অশান্ত হয়ে উঠছে। এ ছাড়া বেড়েছে শিলাবৃষ্টি ও ঘন কুয়াশা। সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় এ যে, দেশে কয়েক বছর ধরে ষড়ঋতুর মধ্যে চারটি ঋতুর উপস্থিতি টের পাওয়া যাচ্ছে। আর বাকি দু’টি ঋতু প্রকৃতি থেকে প্রায় হারিয়ে গিয়েছে। ঋতু দু’টি হচ্ছে ‘হেমন্ত’ ও ‘বসন্ত’।
হেমন্তের রূপ
“প্রথম ফসল গেছে ঘরে,
হেমন্তের মাঠে মাঠে ঝরে
শুধু শিশিরের জল,
অঘ্রাণের নদীটির শ্বাসে
হিম হয়ে আসে
বাঁশপাতা মরা ঘাস- আকাশের তারা!
বরফের মতো চাঁদ ঢালিছে ফোয়ারা।”
রূপসী বাংলার কবি জীবনানন্দ দাশ এভাবেই হেমন্তকে কবিতার আরশিতে প্রতিবিম্বিত করেছেন এক অনন্য রূপকল্প আর স্বপ্ন ও বাস্তব জগতের বিচিত্র বর্ণের মনোলোভা রূপে। কবিতার বাইরে যে হেমন্ত প্রাকৃতিক সৌন্দর্য নিয়ে উদ্ভাসিত তাকে কল্পনায় সেভাবে ছুঁয়ে দেয়া যায় তার থেকেও মনোহর আবেশে উপলব্ধি করা যায় খুব ভোরে যখন দূরদিগন্তে ধু-ধু কুয়াশার নেকাব সরিয়ে আরক্ত সূর্যের আভা নীলিমার জংশনে এসে দাঁড়ায় গহিন দীর্ঘ এক লাল ট্রেনের মতো- তখন।
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হিমের রাতে এই গানটিতে লিখেছেন:
“হিমের রাতে ওই গগনের দীপগুলিরে,
হেমন্তিকা করল গোপন আঁচল ঘিরে।
ঘরে ঘরে ডাক পাঠালো ‘দীপালিকায় জ্বালাও আলো,
জ্বালাও আলো, আপন আলো, সাজাও আলোয় ধরিত্রীরে।
বিশ্বখ্যাত চিত্রশিল্পী এস এম সুলতান তার আঁকা অসংখ্য ছবিতে বাংলার এই কৃষক, হেমন্ত, অঘ্রাণের রূপটাকেই মহিমান্বিত রূপে ফুটিয়ে তুলেছেন গভীর মমতায়। হেমন্তের আবহে যেমন স্নিগ্ধ পেলবতার রেশ প্রবহমান, তেমনি হেমন্ত তার অবয়বে গহন উজ্জ্বলতাও বহন করে আসছে অনন্তকাল ধরে। মনকে প্রফুল্ল করে তোলা যেন হেমন্তের এক নিবিড় বৈশিষ্ট্য। যে বৈশিষ্ট্য জীবন যাপনে প্রবলভাবে ছায়া ফেলে। শালিকের খয়েরি রোঁয়ার মতো এক ধরনের বিষণœতাও দানা বাঁধে মর্মে। আর ওই মর্ম থেকেই নিঃসৃত হয় নির্জন অরণ্য স্তব্ধতা। বিজন দ্বিপ্রহরে হেমন্ত-তালচড়ুইয়ের ছায়ার মতো কখনো লাফায় জানালার কার্নিশে, রেলিংয়ে আর দোলনচাঁপার ডালে, জ্যোৎস্নাঙ্কিত সন্ধ্যায় ফেব্রিকোর নরম তোয়ালের মতো হেমন্ত যেন পুরনো ভাঙা পুকুর ঘাটের সিঁড়ির শ্যাওলা বিজড়িত সবুজ গালিচায় এসে গড়িয়ে যায় জ্যোৎস্নাধারার মতো মনে হয়। যেন