somewhere in... blog

অনুবাদ গল্প- নেকলেস

৩০ শে নভেম্বর, ২০১৩ রাত ১০:২৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মাথিলা লুজেল। চেহারায় রূপের ছটা আছে। ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে তার জন্ম দরিদ্র্য কুমোর পাড়ায়। তাই তার সমাজের উঁচুতলার কোন ধনী ও প্রাচীন বংশধারার যুবকের পরিচয় হবার সুযোগ না থাকায় শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের ছোট কেরানীর সংসার করতে হচ্ছে। মাথিলার সাধারন চাহিদা পূরনের জন্য কেরানী বাবুর আয়টা মানানসই কিন্তু মাথিলা সুখী নয়। কারন সে সব সময়ই মনে করে তার রূপ, গুন আর ব্যক্তিত্ব অনুসারে তার যা প্রাপ্য তা সে পাচ্ছে না। ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে তাকে সমাজের নিচু তলাতেই বিবাহ সম্পাদন করতে হয়েছে। তার চেয়ে রূপে, গুনে কম যোগ্যতা সম্পন্নরাও কেবল মাত্র বংশ পরিচয় বা ধনী পিতার বদৌলতে আজ সমাজের উঁচু তলায় বসে আছে।

নিজের চারদিকে যখন সে তাকায় তখন বাড়ির ছেঁড়া পর্দা, রং চটা দেয়ালগুলো তাকে আরও বিষন্ন আর রাগান্বিত করে তুলে। এমনটা তো তার মত পরিবেশ আসা আনেক মেয়ের কাছে স্বপ্নের মত ব্যাপার হলেও অন্তত তার মত মেয়ের এটা প্রাপ্য ছিল না! একটা মেহগনী কাঠের সাজানো ড্রইং রুম যেখানে প্রতি সপ্তাহে একবার হলেও পার্টি চলবে , প্রাচ্যের আসবাবে সাজানো বাড়িতে তিন-চারজন খানাসামা আর মাঝারী একটা প্রাসাদ কেন তার ভাগ্যে জুটল না?

তার কোন ভাল কাপড় নাই। কোন গহনা নাই। কিছুই নাই। অথচ ওগুলো না থাকলে রূপবতী মেয়েদের কি মূল্য আছে সমাজে? দিবা-নিশি স্বপ্ন দেখতে দেখতে তার সময়টা কেটে যায়। অনেকের মতই তারও এক ধনী বান্ধবী আছে। নাম জেইন ফ্রসে। নিজেকে ওর সাথে তুলনা করে সে পালিয়ে বেড়ায়। কালে-ভাদ্রে যখন বাধ্য হয়ে তাকে ওর বাড়িতে যেতে হয় তখন সারাটা দিন তার খারাপ কাটে। ওদিন বাড়ি ফিরে তাকে অনেকক্ষন নিজের অক্ষমতায় কাঁদতে হয়। সে প্রাচুর্য্য আশা করে কিন্তু সে আশা তার পূরন হয় না। অথচ তার মত পরিবারগুলোর মহিলারা যখন দ্রুত বুড়িয়ে যাচ্ছে, হাতের তালু শক্ত হয়ে মুখে রূক্ষতা চলে আসছে সে তখনও সতেজ।

এক সন্ধ্যেয় বাড়ি ফিরে স্বামী হাসিমুখে তার দিকে একটা খাম এগিয়ে দেয়। খুশির রেশে ভরা কন্ঠে বলে , এটা তোমার জন্য।

দ্রুত খামটা নিয়ে টেনে ছিঁেড় ফেলে সে। খামের ভিতর একটা নিমন্ত্রন পত্র। মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী এবং মাদাম র‌্যাম্পনি আগামী আঠারই জানুয়ারী বিকেলে মঁশিয়ে এবং মাদাম লুজেলকে বাৎসরিক ভোজ সমাবেশে বিশেষ ভাবে নিমন্ত্রন করেছে।

মাথিলার মুখটা নিমন্ত্রন পত্র পড়তে পড়তে অন্ধকার হয়ে আসে। গম্ভীর মুখে সে স্বামীকে প্রশ্ন রাখে, এ নিমন্ত্রন পত্রটা দিয়ে আমি কি করব?

