একটা সময় ছিল যখন অন্য সবার মতো আমিও হার্ডডিস্ক পার্টিশনের কথা শুনলে ভয় পেতাম। আর যারা এ ব্যাপারটিতে পারদশর্ী ছিল তাদের বেশ সমীহ করেই চলতাম। তবে আমার মধ্যে একরোখা ভাবটা ছিল বেশ প্রবল আর শেখার ইচ্ছা ছিল অদম্য। একদিন সাহস করে ব্যবহার করেই ফেল্লাম। থাক সে দীর্ঘ আর ক্লান্তিকর অভিজ্ঞতার বর্ণনা।
আসলে হার্ডডিস্ক পার্টিশনিং করাটা তেমন জটিল বিষয় নয়। ঝামেলা হচ্ছে ডিস্ক ড্রাইভ এবং তার পার্টিশনিং কনসেপ্টটা পরিষ্কার রাখা। আমি চেষ্টা করব নু্যনতম কনসেপ্টটা দিয়ে শুরু করতে, যাতে পার্টিশনিংকে আর ''ভয়াবহ'' মনে না হয়।
[গাঢ়]ডিস্ক পার্টিশনিং কি?[/গাঢ়]
একটি হার্ডডিস্কের ধারনক্ষমতা বর্তমানে আমাদের চিন্তা ভাবনার সীমানা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। আর এই সমস্ত হার্ডডিস্ক কে সুবিধাজনক ভাবে ব্যবহার করার জন্য তাকে বিভিন্ন অংশে ভেঙ্গে ফেলা হয়। যে পদ্ধতিতে এই কাজটি করা হয় তাকে বলা হয় পার্টিশনিং। সোজা বাংলায় পার্টিশনিং হচ্ছে উইন্ডোজে দেখতে পাওয়া C,D, ... ইত্যাদি ড্রাইভ তৈরীর পদ্ধতি। পার্টিশনিং এর টেকনিক্যাল অনেক সুবিধা আছে - সেগুলো এই সল্প পরিসরে আর উল্লেখ নাইবা করলাম। আবার বেশী পার্টিশন করাও কিন্তু কোন কোন ক্ষেত্রে অসুবিধাজনক। সে যাই হোক, অনেকে বিভিন্ন সময় পার্টিশনিং করবার প্রয়োজনীয়তা বোধ করতে পারেন। তখন যারা এই বিষয়ে বোদ্ধা তাদের শরনাপন্ন হওয়া ছাড়া কোন গতি থাকে না। আমার উদ্দেশ্য এই ব্যাপারটিকে আপনাদের বোধগম্য করে তুলে ধরা।
[গাঢ়]ডিভাইস কনসেপ্ট[/গাঢ়]
হার্ডডিস্ক বা যেকোন আইডিই (IDE) ডিস্ক ব্যবহারের জন্য সাধারন পিসিতে চারটি সংযোগ স্থল দেখা যায়। মাদারবোর্ড থেকে দুটো ডাটা ক্যাবল বেরিয়ে আসে। এদের একটিকে বলা হয় প্রাইমারী আর অন্যটিকে বলা হয় সেকেন্ডারী ক্যাবল। ঠিক কোনটি প্রাইমারী আর কোনটি সেকেন্ডারী তা বোঝা যাবে মাদারবোর্ডের যেখানটায় ক্যাবল লাগানো রয়েছে সেখানকার লেখা দেখে। ওখানটায় লেখা থাকবে কোনটি প্রাইমারী আর কোনটি সেকেন্ডারী অথবা কোনটি পোর্ট 1 আর কোনটি পোর্ট 2 (এ ক্ষেত্রে প্রথমটি প্রাইমারী আর অন্যটি সেকেন্ডারী )। এই দুটি ক্যাবলের প্রতিটিতে দুটি করে মোট চারটি সংযোগস্থল থাকে। এই চারটি সংযোগস্থলে সর্বোচ্চ চারটি ডিভাইস, যেমন - হার্ডডিস্ক, সিডিরম, ডিভিডিরম, সিডিরাইটার অথবা অন্য যেকোন আইডিই ডিভাইস সংযুক্ত করা যেতে পারে। আবার প্রতিটি ক্যাবলের দুটি সংযোগস্থলে লাগানো দুটি ডিভাইসের জাম্পার (একটি ছোট্ট যন্ত্রাংশ) কিভাবে লাগানো রয়েছে তার উপর নির্ভর করে কোনটি কার চেয়ে বেশী প্রাধান্য পাবে। যে ডিভাইসটি বেশী প্রাধান্য পায় তাকে বলা হয় মাস্টার আর যেটি কম প্রাধান্য পায় তাকে বলা হয় স্লেভ। সুতরাং এই চারটি ডিভাইস কম্পিউটার চিনে থাকে যে নাম ধরে এবং যে অনুক্রমে তা হল : প্রাইমারী