(লেখাটির উদ্দেশ্য সত্য উদ্ভাসিত করা।কেউ যদি বলে যে আমার দাবি সত্য নয়,তার দায়িত্ব প্রমান করা যে আমার কোন কথাটি কিভাবে বা কোন যুক্তির আলোকে ঠিক নয়।সঠিক যুক্তির কাছে মাথানত করাকেই আমার বিজয় মনে করি।যদি আমার যুক্তি খন্ডন করতে না পারেন, তাহলে অপ্রয়োজনীয় গালি-গালাজ করার মত হীণতা যাদের আছে তাদের প্রতি অনুরোধ এখান থেকে দূরে থাকা। উল্লেখ্য সৃষ্টিকর্তার বিধানের চ্যলেঞ্জের জবাব দেয়ার মত স্পর্ধা আমি কখনও দেখাতে পারি না, তবে মানবরচিত বিধানকে স্রষ্টার বলে চালিয়ে মানুষকে ধোকা দিলে তার জবাব দেয়া নৈতিক দায়িত্ব)
প্রথমে কিছু কথা বলে রাখা প্রয়োজন। কুরআন স্রষ্টার বানী কিনা তার পক্ষে সবচেয়ে বড় প্রমান হবে যে কুরআন প্রণেতা যেটিকে প্রমান হিসাবে দাবি করেন সেটি, অন্য প্রমান থাকলে সেগুলো হবে তার পরিপূরক।তাই আমি কুরআন স্রষ্টার হওয়ার পক্ষে কুরআনে দাবি করা প্রমান নিয়ে আলোচনা করেছি,কুরআনের দাবি করা প্রমানই সবচেয়ে বড় ও মুখ্য প্রমান হওয়ার কথা অথচ কুরআনের অনসরণকারীরা তাদের আলোচনায় এ প্রমানকে খুব কমই উপাস্থাপন করে থাকে এবং অন্য কিছু প্রমান আনে যার বেশিরভাগের সত্যতা যাচাই করা সম্ভব নয়। জন্মগতভাবে মুসলিম হওয়াই ইসলামের প্রতি অনুরাগ থাকে তার কারনে উক্ত প্রমানগুলোর সত্যতা যাচাই-বাছাই না করে অন্ধভাবে বিশ্বাস করে থাকে।
যারা আমার লেখার জবাব দিতে চান তাদের প্রতি অনুরোধ যে কুরআনের সত্যতার পক্ষে আরো প্রমান থাকলে তা নিয়ে অবশ্যই আলোচনা হতে পারে,তবে তা আলাদা পোষ্টে। কারন একসাথে সবগুলো বিষয়ে আলোচনার সুত্রপাত করলে কোনটিই ঠিকমত আলোচিত হয় না।কুরআনের সত্যতার পক্ষে সবচেয়ে বড় প্রমান নিয়ে আমি আলোচনার সুত্রপাত করলাম। যারা জবাব দিবেন তাদেরকে এ দু’টি প্রসঙ্গের মধ্যে থাকার অনুরোধ করছি।আমার এখানে দেয়া যুক্তি খন্ডিত হলেই আমি কুরআনের পক্ষের অন্য প্রমানের ব্যপারে আলোচনায় যাবো।
আল কুরআন সৃষ্টিকর্তার বানী বলে দাবি করা হয়। এটাকে যারা সৃষ্টিকর্তার বানী হিসাবে বিশ্বাস করে তারা নিরেট উত্তারাধিকার সুত্রে পাওয়া ধর্মের প্রতি অন্ধভাবে বিশ্বাস করে থাকে।কুরআন তার সত্যতার পক্ষে মাত্র দু’ধরনের প্রমানের দাবি করে:
১. কুরআনের অনুরুপ আয়াত বা সুরা কেউ আনতে পারবে না।
২. মানবরচিত পুস্তক হলে এতে অনেক অসঙ্গতি থাকত।
কুরআনের চ্যালেঞ্জ এর দূর্বলতা:
কোন সৎ সাহস নিয়ে চ্যালেঞ্জ করলে সে ব্যক্তি তার চ্যালেঞ্জে এর জবাব দাতাদের সাদরে গ্রহণ করবে এবং সুন্দরভাবে জবাব দেয়ার সুযোগ করে দেবে-এটাই স্বাভাবিক। আর যদি কেউ ভন্ডামিমূলক চ্যালেঞ্জ করে থাকে তাহলে সে ব্যক্তি চাইবে না যে যারা চ্যালেঞ্জ এর জবাব দেয়ার যোগ্যতা রাখে তারা সর্বসম্মূখে তার চ্যালেঞ্জ এর জবাব দিয়ে তার মুখোশ খুলে ফেলুক।