মঁশিয়ে লুজেলের হাসি হাসি মুখটা থমকে যায়। তিনি ভেবেছিলেন তার স্ত্রী ভয়ংকর খুশি হবে। একটু থমকে আন্তরিকতার সুরে বলেন, কেন ? পার্টিতে যাবে। তুমি তো কোথাও যেতে চাও না। এটা একটা খুব বড় অনুষ্ঠান। অল্প কিছু কেরানীই এ অনুষ্ঠানে যাবার সুযোগ পায়। এটি পাবার জন্য আমাকে অনেক কাঠ -খড় পোড়াতে হয়েছে। ওখানে সমাজের বড় বড় মাথাদের সাথে তোমার পরিচয় হবে।

তিক্ত স্বরে মাথিলা বলে, তা সে বড় বড় মানুষগুলোর সাথে পরিচয় হবার জন্য ঠিক কি পোষাকটা পড়ব বলতে পার?

কোন কিছু না ভেবেই জামাই উত্তর দিল, কেন যে ড্রেস পড়ে তুমি থিয়েটার দেখতে যাও ওটা পড়বে। ওটায় তোমাকে অসাধারন লাগে। তাছাড়া . .

তার কথা শেষ হল না। মাথিলার চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়া শুরু করে।

কি হয়েছে ? কি হয়েছে?

মাথিলা চোখ দুটো মুছে স্বাভাবিক স্বরে বলে, কিছু না। আসলে তোমরা তো এ জ্ঞান নাই যে কোন পার্টিতে কি পড়তে হয় আর আমার ওমন ড্রেসও নাই। তাই এক কাজ কর। নিমন্ত্রন পত্রটা তুমি তোমার কোন বন্ধুকে দিয়ে দাও। ওরা সময়টা উপভোগ করুক।

এমন আশা নিয়ে এসে হতাশ হতে হলে মনটা ভেঙ্গে যায়। মশিঁয়ে লুজেলের ক্ষেত্রেও তাই হল। স্ত্রীকে বোঝাতে বোঝাতে এক সময় বললেন , আচ্ছা ওমন একটা জামা ঠিক কত টাকা হলে কেনা যাবে?

মাথিলা কিছুক্ষন চিন্তা করে। বেশী বলা যাবে না। আবার কমও না। খুব বেশী হলে এর পকেট থেকে এক টাকাও বেরুবে না। একটু চিন্তিত গলায় সে বলে, আসলে আমার তো ঠিক জানা নাই তবে চারশ ফ্রা পেলে আমি যেভাবেই হোক ম্যানেজ করে নেব।

মঁিশয়ে লুজেলের মনটা দমে গেল। ঠিক চারশ ফ্রাই তিনি এক জায়গায় সরিয়ে রেখেছিলেন একটা বন্দুক কেনার জন্য। তার অনেকদিনের শখ নিজের বন্দুক নিয়ে বন্ধুদের সাথে শিকারে যাবেন। একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলেন, ঠিক আছে। আমি তোমাকে টাকাটা কালই দিয়ে দিচ্ছি। তুমি কিনে নাও।

যতই পার্টির দিন এগিয়ে আসতে থাকে ততই মাথিলা বিষন্ন হতে থাকে। ব্যাপারটা স্বামীর চোখ এড়াল না। কি ব্যাপার? জামা তৈরী হয়নি?

হাঁ। ওটা তৈরী হয়েছে। কিন্তু আমার যে কোন গহনা নাই। একেবারে খালি গলা, কান নিয়ে কিভাবে যাব?

খোঁপা কর। ওতে তাজা ফুল বেঁধে নাও। আমি কাল না হয় দশ ফ্রায়ের গোলাপ নিয়ে আসব।

না। না। ওখানে কত ধনীরা আসবে। ওসব ধনী মহিলার ভেতর আমাদের দ্রারিদ্যতা বড়ই লজ্জার ব্যাপার হবে। তার চেয়ে বরং আমরা না গেলেই হয়।

মশিঁয়ে লুজেল ঠান্ডা মাথার মানুষ কিন্তু তারপরও তার মেজাজ প্রচন্ড চটে যায়। এটা কি কথা হল? গহনা এখন কই পাব? তার চেয়ে বরং তোমার ওই বান্ধবী জেইন ফ্রসের কাছ থেকে কিছু গহনা ধার নাও।

