somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ট্রানজিট

০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:২৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

-আচ্ছা এই প্লেনের ট্রানজিট কতক্ষণ? পাশের ভদ্রলোক আচমকাই প্রশ্নটা করলেন । চোস্ত কাপড় পরা ভদ্রলোক |
- জি, বুঝলাম না |একটু অবাক হয়েই বললাম
- মানে দোহা* থেকে পরে আবার কখন ছাড়বে ? জানতে চাইলেন উনি
- পরের যাত্রা যার যার গন্তব্যের উপর নির্ভর করবে । অবাক হয়েই উত্তর দিলাম ।

ভদ্রলোক কিছু বুঝলেন কিনা বুঝলাম না । মাথা ঝাকাতে ঝাকাতে বসে পড়লেন। পাশের ভদ্রলোক পুরো পরিবার সহ ঢাকা থেকে এসেছেন।

প্লেন দোহা বিমানবন্দরে অবতরণ করলো।পাশের ভদ্রলোকের কিছুটা উত্তেজিত হয়ে বউ আর ছেলেদের যেন কি বলছে। কান খাড়া করলাম একটু। উনি সবাইকে ঢাকা থেকে দোহা আসার বোর্ডিং পাসের টুকরোটা যত্ন করে রাখতে নির্দেশ দিচ্ছেন ।

-সবাই সাবধানে রাখো যার যার টুকরা। এই দেখি তো তোমার টুকরাটা। বউ কে মনে হয় প্রশ্ন করলেন। বউ মনে হলো দেখালো ।
-এই তোমাদের গুলা দেখাও।এবার ছেলেদের উদ্দেশে প্রশ্ন ।ছেলেরাও দেখালো ।

সামান্য বিরতির পর কিছুটা মিন মিন গলার কন্ঠস্বর ।- এহে । আমার টুকরাটা কই ? এবার মনে হই ভদ্রলোক নিজের বোর্ডিং পাসের টুকরাটা পাচ্ছেন না ।
আবার পুরো পরিবারকে জিজ্ঞাসা - আমার টুকরাটা কার কাছে ? আমি অবাক হচ্ছিলাম দোহা তে আসার পর ঢাকা দোহার বোর্ডিং পাসের অংশ দিয়ে হবে টা কি । কিন্তু ভদ্রলোকের অতিমাত্রার সচেতনতা আমাকে কনফিউজ করে দিল । নিজের পাস টা চেক করলাম ।

- এই উঠ উঠ ।এখন আমরা নামব কিছুক্ষণের জন্য । বউ, ছেলেরা তারাহুর করে উঠে পড়ল । বাক্স ধরতেই ছেলেদের দিলেন ধমক - মাল থাকুক এখানে ।

ভদ্র লোকটাকে এখন অনেক প্রশান্ত দেখাচ্ছিল । পরিবার নিয়ে সামনের দিকে চলে গেলেন। ভদ্রলোক এবার আমার থেকে একটি এগিয়ে গিয়ে সামনের আরেকজন কে জিগ্যেস করলেন

- এই প্লেন কতক্ষণ থামবে এখানে । আমরা নিচ থেকে নেমে আসি ।

লোকটা অনেকটা অবাক হয়েই বলল - এই প্লেন আর কোথাও যাবে না । আপনাকে একবারে নেমে যেতে হবে ।

মুহুর্তেই ভদ্রলোক তার পরিবারকে সংশোধিত নির্দেশ দিলেন - এই এই । সব বাক্স পেটরা নিয়া নামো । এইটা আর যাবে না ।

হুরমুর করে সবাই লাগেজ নামানো শুরু করলো ।



বিজনেস ক্লাসের সবাই আমরা একটা বাসে উঠলাম টার্মিনালে যাবার জন্য। ২০/২৫ জন হব আমরা । বাসটা প্রথমে আগমনী টার্মিনালে এসে থামল। যারা কাতারে যাবে বা যাদের অনেক বড় ট্রানজিট তারা এখানে নামবে । ১৫/১৬ জন মানুষ নামার জন্য প্রস্তুত হলো । ভদ্রলোক এবার অনেক স্মার্ট । বাস থামতেই সবাইকে বললেন লাগেজ নিয়ে নামতে। ছেলেরা লাফ দিয়ে উঠে নামতে উদ্যত হলো । ভদ্রলোক নেমে গেছেন ততক্ষণে । বেচারাদের অবস্থা দেখে আমার মানবিক সত্তা একটু যেন জেগে উঠলো ।

- কিছু মনে করবেন না , আপনারা কই যাবেন ? ভদ্রলোকের বড় ছেলেকে জিজ্ঞাসা করলাম।
-লন্ডন ।বড় ছেলের উত্তর

যা ভেবেছিলাম। উনারা ট্রানজিট যাত্রী।উনাদেরকে অবশ্যই ডিপার্চার টার্মিনালে যেতে হবে । তাও নিশ্চিত হবার জন্য বোর্ডিং পাসটা দেখতে চাইলাম । বড় ছেলেটা ভদ্রলোককে বললেন আমি বোর্ডিং পাস চাইছি ।
-আছে তো আছে ।বলে কিছু কাগজ এগিয়ে দিলেন আমাকে ।

উনি আমাকে সেই বিখ্যাত ঢাকা - দোহার বোর্ডিং পাসের অংশ গুলো দিলেন ।
-আরে এগুলো নয় । আমি পরের জার্নির বোর্ডিং পাস, দোহা থেকে লন্ডনের। আপনারাতো লন্ডনে যাবেন তাই না?