মাস্টার, প্রাইমারী স্লেভ, সেকেন্ডারী মাস্টার, সেকেন্ডারী স্লেভ। এক্ষেত্রে জাম্পার নামক যন্ত্রাংশটি ঠিক কিভাবে লাগাতে হবে তা ডিভাইসটির গায়ে এঁকে/লিখে দেয়া চিহ্ন দিখে ঠিক করে নিতে হয়। একই ক্যাবলের দুটো সংযোগ স্থলেই যদি একই ধরনের জাম্পার লাগানো থাকে অর্থাৎ দুটোতেই যদি মাস্টার বা স্লেভ জাম্পার সেটিং করে দেয়া থাকে তবে কম্পিউটার কিন্তু কোনটাকেই পাবে না। তাই অবশ্যই একটিকে মাস্টার আর অন্যটিকে স্লেভ করে নেবেন।
(চিত্র 1: মাদারবোর্ডে যেখানটায় আইডিই ক্যাবল লাগাতে হয়)
পার্টিশনিং নিয়ে আর বেশীদুর অগ্রসর হওয়ার আগে আপনাকে সাবধান করে দিচ্ছি আপনার সমস্ত ডাটা ব্যকআপ করে নেয়ার জন্য। এর জন্য যে মাধ্যমই বা সংরক্ষন পদ্ধতি ব্যবহার করুননা কেন, যেমন - অন্য একটি হার্ডডিস্ক, সিডি, ফ্লপি, জিপ ড্রাইভ বা অন্য কিছু, মাধ্যমটিকে কম্পিউটার থেকে সরিয়ে আলাদা নিরাপদ জায়গায় রাখুন। বিশেষ করে অন্য একটি হার্ডডিস্ক ব্যবহার করে থাকলে সেটাকে কম্পিউটার থেকে আলাদা করে ফেলুন - যাতে ভুল করে এই হার্ডডিস্কের ডাটা মুছে না যায়।
[গাঢ়]উইন্ডোজ ফাইল সিস্টেম - ফ্যাট বনাম ফ্যাট থার্টিটু [/গাঢ়]
উইন্ডোজ 95 যখন বেরুল তখন সেটি হার্ডডিস্কে তথ্যাদি রাখার জন্য উইন্ডোজ 95 উত্তরাধিকারসুত্রে ডসের ফাইল সিস্টেম ফ্যাট (FAT) ব্যবহার করত। অনেকে একে ফ্যাট সিক্সটিন (FAT16) ও বলে থাকেন। এরও আগে ফ্যাট টুয়েলভ (FAT12) বলে একটি ফাইল সিস্টেম ছিল যার ব্যবহার সময়ের সাথে সাথে বন্ধ হয়ে যায়। যাই হোক, উইন্ডোজ 95 পরবতর্ীতে এতটাই জনপ্রিয় হয়ে পড়ে যে সমগ্র কম্পিউটার জগতের বেশীরভাগ কম্পিউটার এই অপারেটিং সিস্টেম সেই সাথে ফ্যাট সিক্সটিন ফাইল সিস্টেম ব্যবহার করতে শুরু করে। এরপরে রিলিজ হয় মাইক্রোসফটের উইন্ডোজ এনটি ফোর (WinNT 4.0) যেটা আগের পুরোনো ফ্যাট সিক্সটিনের পাশাপাশি তার নিজস্ব নতুন ফাইল সিস্টেম এনটিএফএস (NTFS) ব্যবহার করতে পারতো। এরপর মাইক্রোসফট পরীক্ষাজনক ভাবে উইন্ডোজ 95 এর সেকেন্ড রিলিজ প্রকাশ করে যাতে ফ্যাট থার্টিটু ফাইল সিস্টেমটি উপস্থিত থাকলেও তাকে ডিফল্ট হিসেবে ব্যবহার করা হতো না। তবে এর পরবতর্ী উইন্ডোজ 98 , উইন্ডোজ 2000, উইন্ডোজ এক্সপি প্রতিটি অপারেটিং সিস্টেম ফ্যাট থার্টিটু ব্যবহার করতে সক্ষম। তদুপরি অন্যান্য অপারেটিং সিস্টেম - লিনাক্স, ইউনিক্স ইত্যাদি বর্তমানে ফ্যাট থার্টিটু ব্যবহারে সক্ষম। সুতরাং যদি আপনি উইন্ডোজের এমন একটি ভার্সন ব্যবহার করতে চান যেটি ফ্যাট থার্টিটু ফাইল সিস্টেম ব্যবহার করতে পারে না তাহলে অবশ্যই ফ্যাট সিক্সটিন পদ্ধতিতে পার্টিশনিং করতে হবে। তা নাহলে নিশ্চিন্তে ফ্যাটথার্টিটু ব্যবহার করুন কেননা না এটি ফ্যাটসিক্সটিন এর চেয়ে ঢেরগুনে ভাল।
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে ডিসেম্বর, ১৯৬৯ সন্ধ্যা ৭:০০