আমি যখন ক্লাস থ্রিতে পড়ি, হঠাৎ করেই আমার মাথায় ভুত চাপে আমার নানা বাড়িতে থেকে পড়াশুনা করব। আমার কথা শুনে সবাই অবাক হয়, বিষয়টা অবাক হওয়ার মতই ছিল। কিন্তু কেউ আমাকে বোঝাতে পারে না।
চিড়িয়াখানার পাশে নবাবেরবাগে আমার নানা দের বাসা। তো সেখানে ভর্তী হলাম। পড়াশুনা যাই হোক, চিড়িয়াখানা, বোটানিক্যাল গার্ডেন, বেড়ী বাধ , এসব জায়গায় উড়নচন্ডি হয়ে ঘুড়ে বেড়ানো বেশ ভালোই হয়েছে।
দেখতে দেখতে বছর শেষ হয়ে এলো। ১৬ ই ডিসেম্বর এর আগে এক দিন স্কুলে বেশ কয়েকজন ভদ্রলোক এলেন। আমাদের ক্লাসেও এলেন। এসে বললেন, আগামী ১৬ ই ডিসেম্বর ন্যাশনাল স্টেডিয়ামে প্যারেডে অংশগ্রহন করতে স্টুডেন্ট সিলেকশনের জন্য তারা এসেছেন। সিলেক্টেড স্টুডেন্টদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষন দিয়ে প্যারেড গ্রাউন্ডে পাঠানো হবে।
আরো বেশ কিছু কথা বললেন। হঠাৎ এক পর্যায়ে বললেন, আচ্ছা ১৬ ই ডিসেম্বর কি? আমার মনে হলো, তাইতো ১৬ ই ডিসেম্বর কি? সবাই একে অন্যের দিকে তাকালেন। চার পাশে পিন পতন নিরবতা। আমার পেটে কি যেনো আসছে কিন্তু মুখে আসছে না। সেই ভদ্রলোকের পাশে দাড়াঁনো আমাদের প্রধান শিক্ষকের দিকে তাকালাম। ওনার চেহারা দেখে মনে হয়েছিল, উনি মনে হয় বলবেন, দেখুন, এরা খুব ভদ্র ছেলে, চীনের প্রাচীর আর যেই ভাঙুক এরা মনে হয় ভাঙেনি।
হঠাৎ করেই আমি দাঁড়িয়ে বললাম, ১৬ ই ডিসেম্বর আমাদের দেশ স্বাধীন হয়েছিল। ব্যাস, এটুকুই। হেড স্যারের মুখে হাসি ফুটে উঠল। সেই ভদ্রলোক আমার দিকে তাকিয়ে বলল, তোমাকে তো প্রাইজ দেয়া উচিত। আমি বুঝতে পারিনি প্রাইজ কি জিনিস। পরে জেনেছিলাম, প্রাইজ হলো পুরোষ্কার।
ক্লাস ফোরে ওঠার পর আবার আমার নিজের স্কুলে চলে আসি। তবে সেই ঘটনার রেশ রয়ে গিয়েছিল অনেক দিন।