প্রবন্ধ রচনা
প্রিয় শিক্ষার্থীরা, আজ বাংলা বিষয়ে ‘বিদায় হজ’ শীর্ষক একটি প্রবন্ধ রচনা অনুশীলনের জন্য দেওয়া হলো।
বিদায় হজ
ভূমিকা: মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর জীবনের শেষ হজ ‘বিদায় হজ’ নামে পরিচিত। জিলকদ মাসের ২৫ তারিখে হজরত মুহাম্মদ (সা.) অসংখ্য সঙ্গী-সাথিসহ হজ পালনের উদ্দেশে মক্কার পথে যাত্রা করেন। জিলহজ মাসের ৫ তারিখে মহানবী (সা.) মক্কা শরিফে উপনীত হন। আরব দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা প্রায় দুই লাখ মানুষের উপস্থিতিতে হিজরি দশম সালে অনুষ্ঠিত হয় বিদায় হজ। এ উপলক্ষে জাবালে রাহমাত নামক পাহাড়ে দাঁড়িয়ে তিনি সমবেত মানুষের উদ্দেশ্যে ভাষণ দেন। আরাফাত ময়দানে নবীজির (সা.) এটিই শেষ ভাষণ এবং মহানবীর (সা.) জীবনে এটিই ছিল শেষ হজ। আর তাই এ ভাষণ বিদায় হজের ভাষণ নামে খ্যাত।
সমবেত মানুষের উদ্দেশে বক্তব্য: মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) প্রথমেই আল্লাহ তাআলার প্রশংসা করলেন। তারপর সমবেত মানুষের দিকে তাকিয়ে বললেন: ‘তোমরা আমার কথা মনোযোগ দিয়ে শোনো। আজকের এই দিন তোমাদের কাছে পবিত্র। এ মাসটিও তোমাদের কাছে পবিত্র। তোমাদের জীবন ও সম্পত্তি পরস্পরের কাছে পবিত্র। মনে রেখো, একদিন তোমরা আল্লাহ তাআলার কাছে হাজির হবে। পৃথিবীতে তোমরা যে কাজ করেছ, আল্লাহ তাআলা তোমাদের কাছে তার হিসাব চাইবেন।’
ক্রীতদাস-ক্রীতদাসী সম্পর্কে বক্তব্য: ক্রীতদাস-ক্রীতদাসী সম্পর্কে মহানবী (সা.) বললেন, ‘তোমাদের ক্রীতদাস ও ক্রীতদাসীরাও আল্লাহ তাআলার বান্দা। তাদের প্রতি নিষ্ঠুর ব্যবহার কোরো না। তোমরা নিজেরা যা খাবে, তাদেরও তা-ই খেতে দেবে। নিজেরা যে কাপড় পরবে, তাদেরও তা-ই পরতে দেবে। কোনো ক্রীতদাস যদি নিজের যোগ্যতায় আমির হন, তবে তাঁকে মেনে চলবে। তখন বংশ মর্যাদার কথা বলবে না।’
মুসলমান নারী ও পুরুষের উদ্দেশে বক্তব্য: মুসলমান নারী ও পুরুষের উদ্দেশ্যে মহানবী বললেন, ‘মনে রেখো, সব মুসলমান একে অন্যের ভাই। তোমরা এক ভাই কখনো অন্য ভাইয়ের সম্পত্তি জোর করে দখল কোরো না। ঋণ নিলে পরিশোধ করে দিয়ো। নারীর ওপর পুরুষের যে রূপ অধিকার আছে, পুরুষের ওপরও নারীরও সে রূপ অধিকার রয়েছে। সকল প্রকার সুদ, ঘুষ দেওয়া-নেওয়া থেকে বিরত থেকো। কখনো অন্যায় বা অবিচার কোরো না। সামান্য পাপ থেকেও নিজেকে দূরে সরিয়ে রেখো।’ তিনি আরও বললেন, ‘মানুষ নিজের কাজের জন্য নিজেই দায়ী থাকবে। একজনের অপরাধের জন্য অন্যকে দায়ী করা চলবে না।’
ধর্ম সম্পর্কে মতামত: মহানবী (সা.) জোর দিয়ে বললেন: ‘ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করবে না। নিজের ধর্ম পালন করবে। যারা অন্য ধর্ম পালন করে, তাদর ওপর তোমার ধর্ম চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা কোরো না।’
মহানবীর (সা.) চারটি বিশেষ কথা: মহানবী (সা.) চারটি কথা বিশেষভাবে মনে রাখতে বললেন: (১) আল্লাহ তাআলা ছাড়া অন্য কারও এবাদত কোরো না। (২) অন্যায়ভাবে মানুষকে হত্যা কোরো না। (৩) পরের সম্পদ আত্মসাৎ কোরো না।(৪) কারও ওপর অত্যাচার কোরো না।
আমাদের কাছে রেখে যাওয়া মহানবীর (সা.) দুটি জিনিস: ভাষণের শেষ পর্যায় মহানবী (সা.) বললেন: ‘তোমাদের কাছে আমি দুটি জিনিস রেখে যাচ্ছি। (১) আল্লাহ তাআলার বাণী আল-কোরআন, (২) আল্লাহ তাআলার প্রেরিত পুরুষ রাসুলের জীবনের আদর্শ।’
উপসংহার: বিদায় হজ আমাদের ইসলামের ইতিহাসে একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। মহানবী (সা.) বিদায় হজের ভাষণে মুসলমানদের জন্য তথা মানব জাতির জন্য রয়েছে সকল প্রকার দিকনির্দেশনা, মানব জাতি চিরদিন তাঁর এ ভাষণকে গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করবে।