জনাব বাট্রান্ড রাসেল বলেছিলেন , 'যেসব কারনে আমি খ্রিষ্টান না তার মধ্যে একটা হল, স্বর্গ সেই জায়গা না যেখানে আমি চিরকাল কাটাতে চাই'। এই মুভির পরিচালক জনাব ইয়েনস লিয়েন (Jens Lien) ও সম্ভবত এই লাইনের লোক।
সিনেমার শুরুতে দেখা যায় নায়ক (Trond Fausa Aurvaag) এক সাবওয়ে ট্রেন ষ্টেশন এ দাড়ায় আছে, স্ট্রেসড, মাথা আউলায় যাচ্ছে তার, ঘন ঘন শ্বাস নিচ্ছে। তার পেছনে এক কাপল অসম্ভব বিচ্ছিরি ভাবে কিস করতেসে। দেখেই বেখাপ্পা লাগে, উইথ ইন ওয়ান সেকেন্ড। মানে এসব কি? এইটা কি ধরনের কিস? ওদের এই কর্মকাণ্ড দেইখা নায়ক আরও উত্তেজিত, এক লাফে ট্রেনের নীচে। যাহ্ স্লা ...
পরের সিনে দেখা যায় নায়ক একটা বাসে করে কোথাও যাচ্ছে। লাস্ট স্টপেজে তাকে নেমে যেতে হল। এক লোক তাকে রিসিভ করে কাল্পনিক এক শহরে নিয়ে গেল এবং তাকে তার ফ্ল্যাটের চাবি , চাকরির নিয়োগপত্র ধরায় দিল। ফ্রেন্ডলি বস, অফিসের সবাই খুব ভাল ব্যবহার করে , তেমন কোন কাজ কর্ম নাই। কয়দিন পরেই সে সুন্দরী এক বান্ধবী (Petronella Barker) কে নিয়ে এক ফ্ল্যাটে উঠে গেল। সব কিছু খুব সুন্দর সাজান গোছানো। এক ধাক্কায় লাইফ সেট আর কি :p চারদিকে শুধু সুখ আর সুখ...
কিন্তু তার মনে হল কোথায় যেন কি একটা ঘাপলা আছে। যতই সে মদ খায়, সে মাতাল হয় না, কিছুই সেরকম মজা লাগে না , এমন কি সেক্সও না। বস কিছু বলে না। বান্ধবিও সালা কোন পেইন দেয় না। কি আজব কি আজব?? টেস্ট লেস , অডরলেস ...
কিছুদিন পর এই বিরামহীন সুখ তার আর ভাল লাগে না। অসহ্য লাগে সব কিছু। বোরিং, বিরক্তিকর এক ঘেয়ে , একই প্যাঁচাল , একই জোক শুনতে শুনতে সে ক্লান্ত। সব কিছু তার কাছে কেমন যেন ফেইক মনে হয়। সে একবার চেষ্টা করে যে বাসে করে সে আসছে সেই বাসে করে ফেরত যেতে। কিন্তু সে বাসের ট্র্যাক ফলো করে গিয়ে দেখে কিছুদুর যাবার পর আর কোন রাস্তা নেই। তারপর সে বোরিং লাইফকে হালকা এক্সাইটিং করার জন্য গোপনে সে আরেকটা প্রেম করে। কিন্তু হায় সে আবিস্কার করে এই মেয়ে (Birgitte Larsen) তার আগের বান্ধবির চাইতে কম বোরিং না। তার ২য় প্রেমের খবর শুনেও তার ১ম বান্ধবির কোন রাগ দুঃখ দেখা যায় না।
এই পারফেক্ট জীবন আর সহ্য করতে না পেরে বেচারা সাবওয়ে ষ্টেশন এ যায় সুইসাইড করতে। তারপর অদ্ভুত প্রেমিক প্রেমিকার ভালবাসাহীন চুম্বন দৃশ্য দেখে সে ঝাপ দেয় ট্রেনের নীচে। ফলাফল ভয়াবহ!! কারন ট্রেনের নিচে সে ভর্তা হয়ে যায়, বাট দেয়ার ইজ নো ওয়ে টু ডাই।। ভাঙ্গাচুরা অবস্থায় সে ফেরত আসে, আর ঠিক তখনই তার বান্ধবী তাকে বলে ' ইয়েই তুমি আসছ? চল আমরা বেড়াতে যাই' !! লে হালুয়া ...
তো যাইহোক , এক পর্যায়ে সে রিয়েল ওয়ার্ল্ড এ ফিরে আসার একটা রাস্তা খুজে পায়। দেয়ালের ছোট্ট একটা ছিদ্র, ওপাশ থেকে অসম্ভব সুন্দর মিউজিক এবং আলো আসে। তাই দেখে ডেস্পারেট একটা চেষ্টা চালায় সে। হাতুড়ী শাবল ইত্যাদি নিয়ে। গর্ত খুঁড়ে সে চলে আসে রিয়েল ওয়ার্ল্ড আর কাছাকাছি।।
সিনেমা খুবই সুন্দর ভাবে নির্মিত, মানে পরিচালনা অভিনয়, মিউজিক , লোকেশন সব কিছুই বেশ ভাল্লাগসে। কিছু কিছু জায়গায় হাসি আটকানো মুশকিল। কাস্টিং হইসে অসাধারন, মানে নায়কের চরিত্রের সাথে এর চাইতে মানানসই চেহারা আর হইতে পারে না। মোটামুটি ওয়ান ম্যান শো। তার কর্মকাণ্ড চলাফেরা , প্রতিটা মুভমেন্ট ইন্টারেস্টিং। বাকিরা সবাই সাপোর্টিং।। নরওয়ের মুভি। কোন ক্যাটাগরিতে ফেলা মুশকিল। ডার্ক কমেডি বলা যায়। মুক্তিকাল ২০০৬। দৈর্ঘ্য প্রায় দেড় ঘণ্টা।
একটাই নেগেটিভ পয়েন্ট আমি বলব । সবকিছু এত subtle যে সিনেমার ঘটনা প্রবাহ, টার্ন এন্ড টুইস্ট বোঝা মুশকিল। আমার বুঝতে টাইম লাগসে। আপনাদের হয়ত এত টাইম লাগবে না। আর সব চাইতে বড় সমস্যা হইল, স্বর্গের যদি এই অবস্থা হয় তাইলে তো বিশাল টেনশন রে ভাই!!