নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

এখনো আমি যোদ্ধা, যেমনটা ছিলাম সৃষ্টির শুরুতে

খান সাইদুর রহমান

এখনো আমার রন্ধ্রে রন্ধ্রে খুনি নিঃশ্বাস টের পাই,এখনো আমার বুকের পাজরের নিচে রয়েছে দগদগে বেয়নেটের, ক্ষতমগজের প্রতিটি কোষে কোষে এখনো সেই বিভীষিকার কর্কশ স্বপ্ন।এখনো আমি যোদ্ধা, যেমনটা ছিলাম সৃষ্টির শুরুতে।

খান সাইদুর রহমান › বিস্তারিত পোস্টঃ

ক্যান্টিনের কাব্য

০১ লা অক্টোবর, ২০১৫ দুপুর ১:৩৪

আজকের দুপুরটা একেবারেই অন্যরকম। আশ্বিন মাস চলছে, গত কয়েকদিন ধরে সেই সাত সকাল থেকেই তীব্র রোদের ঝলকানি শুরু হয়, থামতে থামতে সেই সন্ধ্যা। অথচ এখন আকাশের দিকে তাকিয়ে দুপুর বলে বোঝার উপায় নেই। চারিদিক অন্ধকার হয়ে আছে। সকাল থেকেই কয়েক দফা বৃষ্টি নেমেছে, আবারও নামি নামি করছে। আবহাওয়াও বেশ রোমান্টিক। মৃদুমন্দ বাতাস বইছে, তাতে তিরতির করে কাঁপছে কাশফুলটি। আজকের দিনটির মতো এই কাশফুলটিও বড় অদ্ভুত। সম্ভবত ছাদের উপর জন্মানো বলেই। একতলা ঘর, ছাদে ওঠা-নামার সিঁড়ির বালাই ই নেই, তার ওপরে লাল ইটের শক্ত গাঁথুনি। সেখানে কীভাবে এই কাশফুল জন্মালো সেটাই এক আশ্চর্যের বিষয়। বামন গাছ, লম্বায় না বাড়লেও যা ফলানোর ঠিকই ফলিয়ে নিয়েছে। এক থোঁকা সাদা কাশফুল বাতাসে দুলছে। শ্বেতশুভ্র সেই ফুলের নিচ থেকে গোড়া পর্যন্ত টকটকে সবুজ। কালো আকাশের ব্যাকগ্রাউন্ডে দারুন মানিয়ে গেছে। বেশ কিছুকক্ষণ তাকিয়ে থাকলে নেশা ধরে যায়। আমারও বোধহয় নেশাই ধরে গিয়েছিল, সেই নেশা ভাঙলো বৃষ্টির ফোঁটায়।

আকাশ ভারী করে বড় বড় ফোঁটায় বৃষ্টি পড়ছে। মাথা বাঁচাতে ছুটলাম কাঁশফুলের সেই ছাদের নিচে। ছোট্ট গেট, গেট না বলে গলি বললেও চলে। সেই গলির একপাশে টানা কাউন্টার দখল করে আছে বিশাল এক জায়গা। সেটুকু পেরোলেই ক্যান্টিন। তরুণ বয়সের দুজন সেই কাউন্টার সামলাচ্ছেন, মাঝে মাঝে এদিক সেদিক ন্জর ঘুরিয়ে দেখে নিচ্ছে ক্যান্টিনের হাল-হকিকত। ভাবখানা এমন যেন, বিল না দিয়ে এখান থেকে পালাবি কোথায়।

