somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একটি ছবিই যখন না বলা অনেক কথা বলে দেয়। ( উপলব্ধি - ৮ )।

২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ছবি : পিআইডি

সম্প্রতি শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ছাত্র-জনতার চাহিদা অনুসারে (৮ আগস্ট ২০২৪) বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন ডঃ মুহাম্মদ ইউনূস। তারই ধারাবাহিকতায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ডঃ মুহাম্মদ ইউনূস ৭৯তম জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনে (ইউএনজিএ) যোগদানের জন্য ২৩ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কের উদ্দেশে ঢাকা ছেড়েছেন। সেখানে জাতিসংঘের ৭৯তম সাধারণ অধিবেশনের ফাঁকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস এবং সেখানেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস বাংলাদেশ স্থানীয় সময় মঙ্গলবার (২৪ সেপ্টেম্বর) রাত ৯টার দিকে (যুক্তরাষ্ট্রের সময় বেলা ১১টা) নিউ ইয়র্কে দ্বিপক্ষীয় এক বৈঠকে মিলিত হন। বৈঠক শুরুর আগে জো বাইডেন ও ড. ইউনূস হাত মিলিয়ে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন এবং কিছুটা সময় আলাপচারিতা করেন। সেখানেই দেখা যায় এক বিরল দৃশ্যের, যা সাধারনত বর্তমানে দেখাই যায়না কুটনৈতিক প্রটৌকল ও কৃত্রিমতার বেড়াজালে। সেখানে দেখা যায় বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসকে পরম মমতায় জড়িয়ে ধরে আছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং ইউনূসকে জড়িয়ে ধরার সময় বাইডেনের অভিব্যক্তি তাঁর হৃদয় থেকে উৎসারিত এবং তাদের উভয়ের সম্পর্ক যে খুব উষ্ণ ও আন্তরিক , ছবিতে তা বোঝা গেছে পরিষ্কার। জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনের ফাঁকে মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বাংলাদেশের কোনও সরকার প্রধানের প্রথম বৈঠকে অন্তর্বর্তী সরকারকে ‘পূর্ণ সমর্থন’ প্রদানের ঘোষনা দেন বাইডেন।

প্রেসিডেন্ট বাইডেনের এই পূর্ণ সমর্থনে'র পাশাপাশি অন্য যারা আমাদের উন্নয়ন সহযোগী আছে, তারাও এ কাজে সহযোগিতার হাত বাড়াতে উৎসাহিত হবে। কারণ মঙ্গলবার প্রেসিডেন্ট বাইডেন শুধু একাই নন, কানাডার প্রধানমন্ত্রীসহ অন্য যারা গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার-যেমন ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রেসিডেন্ট থেকে শুরু করে আইএমএফের এমডি, বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্টসহ আরও যারা ছিলেন, তারা সবাই জাতিসংঘের উন্নয়ন কার্যক্রমের শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তি। তাদের সবাই কিন্তু ড. ইউনূসের সঙ্গে দেখা করেছেন এবং আগ্রহের সঙ্গে তার যে পরিকল্পনা, সেগুলো শুনেছেন এবং মোটামুটি সমর্থন দিয়েছেন। কাজেই সামগ্রিকভাবে বলা চলে, প্রেসিডেন্ট বাইডেন কেন্দ্রীয় চরিত্র হলেও অন্য যারা আছেন, তারা সবাই কিন্তু বাংলাদেশের বর্তমান সরকারের পাশে দাঁড়িয়েছেন এবং এ সরকারের যে সংস্কারমূলক কার্যক্রম, তার প্রতি সমর্থন দিচ্ছেন।


ছবি : পিআইডি

পরবর্তীতে আবারও দেখা মিলে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন ও অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসকে আরও এক বিরল দৃশ্যে। যেখানে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের হিলটন হোটেলে ক্লিনটন গ্লোবাল ইনিশিয়েটিভের একটি অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিচছেন প্রধান উপদেষ্টা ডঃ মুহাম্মদ ইউনূস এবং এ সময় তাঁর পাশে দাঁড়িয়ে হাততালি দেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন।