কথাটা অবশ্য একবারও মাথিলার মাথায় আসে নাই। তাই তো! একদিনেরই তো ব্যাপার।

পরদিন সে তার বান্ধবীকে তার সমস্যটার কথা খুলে বলতেই, জেইন তার সামনে এক বাক্স গহনা খুলে দেয়। বেছে নাও।

বাক্স ভর্তি গহনার ভেতর কোনটা ছেড়ে কোনটা নেবে তা সে বুঝতে পারে না। আয়নায় নিজেকে দেখে কিন্তু সন্তুষ্ট হয় না। একটার পর একটা গহনা পাল্টাতে থাকে সে। হঠাৎ তার হাতে এল বিরাট এক হীরের নেকলেস। অসাধারন সৌন্দর্য্যটাকে গলায় নেবার সাথে সাথে তার রূপ যেন শতগুন বেড়ে গেল। এটা কি জেইন তাকে দেবে? কেবল একটি দিনের জন্য?

সে ভেবেছিল দেবে না। কিন্তু জেইন দিয়ে দিল। আনন্দে বান্ধবীকে জড়িয়ে ধরে মাথিলা ।

হীরার নেকলেসটার জন্য পার্টির ভেতর মাথিলর সৌন্দর্য্য জ্বলজ্বল করতে থাকে। পার্টির মধ্যমনিতে পরিনত হল সে। সকলেই তার সঙ্গ কামনায় তার চারপাশে ভিড় করে। এমনকি খোদ মন্ত্রী মশাই পর্যন্ত তার প্রশংসার মুখর। এতদিনে তার কাঙ্খিত সঙ্গ আর দৃষ্টির সামনে মাথিলা যেন নিজেকে হারিয়ে ফেলে। উদ্দাম নৃত্য, সুরা পানে নিজেকে ভাসিয়ে দিল সে। ভুলেই গেলেন সে কে।

রাত প্রায় চারটের দিকে পার্টি শেষ। সকলের বাড়ি ফেরার তাড়া। মাথিলা দ্রুত বেরিয়ে গেল। স্বামী তার গায়ে ও জীর্ন পুলওভারটা চাপাবার আগেই তাকে বেরিয়ে যেতে হবে। তাই দৌড়ে বেরিয়ে এল সে। মাথিলা চায় না অন্য মহিলারা নিজেদের শরীরে ফারের কোর্ট পড়তে পড়তে তার পুলওভারে দারিদ্র্যতার চিহ্ন দেখুক। মঁিশয়ে লুজেল অবশ্য তার স্ত্রীকে থামতে বলেছিলেন। আগে একটা গাড়ি তো পাই। কিন্তু মাদাম শুনলেন না।
বাইরে প্রচন্ড ঠান্ডায় কোন গাড়ি পাওয়া না যাওয়ায় তারা হাঁটতে শুরু করে। মিনিট বিশেক হাঁটার পর একটা গাড়ি পাওয়া গেল। গাড়িটা তাদের নিয়ে গেল তাদেও বাস্তবতায়। সেই পুরানো বাড়ি। নোংরা , বদ্ধ পরিবেশ। মাথিলার স্বপ্নের মত একটা দিন শেষ। এমন জীবনই তো সে চেয়েছিল।

কিন্তু সবই তো ভাগ্যের খেলা। ক্লান্ত মঁশিয়ে লুজেল জামা পাল্টে শোবার প্রস্তুুতি নেয়। সকাল দশটার ভেতর আবার অফিস। শেষবারের মত নিজের পূর্ন সৌন্দর্য্য আয়নায় দেখতে গিয়ে চেঁচিয়ে উঠে মাথিলা । তার গলায় হীরের হারটা নেই।

তন্ন তন্ন করে খোঁজা শুরু হল। ক্যাবের ভেতর পড়েছে? রাস্তায় পড়েছে? হলরুমে পড়েছে? ক্যাবটাকে খুঁজে পাওয়া গেল না। পুরো রাস্তা তারা দুজনে সেই রাতের ভেতর হেঁটে হেঁটে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে হলরুমে ফেরৎ গেল। হলরুমে কেউ নাই। কোন হীরের নেকলেস পাওয়া যায় নাই।

পুলিশ, খবরের কাগজ, ক্যাব কোম্পানী কোন জায়গায়ই বাদ গেল না। বিজ্ঞাপনে পুরষ্কারের ঘোষনাও কোন কাজ দিল না। আশার দরজাগুলো বন্ধ হয়ে এল।

কি করবে এখন ওরা?

