somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

সাহাদাত উদরাজী
সাহাদাত উদরাজী'র আমন্ত্রণ! নানান বিষয়ে লিখি, নানান ব্লগে! নিজকে একজন প্রকৃত ব্লগার মনে করি! তবে রান্না ভালবাসি এবং প্রবাসে থাকার কারনে জীবনের অনেক বেশী অভিজ্ঞতা হয়েছে, যা প্রকাশ করেই ফেলি - 'গল্প ও রান্না' সাইটে! https://udrajirannaghor.wordpress.com/

বিচিত্র পেশাঃ ১৪ (কমলা কাহিনী!)

২৬ শে জানুয়ারি, ২০১৫ রাত ১২:০০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রতিদিন অফিসে প্রবেশের মুখে বড় রাস্তার ধারে একজন কমলা বিক্রেতার দিকে আমার নজর পড়ে! অবশ্য এটা বেশি দিনের কথা নয়, বাজারে কমলা সিজন আসার পর থেকেই দেখা যাচ্ছে। আসলে কথাটায় একটু ভুল হয়ে গেল, প্রথমেই চোখ পড়ে কমলা সাজিয়ে রাখা ডালির দিকে, তিনি এত সুন্দর করে কমলা সাজিয়ে রাখেন যে, আমি কেন আমার বাপ চাচারা এলেও উনার কমলার দিকে নজর দিবেন! আর আপনারা তো দিবেনই! আমি নিশ্চিত! অন্যদিকে বিকেলে অফিস ছুটির পর সেই কমলার ডালি প্রায় শেষ দেখি! মাঝে মাঝে ইচ্ছা হয় কিছু কমলা কিনে বাসায় ফিরি, কিন্তু বিকেলে আর সেই কমলা চোখে দেখি না!

যাই হোক, এভাবে বেশ কিছু দিন চলে যাচ্ছিলো। আজ সকালে অফিসে প্রবেশের সময় ভাবলাম কমলা সাজিয়ে রাখার ছবি তুলি পাশাপাশি বিক্রেতা ভাইয়ের সাথে কিছু কথা বলি। বিক্রেতা ভাইকে আমার বিচিত্র পেশা সিরিজে নিয়ে আসা যায়!


তবে প্রথমেই তার কমলা ডালির ছবি তুলতে অনুমতি চাইলে হেসে বলেন, কমলার ছবি তুলেন, আপত্তি নেই তবে আমার ছবি তুলবেন না! আজকাল ছবি না তুলতে চাওয়ার মানুষ এই সমাজে কম পাওয়া যায়। আমি কথা বাড়াতে চলি। কেন ছবি তুলবেন না? এই প্রশ্নের পর তিনি জানালেন, আমি যে পথের ধারে কমলা বিক্রি করি এটা আমার বাড়ির লোকজন জানেন না এবং জানলে আত্মীয় স্বজন কিছুটা লজ্জাও পেতে পারে। আপনার ছবি যদি কোনভাবে আমার কোন আত্মীয় স্বজন দেখে ফেলে তা হলে ইজ্জত যাবে। কমলা বিক্রেতার মুখের হাসি দেখে আমি আরো আগে বাড়াই।

ধরা যাক উনার নাম সাহাবুদ্দিন (আসল নাম বলেছেন তবে আমি তা গোপন করলাম), এই সেই নামে আমার এক হিরোর নাম লাগিয়ে দিলাম। সাহাবুদ্দিন বছরখানেক আগে বরিশাল থেকে ঢাকা শহরে চলে আসেন এই ঢাকা শহরে, কিছু একটা করবেন বলে। কিন্তু কি করবেন ভেবে পাচ্ছিলেন না, এক দিন বাড্ডায় এক ফল বিক্রেতার সাথে রাস্তায় দাঁড়িয়ে কথা হয়। সামান্য টাকায় কি করে ফলের ব্যবসা করে ভাল টাকা উপার্জন করা যায় তার সাথে কথা বলে আইডিয়া নিয়ে নেন। পরদিন তাকে অনুরোধ করে তার সাথে ফলের আড়তে চলে যান। ব্যস, সেই থেকে নানান ফলের সময়ে নানান ফলের ব্যবসা করে আসছেন। প্রথম দিনের পুঁজি ছিল আট শত টাকা। প্রথম দিন লাভ হয়েছিল চার শত টাকা এবং সেদিনো ছিল কমলার সিজন।

সাহাবুদ্দিনের ব্যবসার ধরন হচ্ছে, সকালে টুকরি বা ডালি নিয়ে ফলের আড়তে চলে যান, মোটামুটি এক টুকরি ফল কিনে নেন (এখন অবশ্য বাকীতেও কিনতে পারেন) এবং মনের কল্পনায় একটা জায়গা নির্বাচন করে ভ্যানে করে সেখানে চলে যান, রাস্তার পাশে সেই টুকরি সাজিয়ে ফল সাজিয়ে বসে পড়েন। মোটামুটি সারা দিন সেখানে বিক্রি করে সন্ধ্যায় বাসায় ফিরে যান। বাড্ডার মেসে রাতে থাকেন, শুক্রবারে কোন কাজ করেন না।

