ভোর ৪টা, ইতিমধ্যেই ৩৫ ঘন্টা পেরিয়ে গেছে এয়ার ও ট্রানজিট মিলিয়ে। মেক্সিকো সিটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে (Aeropuerto Internacional de la Ciudad de México) ইমিগ্রেশনের ভদ্রমহিলা স্বভাবসুলভ হাসি দিয়ে বললেন, ¡Hola! ইমিগ্রেশন শেষে হোটেলের উদ্দেশ্যে ট্যক্সিতে উঠে বসলাম। আমার সাথে বাংলাদেশ থেকে নুরন্নবী হাছিব ভাই ও যুক্তরাজ্যের ক্যথি নামে আরো একজন ছিলেন। গন্তব্য ‘মেক্সিকো সিটি হিল্টন রিফর্মা’ হোটেল, এখানেই শুরু হতে যাচ্ছে উন্মুক্ত তথ্যভান্ডার উইকিপিডিয়া ও এর সহপ্রকল্পগুলোর সবচেয়ে বড় বাৎসরিক সম্মেলন যা “উইকিম্যানিয়া” নামে পরিচিত। পথে যেতে যেতেই নিরাপত্তার কড়াকড়ি টের পেলাম, ধরেই নিলাম এটা ঠিক তিন দিন পূর্বের মেক্সিকোর শীর্ষ মাদক সম্রাট হোয়াকিন গুজমানের ('এল চাপো' অথবা 'বামন' নামেই যিনি বেশি পরিচিত) জেল থেকে পালানোর ফসল। হোটেলে যখন পৌঁছালাম তখন সকাল ৭টা, ১৪ই জুলাই ২০১৫। কনফারেন্স অফিসিয়ালি শুরু হবে ১৭ই জুলাই থেকে এবং শেষ হবে ১৯শে জুলাই, এর পূর্বে ১৫ ও ১৬ই জুলাই প্রি-কনফারেন্স ও হ্যাকাথন। প্রথম দিন মেক্সিকো সিটির কাছের শহর Teotihuacan-এ Pyramid of the Sun ও Pyramid of the Moon দেখেই কাটালাম।
১৫ই ও ১৬ই জুলাই
১৫ই ও ১৬ই জুলাই সকাল ৮টায় শুরু হয়েছিল হ্যাকাথন ও প্রি-কনফারেন্স। কারিগরি দিকে আগ্রহ থাকায় হ্যাকাথনেই জয়েন করলাম। এ হ্যাকাথনে মূলত উইকিপিডিয়ার বিভিন্ন কারিগরি দিক নিয়ে আলোচনা, বাগ ফিক্সিং ইত্যাদি হয়ে থাকে। জীবনে প্রথমবারের মত টের পেলাম বেরসিক লোক কত প্রকার ও কি কি! মাঝে খাবার বিরতি দিয়ে একটানা প্রতিদিন বিকেল ৬টা পর্যন্ত চললো হ্যাকাথন। পরে শুনেছিলাম কেউ কেউ নাকি সেখানে রাত্রিও যাপন করেছেন। দুদিনের হ্যাকাথনে উইকিমিডিয়ার বিভিন্ন কারিগরি সমস্যা সমাধানের টুলস, টুলসের ব্যবহার, আউটরিচ প্রকল্পের টুলসের বিভিন্ন বিষয়, ভিজ্যুয়াল এডিটরের দ্বিতীয় পর্বের অনুবাদ, উন্মুক্ত ছবির ভান্ডার উইকিমিডিয়া কমন্সের প্যানারোমিক ভিউ, উইপিডিয়ায় কাজ করার জন্য গবেষনার পদ্ধতি ইত্যাদি বিষয়ে নানা ধরনের কারিগরি কর্মশালা ও আলোচনা হয়। এ আয়োজনে প্রায় ১০০ জন অংশগ্রহণ করেছিল।
মূল সম্মেলন