স্বামীর কথামত মাথিলা তার বান্ধবীকে চিঠি দিয়ে জানায় সে নেকলেসের হুক ভেঙ্গে ফেলেছে। শীঘ্রই ঠিক করে নিয়ে আসছে সে।

এবার খোঁজার শুরু হল ও রকমের আরেকটা হীরের নেকলেসের অনুসন্ধান। কিন্তু ওমন সাইজ আর গড়নের হীরার খোঁজ মেলে না। অনেক খোঁজাখুঁজির পর একটার সন্ধান পাওয়া গেল। দাম চল্লিশ হাজার ফ্রা। প্রচন্ড দর কষাকষিতে অবশেষে ছত্রিশ হাজারে রফা হল। এবার তিনদিন সময়। যদি প্রথমটা পাওয়া যায় তাহলে কি ওরা এটা ফেরৎ নেবে? নেবে। তবে তখন দাম হবে চৌত্রিশ হাজার।

পৈত্রিক সম্পত্তি বিক্রি করে পাওয়া গেল আঠারো হাজার। এবার ধারের পালা। মহাজন থেকে উচ্চ সুদে কর্জ নেবার পালা। ধার-কর্জ সব মিলিয়ে যা হল তাতে মশিঁয়ে লুজেলের এ জীবনটা কেটে যাবে ও কর্জ শোধ করতে করতে। অবশেষে তিনদিনের ভেতর ছত্রিশ হাজার ফ্রা জমা করে নেকলেসটা নেয়া গেল।

নেকলেসটা নিতে নিতে জেইন অবশ্য বেশ রুক্ষ স্বরে বলে, এত দেরী করলে কেন?

মাথিলার মনে স্বস্তি দিয়ে জেইন নেকলেসটা আর বাক্স থেকে বের করে দেখল না। যদি দেখত তাহলে কি মাথিলা ধরা পড়ে যেত? যদি পড়ত তাহলে কি তাকে চুরির দায়ে অভিযুক্ত করা হত?

এবার নতুনভাবে জীবন শুরু হল মাথিলার। দারিদ্র্যতা কাকে বলে তা টের পেল সে। এ জীবনের শুরুর দিকটা অবশ্য সে ভালভাবেই মোকাবিলার চেষ্টা করেছিল। ওত কর্জ যে তাদের পরিশোধ করতেই হবে। প্রথমে ঠিকে ঝিকে নোটিশ করে দেয়া হল। বাসা ছেড়ে দিয়ে ছাদের চিলেকোঠার সস্তা আর ভ্যাপসা গরমে ভরা দু রুমের ফ্ল্যাটে উঠে এল তারা। বাড়ির ভারী কাজগুলো এবার তাকে ঘরের কাজের ধরন সম্পর্কে সচেতন করে তোলে। ধোপার বাড়িতে আর কাপড় যায় না। নিজেকেই নিজের ঘর ধুয়ে , মুছে পরিষ্কার করতে হয়। বাজার করা থেকে শুরু করে রান্না আর রান্নার পরের বাসী হাঁড়ি পাতিল পরিষ্কার সবই দুহাতে করতে হয়। মুদী দোকানদার, কসাইখানা থেকে শুরু করে সবজি বিক্রেতার সাথে এক আধুলি বাঁচাবার জন্য ঝগড়া করতে করতে তার কন্ঠ হয়ে আসে ককর্শ। স্বভাব হয়ে উঠে অসহায় দারিদ্র মহিলার মত। সকল কোমলতা তার থেকে একে একে বিদেয় নেয়। পানিতে জামা-কাপড় ঘাটতে ঘাটতে কখন যে নেল পালিশ দেয়া সে ছেড়ে দিয়েছে তা সে নিজেও বলতে পারে না।

প্রতি মাসেই কর্জ পরিশোধের কিস্তি আছে। যেগুলো পারা যায় সেগুলো দিয়ে দেয়া হয়। বাকীগুলোর জন্য সময় নেয়া হয় আবার। সুদের উপর সুদ বাড়ে।

