অনলাইনে পুরুষরা যখন পর্দার ব্যাপারে কথা বলেন, তখন তারা নারীদেরকে উপদেশ দিতে খুব ভালবাসেন।
"ওহে বোন! কেন ফেসবুকে ছবি আপলোড দিচ্ছ? হাজার হাজারে পুরুষ তোমার ছবি দেখছে, ডাউনলোড করে জুম করে নানান এঙ্গেলে ছবিটার টপ টু বটম পরখ করছে, কত ফিৎনা.... গেল গেল সব গেল!!"
অথচ এসব একেকজন সিঙ্গেল পুরুষ নিজেরাই ভুলে যান যে, তিনি নিজেও ফেসবুকে প্রতিদিন তার গন্ডাখানিক ছবি আপলোড করেই চলেছেন। কত ভঙ্গিমা!! বুক ফুলিয়ে-মাসল উচিয়ে, সিক্স প্যাক দেখিয়ে নানান ছবি তিনিও নিয়মিত আপলোড করছেন। আর হাজার হাজারে নারীও তার বুক ফুলানো-মাসল উচানো ছবি দেখছেন, মুগ্ধ হচ্ছেন এবং কেউ বা ডাউনলোড করেও রাখছেন। ছবিতে লাইক, কমেন্টের বাহার দেখে পুরুষের মন সপ্তম আকাশে উড়ছে।
Isn't so funny?? Dear Brothers in Islam! it's a hypocrisy.
সময়টা বাংলা বর্ষবরণ ১৪২২ অনুষ্ঠানের। "সেদিন কি হয়েছিল?" তা আমি আমার ভাগ্নের কাছ থেকেই শুনেছি কারণ সেও সেদিন তার ছোট খালার সাথে অনুষ্ঠানে যোগদান করেছিল। অবস্হা বেগতিক দেখে মহান আল্লাহর অশেষ কৃপায় সে তার খালাকে নিয়ে নিরাপদেই সরে আসতে পেরেছিল। প্রতিবার যা হয়, এবারো তাই হয়েছে তবে মিডিয়ার কল্যাণে একটু বেশিই হইচই। অনলাইনে এবার শুরু হল ঘটনার ঘাত-প্রতিঘাত। যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা_
নারী VS. পুরুষ: নারী-পুরুষ মুখোমুখি। ঘটনায় সবচেয়ে অবাক করা বিষয় হল, এবার যোগ হল নতুন মাত্রা।
"যাহারা এতদিন নিজেদের মুমিন নারী-মুমিন পুরুষ বলিয়া দাবি করিয়াছেন, এইবার তাহারাও ধর্মের ভেদাভেদ ভুলিয়া, নিজেদের দায়িত্ব-কর্তব্য চুলোয় রাখিয়া, প্রগতিশীলদের সহিত কাঁধে কাঁধ মিলাইয়া যোগ দিলেন এই লিঙ্গভিত্তিক মহাযুদ্ধে। কিসের ইসলাম!! আগে নিজ লিঙ্গের সন্মান রক্ষা করিতে হইবে, প্রতিপক্ষকে এইবারই ঠ্যাঙ্গানোর মোক্ষম সুযোগ। প্রকাশ হইয়া পরিল সকল নারী-পুরুষের আসল চেহারা, ভান ধরা সকল মুমিনের প্রকৃত চেহারা।"
My dear brothers and sisters in Islam! you think you follow Islam, you are Mumin, but unfortunately you are affected by Materialism. it's true it's not a lie.
গিয়েছিলাম ফ্রেন্ডের বাসায় যখন সে ইউটিউব নিয়ে বিজি। আমাকে ডাকল, এই দেখোনা মেয়েটা যা জোস একটা ভিডিও আপলোড করেছে, ছেলেদের তো পুরো বোল্ড করে দিয়েছে। জিঙ্গাসা করলাম: কে? উত্তর: আরে চিননা? লাক্স চ্যানেল আই সেরা সুন্দরী।
টাইট জিন্স প্যান্ট-শর্ট টিশার্ট পরে মডেলকণ্যা বর্ষবরণের অনুষ্ঠানে ঘটে যাওয়া ব্যাপার নিয়ে ক্ষোভের ভিডিও প্রসব করেছেন। সম্ভবত লাখের উপর ভিউয়ার। খুব রাগী রাগী কন্ঠে মডেল তরুণী বলছেন, " ছেলেরা শোন আমাদেরকে পর্দা করতে বলার আগে নিজেরা পর্দা কর। নারী যে পোশাকই পরুক, তুমি কেন তাকাবে? তোমাদেরকেই তো আগে পর্দা করতে বলা হয়েছে। তাহলে আমাদের বল কেন?"