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ডঃ মুহাম্মদ ইউনূস তার বক্তব্যে বলেছেন, "যুবসমাজের জীবন উৎসর্গ এবং অদম্য নেতৃত্বের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে যুগান্তকারী পরিবর্তন ঘটেছে। একটি বৈষম্যহীন সমাজ ও সমৃদ্ধ দেশ গড়ার লক্ষ্যে তারা জীবন দিয়েছে। তরুণদের এই স্বপ্নের নতুন বাংলাদেশ গড়ে তুলতে বিদেশি বন্ধুদের সহযোগিতা চেয়েছেন তিনি"।

আলোচ্য দুটি ছবি দেশ-বিদেশে সবার মনোযোগ আকর্ষন করেছে এই কারনে যে, এ দুটি ছবিতেই আমেরিকার মত মহাক্ষমতাশালী দেশের দুজন মার্কিন প্রেসিডেন্টের সাথে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতি তাদের অকৃত্রিম বন্ধুত্বের সাথে সাথে তাহার প্রতি তাদের উচ্ছ্বস প্রকাশ পেয়েছে।

এ বিষয়ে (গাজীউল হাসান খানের স্মৃতিচারন)

আর এসব নিয়েই আজ ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ কালের কণ্ঠে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে নিয়ে স্মৃতিচারনামূলক এক নিবন্ধ লিখেছেন বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) সাবেক প্রধান সম্পাদক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক গাজীউল হাসান। সামুর পাঠকদের জন্য তা হুবুহ তুলে ধরলাম -

আমি যখন একজন মিনিস্টার হিসেবে কূটনৈতিক দায়িত্ব নিয়ে বাংলাদেশের ওয়াশিংটন ডিসিতে দূতাবাসে কাজ করতে যাই, তখন ১৯৯৩ সালের শুরু। যুক্তরাষ্ট্রের ৪১তম প্রেসিডেন্ট জর্জ এইচ ডব্লিউ বুশের এক টার্মের প্রেসিডেন্সির শেষ সময়। প্রেসিডেন্ট বুশ ডেমোক্রেটিক দলের তরুণ, সুদর্শন ও মেধাবী প্রার্থী বিল ক্লিনটনের কাছে শোচনীয়ভাবে হেরে যান।

বিল ক্লিনটন ছিলেন আরকানস রাজ্যের গভর্নর।

তাঁর স্ত্রী হিলারি ক্লিনটন একজন তরুণ আইনজীবী হিসেবে তখনই অত্যন্ত জনপ্রিয়। সাবেক প্রেসিডেন্ট নিক্সনের বিরুদ্ধে আনীত ওয়াটার গেট মামলার একজন আইনজীবী হিসেবে কাজ করেছেন হিলারি। পরবর্তী পর্যায়ে তিনি রিপাবলিকান দলীয় প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে লড়েছিলেন। বিতর্কিত সে নির্বাচনে হিলারি ক্লিনটন হেরে গেলেও এর আগে তিনি ৪৪তম ডেমোক্রেটিক দলীয় প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সময় যুক্তরাষ্ট্রের সেক্রেটারি অব স্টেট (পররাষ্ট্রমন্ত্রী) হিসেবে মোটামুটি দক্ষতার সঙ্গেই কাজ করেছিলেন।