ঝাউয়ের চূড়ায় একগুচ্ছ কুয়াশার মতো ফুটে আছে হেমন্ত। কখনো-কখনো হেমন্ত ঠিক মেঘের ড্রেসিং টেবিল হয়ে যায়। আর ওই ড্রেসিং টেবিলের আয়নায় ভেসে যায়, নদীর কুলকুল ধ্বনি। আর এক নিঃসঙ্গ মাঠ খুব সন্তর্পণে কেবল হেমন্তে বসে বাজায় তার ধুলো আর ঘাসের পাখোয়াজ। হেমন্ত কি বৃষ্টির মতো ঝরে পড়তে পড়তে সেতার বাজায় কিংবা ভায়োলিন।
হেমন্ত এলেই এই বাংলার মাঠে-প্রান্তরে এক হলুদ রঙের বিস্তীর্ণ প্রেক্ষাপট তার অমোঘ বিশালতায় রেশমি পালক ছড়িয়ে দেয়। হলদে ধানের ক্ষেতে হাওয়ার দাপাদাপি এক চিরায়ত বাংলার কৃষি ঐতিহ্যকে চোখের সামনে ফুটিয়ে তোলে। তারপর শুরু হয় ধান কাটা। ধানের আঁটি গরু আর মোষের গাড়িতে কৃষকের বাড়ি বয়ে নিয়ে যেতে যেতে গাড়োয়ানের কণ্ঠে উৎসারিত হয় যে ভাওয়াইয়া সঙ্গীত আর বাঁশির সুরের এক পাগল করা, হৃদয় নিংড়ানো সুরমূর্ছনা; তার ছবিটা এই বাংলা ছাড়া কোথাও কি খুঁজে পাওয়া যায়! উঠোনের এক পাশে ধানের আঁটির স্তূপ থেকে থোকা-থোকা ধানের আঁটি খুলে ধান খসিয়ে নিয়ে রাতভর উনুনে সিদ্ধ করার যে দৃশ্যাবলি, কৃষাণীদের অবিশ্রান্ত ব্যস্ততা আর নতুন ধানের ম-ম গন্ধে বাতাস ভারী হয়ে ওঠার নৈসর্গিক পরিবেশকে হেমন্তের এক অনাবিল অবগাহন ছাড়া অন্য কিছু কি বলা যায়! ধান শুকিয়ে ঢেঁকি অথবা কলে ধান ভাঙানোর পর নতুন চালের সুমিষ্ট-স্নিগ্ধ ঘ্রাণ শরীরে মেখে ঘুরে বেড়ানো প্রতিটি প্রহরে বাংলার চিরন্তন প্রতিচ্ছায়াটা ঘুর ঘুর করে বেড়ায় যেন এই বাংলারই পানি, হাওয়া আর মাটির মনোভূমে।
এ ছাড়া নতুন চাল ঘরে এলেই কৃষকের মুখে যে হাসি অবারিত হয়-তাতে যে প্রাণের স্পন্দন খুঁজে পাওয়া যায় তাকে ফ্রেমে ধরে রাখলেও যেন সেই স্পন্দনের শব্দ অনুরণিত হবে দিগন্ত থেকে দিগন্তে। নতুন চালের ভাত, পাশাপাশি ‘আগুনি’ চালের ক্ষির পায়েস পিঠা কৃষকের ঘরে ঘরে তৈরি হবে- যার সাথে মিশে থাকবে কোমল এক আনন্দোচ্ছ্বাস।
আসছে অতিথি পাখি
হেমন্তের আবহাওয়া বলে দেয় শীতকাল আসন্ন। প্রাণিজগতেও তার বার্তা মিলছে। আর যে কারণে শীত বা তুষার প্রবণ অঞ্চল থেকে দল বেঁধে ছুটে আসতে শুরু করছে শীতের অতিথি পাখি কিছুটা উষ্ণতার আশায়। হেমন্তের অতিথি হয়ে শীতের পরিযায়ী ছোট-বড় পাখিরাও তাদের শীতকালীন আশ্রয় খুঁজে নিতে আসতে শুরু করেছে বাংলাদেশের ছোট-বড় বিল-জলাশয় আর দিগন্ত বিস্তৃত প্রান্তরে।