মনে মনে বললাম একদম ঠিক কথা। কিন্তু তাকে প্রশ্ন করতে খুব ইচ্ছা হচ্ছিল, আচ্ছা মডেল তরুণী! পরের আয়াতে যে নারীদেরকেও জাহিলিয়াতের মত উগ্র পোশাকে নিজেকে প্রদর্শন করতে মানা করা হয়েছে, শালীন পোশাক পরতে বলা হয়েছে, এটা কি তুমি জান? নাকি ফেঁসে যাবে ভেবে বলছোনা? আজব মেয়ে! টাইট জিন্স প্যান্ট-শর্ট টাইট টি শার্ট পরে পুরুষদের পর্দার ব্যাপারে ওয়াজ নসিহত ফতোয়া প্রদান করছে!!
হাজার হাজার পুরুষ তার ভিডিও দেখেছে আর কমন কমেণ্ট ছিল,
"নারীদের শালীন পোষাক পরা খুবই জরুরী, মেয়েরা কেন উগ্র পোশাক পরবে? মেয়েরা উগ্র পোশাক পরে বলেই ছেলেদের হাতে ইভ টিজিং সহ যৌন সহিংসতার শিকার হয়। কাজেই ব্যাপারটা হল মেয়েরাই দায়ী। পর্দা নারীদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ_ ইত্যাদি ইত্যাদি।"
মনে মনে বললাম, হুম! যুক্তি আছে। অথচ বাস্তবতা হল, আগের আয়াতে মহান আল্লাহ আগে পুরুষদেরকে লজ্জাস্হানের হেফাজতের কথা বলেছেন, চোখ নামিয়ে চলতে বলেছেন, এরপর নারীদের ব্যাপারে বলেছেন। তাহলে একজন নারী যে পোশাকেই থাকুক, তুমি পুরুষ কেন তাকাবে? সত্যি কথাটা হল, পুরুষরা এই মডেলের ভিডিও চোখ মেলে খুব মনোযোগ দিয়ে দেখছেন তার প্রধান কারণ, যুবতী ছোটখাট পোশাকে নিজেকে প্রদর্শন করছে, আর পুরুষের চোখের নেশা পুরণের পর তাকে তারা তুই নষ্টা বলে গাল দিচ্ছে। অর্থাৎ এক ভন্ড অন্য ভন্ডের নৈতিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে!!
নারীর পোশাক নিয়ে এত কথা অথচ পুরুষ নিজেই উগ্র পোশাকে অভ্যস্ত।
মনে পরে এক নাস্তিক মেয়ের কথা, প্রশ্ন করেছিলঃ "ইসলাম শুধু মেয়েদের শালীন পোশাক নিয়ে কথা বলে, পুরুষের পোশাক নিয়ে কথা বলেনা কেন? আমি তো সবখানেই দেখি ছেলেরা জিম করে বুক ফুলিয়ে-মাসল বড় করে তা প্রকাশ করার জন্য টাইট ফিটিং টি-শার্ট আর জিন্স প্যান্ট পরে বের হয় মূলত মেয়েদের নজর কাড়ার জন্য, জিন্সটাও এত নীচু করে পরে যে নিতম্বের অনেকখানি অংশই দেখা যায়। তো আমিও তো রক্তমাংসের মানুষ, আমারও তো চোখ আছে, আকর্ষণশক্তি আছে, খারাপ অনুভূতি আছে এই ছেলেটা যখন আমার সামনে দিয়ে যায় তখন আমার কি চোখ বুজে ফেলা উচিত? আফসোস! ইসলাম পুরুষঘেষা তাই এই পুরুষকে কোন নিষেধাজ্ঞা দেয়নি!"