বাংলাদেশের বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস এর বহু আগে থেকেই বিল ক্লিনটন, হিলারি ক্লিনটন ও বারাক ওবামার সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে পরিচিত ছিলেন। কারণ অধ্যাপক ইউনূস ১৯৬৫ সালেই একজন ফুলব্রাইট স্কলার হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে গিয়েছিলেন এবং ১৯৭১ সালে ভ্যানডারবিল্ট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে পিএইচডি করে মিডল টেনাসি স্টেট ইউনিভার্সিটিতে অধ্যাপনা শুরু করেছিলেন। সুতরাং তখন থেকেই প্রতিবেশী রাজ্য আরকানস (লিটলরক) কিংবা শিকাগো নগরীতে তাঁর আসা-যাওয়া ছিল। এবং তা থেকেই গণতন্ত্রমনা বিল ক্লিনটন, হিলারি কিংবা বারাক ওবামার সঙ্গে ক্রমে ক্রমে ড. ইউনূসের অন্তরঙ্গতা গড়ে ওঠে।

তারপর বাংলাদেশ সরকার, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এবং গ্রামীণ ব্যাংকের কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েন তিনি। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রে আসা-যাওয়া বন্ধ হয়নি, বরং বিভিন্ন কাজে সম্পৃক্ততার কারণে অনেক বেড়ে গিয়েছিল। সামরিক স্বৈরশাসক এরশাদের পতনের দাবিতে ১৯৯০-এর শেষের দিকে যখন বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে ছাত্র-জনতার আন্দোলন তুঙ্গে ওঠে, রাজনৈতিক কারণে তখন আমাকে ঘন ঘন ঢাকা-লন্ডন যেতে হতো। আমি তখন লন্ডনেই বসবাস করি এবং বাংলা ও ইংরেজিতে দুটি সাপ্তাহিক পত্রিকা সম্পাদনা করি এবং একটি প্রকাশনা সংস্থা চালাই। সে অবস্থায় ঢাকায় গেলে কোনো না কোনোভাবে অধ্যাপক ইউনূসের সঙ্গে দেখা ও আলাপ হয়েই যেত।

তা ছাড়া তাঁর ছোট ভাই মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালে পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়ন এবং পরবর্তীকালে বাংলা ছাত্র ইউনিয়নগতভাবে আমার ভাবশিষ্য ছিল। তদুপরি দুজনই সাংবাদিকতা করেছি একসঙ্গে। আমি মুক্তিযুদ্ধকালে ছাত্র ইউনিয়নের (বাংলা) ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি। সেসব কারণে ইউনূস ভাইয়ের সঙ্গে একটা সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এরশাদ সরকারের পতনের পর ক্ষমতাসীন হয় খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন বিএনপি।

বহু কিছুর পর অর্থাৎ ঘটনা ঘটার পর খালেদা জিয়া সিদ্ধান্ত নেন যে তিনি আমাকে যুক্তরাষ্ট্রে পাঠাবেন, বিশেষ করে গণমাধ্যমের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কোন্নয়নের লক্ষ্যে। আমাকে সে দায়িত্ব দেওয়ার মূল কারণ হচ্ছে, ম্যাডাম মনে করতেন আমি দীর্ঘদিন লন্ডনের ফ্লিট স্ট্রিটে কাজ করেছি। সুতরাং আমাকে দিয়ে তাঁর কাজটা হয়তো হতেও পারে। ম্যাডামের সে সিদ্ধান্তের পর দেখা করলাম ইউনূস ভাইয়ের সঙ্গে, সঙ্গে ছিল জাহাঙ্গীর। সব কিছু শুনে তিনি (ইউনূস ভাই) খুশিই হলেন। বললেন, আপনি গিয়ে যোগ দিন, আমি কিছুদিনের মধ্যে আসছি।