১৭ই জুলাই উইকিপিডিয়ার প্রতিষ্ঠাতা জিমি ওয়েলেস ও প্রধান সমন্বয়ক স্থানীয় আয়োজক ‘উইকিমিডিয়া মেক্সিকোর’ ইভান মার্টিনেজের শুভেচ্ছার মাধ্যমে শুরু হয় মূল সম্মেলন। উদ্বোধনীতে মেক্সিকোর ঐতিহ্যবাহী সংগীত ও নাচ পরিবেশন করেন স্থানীয় শিল্পীরা। সম্মেলনে বিভিন্ন দেশের উইকিপিডিয়ার প্রায় ১০০০ অংশগ্রহণকারী অংশ নেন। এ সম্মেলনটি উইকিপিডিয়ার ১১তম সম্মেলন। সম্মেলনের তিনদিনিই ছিল উইকিপিডিয়া ও মুক্ত জ্ঞান নিয়ে বিভিন্ন কর্মশালা ও মুক্ত আলোচনা। সম্মেলনে প্রতিবেশী দেশ ভারত ও নেপাল থেকেও উইকিপিডিয়ানরা অংশ নেন। দক্ষিণ এশিয়ার উইকিপিডিয়ানদের মধ্যে কিভাবে কোলাবোরেশন আরো বৃদ্ধি করা যায় সেসব বিষয়েও অনুষ্ঠিত হয় মুক্ত আলোচনা। এতে বাংলাদেশ থেকে আমরা দুজনসহ ভারত, নেপাল ও পাকিস্তানের উইকিপিডিয়ানরা অংশ নেন। এতে পারস্পারিক সহযোগিতার মাধ্যমে পরস্পরের সংস্কৃতি ও ইতিহাসকে দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন ভাষার উইকিপিডিয়ায় অনুবাদের বিষয়টি উঠে আসে। ১৮ই জুলাই উইকিমিডিয়া ফাউন্ডেশনের (উইকিপিডিয়ার পরিচালনাকারী সংস্থা) পরিচালনা পর্ষদের সভায় পরিচালনা কমিটির নতুন চেয়ারমেন হিসেবে আর্জেন্টিনার প্যাট্রিসিয়ো লরেন্টের নাম ঘোষণা করা হয়। সভায় প্রতিষ্ঠাতা জিমি ওয়েলেসসহ বোর্ড মেম্বারগণ উইকিমিডিয়া ফাউন্ডেশনের বিভিন্ন পরিকল্পনা তুলে ধরেন ও প্রশ্নের উত্তর দেন।
সম্মেলনের শেষ দিনে দুপুরের দিকে শুরু হয় সমাপনী অনুষ্ঠানে, উক্ত অনুষ্ঠানে উইকিমিডিয়া ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক লায়লা ত্রিতিকোভ ও জিমি ওয়েলেস বক্তব্য রাখেন। মুক্ত জ্ঞানের এ অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে লায়লা বলেন, “গত জানুয়ারি থেকে জুনের মাঝামাঝি উইকিমিডিয়া বিভিন্ন সরকারি, বেসরকারি ও সামরিক সংস্থার কাছ থেকে উইকিপিডিয়ার ভিন্নি তথ্য সড়ানোর জন্য ২৩৪টি নোটিশ পেয়েছে যার সবকটিই উইকিমিডিয়া রিজেক্ট করে দিয়েছে। মুক্ত জ্ঞানে বিশ্বাসী উইকিমিডিয়া ফাউন্ডেশন মনে করে জ্ঞান মুক্ত ও সবারই জানার অধিকার রয়েছে।” জিমি ওয়েলেস তার বক্তব্যে ফ্রিডম অব এক্সপ্রেশন শীর্ষক নানা কার্যক্রমে সহায়তা দিতে জিমি ওয়েলস ফাউন্ডেশন’র ঘোষনা দেন তিনি। তিনি বলেন, ‘সারা বিশ্বের অসাধারণ সব উইকিপিডিয়ানদের দারুন কাজের ফলেই এগিয়ে যাচ্ছে উইকিপিডিয়া। উইকিপিডিয়ানদের সহযোগিতা করার পাশাপাশি ফ্রিডম অব এক্সপ্রেশন নিয়ে কাজ করছে এমন যে কাউকে জিমি ওয়েলস ফাউন্ডেশন সহায়তা দেবে।’
প্রতিদিনের সম্মেলন শেষে অংশগ্রণকারীদের Museo Soumaya সহ মেক্সিকো সিটির বিখ্যাত জায়গাগুলোতে নিয়ে যাওয়া হয়। এছাড়াও ছিল অফিসিয়াল পার্টি

দাবিত্যাগঃ পিরামিড ভ্রমণের সময় পথে যেতে যেতে মেক্সিকোর বিখ্যাত “টাকিলা” তৈরির পদ্ধতি দেখার লোভ সামলাতে পারি নাই। অল্প সময়ের জন্য আমরা ১০/১৫ জন সেখানে ঢুঁ মেরেছিলাম

এই উদ্ভিদ থেকেই তৈরি হয় “টাকিলা”।
আয়োজনের সব ছবি পাবেন, এখানে। ধন্যবাদ।