সে তার বোকা ও অন্ধ অনুসারীদের বোঝাবে যে তার চ্যালেঞ্জ কেউ গ্রহণ করতে পারেনি, অথচ সে নিজে যে চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতে বাধা দেয় তা তো আর তার অন্ধ অনুসারীরা জানে না। তার অন্ধ অনুসারীরা তাকে পরম শ্রদ্ধার সাথে বিশ্বাস করে, এটাই তার ভন্ডামি টিকিয়ে রাখার প্রধান পূজি।
কুরআনের অন্ধ বিশ্বাসিরা মনে করে যে কুরআনের চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতে কেউ পারেনি, অথচ বহু লোক কুরআনের চ্যালেঞ্জ এর জবাব দিয়েছে। যারা কুরআনের অন্ধ বিশ্বাসি তারা তো সে জবাবগুলো পড়ে দেখে না। ইসলাম ধর্মে বিশেষঞ্জ বলে যারা পরিচিত তারা কিভাবে ডাহা মিথ্যা কথা বলে যে ১৪00 বছর পার হয়ে গেল অথচ কুরআনের চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতে কেউ পারেনি।
কুরআনের চ্যালেঞ্জ এর জবাব প্রকাশ্য দিতেও কুরআনের বিশেষজ্ঞ বলে পরিচিতরা বাধা দেয়।কেউ কুরআনের চ্যলেঞ্জ এর জবাব দিতে আসলে তখন তথাকথিত কুরআন বিশেষজ্ঞরা কুরআন অবমাননা, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত ইত্যাদি বলে চিৎকার শুরু করে।প্রায় প্রত্যেক ধর্মীয় নেতা তার অনুসারীদের ও সাধারণ মানুষদের ধর্মীয় উম্মাদনা সৃষ্টি করে এক অরাজকতা সৃষ্টির অপপ্রয়াস চালায়। এভাবে তারা চায় যে মানব রচিত কুরআনের আসল সত্য যাতে প্রকাশ না পায়, সত্য যেন সাধারণ মানুষের সামনে চলে না আসে, এতে তাদের ধর্মীয় অনুভূতিকে কাজে লাগিয়ে তাদের ধর্ম ব্যবসা চালিয়ে যেতে পারবে না। কুরআনের চ্যালেঞ্জ গ্রহণকারিকে হত্যা কর,ফাসি চাই্ ইত্যাদি্ হুমকি-ধমকি দিয়ে তাদেরকে দূরে রাখে ।এটাই প্রমান করে কুরআনের মিথ্যা চ্যালেঞ্জ।
কুরআনের চ্যালেঞ্জ এর জবাব:
প্রথম চ্যালেঞ্জ: কুরআনের অনুরুপ আয়াত বা সুরা কেউ আনতে পারবে না
১. প্রথম কথা হল কুরআন যদি সকল মানুষের বিধান হয় তাহলে এর পক্ষে যে প্রমান থাকবে তা এত সহজ হবে যে সকল শ্রেনীর মানুষ বুঝতে পারে। উপরোল্লিখিত প্রমানদ্বয়ের একটিও সর্বসাধারনের জন্য নয়,কারন কোন কথাটি কুরআনের অনুরুপ বা অনুরুপ নয় তা একজন সাধারন অশিক্ষিত মানুষ বোঝার কথা নয়, একইভাবে একটি পুস্তকের সামগ্রিক বক্তব্য থেকে সঙ্গতিপূর্ণ কথা ও অসঙ্গতিপূর্ণ কথা পার্থক্য করা ও বুঝতে পারা সর্ব সাধারণের পক্ষে সম্ভব নয়।
বিশ্বজাহানের সৃষ্টিকর্তা কোন পুস্তক দিলে তার প্রমান এত জটিল কিছু দিবেন যা সকল শ্রেণীর মানুষের জন্য উপযোগি নয়,তা হতে পারে না, তা হতে পারে কোন বেকুফ কর্তৃক। আমার সৃষ্টিকর্তা এমন বেকুফ নন।
২. কুরআনের অনুরুপ আয়াত বলতে কি বুঝানো হয়েছে কুরআন নিজেও তা পরিস্কার করেনি। কোন লেখাকে আপনি শ্রেষ্ঠ বললে আপনাকেই বলতে হবে তা কোন কোন বৈশিষ্টের আলোকে তা অন্য থেকে শ্রেষ্ঠতর।কুরআনের কোথায়ও সে কথা পরিস্কার করে বলা হয়নি।
৩. একই লেখার মূল্যায়ন একেকজনের কাছে একেকরকম হযে থাকে।যে লেখা কোন একজন বিশেষজ্ঞের কাছে অতি উচ্চমানের তা আবার অন্য একজন বিশেষজ্ঞের কাছে তার মান সাধারণ।সুতরাং এমন কিছুকে প্রমান হিসাবে উপাস্থাপন করা উচিত নয় যা নিয়ে সাধারণত সকল মানুষ ঐক্যমতে পৌছতে পারে না।
মনে করুন কবি নজরুল দাবি করল যে তার কাছে স্রষ্টার পক্ষ থেকে বাণী আসে। প্রমান হল তার কাছে যে কবিতা বা প্রবন্ধ আছে তার অনুরুপ আর কেউ রচনা করতে পারবে না।তার কবিতা বা প্রবন্ধের সাহিত্য মান, অলঙ্কার এত উচ্চে যে তার অনুরুপ কারো পক্ষে রচনা সম্ভব নয়।
অপরপক্ষে মনে করুন কবি রবিন্দ্রনাথও একই ধরনের দাবী করল।রবীন্দ্রনাথের অনুসারীরা তার রচনাকে স্রষ্টার বাণী মনে করে আর অপরপক্ষে কাজী নজরুলের অনুসারীরা তার রচনাকে স্রষ্টার বাণী মনে করে। উভয় পক্ষের অনুসারীদের মধ্যে বিতর্ক হলে উভয় পক্ষের কাছে বিশাল যুক্তির ভান্ডার থাকে।বাস্তব সত্য কথা যেহেতু উভয়ের লেখারই সাহিত্য মান আছে, তাই উভয়ের অনুসারীদের সকল কথা ফেলে দেয়ার মত নয়।সুধী পাঠকদের বিবেকের কাছে প্রশ্ন যে নজরুল ও রবীন্দ্রনাথের অনুসারীরা যদি তাদের নিজ নিজ নেতা/কবির সাহিত্য মান নিয়ে বিতর্ক করে সেই বিতর্ক কি শেষ হওয়ার। এ ধরনের বিতর্ক কি বুদ্ধিমত্তার কাজ?
সুতরাং প্রমান হিসাবে এমন কিছুকে উপাস্থাপন করা বোকাদের দ্বারাই সম্ভব। আমার সৃষ্টিকর্তা এত বোকা নন, তাই আমি কুরআনকে স্রষ্টার বলে অন্ধভাবে মানতে পারি না।
৪. উপরোল্লিখত যুক্তিই বলে যে কুরআনের সত্যতার প্রমান হিসাবে কুরআনের অনুরুপ সুরা আনতে বলার দাবিটাই প্রমান করে যে হাজার বছর আগে রচিত কোন স্বল্প বুদ্ধির লোক কর্তৃক এমন দাবি। আজকে কেউ যদি কোন বই এনে স্রষ্টার হিসাবে মিথ্যা দাবি করে, সে প্রমান স্বরুপ কোন কিছু উপাস্থাপন করলেও কমপক্ষে এমন বোকামিমূলক দাবি না করে বরং এরচেয়েও চাতুর্যপূর্ণ কৌশল অবলম্বন করতে পারবে।সুতরাং কুরআনের অনুরুপ সূরা আনার কোন প্রয়োজন নেই। তথাপিও মানসিক স্বান্তনার জন্য নিম্নে কুরআনের অনুরুপ আয়াতের দৃষ্টান্ত দিচ্ছি।