প্রতিদিন কেমন লাভ হয় জানতে চাইলে জানান, এখন কমলার সিজনে লাভ বেশি হচ্ছে, দৈনিক ৬শ থেকে ৮শত টাকা লাভ হয়। পথের ধারে সাজিয়ে রাখলে অনেকেই পছন্দ করে কিনে নিচ্ছেন। তবে সকালে দুপুরে মোটামুটি যে দামে বিক্রি করা যার বিকেল সন্ধ্যায় আর সেই দাম পাওয়া যায় না, এদিকে তাড়া থাকে এবং মাল রেখে বাড়ী যেতে চান না বলে কম দামে বা লাভে মাল বিক্রি করে দেন।

ফলফলাদির ভেজাল নিয়ে কিছু কথা জানতে চাইলে বলেন, আমরা কিনে নিয়ে আসি, ভেজাল বা রাসায়নিক কিছু মিশালে সেটা ফলের আড়তে করা হয়। সরকার আড়তে এই কাজ থামাতে পারলে ফলে এমন ভেজাল কেহ করবে না। তবে তিনি জানান, ফলের আড়তদার বা আমদানী কারকরা অনেক শক্তিশালী। আমি পালটা প্রশ্ন করে জানতে চাই, এটা কি করে বুঝলেন। বলেন, প্রতিদিন যাই বলে বুঝতে পারি। তা ছাড়া ওরা যে হারে বাকী দেয়, সেই হারে ওদের টাকা মেরে খাবার সাহস কারো হয় না।

ভবিষ্যতে কি করবেন বা পরিকলপনা কি জানতে চাইলে, সাহাবুদ্দিন জানান, প্রায় ৮০ হাজার টাকা জমিয়েছেন, এখন ইচ্ছা আছে বাড্ডায় রাস্তার ধারে একটা দোকান দেয়া, আজকাল দোকান খুঁজে চলছেন বলে জানালেন। দোকান পেলে ফলের দোকান দেয়ারই ইচ্ছা আছে।

কোন দুঃখের ঘটনা বা স্মরনীয় ঘটনা আছে কি না জানতে চাইলে জানান, একদিন সারা দিনের কামাই, কয়েকটা ছেলে ছোরা ধরে নিয়ে গিয়েছিল, ছিনতাই। এর কয়েকদিন কাজ করতে পারেন নাই, উপরন্তু আড়তে তাকে নিয়ে সবাই হেসেছিল, সত্য হিসাবে নেয় নাই।

সময়ে আরো কিছু আন্তরিক হলে, আমি জিজ্ঞেস করি, বিয়ে করছেন কি না! সাহাবুদ্দিন জানালেন, না। তবে বাড্ডায় একজন মেয়ের সাথে প্রেম করেন, মেয়েটি গার্মেন্টসে কাজ করে এবং তাকে বিয়ে করবেন বলে জানালেন। হেসে বললেন, অর নাম 'কমলা'!



বিচিত্র পেশাঃ ১৩ (জাহিদ ভাইয়ের ঘটি গরম চানাচুর)
Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে জানুয়ারি, ২০১৫ রাত ১:৩৯
৩৭৫ বার পঠিত
৯টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ভারতীয় পতাকার অবমাননা

লিখেছেন সরলপাঠ, ০২ রা ডিসেম্বর, ২০২৪ ভোর ৪:৪৩

বাংলাদেশের ২/১টি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভারতীয় পতাকার অবমাননা আমার কাছে ছেলেমী মনে হয়েছে। ২০১৪ সাল থেকে ভারত বাংলাদেশের রাজনীতিতে সরাসরি হস্তক্ষেপ করার কারণে বাংলাদেশের মানুষের মনে প্রচন্ড রকমের ভারত বিদ্বেষ তৈরি হয়েছে।

কিন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভিসা বন্ধ করায় ভারতকে ধন্যবাদ।

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০২ রা ডিসেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩



ভারত ইদানীং ভিসা দিচ্ছেনা; তারা ভিসা না দিয়ে আমাদেরকে শিক্ষা দিতে চায়! তাদের করদ রাজ্য হাতছাড় হওয়া খুবই নাখোশ, এতোই নাখোশ যে মোদী মিডিয়া দিনরাত বয়ান দিচ্ছে এই দেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতের চিকিৎসা বয়কট এবং

লিখেছেন পবন সরকার, ০২ রা ডিসেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১:৫৬


ভারতের এক হাসপাতাল ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশের কোন রুগিকে তারা চিকিৎসা দিবে না। কিন্তু মজার ব্যাপার হলো যে হাসপাতাল থেকে এই ঘোষণা দেয়া হয়েছে সেই হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়ার জন্য বাংলাদেশের... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। চামচা পুঁজিবাদ থেকে চোরতন্ত্রে পরিণত হয়েছিল দেশ

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০২ রা ডিসেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৩:১৩






চামচা পুঁজিবাদ থেকে দেশ চোরতন্ত্রে পরিণত হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন অর্থনৈতিক শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির প্রধান ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, আমলা, রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীরা মিলে চোরতন্ত্র করেছে।

সোমবার... ...বাকিটুকু পড়ুন

শেখ হাসিনাকে ভারত ফেরত পাঠাবে তবে............

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০২ রা ডিসেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৩:৪২


শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশে বিচারের জন্য ভারতের কাছে ফেরত চাইতে হলে অবশ্যই বাংলাদেশকে প্রতিহিংসামূলক বিচারপদ্ধতি বাদ দিতে হবে। বিচারে শেখ হাসিনা যাতে ন্যায় বিচার পান বাংলাদেশকে আগে তা নিশ্চয়তা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×