আজকের বিচিত্র পেশার বন্ধুটির নাম সোহাগ, গ্রামের বাড়ি বরিশাল জেলায়। প্রায় বছর আটেক আগে এই ঢাকা শহরে এসে একটা কঠিন অবস্থায় পড়ে যান। অনেক কষ্টে গার্মেন্সে কাজ জুটিয়ে নিলেও কাজের ধরন, বেতন এবং সময় কিছুতেই সামলে উঠতে পারছিলেন না। পনর শত টাকার চাকুরীতে অভারটাইম মিলিয়ে আড়াই হাজার টাকার মত পেতেন তা দিয়ে কিছুতেই চলত না, খাবার খরচ, ঘর ভাড়া, যাতায়ত! এমন সময় এক মাস কাজ করে চাকুরীটা ছেড়ে দেন। এর পর নুতন কিছু কি করা যায় ভাবতে থাকেন, এক সময় এক বড় ভাইকে এই ব্যবসায় দেখে ভাবলেন, তেমন পুঁজির দরকার নেই এবং এই ব্যবসা শুরু করলেন।
হ্যাঁ, এই হচ্ছেন সোহাগ এবং এই হচ্ছে তার ব্যবসা মানে পান সিগারেট চা দোকানে ঘুরে ঘুরে লাইটার মেরামত এবং গ্যাস বিক্রি এবং নুতন লাইটার বিক্রি করেন। তবে যাত্রা পথে নুতন লাইটার কেনার কাষ্টমার পেয়ে যান, তাতে একটু বেশী লাভ হয়।
গত সাত বছর ধরে ঢাকা শহরে এই ব্যবসা করে চলছেন। কোথায় থেকে কাজ শিখলেন, বলতে হেসে দিলেন সোহাগ। জানালেন, এই কাজে আসলে বুদ্ধিই যথেষ্ট। বুদ্ধি থাকলে আপনি নিজেও লাইটার মেরামত করতে পারবেন। দোকানে যে লাইটার গুলো পাওয়া যায়, প্রায় সব গুলোর ধরন ও টেকনিক প্রায় একই। তবে মাঝে মাঝে কিছু আমেরিকা, জার্মানীর লাইটার পাওয়া যায় সেগুলো মেরামত কঠিন এবং পার্টস পাওয়া যায় না। বাকী চায়নিজ সব একই! একটা নষ্ট হলে অন্যটার পার্টস লাগিয়ে ঠিক করে দেয়া যায়। এইকাজে ভাঙ্গা এবং পুরানো লাইটার সব সময়ে যোগাড় করতে হয়! আর গ্যাস তো সিলিন্ডারেই পাওয়া যায়, শুধু মাথার পয়েন্ট দেখে নিতে হয়। লাইটারে আসল হচ্ছে, পাথর, ভাল পাথর হলে অনেক দিন চলে।
সকাল ১০টা থেকে ঢাকার নানান এলাকায় বিকাল বা সন্ধ্যা পর্যন্ত কাজ করেন এবং এতে ৩০০/৪০০ টাকা লাভ হয়, কখনো বেশিও হয়! রুট গুলো নিজেই বানিয়েছেন, এক এক দিন এক এক এলাকায় চলে যান। হেঁটেই বলা চলে ঢাকার প্রায় অলি গলি চিনেছেন।
রাস্তায় চা বিড়ি খেতে পয়সা লাগে না, যাদের দোকানে কাজ করেন তারাই খাইয়ে দেন, চা দোকানদারদের কাছে পরিচিত বলেই। আর দুপুরের খাবার ইচ্ছা মত যে কোন হোটেলে খেয়ে নেন, ইঙ্কাম কম হলে সাধারন রুটি আর ডিম ভাজি খেয়ে থাকেন। সকালের নাস্তা এবং রাতের খাবার বাড্ডার মেসে খেয়ে থাকেন।
বরিশালের জন্য মন কাঁধে, মাঝে মাঝেই বাড়ি যান। বাড়িতে মা বাবা আছেন, তাদের জন্য টাকা পাঠান, এখনো বিয়ে করেন নাই! মাঝে মাঝে হলে বাংলা সিনেমা দেখেন এবং রাতে বাসায় ফিরেন। সপ্তাহে শনিবার বা যে কোন একদিন কাজ করেন না!
তবে সোহাগ জানালেন, এটা আসলে ভাল পেশা নয়, কারো কাছে পরিচয় দেয়া যায় না। মানুষ এই পেশার কথা শুনলে হাসে। আমি পেশা পাল্টানোর কথা বললে জানালেন, সামনে একটা দোকান করার ইচ্ছা আছে এবং টাকা জমাচ্ছেন এখন।
আমি সোহাগের সাফল্য কামনা করি। পরিশ্রম করে যে হাত দুটো খাবার যোগায় তারাই বীর এই দেশের। এদের জন্যই এখনো দেশ আছে, এই মানুষ গুলোর জন্যই আমরা এখনো ভাল আছি।
বিচিত্র এই দেশ, বিচিত্র এই দেশের মানুষ, কত কি বিচিত্র পেশা! তবে সবই জীবিকার টানে!
(সিরিজটা আপনাদের অনেকের ভাল লাগছে জেনে খুশি হচ্ছি, বাংলা ব্লগের লেখায় এখন আর তেমন হিট নেই, হা হা হা। তবে এই সিরিজে হিট সংখ্যা দেখে ভাল লাগছে। সাথে থাকুন নিয়ে আসছি আরো আরো বিচিত্র পেশা এই দেশে, এই বেশে!)
বিচিত্র পেশাঃ ৭
http://www.somewhereinblog.net/blog/udraji/30002646