ডেভিড লিঞ্চ একদা বলেছিলেন ,' যখন আপনাকে কোন সিনেমা (চামচে তুলে খাইয়ে দেয়া হয়) সরাসরি সহজ ভাষায় বলে দেয়া হয় যে কি ঘটছে তখন আপনি সাথে সাথে বুঝে যান। আমি কিন্তু আপনাদের নিজেদের চিন্তা ভাবনার জন্য কিছু বিষয় রেখে দেই বা দিতে চাই যাতে করে আপনারা বিষয়টা নিজের মত করে বুঝতে বা ব্যখ্যা করতে পারেন।'
তো সাম্প্রতিক সময়ে আমার দেখা এরকমই কিছু মুভি নিয়ে আমার এই পোস্ট , যে সকল মুভির ব্যাখ্যা আসলে আপনাকেই বের করে নিতে হবে।
Das Experiment(২০০১)
পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেয়া হয় একটি বৈজ্ঞানিক গবেষণার জন্য ভলান্টিয়ার আবশ্যক। গবেষণার বিসয়বস্তু একটি সিমুলেটেড কারাগার। যেখানে ভলান্টিয়ার দের ১৪ দিন থাকতে হবে, বিনিময়ে তাদের একটা বড় অংকের টাকা দেয়া হবে। এই বিজ্ঞাপন দেখে তারেক এসে হাজির হয় ভলান্টিয়ার হিসেবে। তারেক সহ মোট ২০ জন এই সিমুলেটেড কারাগারে গবেষণায় অংশ নেয়। তাদেরকে দুই দলে ভাগ করে দেয়া হয়। একদল হল প্রিজনার, আরেক দল গার্ড। তাদের কে তাদের রোল প্লে করতে বলা হয় ১৪ দিন।
বিজ্ঞানীদের তত্ত্বাবধানে সিমুলেশন শুরু হয় এবং পরিস্থিতি ধীরে ধীরে কমপ্লিকেটেড হতে শুরু করে। এক পর্যায়ে সবাই ভুলে যায় এটা একটা সিমুলেশন মাত্র। গার্ডদের আচরন নির্দয় নির্মম হতে শুরু করে। বন্দিদের ভেতর কাজ করে তীব্র ঘৃণা। পরিস্থিতি এক পর্যায়ে আউট অফ কন্ট্রোল ।। মানব মনের গভীরে লুকানো , অন্ধকার দিকগুলো বেরিয়ে আসতে শুরু করে।
ভয়াবহ এক পরিস্থিতি।
সিনেমাটি নির্মিত এক সত্য কাহিনী অবলম্বনে, "Stanford Prison Experiment"
২০০১ সালে মুক্তি পাওয়া জার্মান ফিল্মটির পরিচালক জনাব Oliver Hirschbiegel
মুল চরিত্রে জনাব Moritz Bleibtreu সিনেমার নাম তারেক aka Prisoner 77.
আইএমডিবি ঃ ৭.৮
আমার রেটিং ঃ ৭.৫
Angel Heart (১৯৮৭)
১১৩ মিনিটের এই আমেরিকান সাইকো থ্রিলার ১৯৮৭ সালে নির্মিত হয় ফলিং এঞ্জেল নামের এক উপন্যাস অবলম্বনে। পরিচালক জনাব Alan Parker। মুখ্য চরিত্রে এবং Robert De Niro
শুরুটা এরকম, (DeNiro) একজন নিউইয়র্ক সিটি প্রাইভেট ডিটেকটিভকে (Mickey Rourke) ভাড়া করে একজন নিখোঁজ মানুষকে (জনি ফেভারিট) খুজে বের করার জন্য। তদন্ত করতে গিয়ে Angel Heart অনুভব করতে পারে যে জিনিসটা যত সহজ হবে তার মনে হয়েছিল তত সহজ না। সে প্রানান্ত চেষ্টা চালাতে থাকে। তদন্তের স্বার্থে সে বিভিন্ন লোকজনদের সাথে দেখা করে, বিভিন্ন ধরনের প্রশ্ন করে, এবং আতংকের সাথে খেয়াল করে যারাই তাকে সাহায্য করতে চায় বা রাজি হয় সাহায্য করতে তারাই কোন না কোন ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
পরিস্থিতি জটিল আকার ধারন করে যখন এঞ্জেল নিজে জড়িয়ে যায় এই ঘটনায়। আদৌ কি সে এই ঘটনার সাথে কোন ভাবে যুক্ত? নাকি তার মনের ভুল? সে কি শুধু একজন ডিটেকটিভ ? নাকি অন্য কিছু? Louis Cyphere লোকটাই বা কে? কি তার পরিচয়?
সব মিলিয়ে রিয়েল মাইন্ড টুইস্টিং সিচুয়েশন।।
সময়ের তুলনায় এডভান্স ছিল, দর্শকরা হয়ত তৈরি ছিলেন না এই ধরনের সিনেমার জন্য। তাই হয়ত ইনিসিয়েলি সিনেমাটি তেমন জনপ্রিয় হয়নি। সেন্সরবোর্ড ও ঝামেলা পাকাইসে। অবশ্য পরবর্তীকালে ফুল লেংথ মুভিটি ডিভিডি আকারে প্রকাশ করা হয়।
আইএমডিবি ঃ ৭.৩
আমার রেটিংঃ ৭.৫
Timecrimes
২০০৭ সালে মুক্তি পাওয়া স্প্যানিশ ফিল্ম Timecrimes এর পরিচালক Nacho Vigalondo
মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করেছেন Karra Elejalde। রানটাইম ৯২ মিনিট।
মুভিটি মুলত টাইম ট্রাভেল সংক্রান্ত। নতুন বাড়িতে শিফট করার সময় Hector (Elejalde) দূরবীন দিয়ে বাড়ির আশপাশের এলাকা দেখছিল। হঠাৎ সে দেখল তার বাড়ির পেছনের জঙ্গল মত জায়গায় এক সুন্দরী রমণী ধীরে ধীরে তার কাপড় চোপড় খুলে ফেলছে। ঘটনা কি তদন্ত করতে সে ওই মহিলা কে ফলো করে জঙ্গলে ঢুকে যায়। সেখানে সে আততায়ীর হামলার শিকার হয়ে আহত অবস্থায় এক বাড়িতে আশ্রয় নেয়। সেখানে সে এক লোকের সাহায্যে আততায়ীর হাত থেকে বেচে যায়। কিন্তু পরিস্থিতি মাইন্ড টুইস্টিং হয় তখনই যখন সে ওই বাড়ী থেকে নিজের বাড়ীর সামনে তার স্ত্রীর সাথে নিজেকেই বসে থাকতে দেখে।। তার মনে প্রশ্ন জাগে তার নিজের পরিচয় নিয়ে, তার নিজের অস্তিত্ব নিয়ে। তাকে কে হামলা করেছিল? কেন করেছিল? তাকে কে সাহায্য করল? কি তার পরিচয়?
অল্প বাজেটে নির্মিত অসাধারন এই মুভিটি সারাক্ষন আপনাকে টেনশনে রাখবে যে আসলে ঘটনা কি এবং কোনটা কে? কিছুক্ষন পরপরই আপনাকে আপনার ধারনা পাল্টাতে হবে।।
আইএমডিবি রেটিং ঃ ৭.২
আমার রেটিং ঃ ৭.৫
১. ১৫ ই অক্টোবর, ২০১৬ দুপুর ১:৩৯ ০
শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ।