অধ্যায় : শহীদ তিতুমীর
প্রশ্ন-ক : ‘তিতুমীর’ নামটি কেমন করে হল? তার প্রকৃত নাম কী?
উত্তর : ‘শহীদ তিতুমীর’ শীর্ষক রচনাটিতে ইংরেজদের বিরুদ্ধে স্বাধীনতাযুদ্ধের প্রথম শহীদ তিতুমীর-এর জীবনী নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। রচনাটির প্রথমেই তিতুমীরের নামকরণের পেছনে যে মজার কাহিনীটি রয়েছে তা বর্ণনা করা হয়েছে।
শিশুকালে তিতুমীরের একবার কঠিন অসুখ হয়েছিল। রোগ সারানোর জন্য তাকে দেওয়া হয়েছিল ভীষণ তেতো ওষুধ। এমন তেতো ওষুধ শিশু বা বৃদ্ধ কেউই মুখে নেবে না। অথচ শিশু তিতুমীর বেশ খুশিতেই দশ বার দিন এই তেতো ওষুধ খেয়েছিল। তেতো খেতে তার আনন্দ। তাই বাড়ির সবাই অবাক হয়ে তার ডাক নাম রেখেছিল তেতো। তেতো থেকে তিতু। তিতুর সঙ্গে মীর লাগিয়ে তিতুমীর নাম রাখা হয়েছিল।
তিতুমীরের প্রকৃত নাম : তিতুমীর নামেই তাকে সবাই চিনলেও এটি ছিল তার ডাক নাম। তার প্রকৃত নাম সৈয়দ মীর নিসার আলী।
প্রশ্ন-খ : তিতুমীরের যখন জন্ম, তখন এ দেশ কাদের অধীনে ছিল?
উত্তর : ইংরেজদের বিরুদ্ধে স্বাধীনতাযুদ্ধে বীর নায়ক তিতুমীরই হলেন বাংলার প্রথম শহীদ। তার যখন জন্ম হয় তখন বাংলাদেশসহ পুরো ভারতবর্ষ ইংরেজদের অধীনে ছিল।
প্রশ্ন-গ : তিতুমীর ছোটবেলায় ডনকুস্তি আর ব্যায়াম শিখেছিলেন কেন?
উত্তর : ‘শহীদ তিতুমীর’ শীর্ষক রচনায় তিতুমীরের জীবনের যে সংক্ষিপ্ত বিবরণ আমরা পাই সেখানে আমরা জানতে পারি যে তিতুমীর ছোটবেলায় ডনকুস্তি ও ব্যায়াম শিখেছিলেন।
বাংলাদেশসহ পুরো ভারতবর্ষ যখন ইংরেজদের অধীন তখন একদিকে চলত ইংরেজদের অত্যাচার আর অন্যদিকে ছিল জমিদারদের জুলুম। এ সময় তিতুমীরের জন্ম হয়েছিল। শান্ত ও ধীর স্বভাবের তিতুমীর ভাবতেন-কীভাবে এসব অত্যাচার হতে মুক্তি পাওয়া যাবে? সে সময় গ্রামে ইংরেজ তাড়ানোর জন্য গায়ে শক্তি সঞ্চয় করার উদ্দেশ্যে ডনকুস্তি ও শরীরচর্চার ব্যায়াম হতো। মুষ্টিযুদ্ধ, তীর ছোড়া ও অসি চালনাও শেখানো হতো। এটি তার জন্য ছিল একটি সুযোগ। এই সুযোগে ইংরেজদের তাড়িয়ে দেশ মুক্ত করার জন্য তিনি ডনকুস্তি ও ব্যায়াম শিখেছিলেন। তিনি ডনকুস্তি শিখে কুস্তিগির ও পালোয়ান হিসেবেও নাম করেছিলেন।
প্রশ্ন-ঘ : শহীদ তিতুমীর কেন অমর হয়ে আছেন?