মশিঁয়ে লুজেল দিনের কাজটা শেষ করে বিকেলে এক সওদাগরী অফিসে আবার কাজ নিয়েছে। রাত ন’টা নাগাদ বাড়ি ফিরে ভাঙ্গা টাইপ রাইটার নিয়ে বসে যায় সে। প্রতি পাতা এক পেনী হিসেবে টাইপ করতে থাকে সে।

তাদের এ জীবনের আয়ু হয় দশ বছর। দশ বছর শেষে সকল কর্জ, সুদ, সুদের উপর সুদ আর দন্ড সুদ সব মিটিয়ে দিয়ে মুক্তি পায় তারা ।

মাথিলা ওরফে মাদাম লুজেলের চেহারা থেকে এ দশ বছরে সব লাবন্য বিদেয় নিয়েছে । দরিদ্র্য পরিবারের অন্য সব মহিলার মতই তার চেহারা, ব্যবহারে এখন রূক্ষতার ছোঁয়া। সময়ের তুলনায় বয়সের ছাপ বেড়েছে। তার হাতের তালু এখন শক্ত আর খসখসে। গলার স্বর কর্কশ। স্বপ্ন তেমন আর দেখে না সে। তারপরও মাঝে মাঝে অলস দুপুরে যখন বাসায় কেউ থাকে না তখন তার মনে পড়ে সেদিনের সেই রাতের কথা। যা চাওয়ার জীবনে তা ওই একদিনই পেয়েছিল সে। আচ্ছা সে যদি সেদিন নেকলেসটা না হারাত তাহলে কি তার জীবনটা এমন হত? এ প্রশ্নের উত্তর দেবার কেউ নাই। হয়ত হত না কিংবা হত। কয়েক মূহুর্তেই জীবনের মোড় কিভাবে যে ঘুরে যায়!

কর্জের জীবন থেকে মুক্তি পাবার পর আজ তার বাইরে যাবার সময় মেলে। মাঝে মাঝে সে পার্কে হাঁটতে যায়। এমনি এক রবিবারে জেইন ফ্রসের সাথে তার দেখা হয়। জেইন তার বাচ্চাটাকে নিয়ে পার্কে এসেছে। সে আজও তার কোমলতা , নমনীয়তা ধরে রেখেছে। বয়সকে বাড়তে দেয় নাই। জেইনের সাথে তার দেখা করা কি ঠিক হবে? এত বছরে ওর সাথে কোন যোগাযোগ সে রাখেনি। তাকে যে ভিন্ন একটা নেকলেস দেওয়া হয়েছে তা তো এত বছরে সে নিশ্চয় ধরে ফেলেছে। এখন যখন মাথিলারা ধার-কর্জ থেকে মুক্ত তখন তো নিশ্চয়ই ওকে সব বলে ক্ষমা চেয়ে নেয়া যায়।

সুপ্রভাত জেইন।

জেইন তাকে চিনতে পারে নাই। উল্টো দরিদ্র্য এক মধ্য বয়স্ক রমনী ওমন ভাবে নাম ধরে ডাকায় বেশ খানিকটা বিব্রত বোধ করছে সে।

সুপ্রভাত । আপনাকে তো ঠিক .. .

আমি মাথিলা ।

চেঁচিয়ে উঠে জেইন ফ্রসে। কি বলছ ! এ কি চেহারা হয়েছে তোমার! এভাবে পাল্টে গেলে কিভাবে তুমি?

আসলে তোমার সাথে শেষ দেখা হবার পর তোমার জন্য জীবনের উপর দিয়ে কিছুটা ঝড় গেছে। সে ঝড়ে কিছুটা পাল্টে গেছি আমি।