যারা নিরপেক্ষ মনে বিবেচনার ক্ষমতা রাখে এবং সত্য গ্রহণে আপোষহীণ তাদের বিবেকের কাছে প্রশ্ন যে নিম্নোক্ত দৃষ্টান্ত কুরআনের অনুরুপ হয় কিনা তা বিবেচনা করা:
কুরআনের সূরা আসর:
সময়ের/যুগের কসম। নিশ্চয়ই মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত। তবে তারা ব্যতিত যারা বিশ্বাস স্থাপন করেছে, এবং সৎ কাজ করেছে, পরস্পর পরস্পরকে সত্যের ও ধৈয্যের উপদেশ দিয়েছে।
অনুরুপ সুরার উদাহরণ:
জ্ঞানের কসম।নিশ্চয়ই রবিন্দ্রনাথের অনুসারীর বোকার স্বর্গে আছে।তবে তাদের মধ্যে থেকে তারা বাদে যারা অনুতপ্ত হয়ে নজরুলের কথায় বিশ্বাস স্থাপন করল, এবং ভাল কাজ করল,পরস্পর পরস্পরকে ভাল কাজের ও রবীন্দ্রনাথের অনুসারীদের সকল সমালোচনার মোকাবেলায় এবং নজরুলের আদর্শ বাস্তবায়নের পথে ধৈর্য ধারনের উপদেশ দিল।
উপরোক্ত দৃষ্টান্তটি দিয়েছে যারা নিরপেক্ষ মনে চিন্তা করে তাদের বিবেচনার সুবিধার্থে। কেউ যদি আমার দেয়া অনুরুপ সূরার দৃষ্টান্ত নিয়ে যে কেউ বিতর্ক উথ্থাপন করলে আমি সে অর্থহীন বিতর্কে জড়াবো না। কারন আমি আগেই বলেছি যে এমন প্রমানের দাবিটিই বোকামিমূলক আর এ নিয়ে বিতর্ক করলে এক অসীম বিতর্ক হবে।
৫. আমি একটি কিছু রচনা করে দাবি করলাম যে আমার রচনার সমতুল্য আর কারো রচনা নয়, এরপর বিতর্ক ও ঝগড়া শেষে বললাম যে যারা আমার রচনাকে শ্রেষ্ঠতম মানল না তাদের কথা ঠিক নয়,তাদের যুক্তি ঠিক নয় আমার যুক্তিই ঠিক আর আমার রচনাই শ্রেষ্ঠ।এরপর প্রচার করে বেড়ালাম যে আমার রচনার শ্রেষ্ঠত্ব কেউ খন্ডন করতে পারেনি, আমার এমন দাবি দেখে বুদ্ধিমান লোকেরা দূর থেকে হাসা ছাড়া আর কি করবে বলূন?
দ্বিতীয় প্রমান: মানবরচিত পুস্তক হলে এতে অনেক অসঙ্গতি থাকত:
কুরআন দাবি করছে এতে অসঙ্গতি নেই, অথচ বাস্তবে কুরআনে বহু অসঙ্গতি রয়েছে।কযেকটি অসঙ্গতি নিম্নে তুলে ধরছি:
ক. কুরআন দাবি করছে এ পুস্তক অতি সহজ, বাস্তবে ইহা অতি সহজ নয়।অতি সহজ বলতে সর্বসাধারণ সরাসরি বুঝতে পারবে।অথচ তাফসির ছাড়া কে্উ বুঝতে পারে না। সাধারণ মানুষ তো দূরের কথা, শিক্ষিত লোকদেরই বুঝতে বেগ পেতে হয়। আল কুরআন সহজ না কঠিন
খ. কুরআন দাবি করছে এর কথা গুলো অতি সুস্পষ্ট, পরিস্কারভাবে বিশ্লেষিত। বাস্তবে এর বেশিরভাগ বিধানই অস্পষ্ট।যেমন-কুরআনে বলা হয়েছে এতে সকল কিছুর বর্ননা রয়েছে, বাস্তবে সকল কিছু বলতে কি বুঝানো হয়েছে তা পরিস্কার কর হয়নি।
গ. কুরআন নাকি মানুষের জীবন বিধান বিস্তারিতভাবে দেয়া আছে, অথচ বাস্তবে কুরআনের মাত্র ১৫% আইন-কানুন ও বিধি-বিধান সংক্রান্ত।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই আগস্ট, ২০১৬ রাত ১১:০৭