somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হাকিনী part1

২৪ শে এপ্রিল, ২০১৩ দুপুর ১:২৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


পয়সাঅলা বাঙালি পরিবারগুলোর ব্যাপারে একটি প্রবাদ আছে। সেটি হলো এদের প্রথম পুরুষ কেনারাম, দ্বিতীয় পুরু ষ ভোগারাম, আর তৃতীয় পুরুষ বেচারাম। সোজা কথায় প্রথম পুরুষ টাকা বানাতে, জমিজমা কিনতেই জীবন হারাম করে ফেলে। দ্বিতীয় পুরুষ শুধু বসে বসে খায় আর ঘোরে। তৃতীয় পুরুষ সব বেচেকিনে শেষ করে। চতুর্থ পুরুষের বেলায় কী হয় তা অবশ্য বলা নেই। তবে সে যে বস্তিরাম হবে তা নিশ্চিত। আমাদের পরিবারে অবশ্য কেনারাম যে বেচারাম সেই-ই। এক পুরু ষেই সব উড়েপুড়ে শেষ। আমার বাবার ছিল তেজারতির ব্যবসা, যাকে বলে সুদের কারবার। জমিজমা-গয়না বন্ধক রেখে চড়া সুদে টাকা ধার দেওয়াই ছিল তার কাজ। প্রথম দিকে বাবা ছিলেন খুলনা শহরের এক মাড়োয়ারির দোকানের হিসাব লেখক। ৬৫ সালের পাক-ভারত যুদ্ধের পর সেই মাড়োয়ারি ব্যবসাপাতি গুটিয়ে ইন্ডিয়ায় চলে গেল। সেই সাথে গেল বাবার চাকরিও। বেকার হয়ে পথে পথে ঘুরতে লাগলেন। একদিন দুপুরে চার আনার বাদাম কিনে হাদিস পার্কের এক বেঞ্চের ওপর বসে কীভাবে আগামী মাসের ঘরভাড়া দেবেন ভাবতে লাগলেন সেই কথা। বাবা ভাড়ার কথা যখন ভাবছেন এবং মাঝেমধ্যেই উদাস হয়ে পার্কের গেটের সামনে রাস্তার দিকে তাকাচ্ছেন তখন হঠাৎ তার চোখ পড়ল গেটের পাশে বটগাছের নিচে বসা এক জ্যোতিষীর ওপর। জ্যোতিষীর পাশে পার্কের রেলিংয়ে লাল সালুতে রুপালি রঙে লেখা :

জ্যোতিষ সাগর নেতাই নাথ
হাত দেখিয়া ভাগ্য গণনা করা হয়
দর্শনী ১২ আনা মাত্র।

মাঝবয়সী ঘোর সংসারী মানুষ অর্থকষ্টে পড়লে তার মাথার ঠিক থাকে না। চার আনার বাদাম কেনার পর বাবার সম্বল তখন একুনে বারো আনা। তিনি জ্যোতিষ সাগরকে দিয়ে ভাগ্য গণনা করালেন। নেতাই নাথ বাবাকে বললেন, ব্যবসার লাইনে বৃহস্পতি তুঙ্গে। চাকরির ক্ষেত্রে শনির বলয়ে কেতুর আনাগোনা। আগামী পঁচিশ বছরে শনির বলয় ছেড়ে কেতুর অন্য কোথাও যাওয়ার সম্ভাবনা জিরো পার্সেন্ট। জ্যোতিষ সাগরকে হাত দেখানোর আগে বারো আনাই অ্যাডভান্স করতে হয়েছে। বাবার দুবছরের পুরোনো রংজ্বলা ক্রিজভাঙা প্যান্টের পকেট তখন গ্যাস বেলুনের মতো হালকা। বাসায় শ'খানেক টাকা মা'র কাছে আছে। শেষ সম্বল। ব্যবসা কীভাবে হবে বুঝতে পারছেন না। তিনি জ্যোতিষ সাগরকে জিজ্ঞেস করলেন, কিসের ব্যবসায় উন্নতির সম্ভাবনা। জ্যোতিষ তাঁকে তেজারতির ব্যবসা ধরতে বলল। সাফল্যের পরিমাণ শতভাগ। আগেই বলেছি, ছাপোষা মানুষ বিপদে পড়লে মাথার ঠিক থাকে না। বাবা চলে গেলেন ঘোরের ভেতর। বাস করতে লাগলেন এক মানসিক কোমায়। বাসায় ফিরে মাকে বললেন,
'বিমলা, চাকরি তো অনেক দিন করলাম। এবার ভাবছি ব্যবসা-বাণিজ্য করব।'
মা বললেন, 'আচ্ছা, তা না হয় করবেন। কিন্তু আপনার পুঁজি কোথায়?'
'তোমার বড় ভাইয়ের তো বিরাট অবস্থা। তার কাছ থেকে হাজার দশেক এনে দাও। এক বছরের ভেতর শোধ হয়ে যাবে।'
'আর যদি শোধ দিতে না পারেন, তখন?'
'না পারলে তোমার বাবার সম্পত্তির যে অংশ তুমি পাবে ওটা তার হবে।'
'ওইটুকুই তো সম্পত্তি। হাতের পাঁচ। ওটা গেলে আর থাকল কী? পথে পথে ভিক্ষে করে খেতে হবে।'
'অবস্থা যা দাঁড়িয়েছে পথে পথে ভিক্ষে তো মনে হয় কাল থেকেই করতে হবে। যা বলি মন দিয়ে শোনো। তোমার ভাইয়ের কাছ থেকে টাকাটা এনে দাও। মাড়োয়ারির দোকানটা এখনো খালিই আছে। আপাতত ওখানেই বসা যাবে। নতুন মালিককে মাঝে মাঝে কিছু ভাড়া দিলেই হলো।'

প্রথম প্রকাশ-নভেম্বর২০১০,রহস্যপত্রিকা

send the feedbacks direct to facebook.it is unfortunately not possible for the writer to view or reply in blog because of being very busy.
feel free to send any kind of feedback in fb http://www.facebook.com/muhammad.toimoor
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে জুন, ২০১৩ সকাল ৮:০৯
৫টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×