হোয়াইট হাউসে তখন হিলারি রডহ্যামসহ বিল ক্লিনটন মাত্র থিতু হয়েছেন। হঠাৎ খবর পেলাম অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস আসছেন শিগগিরই। দূতাবাসে ফোন পেলাম। কিন্তু আমি তখনো ধারণাই করতে পারিনি হিলারি ক্লিনটন ও বিল ক্লিনটনের সঙ্গে ড. ইউনূসের সম্পর্ক এতটা ঘনিষ্ঠ। ওয়াশিংটনের ডালেস ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টে নেমে তাঁর জন্য নির্ধারিত হোটেলে এসেছিলেন তিনি। কিন্তু আমি আমার কূটনৈতিক নাম্বার প্লেটধারী কালো লিমুজিন নিয়ে তাঁকে না ধরতে পারলাম এয়ারপোর্টে, না হোটেলে। আমাদের তৎকালীন দূতাবাসের কাছেই ছিল ইউনূস ভাইয়ের ব্রিস্টল হোটেলটি।

কথাবার্তার পর রিসেপশনিস্ট জানালেন, হোয়াইট হাউস থেকে গাড়ি এসে তুলে নিয়ে গেছে তাঁকে। কখন ফিরবেন তার কোনো ঠিক নেই। পরে ইউনূস ভাইয়ের কথাবার্তা থেকে জানতে পারলাম যে সারাটা বিকেল ও সন্ধ্যা তাঁরা (হিলারি ও বিল) হোয়াইট হাউসের পারিবারিক ডাইনিং রুমে বিভিন্ন কথাবার্তা ও অন্তরঙ্গভাব বিনিময়ে করে কাটিয়ে দিয়েছেন। লাঞ্চ, কফি ও ডিনার সেরেছেন। এর দুই দিন পর ওয়াশিংটনের এক বিশাল কনভেনশন হলে ভাষণ দিচ্ছিলেন ইউনূস ভাই। সরকারি অনুষ্ঠান, সেখানে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, কংগ্রেসম্যান ও ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে কে নেই? সে অনুষ্ঠানে ক্ষুদ্রঋণ ও গ্রামীণ কৃষি শিল্প ব্যবস্থায় অবদানের জন্য তাঁকে পুরস্কৃত করা হলো। তখন থেকে হিলারি ক্লিনটনের সঙ্গে শিকাগো এবং মিডওয়েস্টের গ্রামীণ ব্যাংকের বন্ধকিমুক্ত ক্ষুদ্রঋণ বিতরণের পরিকল্পনা নেন তাঁরা।

এই পরিকল্পনার সঙ্গে হিলারির মা ব্যক্তিগতভাবে জড়িত ছিলেন। তবে ওয়াশিংটন ডিসির মতো একটি সম্মেলনকক্ষে আমি যে গুরুত্বপূর্ণ মানুষের সমাবেশ সেদিন দেখেছিলাম, তাতে আমার আর বুঝতে বাকি থাকেনি, অধ্যাপক ইউনূসের জনপ্রিয়তা শুধু বাংলাদেশে নয়, যুক্তরাষ্ট্রেও কতটা ছড়িয়ে পড়েছে। এ কথা ঠিক যে ড. ইউনূস হিলারি ক্লিনটন, বিল ক্লিনটন ও বারাক ওবামার কারণে শুধু ডেমোক্রেটিক পার্টির রাজনৈতিক মহলে নয়, বিশ্বব্যাংক ও জাতিসংঘ পর্যায়েও কতটা সম্মান, জনপ্রিয়তা ও মর্যাদা আদায় করে নিয়েছেন।

দারিদ্র্য বিমোচনের লক্ষ্যে বাংলাদেশে ১৯৮৩ সালের দিকে গ্রামীণ ব্যাংকের কার্যক্রম শুরু করেছিলেন ড. ইউনূস। কিন্তু দরিদ্র মানুষের প্রতি ভালোবাসার কারণে হোক অথবা তাঁর অক্লান্ত পরিশ্রমের কারণেই হোক, ১৯৯৩ সালের মধ্যেই অর্থাৎ ১০ বছরের মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রসহ সারা বিশ্বের মানবতাবাদী জনগোষ্ঠীর কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিলেন ড. ইউনূস। তার পরই ড. ইউনূসকে নোবেল পুরস্কার প্রদানের জন্য সুপারিশ করেন যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন। এবং তাঁর পক্ষে পর্যায়ক্রমে সাবেক প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টার ও সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাও সস্ত্রীক বহু কথাবার্তা বলেছেন। তাঁকে শুধু বন্ধু হিসেবে নয়, একজন মানবহিতৈষী হিসেবেও স্থান দিয়েছেন তাঁদের অন্তরে। সে কারণে শুধু ২০০৬ সালে নোবেল পুরস্কারই নয়, ২০০৯ সালে ইউএস প্রেসিডেনশিয়াল গোল্ড মেডেল এবং ২০১০ সালে কংগ্রেশনাল গোল্ড মেডেলও লাভ করেন অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