উত্তর : ‘শহীদ তিতুমীর’ রচনাটিতে তিতুমীরের সংগ্রামী জীবনের বর্ণনা করা হয়েছে। তিতুমীর ছিলেন বীর। তার বীরত্বই তাকে অমরত্ব দিয়েছে।
ইংরেজ শোষণ শিশু তিতুমীরের মনে ভীষণভাবে কষ্ট দিয়েছিল। তাই ছোটবেলা থেকেই তার মনে প্রতিবাদী মনোভাব গড়ে ওঠে। বড় হয়ে তিনি দেশে নিরস্ত্র দুর্বল মানুষগুলোকে মানসিক শক্তি দিয়ে প্রতিবাদী করে তোলেন। মাত্র চার-পাঁচ হাজার স্বাধীনতাপ্রিয় সৈনিক নিয়ে গোলাবারুদ ছাড়াই নারিকেলবাড়িয়ার বাঁশের কেল্লায় যুদ্ধ করেছিলেন। ইংরেজদের ছিল সেনাবহর ও গোলন্দাজ বাহিনী। তাই ইংরেজ সেনাদের বিরুদ্ধে শেষ পর্যন্ত তারা রুখে দাঁড়াতে পারলেন না। বীর তিতুমীর শহীদ হলেন। তার সঙ্গে আরও অসংখ্য মুক্তিকামী বীর সৈনিক শহীদ হয়েছিলেন। ২৫০ জন্য সৈন্য ইংরেজদের হাতে বন্দি হয়েছিল। এভাবেই শেষ হয়েছিল তিতুমীরের যুদ্ধ।
আজ থেকে প্রায় পৌনে দুশ বছর আগে ভারতবর্ষের স্বাধীনতার জন্য তিতুমীর প্রথম যুদ্ধ ঘোষণা করেছিলেন। বীর তিতুমীর তার বীরত্বের জন্যই ইতিহাসের পাতায় অমর হয়ে আছেন।
প্রশ্ন-ঙ : তিতুমীর কীভাবে শহীদ হলেন?
উত্তর : ‘শহীদ তিতুমীর’ রচনাটিতে শান্ত ও ধীর স্বভাবের তিতুমীরের বীরত্বময় জীবনের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দেওয়া হয়েছে। ইংরেজদের বিরুদ্ধে স্বাধীনতাযুদ্ধে তিতুমীরই হলেন বাংলার প্রথম শহীদ।
ইংরেজ ও দেশি জমিদারদের জুলুম ছোট তিতুমীরের হূদয়ে দাগ কেটেছিল। তিনি ডনকুস্তি শিখে কুস্তিগির ও পালোয়ান হিসেবে নাম করেছিলেন। তিনি হিন্দু-মুসলিম সবাইকে ইংরেজ ও জমিদারদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে আহ্বান জানালেন। ১৮২২ সালে চল্লিশ বছর বয়সে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম ‘পুরোধা ব্যক্তিত্ব হজরত শাহ সৈয়দ আহমদ বেরলভীর শিষ্য হন। এরপর তিনি দেশে ফিরে স্বাধীনতার ডাক দেন। নিজ গ্রাম ছেড়ে তিনি বারাসাতের নারিকেলবাড়িয়ায় ‘বাঁশের কেল্লা’ তৈরি করেন। ১৮৩১ সালের ১৯ নভেম্বর ভারতবর্ষের গভর্নর লর্ড উইলিয়াম বেন্টিঙ্ক কর্নেল স্টুয়ার্ডের নেতৃত্বে শক্তিশালী সেনাবহর তিতুমীরের বাঁশের কেল্লা আক্রমণ করতে পাঠিয়েছিলেন। অন্যদিকে তিতুমীর মাত্র চার-পাঁচ হাজার স্বাধীনতাপ্রিয় সৈনিক নিয়ে ইংরেজদের সঙ্গে লড়াই করতে লাগলেন। ইংরেজদের গোলার আঘাতে তিতুমীরের বাঁশের কেল্লা ছারখার হয়ে গিয়েছিল। কেননা তাদের কোনো অস্ত্র ও গোলা বারুদ ছিল না। এই যুদ্ধেই বীর তিতুমীর শহীদ হয়েছিলেন।