-জি লন্ডন যাব । কিন্তু আমাদের কাছে শুধু এই কাগজই আছে ।
-উহু । অবশ্যই আপনাদের কাছে দোহা থেকে লন্ডনের বোর্ডিং পাস আছে । একটু খুঁজে দেখুন। আমি অনুরোধ করলাম ।
- না না । আর কিছুই নেই । সমর্থনের জন্য স্ত্রী আর ছেলেদের দিকে তাকালেন।
-আরো চারটা কাগজ ছিলোত । স্ত্রীর সমর্থন পেলেন না ।
-না নেই। কিছুক্ষণ খুঁজে হতাশ হয়ে বললেন|

বুঝলাম হয়ত ফেলে দিয়েছেন এই ভেবে যে এগুলো অতিরিক্ত বা হয়ত এমন সুরক্ষিত করে রেখেছেন যে লন্ডন পৌছাবার আগে মিলবে না ।
-আচ্ছা আপনাদের টিকেটটা দেখি। একটা প্রিন্টেড কাগজ চোখে পড়ল।
হুম টিকেটই । উনাদের পরের ফ্লাইট দেড় ঘন্টা পরে ।

-আপনারা আমার সাথে আসুন ।দেখি ডিপার্চার টার্মিনালে কিছু করা যায় কিনা। ওখানে সম্ভবত ট্রান্সফার ডেস্ক আছে ।

দোহাতে ট্রানফার হবার সময়ও সিকিউরিটি চেক ইন এর মাঝ দিয়ে যেতে হয়। উনাদেরকে পাশের লাইনে দাড় করিয়ে আমিও দাড়ালাম । পকেট থেকে চারটা পাসপোর্ট বের করে ট্রেতে রাখলেন। অবাক হয়ে দেখলাম চারটাই লাল রঙের পাসপোর্ট ।

চেক ইন শেষ হতেই কাছে গিয়ে কৌতহলী হয়ে জিগ্যেস করলাম

-আপনি কি সরকারী চাকরিতে আছেন ?

ভদ্রলোক আমার প্রশ্নে যেন একটু বিরক্ত হলেন

-না, আমি মেম্বার অফ পার্লামেন্ট ।

আমিত থ । আমি ঘুনাক্ষরেও বুঝিনি উনি একজন সংসদ সদস্য । কিছুটা চমত্কৃত , কিছুটা অবাক হলাম। দেশের একজন সংসদ সদস্য কি পূর্বে কখনই ভ্রমন করেননি । কারোকি উচিত ছিল না উনাকে একটু ব্রিফ করা । খারাপ লাগছিল উনার জন্য | দেশের এই প্রতাপশালী মানুষটি বড় অসহায় দেখাচ্ছিল । দেশের সম্মান জড়িত। উনাকে আমি ট্রান্সফার ডেস্ককে নিয়ে গেলাম যদিও আমার ফ্লাইটের সময় হয়ে এসেছিল।

-This guy here is flying from Dhaka and is going to London. But unfortunately he has missed his boarding pass for Doha to London. Can you help him? Also for your information he is a member of parliament of Bangladesh. You should treat him as a VIP. গরগর করে ডেস্ককে বসা লোকটাকে বলে গেলাম ।

- ও তাই নাকি । সালাম আলাইকুম ।

আচমকা বাংলা উত্তরে ভেবচেকা খেলাম।

- আপনি বাংলাদেশী? অবাক হয়ে জানতে চাইলাম
- জি । ডেস্ককে বসা লোকটার জবাব ।

সস্থির নিশ্বাস ফেললাম । যাক এখন আর কোনো অসুবিধে নেই । বাংলাদেশী এই লোকটাই সব সমাধান দিবে ইনশাল্লাহ । আমার গেট ওপেন হয়ে গিয়েছে । আমি ভদ্রলোক কে উনার পরের যাত্রার জন্য শুভেচ্ছা জানিয়ে রওনা দিলাম জলদি আমার ফ্লাইটের গেটের দিকে ।

হটাত মনে হলো ভদ্রলোক আমাকে একটা ধন্যবাদ দিলেন না । মনে হয় উত্তেজনায় খেয়াল নেই ।


*কাতারের রাজধানী
** পরে জানা হয়নি উনার যাত্রা কেমন ছিল ।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ১১:৩১
৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ঋণ মুক্তির দোয়া

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৪৯



একদিন রসুল সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে নববিতে প্রবেশ করে আনসারি একজন লোককে দেখতে পেলেন, যার নাম আবু উমামা। রসুল সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, ‘আবু উমামা! ব্যাপার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফিরে এসো রাফসান দি ছোট ভাই

লিখেছেন আবদুর রব শরীফ, ১৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৮

রাফসানের বাবার ঋণ খেলাপির পোস্ট আমিও শেয়ার করেছি । কথা হলো এমন শত ঋণ খেলাপির কথা আমরা জানি না । ভাইরাল হয় না । হয়েছে মূলতো রাফসানের কারণে । কারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুমীরের কাছে শিয়ালের আলু ও ধান চাষের গল্প।

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৪০



ইহা নিউইয়র্কের ১জন মোটামুটি বড় বাংগালী ব্যবসায়ীর নিজমুখে বলা কাহিনী। আমি উনাকে ঘনিষ্টভাবে জানতাম; উনি ইমোশানেল হয়ে মাঝেমাঝে নিজকে নিয়ে ও নিজের পরিবারকে নিয়ে রূপকথা বলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে ভ্রমণটি ইতিহাস হয়ে আছে

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১:০৮

ঘটনাটি বেশ পুরনো। কোরিয়া থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরেছি খুব বেশী দিন হয়নি! আমি অবিবাহিত থেকে উজ্জীবিত (বিবাহিত) হয়েছি সবে, দেশে থিতু হবার চেষ্টা করছি। হঠাৎ মুঠোফোনটা বেশ কিছুক্ষণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×