বহু আগে থেকে যুক্তরাষ্ট্রব্যাপী দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য বন্ধকিমুক্ত ক্ষুদ্রঋণ ব্যবস্থা প্রচলনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হলেও ২০০৮ সালে নিউইয়র্কে প্রথম গ্রামীণ আমেরিকা নামে ব্যাংক স্থাপন করা হয়েছিল। সে অলাভজনক ক্ষুদ্রঋণ ব্যবস্থা এখন শুধু নিউইয়র্কে নয়, ছড়িয়ে পড়েছে উমাহা, নেবরাস্কা, ইন্ডিয়ানাপোলিস, শার্লট, নর্থ ক্যারোলাইনা, সান ফ্রান্সিসকো, লস অ্যাঞ্জেলেস, সানজোস, ক্যালিফোর্নিয়া, অস্টিন, টেক্সাস, ইউনিয়ন সিটি, নিউজার্সি, বোস্টন, ম্যাসাচুসেটস, মায়ামি, সমগ্র ফ্লোরিডাসহ বিশাল যুক্তরাষ্ট্রের অন্যান্য অঞ্চলে। সে সমস্ত শহরাঞ্চলে দরিদ্র কিংবা শ্রমজীবী দরিদ্র মানুষ এখন বন্ধকি ছাড়াই ৫০০ ডলার থেকে আড়াই হাজার ডলার ঋণ নিতে পারে।

এতে স্থানীয়ভাবে অর্থনীতি চাঙ্গা হয়েছে এবং বেকার গৃহবধূদের ন্যূনতমভাবে হলেও হিল্লা হচ্ছে। তারাও বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলের মানুষের মতো হাঁস-মুরগি পালন থেকে শুরু করে ক্ষুদ্র ব্যবসায় হাত দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রই হচ্ছে বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর মধ্যে একমাত্র স্থান, যেখানে গ্রামীণ আমেরিকা ক্ষুদ্রঋণ ব্যবস্থা চালু করেছে। উল্লেখ্য যে ২০০৮ থেকে গ্রামীণ ও অন্যান্য স্থাপনা প্রায় সাড়ে সাত বিলিয়ন মার্কিন ডলার পুঁজি সংগ্রহ (জমা) করেছে। গ্রামীণ আমেরিকা ২০২৩ সাল পর্যন্ত তিন বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিতরণ করেছে ঋণ হিসেবে।

বিশ্বব্যাপী এখন গ্রামীণের ঋণ বিতরণের পরিমাণ প্রায় ৩৯ বিলিয়ন ডলার, যা প্রায় ১১ মিলিয়ন গ্রহীতার মধ্যে করা হয়েছে। এটা থেকে কিছুটা ধারণা করা যায় শুধু বাংলাদেশে নয়, যুক্তরাষ্ট্রের মতো সমৃদ্ধ দেশেও এ অবস্থায় যেতে ড. ইউনূসকে কতটা শ্রম দিতে হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের বাংলাদেশ দূতাবাসে কর্মরত অবস্থায় এবং তার পরও আরো বছর দুয়েক সেখানে থাকার কারণে নব্বইয়ের দশকে আমি ড. ইউনূসের কর্মতৎপরতা কিছু দেখতে পেয়েছি। বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় পড়েছি যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে গরিবের জন্য বন্ধকি মুক্ত ক্ষুদ্রঋণ ব্যবস্থা নিয়ে কথা বলতে।