আমার জন্য ঝড়? ঠিক বুঝলাম না।

তোমার থেকে একটা হীরের নেকলেস নিয়েছিলাম আমি মনে পড়ে।

হ্যাঁ।

ওটা আমি হারিয়ে ফেলেছিলাম।

তাই? কিভাবে? ওটা তো তুমি ফিরিয়ে দিয়েছিলে।

আসলে যেটা নিয়েছিলাম ওটা তোমাকে ফিরিয়ে দেই নাই। বরং অনেক খুঁজে ওটার মত দেখতে অন্য একটা নেকলেস ছত্রিশ হাজার ফ্রাতে কিনে দিয়েছিলাম। সেই হীরের নেকলেসের দামটাই আমরা গত দশ বছর ধরে শোধ করছি জেইন। এটা আমাদের জন্য সহজ ছিল না। তুমি আমাদের আর্থিক সঙ্গতি জানতে। তাই বেশ কষ্টে গেছে । কষ্টে কষ্টে এই হাল। তবে শেষ পর্যন্ত ওটা শোধ হয়েছে বলে এখন শান্তিতে আছি।

জেইন থমকে দাঁড়ায়।

তুমি বলছ তোমরা ছত্রিশ হাজার ফ্রা তে একটা হীরের নেকলেস কিনে আমারটার বদলে ওটা দিয়েছিলে?

তুমি বুঝতে পার নাই এতদিনেও? আসলে দেখতো হুবহু এক রকমই ছিল।

কথাটা বলতে বলতে অনেকদিন পর মাথিলার মুখে নিষ্পাপ একটা সুখী মানুষের হাসি ফুটে উঠে।

জেইন দাঁড়িয়ে আছে। মাথিলার হাত দুটোকে নিজের হাতের মুঠোর ভেতর নিয়ে আবেগঘন গলায় বলছে , হায়! করেছিস কি তোর হতভাগী ! আমার ওই হীরার নেকলেসটার দাম যে ছিল মাত্র পাঁচশ ফ্রা। ওটা যে নকল!

(মূল গল্প The Necklace by Guy de Maupassant )
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই জুন, ২০১৪ রাত ৮:২৮
৪৫৬ বার পঠিত
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

এক্স লইয়া কি করিব

লিখেছেন আনু মোল্লাহ, ২৬ শে নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১:৫১

যাচ্ছিলাম সেগুনবাগিচা। রিকশাওয়ালার সিট কভারটা খুব চমৎকার। হাতে সেলাইকরা কাঁথা মোড়ানো। সুন্দর নকশা-টকশা করা। নর্মালি এররকম দেখা যায় না। শৈল্পিক একটা ব্যাপার। শুধু সিটকভার দেইখাই তার-সাথে কোন দামাদামি না কইরা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইলিশনামা~ ১

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৬ শে নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৭


১৯৮৫ সালে ডক্টর মোকাম্মেল হোসাইন ‘ ব্রিটিশ কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটিতে যেই রিসার্চ পেপারটা( থিসিস – এম এস এর জন্য) জমা দিয়েছিলেন সেটা এখানে মিলবে;
[link|https://open.library.ubc.ca/cIRcle/collections/ubctheses/831/items/1.0096089|Spawning times and early life history of... ...বাকিটুকু পড়ুন

৯০% মুসলমানের এই দেশ? ভারতে কতগুলো মসজিদ ভেঙ্গে মন্দির করা হয়েছে? গতকালও ভারতে মসজিদের পক্ষে থাকায় ৩ জন মুসলমানকে হত্যা করা হয়েছে।

লিখেছেন তানভির জুমার, ২৬ শে নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:৪২

সিজনাল অ্যাফেক্টিভ ডিসঅর্ডার | SAD

লিখেছেন আজব লিংকন, ২৬ শে নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৩



শীতকালীন সর্দি-কাশি, জ্বর, হাঁপানি, অ্যালার্জিক রাইনাইটিস, কনজাংকটিভাটিস, নিউমোনিয়া কিংবা খুশকি মতো কমন রোগের কথা আমরা জানি। উইন্টার ডিসঅর্ডার বা শীতকালীন হতাশা নামক রোগের কথা কখনো শুনেছেন? যে ডিসঅর্ডারের... ...বাকিটুকু পড়ুন

চট্টগ্রাম আদালত চত্বরের একজন প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে লিখছি

লিখেছেন শান্তনু চৌধুরী শান্তু, ২৬ শে নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৮:৪৮



আজ চট্টগ্রাম আদালত চত্বরে যে বিভীষিকাময় পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল তা নানান গুজব ও ব্যক্তিগত দায়বদ্ধতা এড়াতে প্রকৃত ঘটনাটি নিরপেক্ষভাবে একজন প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে লিখছি।

চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×