শুধুই অনুভবের
হেমন্তকালের প্রকৃতি আষাঢ়-শ্রাবণ কিংবা ভাদ্র মাসের মতো বৃষ্টি হবার কথা নয়, কারো মন স্যাঁতস্যাঁতে থাকার কথা নয়। এ সময়ে ফসলে ফসলে ছড়িয়ে থাকে মাঠ-ঘাট-বন বাদাড়। সৃষ্টির সকল জীবের মাঝে মাঝে দেখা মেলে চঞ্চলতা, কলকাকলিতে মুখরিত থাকে আকাশ-বাতাস-প্রান্তর। শীত, গ্রীষ্ম কিংবা বর্ষার মতো হেমন্ত তীব্র, প্রখর অথবা মুখরা নয়, তাই হেমন্তকে আলাদা করে দেখা যায় না, ম্লান, ধূসরিত আর অস্পষ্ট হেমন্তকাল শুধু অনুভবের।
বসন্তের তীব্র ফুলের গন্ধ, পাখির গান অথবা গ্রীষ্মের খরতাপ, বৈশাখী ঝড় কিংবা বর্ষার ভরা নদী নালা, ঘনঘোর বরষায় দিনব্যাপী ঝমঝম বৃষ্টির মতো করে হেমন্ত জানান দেয় না আমি আছি, আমি এসেছি।
দেশে দেশে হেমন্ত
ইউরোপে ১ সেপ্টেম্বর থেকে হেমন্তের শুরু। সেখানে একে বলা হয় বৈচিত্র্যময় রঙ ও পাতা ঝরার ঋতু। হেমন্তকাল হলো পাতা ঝরার দিন। ব্ল্যাক ফরেস্টের নানা ধরনের ঝাউ গাছগুলো ছাড়া আর সব গাছেরই পাতা এ সময় ঝরে যেতে শুরু করে এবং শীতের আগমনের আগেই সব বৃক্ষই ন্যাড়া হয়ে যায়। তবে মেপেল লিফসহ প্রায় সব গাছের পাতাগুলো হলদে-তামাটে বর্ণ ধারণ করে বহাল তবিয়তে থাকে।
হেমন্ত ঋতুর দৃশ্যচিত্র আসলে জীবনের ঝরা দিনগুলোর গানের ছায়াছবি। সারা দিন ধরে হিম মাখানো হালকা হাওয়ায় ঝরঝর করে ঝরে পড়েছে কোটি কোটি গাছের পাতা। দীর্ঘ শীতের অলস মুহূর্ত শেষে অকস্মাৎ বসন্তের মহাসমারোহে প্রকৃতির দেহমনে নতুন জীবনের যে বিপুল উচ্ছাস ঘটেছিল একদিন, সময়ের স্রোতে ভেসে বেদনার রঙে রেঙে এবার সেই জীবনেরই বিদায় নেবার পালা। তবে হেমন্ত ঋতুর বাইরের রূপ, তার বৈরাগী প্রকৃতির উদ্বেল পদচারণা উত্তর আমেরিকাসহ ইউরোপব্যাপী তার বিদায় পর্বের আনুষ্ঠানিকতা নিয়ে প্রকৃতির রাজ্যসভায় যেভাবে উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে অন্তর্লীন বেদনায়, এককথায় তুলনাহীন তার সুশোভন সৌন্দর্য।
একটি কবিতার কয়েকটি চমৎকার লাইন দিয়েই আজকের লেখা এখানেই শেষ করছি-
“হেমন্তের হাওয়া-
সে যে আমার বোনের নোলক
নতুন চালের ভাতের বোলক
আপন করে পাওয়া!” হ
লেখক: শিক্ষার্থী ও সাংবাদিক, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে অক্টোবর, ২০১৯ রাত ১:৩৪