বাইরের সাইনবোর্ডে তাসপিয়া রেস্টুরেন্ট হলেও সবার কাছে এটি এফডিসির ক্যান্টিন নামেই পরিচিত। কাউন্টারের পাশ দিয়ে ঢুকতেই প্রথমে চোখে পড়বে পুরোনো দিনের সিনেমা হলগুলোর ভেতরে পোস্টার লাগানোর মতো একটি দেয়ালিকা। তবে পোস্টারের বদলে সেখানে শোভা পাচ্ছে হাতে আঁকা কোন এক সিনেমার ব্যানার। কিন্তু সেটি যে কোন সিনেমার, তা বলা মুশকিল। বিভিন্ন দৃশ্যে, নানান ভঙ্গীমার বেশ কয়েকজন নায়ক-নায়িকার মুখায়ব সেখানে আঁকা। অনেকক্ষণ চেষ্টাচরিত্র করে সেখান থেকে মাত্র দুজনকে চিনতে পারলাম। একজন নায়ক জসীম অন্যজন নায়িকা চম্পা। বাকীদের চেহারা কোনদেশের তারকাদের তা আঁকিয়েই ভালো জানেন।
ব্যনার থেকে চোখ সরিয়ে নজর দিলাম ক্যান্টিনের টেবিলগুলোর দিকে। প্লাস্টিকের গোল ছোট্ট টেবিল, আর লোহার পুরোনো ধাঁচের চেয়ার। তারপরও সবগুলো টেবিলেই লোকজন ভর্তি। সবাই দলে দলে বসা। চারজনের টেবিল তিনজনে নিশ্চিন্ত মনে দখল করে বসে আছে। সুখী সুখী চেহারা সবার। কারো যেন কোন কাজের তাড়া নেই, নিশ্চিন্ত মনে গল্পগুজব চলছে। একেবারে একপাশে দেয়াল লাগোয়া লম্বা একটা টেবিল ফাঁকা দেখে সেখানেই বসে পড়ে পড়লাম। চায়ের অর্ডার দিলাম। কিন্তু সেই চায়ের আর খবর নেই।
এর মধ্যেই বৃষ্টি আরো জোরেসোরে নেমেছে। আঁধভেজা হয়ে সেই বৃষ্টিতেই ঢুকলেন এক প্রৌঢ়। মাথাভর্তি সাদা চুল, মাঝারী সাদা দাড়ি। গায়েও সাদা শার্ট। বেশ মানিয়েছে ভদ্রলোককে। ক্যান্টিনে ঢুকেই ভদ্রলোক সোজা এসে আমার পাশেই বসলেন। রুমাল দিয়ে মাথা মুছতে মুছতে বেয়ারা ছেলেটিকে ডাকলেন। বেয়ারা ছোকরা শুনেও না শোনার ভান করে মুখ গোঁজ করে অন্যদিকে চলে গেল। এবারে তিনি নিজেই গেলেন কাউন্টারে।
কীরে খাওন দিবিনা আইজকা?
চাচা, তুমার অনেক টেকা বাকি পড়ছে। আর বাকী চাইও না। আগের টেকাগুলা আগে দেও তারপর খাওন। সামনে ঈদ আমারো তো দোকান চালান লাগবো।
আরে দিমানি, টেকার চিন্তা তুই করস কেন? আইজকা একটা কাম পাইছি। নায়কের বাড়ির মালীর রোল। কাইলকাই শুটিং। ওইহান থিকা টেকা পাইলেই তর সব শোধ দিমু।
না চাচা, ওই কথা মেলা হুনছি। এহন থিকা আগে টেকা পড়ে খাওন। খাইলে খাও, নাইলে চইল্যা যাও।
ক্যাশিয়ারের জবাব শুনে মুখ শুকিয়ে গেল লোকটির। শুকনো মুখেই আবার এসে বসলো আমার পাশে। গ্লাস থেকে ঢেলে ঢকঢক করে পানি খেল দুই গ্লাস। এরমধ্যে আমার চাও চলে এসেছে। আমার সামনে চায়ের কাঁপটি রাখতে রাখতেই বুড়ো লোকটির হাতে দুটো সিঙ্গাড়া গুঁজে দিল বেয়ারাটি। সিঙ্গারা দুটো হাতে নিয়ে অবাক চোখে লোকটি ক্যাশে বসে থাকা তরুণটির দিকে তাকালো। চোখে চোখ পড়তেই অন্যদিকে ঘুরে বসলো তরুণটি, দেখেও যেন কিছু দেখল না। তাদের দুজনের মধ্যকার সেই অভিনয়টি সম্ভবত আমি ছাড়া আর কারো চোখে পড়লো না। এরপরের ঘটনা অতি স্বল্প। দ্রুত গতিতে খাওয়া শেষ করে বিদায় নিল লোকটি। চায়ের দাম মিটিয়ে আমিও বেড়িয়ে পড়লাম। ততোক্ষনে বৃষ্টিও থেমে গেছে। মৃদুমন্দ বাতাসে ক্যান্টিনের ছাদে তখনো দুলেই চলছে কাশফুলটি

বিঃদ্রঃ লেখাটি ঈদের আগের, আজ মন চাইল তাই পোস্ট করলাম।


মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ০২ রা জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ১০:০০

এহসান সাবির বলেছেন: ইংরেজী নতুন বছরের শুভেচ্ছা।

ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.