গরিবের ব্যাংকের সফল গল্পের কথা শুনতে এসে যুক্তরাষ্ট্রের ছাত্র-ছাত্রী ও সাধারণ মানুষ তাঁর মুখে বাংলাদেশের কথা শুনেছে। তাদের চোখের সামনে ভেসে উঠেছে দূর বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের দৈনন্দিন জীবনসংগ্রামের এক অকল্পনীয় কিংবা অদেখা দৃশ্যাবলি। সহানুভূতি থেকেই হোক কিংবা সহমর্মিতা থেকেই হোক, তারা সে খেটে খাওয়া মানুষকে ভালোবেসে ফেলেছে, ভালোবেসে ফেলেছে বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের জীবনসংগ্রামের গল্প বলা ইউনূস স্যারকে, বাংলাদেশকে।

বাংলাদেশের সাফল্য যদি কোনো ক্ষেত্রে কিছু থেকে থাকে, তাহলে প্রকৃত অর্থে তা সম্ভব হয়েছে অধ্যাপক ড. ইউনূসের মতো কিছু কঠোর পরিশ্রমী, সৎ ও স্বার্থহীন মানুষের কারণে। সে কারণেই যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন কিংবা তাঁর স্ত্রী হিলারি ক্লিনটন, সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা কিংবা নবতিপর বৃদ্ধ সাবেক প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টার থেকে শুরু করে কৃষ্ণাঙ্গ শ্রমজীবী মানুষ কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ের মানবতাবাদী ছাত্র-ছাত্রীরা দূর বাংলাদেশের এক স্বপ্নের ফেরিওয়ালা ইউনূসকে এত ভালোবাসে। তারা আরো ভালোবাসে যখন ইউনূস বলেন, ‘আসুন, পৃথিবী থেকে দারিদ্র্য, বেকারত্ব ও দূষণকে বিদায় জানাই।’

সে কারণেই যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান প্রবীণ প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের কাছে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের এত সম্মান। দেখা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে জাতিসংঘের সভাকক্ষে তাই পরম মমতায় বুকে জড়িয়ে ধরেছিলেন ইউনূসকে। ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে তিনি প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের সময় থেকেই চেনেন। ঘনিষ্ঠভাবে দেখেছেন ওবামার ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে কাজ করার সময়। তা ছাড়া তাঁর নিজস্ব প্রেসিডেন্সির সময়ও জো বাইডেন ড. ইউনূসকে গভীরভাবে দেখার সুযোগ পেয়েছেন। সুতরাং ইউনূসকে জাতিসংঘের সভাকক্ষে জড়িয়ে ধরার সময় বাইডেনের চেহারায় যে অভিব্যক্তি প্রকাশিত হয়েছে, তা তাঁর হৃদয় থেকে উৎসারিত, লোক-দেখানো নয়।

লেখক - বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) সাবেক প্রধান সম্পাদক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক


সম্মানিত গাজীউল হাসান খানের স্মৃতিচারনমূলক লেখা পড়ে এটাই উপলব্ধি যে, আমরা আসলেই ভাগ্যবান এক জাতি যারা দেশের এ ক্রান্তিকালে ডঃ মুহাম্মদ ইউনূসের মত শান্তিতে নোবেল বিজয়ী, সম্মানিত ও বিশ্ব বিখ্যাত একজন মানুষকে আমাদের নেতা হিসাবে পেয়েছি। আমরা এও আশা করছি, ডঃ মুহাম্মদ ইউনূস তাহার জ্ঞান-প্রজ্ঞা ও বিশ্বব্যাপী পরিচিতিকে কাজে লাগিয়ে দেশের জন্য ভাল কিছু করবেন এবং তাহার হাত ধরেই দেশ গতানুগতিক রাজনীতি ও প্রতিহিংসাপরায়নতা থেকে বেরিয়ে এসে এক নতুন বাংলাদেশ হিসাবে বিশ্বে পরিচিতি পাবে। সাথে সাথে প্রত্যাশা ডঃ মুহাম্মদ ইউনূসের হাত ধরে দেশের পরিবর্তন তথা সাফল্য আনয়ন করতে আমরা সবাই সহযোগীতার হাত বাড়িয়ে দিব নিজ নিজ জায়গা থেকে দল-মতের উপরে উঠে।

