নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

...

অর্ক

...

অর্ক › বিস্তারিত পোস্টঃ

যে দিনগুলো ফেলে এলাম পথের বাঁকে

০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩৫


(বেশ ক'বছর আগে রমনা পার্কে তোলা ছবিটি।)

আজ থেকে প্রায় ত্রিশ বছর আগের কথা। আমাদের পাশের গ্রাম ঠিকাদারপাড়ায় দুর্গাপূজা হতো। বেশ বড়সড় আয়োজন। বাড়ি থেকে সবচেয়ে কাছের মণ্ডপ ছিলো ওটাই। মেলা হতো। খেলনা, খাবার, প্রসাধন ইত্যাদির অস্থায়ী দোকান বসতো। দেদার বেচাকেনা হতো রাত অব্দি। দীর্ঘ সময় থাকতাম। এরকমই একদিন বিকেলে দেখলাম, পাশের একটি বাড়ির জানালায় দুতিনজন সমবয়সী ছেলে দাঁড়িয়ে ভিতরে কিছু দেখছে কৌতূহলভরে। স্বাভাবিকভাবে আমাকেও কৌতূহলী করে তুললো। কি হচ্ছে সেখানে? কি দেখছে এতো উৎসাহ নিয়ে? শুরুতে ভেবেছিলাম টিভি। টিভি সে সময় দুর্লভ ছিলো। ত্রিশ বছর আগের কথা। পুরো মহল্লায় একটা দুটো পাওয়া যেতো। যাই হোক ওদের দেখাদেখি আমিও জানালা দিয়ে উঁকি দিলাম ভিতরে। দেখলাম, চশমা পরা আনুমানিক বছর পয়ত্রিশের যুবক বিছানায় চিৎ হয়ে শুয়ে। থেকেথেকে দাঁতে দাঁত চেপে বিকৃত করছে মুখাবয়ব। লোকটা পূর্ব পরিচিত ছিলো। এখানেসেখানে আগেও দেখেছিলাম। প্রথমে বুঝলাম না কিছুই। একজন মানুষ বিছানায় শুয়ে আছে। দেখার কি হলো? এ ব্যাপারে জানালামও কোমল শৈশবের সে সহজাত স্বাভাবিক বন্ধুদের। ওরা তখন লোকটার পায়ের দিকে তাকাতে বললো। তাকালাম। দেখলাম যে, অসংখ্য ক্ষুদ্রাকৃতির কালো কীট লোকটির একটি বা দুটি পা’য়ে কিলবিল করে বেড়াচ্ছে। ঘটনার পুঙ্খানুপুঙ্খ স্মৃতিচারণ আজ এতোদিন পর জীবনের এ পর্যায়ে কিছুতেই সম্ভব নয়। ঠিক মনে নেই যে, একটি না দুটি পায়ে কীট ছিলো। সেই অবুঝ শৈশবে ব্যাপারটা খুবই কৌতূহলোদ্দীপক, রোমাঞ্চকর ছিলো আমার জন্য। হাফপ্যান্ট পরা পাঁচ ছয় বছরের বালক আমরা সবাই। কেউই বুঝে উঠতে পারছিলাম না, পোকাগুলোর ব্যাপারে লোকটা উদাসীন কেন? ওগুলোর বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছে না কেন? পানি দিয়ে পা ধুলেও তো চলে যাবার কথা! দীর্ঘসময় একভাবে বিছানায় পড়ে আছে তো আছেই!

মনে দারুণভাবে গেঁথে গেছে ঘটনাটা। তখন এক বিন্দুও বুঝতে না পারলেও পরবর্তীতে বুঝতে পারি যে, আসলে ক্যান্সার রোগী ছিলো সে। তীব্র যন্ত্রণা নিয়ে ভয়াবহ ক্যান্সারের সঙ্গে লড়াই করে চলছিলো সেই রৌদ্রময় বিকেলে। তৃতীয় পর্বে চলে গিয়েছিলো ক্যান্সার। অমানুষিক যন্ত্রণা নিয়ে বিছানায় দাঁতে দাঁত চেপে নরক যন্ত্রণা সহ্য করে যাচ্ছিলো। জানালা থেকে আমাদেরকে চলে যাবার নির্দেশ দেবার মতো শারীরিক মানসিক স্থিতিটুকুও সে সময় অবশিষ্ট ছিলো না তার মাঝে। পা’য়ে ক্যান্সারের কীট সদর্পে ঘুরে বেড়াচ্ছে নির্বিরোধ। কুরে কুরে খাচ্ছে সেই বছর পয়ত্রিশের তরুণকে। আর আমরা টানটান উত্তেজনা নিয়ে জানালা থেকে সেটাই উপভোগ করে চলেছি মন্ত্রমুগ্ধের মতো।

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৪

জ্যাক স্মিথ বলেছেন: স্মৃতিকথা ভালো লেগেছে, ক্যান্সারে আক্রান্ত ওই লোকটির কথা শুনে খারাপ লাগলো।

০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:১২

অর্ক বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই। শুভেচ্ছা।

২| ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৭

এম ডি মুসা বলেছেন: স্মৃতি অনেক সুন্দর হয়

০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:১৩

অর্ক বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই। শুভেচ্ছা।

৩| ০২ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:১২

সন্ধ্যা রাতের ঝিঁঝিঁ বলেছেন: আচ্ছা, আপনার ছবি গুলো সবসময় সাদা কালো হয় কেন? আমার আসলে ফটোগ্রাফি সম্পর্কে তেমন কোনো ধারণা নেই, সেজন্য জানতে চাইলাম।

০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:১৬

অর্ক বলেছেন: ধন্যবাদ। তেমন কোনও কারণ নেই এতে। দেখি দুয়েকটি ছবি রঙিন করার চেস্টা করবো।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.