জবাব দিয়েছিলামঃ তুমি নাস্তিক! তাই নাস্তিকতা সম্পর্কে যতখানি বিজ্ঞ, ইসলামের ব্যাপারে ঠিক ততখানিই অজ্ঞ, তাই না জেনে ভুল কথা বলছ। কারণ ইসলাম নারী-পুরুষ উভয়কেই এমন পোশাক পরার নির্দেশ দিয়েছে যা হবে ঢিলে-ঢোলা যাতে শারিরিক কাঠামো বোঝা যাবেনা, পোশাক এমন জাকজমক হতে পারবেনা যা বিপরীত লিঙ্গকে তার প্রতি আসক্ত হতে বাধ্য করে। তুমি কি জান ইসলামে একজন পুরুষের সাথেও আরেক পুরুষের পর্দা আছে, আর একজন নারীর সাথে অন্য নারীর? দুজন প্রাপ্তবয়ষ্ক পুরুষকে এক বিছানায় ঘুমাতে মানা করা হয়েছে, উপায় না থাকলে দুজনকেই চাদর দিয়ে শরীর ঢেকে রাখতে বলা হয়েছে যেন একজনের শরীর অন্যজনের শরীর স্পর্শ না করে। আপন বাবা-মা এর ঘরে ঢুকতে গেলেও ইসলাম ছেলে-মেয়েকে বলেছে, আগে মা-বাবার কাছে প্রবেশের অনুমতি চাও। এগুলোর বাস্তবায়ন থাকলে আজ আমাদের সমাজে গে-লেসবিয়ান(নারী ও পুরুষ সমকামী) আর রক্ত সম্পর্কের মাঝে যৌনতা (Incest) এর মত জঘন্য কালচার চালু হতে পারতোনা।
পুরুষদের কথা, "পর্দা মানা আমার জন্য কম গুরুত্বপূর্ণ, কষ্টকর, আমি তোমার চাইতে শারিরিকভাবে অধিক শক্তিশালী কিন্তু তুমি দূর্বল, তাই নারী তোমাকে পর্দা মানতেই হবে।"
আবার নারীদের কথা, "আমি মানছিনা বলে তুমি পুরুষ কেন মানবেনা? আগে তো তোমাকেই পর্দা করতে বলা হয়েছে। আগে নিজে করনা কেন?"
মোটকথা, নারী-পুরুষ কেউই মানতে রাজিনা। এজন্যই আল্লাহ বলেছেনঃ "মানুষ কত অকৃতজ্ঞ!!"
পুরুষরা ভাবে আল্লাহ তাদের পক্ষে আর নারীরা ভাবে, তাদের পক্ষে, অথচ আল্লাহর কোন জেন্ডার নেই। আর নারী-পুরুষ আলাদা কিছুনাঃ জেনেটিক্স বলে, মানব সন্তান (ছেলে বা মেয়ে) হলঃ" নারী (মা) ও পুরুষের (বাবা) শারিরিক ও মানবিক বৈশিষ্টাবলির মিশ্রণ।"
অথচ তারা এমন ভাব ধরে যেন সে আসমানে পুরুষ হিসেবে বা নারী হিসেবে ফ্যাক্টরীতে প্রস্তুত হয়ে দুনিয়ায় টপ করে আছাড় খেয়ে পরেছে তাই তার নারী বা পুরুষ হওয়াতে অন্য কোন নারী বা পুরুষের হস্তক্ষেপ নেই।
আসলে শঙ্কর জাতের বাঙ্গালির প্রকৃত চিত্র হল এই, এখানে তিনটি শ্রেণী জন্ম নিয়েছে_
১.কওমী মাদ্রাসাভিত্তিক স্বতন্ত্র গোষ্ঠী
২. সেকুলার বস্তুবাদি
৩. বস্তুবাদি মডারেট মুসলিম
#কওমীরা নিজেদের জগতেই ঘুরপাক খাচ্ছে শহুরে ইট কাঠের খাঁচায় তাদের প্রভাব খুব সীমিত।
#সেকুলার বস্তুবাদিরা ইসলাম সম্পর্কে না জানার কারণে বিরোধীতাকারী বা জানার পরেও অহংকার বা বস্তুবাদি স্বার্থের কারণে বিদ্বেশ পোষণকারী।
#বস্তুবাদি মডারেট মুসলিম: এই শ্রেণীটাই হচ্ছি আমরা যারা, বস্তুবাদি শিক্ষাদীক্ষায় শিক্ষিত, বস্তুবাদি সুযোগ সুবিধা ভোগ করছি, একে আঁকড়ে ধরে বাঁচতে চাইছি। বুঝতে পারছি ইসলামকে নিয়ে বাঁচতে হবে কিন্তু ইসলামকে আলাদা করতে পারছিনা। ইসলামকে সাথে রাখতে চাইছি, অনুসরণ করতে চাইছি কিন্তু আমরা বস্তুবাদ দ্বারা এতটাই প্রভাবিত যে, মুখে মুখে মুসলিম দাবিদার হলেও মন-মানষিকতায় আমরা প্রকৃত অর্থে বস্তুবাদীতায় চরমভাবে আসক্ত। আমরা ইসলামকে বিচার করি, ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করি বস্তুবাদী ধ্যান-ধারণা, বিশ্বাস দিয়ে। তাই মুখে যতই ইসলামের প্রতি দরদ দেখাই বাস্তবে দেখা যায় আমরা নারী বিদ্বেশী-পুরুষ বিদ্বেশী, ভোগবাদী, সেকুলারদের পরোক্ষ শক্তি। এটাই বাস্তবতা শুনতে যতই খারাপ লাগুক।
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে আগস্ট, ২০১৫ দুপুর ২:৫০