তথ্যসূত্র ও সহযোগীতায় -

১। যে কারণে ড. ইউনূসকে পরম মমতায় জড়িয়ে ধরেছিলেন বাইডেন -
Click This Link
২।বাইডেন-ইউনূস বৈঠক থেকে কী বার্তা পেল বাংলাদেশ - Click This Link
৩। বিদেশি বন্ধুদের সহযোগিতা কামনা প্রধান উপদেষ্টার -
Click This Link

==============
পূববর্তী পোস্ট

উপলব্ধি - ৭ Click This Link
উপলব্ধি - ৬ Click This Link
উপলব্ধি - ৫ Click This Link
উপলব্ধি - ৪ Click This Link
উপলব্ধি - ৩ Click This Link
উপলব্ধি - ২ Click This Link
উপলব্ধি - ১ Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩২
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ঢাকার ট্রাফিক জ্যাম: ‘এ্যজ গুড এ্যজ ইট গেটস’

লিখেছেন মুনতাসির, ২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:৪৩



যারা নতুন ঢাকা শহরে এসেছেন, তাদের কাছে ট্রাফিক জ্যাম হয়তো একটা অসহ্য যন্ত্রণা মনে হতে পারে যেন সময় এখানে থমকে গেছে আর গাড়ি চলার কোনো অবস্থা নেই। কিন্তু যারা... ...বাকিটুকু পড়ুন

কবিতা এবং আবৃত্তি.....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:৪৯

কবিতা এবং আবৃত্তি.....

আমার কাছে লেখালেখির জগতে কবিতা লেখা হচ্ছে সব চাইতে কঠিন, যা লিখতে মেধার বিকল্প নাই। একজন সাহিত্যিক-উপন্যাসিক, প্রবন্ধকার যা লিখতে অনেক পৃষ্ঠা, কিম্বা একটা বইতে প্রকাশ করেন-... ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবিই যখন না বলা অনেক কথা বলে দেয়। ( উপলব্ধি - ৮ )।

লিখেছেন মোহামমদ কামরুজজামান, ২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:০৮


ছবি : পিআইডি

সম্প্রতি শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ছাত্র-জনতার চাহিদা অনুসারে (৮ আগস্ট ২০২৪) বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন ডঃ মুহাম্মদ ইউনূস। তারই ধারাবাহিকতায় প্রধান উপদেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

পিন্ডিটি কার ⁉️

লিখেছেন সরকার পায়েল, ২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৫

জাতিসংঘে এখন সদল বলে ইউনুস সাহেব l বেশ ঘটা করে ক্লিন্টন সাহেবের সাথে পরিচিতি অনুষ্ঠানে আন্দোলনের মাস্টার মাইন্ডদের পরিচয় করিয়ে দিচ্ছেন ইউনুস সাহেব l অমুক তমুক এই আন্দোলনের নেতৃত্ব... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্যান চিরতরে বন্ধ হোক!

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৩২








ব্যান ব্যান গেমের জয়ী এ ব্লগে কারা আপনারা ভালোমতই জানেন সম্ভবত; এখানে বিভিন্ন ভাষায় অপমান-অপদস্তের যে কাউন্টার গেম চলে সেই প্যার্টানে ব্যানের লিস্টে অনেকজনের নাম থাকাটাই মনে হয় সঠিক। কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

×